Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ব্লগার বাঙ্গাল

১০ বছর আগে লিখেছেন

ইসলামের দৃষ্টিতে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বা বহুজাত বিশিষ্ট পণ্য বাজারজাত পদ্ধতি বাংলাদেশে নতুন হলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে অর্ধ শতকের বেশি সময় আগে এটি চালু হয়েছিল। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং, ডিরেক্ট সেলিং ও রেফারেন্স মার্কেটিং হিসেবেও এটি পরিচিত। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং মূলত ডিস্ট্রিবিউটরদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বিক্রি করার একটি প্রক্রিয়া।
আধুনিক অভিধানে এর সংজ্ঞা দেওয়া হয় এভাবে : (Multi-level marketing, also known as MLM or network marketing, is a business structure where products are sold through a networking process as opposed to a storefront. … is a way of selling goods and services through distributors) অর্থাৎ, মাল্টি লেভেল মর্কেটিং যা এএলএম বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং নামেও পরিচিত, তা হল একটা ব্যবসায় পদ্ধতি যেখানে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা হয় … আর তা মূলত ডিস্ট্রিবিউটরদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বিক্রি করার একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় আপলাইন ও ডাউনলাইন নামে বহু স্তরের (Multi level) ডিস্ট্রিবিউটর তৈরি হয়। ডাউনলাইনের কোনো ব্যক্তি কর্তৃক বিক্রিত পণ্যদ্রব্যের একটি কমিশন আপলাইনের ডিস্ট্রিবিউটররা পেয়ে থাকে। একে সংক্ষেপে MLM বলা হয়।

যেসব দেশে এ ব্যবসা প্রচলিত রয়েছে সেখানে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো আইন না থাকায় তা এখনও চালু রয়েছে। ব্যক্তি স্বাধীনতার সর্বোচ্চ বিকাশের কারণে অনেকাংশেই ব্যবসাটি বহাল রয়েছে। কিন্তু সেসব দেশের সচেতন মহল প্রতিনিয়তই জনগণকে এ ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে নিরুৎসাহিত করছে।

জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোর অন্যতম। এ দেশে যেমনি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি তেমনি বেকার লোকের সংখ্যাও কম নয়। শতকরা ৬৫ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে দরিদ্র ও বেকারদের অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে এমএলএম ব্যবসায়। কিন্তু যেহেতু এদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী সেহেতু মুমিনদের অন্তরে একটি সংশয় রয়েই যাচ্ছে যে, এ ব্যবসাটি শরীআতের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিনা?

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর শরয়ী বিধান : মাল্টিলেভেল মার্কেটিং-এর শরয়ী বিধান আলোচনা করার পূর্বে ইসলামি শরীআতের কতিপয় বিধান ও নীতিমালা যেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা ও লেনদেনের বৈধতা-অবৈধতা নির্ভর করে সেগুলো আলোচনা করা দরকার।

নিম্নে সংক্ষেপে তা উল্লেখ করা হলো: (ক) ইসলামি শরীআতে হালাল ও হারাম উভয়টিই সুস্পষ্ট। শরীআত যেটা হালাল করেছে সেটাকে হারাম করা বা ঘোষণা দেওয়া আবার যেটা হারাম করেছে সেটাকে হালাল ঘোষণা দেওয়ার অধিকার আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কারো জন্য প্রযোজ্য নয়।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে সীমালঙ্ঘনকারীদের সাবধান করে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘তুমি বল, তোমরা কি কখনো এ কথা চিন্তা করে দেখেছ, আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের জন্য যে রিযক নাযিল করেছেন তার মধ্য থেকে কিছু অংশকে তোমরা হারাম আর কিছু অংশকে হালাল করে নিয়েছ, তুমি বল, এসব হালাল-হারামের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদের কোনো অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহ্‌র প্রতি মিথ্যা আরোপ করছ ‘ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫৯)

(খ) ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি মূলনীতি হলো তা বৈধ ও অনুমোদিত। সুতরাং যে ব্যবসার ক্ষেত্রে শরীআতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেগুলো ছাড়া অন্য সকল ব্যবসা বৈধ। কোনো ব্যবসাকে হারাম সাব্যস্ত করতে হলে এর পক্ষে শরয়ী নিষেধাজ্ঞা থাকতে হবে। কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে শরয়ী নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ধরে নিতে হবে তা হালাল ও অনুমোদিত।

