Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ব্লগার বাঙ্গাল

১০ বছর আগে লিখেছেন

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মমর্যাদাবোধ

ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মমর্যাদাবোধ হচ্ছে শরাফতের মূল চাবিকাঠি। আত্মমর্যাদাবোধ শূন্য ব্যক্তি মেরুদণ্ড সোজা করে চলতে পারে না এবং কারো কাছেই সম্মানের পাত্র হতে পারে না। এটা অর্জন করতে হলে উন্নত নৈতিকতাবোধে উজ্জীবিত একজন মানুষকে চোখ-কান-বুদ্ধি-দক্ষতা খোলা রেখে তার কথাবার্তা আচার-আচরণ পোশাক-পরিচ্ছদ সব কিছু সামলে চলতে হয়। তাকে খেয়াল রাখতে হবে এই আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে যেন কোনো অবস্থাতেই হীনমন্যতাবোধ বা অহঙ্কারের বিষবাষ্পে সে আচ্ছাদিত না হয়। কেননা ইসলাম বলে : অহঙ্কারী লোকের জন্য বেহেশত হারাম। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন :
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ ﴿18﴾ وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ ﴿19﴾
তুমি মানুষের সামনে গাল ফুলিও না এবং মাটিতে দেমাক করে পা ফেলো না। কেননা আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহঙ্কারীকে ভালোবাসেন না। তুমি সংযতভাবে পা ফেলো ও তোমার গলার আওয়াজ নিচু করো গলার আওয়াজের ভেতর গর্দভের গলাই সবচেয়ে শ্রুতিকটু। (সূরা লোকমান : ১৮-১৯)
কেউ যদি সুন্দর পোশাক বা সুন্দর কোনো পছন্দনীয় জিনিস ব্যবহার করে তা কিন্তু মোটেও অহঙ্কারের পর্যায়ে পড়ে না। কেননা আল্লাহতায়ালা নিজে সুন্দর, সুন্দরকে স্বাগত জানিয়েছেন। অহঙ্কার হচ্ছে : সত্য ও যথার্থ অবস্থাকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে হেয় জ্ঞান করা। (তিরমিজি শরিফ)
আত্মমর্যাদা একজন মানুষের সম্মান শৌর্য ও নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে পারে। নারী-পুরুষ উভয়কেই কিন্তু তার দৈনন্দিন ও সামাজিক জীবনাচারণের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে যেমন ওঠাবসা, চলাফেরা, খানাপিনা, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি সমুদয় আচরণে নিজের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষাকল্পে আত্মমর্যাদার দিকে যত্নবান হতে হয়। যার ভেতর এই ভারসাম্য নেই অর্থাৎ মিলের অভাব রয়েছে তার দৃষ্টি কখনোই প্রসারিত হতে পারে না। তার চিন্তা-চেতনায় আলোকিত মানুষের কোনো বৈশিষ্ট্য নজরে আসে না। তার কথা ও কাজ সম্মান বৃদ্ধি করে না। কোনো অবস্থাতেই কোনো মজলিসে সে মর্যাদাবান ব্যক্তিত্ব হিসেবে আসন অলঙ্কৃত করতে পারে না। তার ওপর অর্পিত দায়িত্বে কেউ ভরসা পায় না। এই ইজ্জতজ্ঞান ও সম্মান এমনই এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যা আল্লাহ প্রদত্ত গুণাবলির সাথে সম্পৃক্ত ও যাবতীয় সম্মানের মূল কেন্দ্র। এ সম্পর্কে আপ্তবাক্য এটাই বলে : শত অভাব-অনটনের ভেতরও মানুষের কাছে সাহায্য প্রার্থনা আত্মসম্মান রক্ষার উদ্ভূত তাগিদের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে না। এ ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
মানুষের কাছে নিজের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরলে তার সমাধান হয় না, কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কাছে আরজি পেশ করলে আল্লাহ তার অভাব দূর করেন; হয় অচিরে কিংবা পরকালে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, একজন নারী একজন পুরুষের মতোই আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হতে পারেন। তারও আত্মমর্যাদাবোধ একইভাবে তার কাজে, চিন্তা-চেতনায় প্রতিফলিত হওয়া উচিত। পক্ষান্তরে নারী বা পুরুষ যে-ই তার আমলনামাকে কলুষ-কালিমায় লিপ্ত করে সদম্ভে বিচরণ করে সে-ই চরমভাবে ব্যর্থ। সেখানে নারী-পুরুষের কোনো পার্থক্য ধরা হবে না। অত্যাচার, অনাচার, নীচতা, হীনতা, লাঞ্ছনা, অপমান থেকে মুক্ত করে ইসলাম তার আত্মমর্যাদাকে তুঙ্গে অবস্থান করিয়েছে।
ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের পরপরই মুসলমানদের অঙ্কুরে বিনাশকল্পে তাদের দুর্বলতার সমূহ সুযোগে ইসলামের জানি দুশমন এমন সব মোনাফিক একদিকে মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিত, তেমনি অপর দিকে ইসলামের শত্রু কাফেরদের শানশওকতে মুগ্ধ হয়ে সেস্টাপো কায়দায় মুসলিম নিধনযজ্ঞে শামিল হয়ে কাফেরদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত। এমনি দোদুল্যমান অবস্থায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই ধোকাবাজদের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষাকল্পে এবং নিজবৃত্তে ফিরে আসার জন্য সতর্ক করেন এভাবে :
أَيَبْتَغُونَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا ﴿139﴾
তবে কি তারা তাদেরই নিকট সম্মান প্রত্যাশা করে? অথচ যাবতীয় সম্মান শুধু আল্লাহরই জন্য নিবেদিত (সূরা : আন-নিসা, আয়াত : ১৩৯)
মহান আল্লাহ এ কথা স্পষ্টভাবে বলেছেন : কেউ যদি ইজ্জত বা সম্মান প্রত্যাশা করে তবে সে যেন কেবল আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করে।
কুরআনের আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে :
وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ﴿26﴾
হে আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করো আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ (সূরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ২৬)
কূপমণ্ডুকতায় নিজের মধ্যে কুণ্ডলী পাকিয়ে পড়ে না থেকে প্রত্যেক মুসলমানের শির সমুন্নত রাখার জন্য সর্বদাই ধর্মীয় আত্মমর্যাদাবোধে উজ্জীবিত হওয়া দরকার। এ কারণে তাদের উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে, তা বলাই বাহুল্য। বৈষম্য পীড়িত সম্পদের সঙ্কট উত্তরণে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহতি শিক্ষার কারণে তাঁর সাহাবিদের মাঝে সত্যিকার আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠিত ছিল পরিপূর্ণভাবে। যেমন, হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় সর্বক্ষমতাসম্পন্ন নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মঞ্জুরকৃত সন্ধির প্রাক্কালে শর্তাবলির ঘোর বিরোধিতা করেন সাহাবি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর এই অসামান্য সাহস প্রদর্শন কিন্তু আত্মমর্যাদারই প্রতিফলন। পরে তিনি উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত থেকে ইসলামের উন্নতি-পরিণতি ও দুর্গতিতে অর্পিত দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছিলেন। কাজেই বলা যায়, একজন মুমিন মুসলমান এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। স্বার্থের পাহরাদারিত্বের কাছে মাথা নত করে না¬, তাই বলে সদর্পে অহঙ্কারে অন্ধ হয়ে হিংসাত্মক ও বিদ্বেষপূর্ণভাবে বিচরণ করা ইসলাম অনুমোদন তো করেই না বরং এর জন্য রয়েছে মহাপাপ। ইজ্জত রক্ষা করার ইসলামে সবচেয়ে টেকসই অস্ত্র আত্মমর্যাদাবোধ। এর মোকাবেলায় যাবতীয় নেয়ামত ও সম্পদ খু-উ-ব-ই নগণ্য।

Likes Comments
০ Share

Comments (0)

  • - গাজী নিষাদ

    বেশ লাগলো। তবে পরিপূর্ণ নয়।