(গ) ইসলামি শরীআত যা যা হালাল করেছে এবং যা যা হারাম করেছে তা সম্পূর্ণ ইনসাফের ভিত্তিতে করেছে। যার মধ্যে মানুষের কল্যাণ রয়েছে শরীআত প্রণেতা শুধু তাই তাদের জন্য হালাল করেছেন এবং যার মধ্যে তাদের অকল্যাণ রয়েছে তাই তাদের জন্য হারাম করেছেন। আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে হালালের কল্যাণ এবং হারামের অকল্যাণ বুঝে আসুক বা না আসুক তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের দাবি। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যে তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে এবং অপবিত্র বস্তু হারাম করে; আর যে মুক্ত করে তাদেরকে তাদের গুরুভার ও শৃংখল হতে, যা তাদের ওপর ছিল।’ (সুরা আল-আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

(ঘ) ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতি ও আন্তরিক সন্তুষ্টি থাকা। বেচাকেনা বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য একটি শর্ত হলো, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মতি ও সন্তুষ্টি। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এ মর্মে ঘোষণা করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না; কিন্তু তোমাদের পরস্পর রাযী হয়ে ব্যবসা করা বৈধ।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯)

তবে সম্মতি ও সন্তুষ্টি বলতে সব ধরনের সম্মতি ও সন্তুষ্টিই এখানে উদ্দেশ্য নয়। বরং হাদীস থেকে জানা যায়, এখানে সম্মতি ও সন্তুষ্টি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, বেচাকেনার ক্ষেত্রে শরীআত যে সকল নীতিমালা নির্ধারণ করেছে সেগুলোর আওতায় থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মতি ও আন্তরিক সন্তুষ্টি থাকা। কাজেই শরীআত অসংগত কোনো বিষয়ে কারও পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি ও সম্মতি থাকলেও সেটা ইসলামি শরীআতের বিচারে হালাল ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত হবে না।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মদ ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর যদি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে সম্মতি ও আন্তরিক সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তথাপি তা বৈধ হবে না। কারণ মদটাকে ইসলাম হারাম করেছে। অনুরূপ সুদের কারবার যদি কেউ সন্তুষ্টচিত্তে করে তথাপি তা বৈধ হবে না। কারণ ইসলাম সুদকে হারাম করেছে। আবার ব্যবসার ক্ষেত্রে যদি প্রতারণা ও ধোঁকার আশ্রয় নেওয়া হয় তবে সেখানেও ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতি ও আন্তরিক সন্তুষ্টি সেটাকে বৈধ করতে পারে না। কারণ ইসলাম প্রতারণাকে হারাম করেছে।

আমরা আমাদের এ প্রবন্ধে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর বৈধতা-অবৈধতার বিষয়টি দু’টি দিক থেকে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ্‌।

প্রথমত : ভিত্তিগত (substantive and theoretical)। দ্বিতীয়ত : পদ্ধতিগত (procedural)। ভিত্তিগত দিক : মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর পদ্ধতি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের হলেও তত্ত্বগত ভিত্তিটি (theoretical basis) সবসময় একই। তা হলো, নিম্ন লেভেলের ডিস্ট্রিবিউটর কর্তৃক বিক্রিত পণ্যের একটি কমিশন সর্বোচ্চ লেভেল পর্যন্ত পায়। যেটাকে এক কথায় ‘শ্রমের বহুস্তর সুবিধা’বলা যায়। কোনো কোনো লেখক এর নাম দিয়েছেন ‘Chain reaction of labour’, কেউবা আবার ব্যক্ত করেছেন ‘Chain pyramidal commission’ কিংবা ‘Compound brokerage’ ইত্যাদি নামে। তাদের এ নীতিটির সঙ্গে ইসলামের শ্রমনীতির রয়েছে সরাসরি সংঘর্ষ। কারণ ইসলামের শ্রমনীতি হলো, ‘কোনো মানুষই অপরের বোঝা উঠাবে না। মানুষ ততটুকুই পাবে যতটুকু সে চেষ্টা করে।’ (সুরা আন-নাজম, আয়াত : ৩৮-৩৯)

এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে, মানুষ কেবল তার নিজের শ্রমের প্রত্যক্ষ ফল লাভের অধিকারী। কারও নিযুক্ত কর্মী না হলে একজন আরেকজনের শ্রমের ফলে অংশীদার হতে পারে না। একইভাবে মানুষ তার শ্রমের ফল কেবল নিকটবর্তী লেভেল থেকে আশা করতে পারে। কোনো ক্রমেই তা বহুস্তর (multi level) পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে না। এটি যেমন ইসলামি শ্রমনীতির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ তেমনি মানবীয় বুদ্ধি বিবেচনায় অস্বীকৃত। কারণ, এ ব্যবসায় এক পর্যায়ে দেখা যায় নিম্নলেভেলের ডিস্ট্রিবিউটর ফরিদপুরের মাসুদ উচ্চলেভেলের ডিস্ট্রিবিউটর বরিশালের নোমানকে চিনে না, তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ও কথা-বার্তা নেই, অথচ নিম্ন লেভেলের মাসুদ থেকে উচ্চলেভেলের নোমান কমিশন পাচ্ছে। মানবীয় সুস্থ বিবেক বলছে, কোনো পণ্যের পেছনে যে প্রত্যক্ষ শ্রম দিয়েছে কেবলমাত্র সেই পারিশ্রমিক পেতে বাধ্য। কিন্তু যে পরোক্ষ শ্রম দিয়েছে সে পারিশ্রমিক পেতে বাধ্য নয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন শিক্ষক তার প্রত্যক্ষ শ্রমের ফল হিসেবে বেতন দাবি করতে পারেন। কিন্তু তিনি যদি দাবি করেন, তার ছাত্ররা যত জনকে শিক্ষিত করে কর্মক্ষম করে তুলবে এবং ভবিষ্যতে তারা আরও যাদেরকে শিক্ষিত করে তুলবে তাদের প্রত্যেকের আয়ের একটি ক্ষুদ্র অংশ ঊর্ধ্বতন শিক্ষককে কমিশন হিসেবে দিতে হবে, তাহলে বিষয়টি মেনে নেওয়ার মত নয়। কারণ এখানে শিক্ষকের শ্রম শুধু তার সরাসরি ছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তার ছাত্রদের ছাত্র বা তাদের ছাত্রের প্রতি তার কোনো শ্রম নেই। তার শ্রমের ভিত্তিতে সরাসরি তার ছাত্রদের কাছ থেকে তিনি বেতন বা সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখেন, কিন্তু ডাউনলাইনের ছাত্রদের কাছ থেকে তিনি কিসের ভিত্তিতে কমিশন বা বেতন ভোগ করবেন?

সুতরাং, ইসলামি শ্রমনীতি ও মানবীয় বুদ্ধি বিবেচনায় শ্রমের বহুস্তর সুবিধা (multi level benefit of labour) নীতিটি শরীআত সম্মত হতে পারে না। অথচ এ নীতিটিই মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর সবচেয়ে বড় তাত্ত্বিক ভিত্তি। এ ভিত্তি সরিয়ে ফেললে এ প্রকার ব্যবসার অস্তিত্বই থাকবে না। কোনো সাধারণ কোম্পানি থেকে পণ্য কিনে অন্যজনের কাছে বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হওয়ার বৈধ অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। অনুরূপ কোনো ক্রেতা সংগ্রহ করে দেওয়ার মাধ্যমে কোম্পানির কাছ থেকে দালালির কমিশন (brokerage fee) নেওয়ার অধিকারও প্রত্যেকের রয়েছে। কারণ এ উভয় ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ শ্রম জড়িয়ে আছে। এ প্রত্যক্ষ শ্রমের প্রত্যক্ষ সুবিধা নিকটতম স্তর থেকে একবারই পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট ভ্যালুর পণ্য কিনে দালালির অধিকার অর্জন করা যা বাস্তবায়ন করতে প্রত্যক্ষ শ্রম দিয়ে নতুন ক্রেতা সংগ্রহ করতে হয়। যে যত বেশি ক্রেতা সংগ্রহ করতে পারে সে ততজনের কমিশন লাভ করার অধিকার রাখে। কিন্তু কোনো ক্রমেই আপলেভেলের প্রত্যক্ষ শ্রম স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সুদূর-বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে না। অথচ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ তা-ই ঘটে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, প্রত্যেক ব্যক্তির আয় ও দায় (income and liability) সব সময় ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। তবে এ স্বাভাবিক নীতির ব্যতিক্রম যে সকল বৈধতা শরীআতে পাওয়া যায় তা শরীআতের বিধান হিসেবে সমালোচনার ঊর্ধ্বে। যেমন : ধনীর সম্পদে অভাবী মানুষের অধিকার, সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব, গোনাহে জারিয়া ইত্যাদি। এগুলো শরীআত প্রণেতা কর্তৃক গৃহীত। কাজেই তা স্বাভাবিক নিয়ম বহির্ভূত।

পদ্ধতিগত দিক : মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর তাত্ত্বিক ভিত্তি (Theoretical Basis)-এর সঙ্গে ইসলামের প্রতিষ্ঠিত শ্রমনীতি ও মানবীয় বুদ্ধি বিবেচনার সাংঘর্ষিক দিকটি আলোচনা করার পর এবার আমরা এর কিছু পদ্ধতিগত সংঘাত নিয়ে আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ্‌।

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা নেটওয়ার্ক-এর পদ্ধতিসমূহের মধ্যে শরীআত নিষিদ্ধ বহু বিষয় বিদ্যমান। যার প্রধানগুলো নিম্নরূপ : (ক) শ্রমবিহীন বিনিময় এবং বিনিময়বিহীন শ্রম। (খ) একটি আকদ (চুক্তি)-এর জন্য আরেকটিকে শর্ত করা। (গ) অর্জিত হওয়া না-হওয়ার অনিশ্চয়তা। (ঘ) সুদের সাদৃশ্য ও দৃঢ় সন্দেহ। (ঙ) জুয়ার সাদৃশ্য। (চ) বাতিল পন্থায় মানুষের মাল ভক্ষণ। (ছ) প্রতারণা ও ধোঁকা। (জ) বর্ধিত মূল্যে বিক্রয়। (ঝ) ‘আকদুল ইজারাহ’-এর উসূল পরিপন্থী।

নিম্নে প্রতিটির বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো : (ক) শ্রমবিহীন বিনিময় এবং বিনিময়বিহীন শ্রম। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি শরীআতের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো এতে ‘শ্রমবিহীন বিনিময় এবং বিনিময়বিহীন শ্রম’রয়েছে যা ইসলামি আইন সমর্থন করে না।

বিনিময়বিহীন শ্রমের বিষয়টি ফুটে উঠে তাদের প্রচলিত সে নীতিতে যাতে রয়েছে, একজন ডিস্ট্রিবিউটর (পরিবেশক)-এর ডান ও বাম উভয় দিকের নেট না চললে সে কমিশন পাবে না। অর্থাৎ কেউ যদি নির্ধারিত পয়েন্টের একজন ক্রেতা জোগাড় করে কিন্তু আরেকজন জোগাড় করতে অক্ষম হয়, তবে লোকটি কমিশন থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হবে। এমনিভাবে কেউ যদি দু’জন ক্রেতাও কোম্পানিকে এনে দেয়, কিন্তু তারা কোম্পানির নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে কম পয়েন্টের মালামাল ক্রয় করে তবে এর জন্যও ওই ব্যক্তি কমিশন পায় না। ফলে এটি বিনিময়বিহীন শ্রমে পরিণত হয়, যা ইসলামি আইনে নিষিদ্ধ।

হাদীসে কুদসীতে রয়েছে, আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির সঙ্গে ঝগড়া করবো। (এক) যে ব্যক্তি আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ করে। (দুই) যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করে তার মূল্য ভোগ করে এবং (তিন) যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিককে কাজে নিযুক্ত করে তার কাছ থেকে কাজ আদায় করার পর মজুরী পরিশোধ করে না।’ (বুখারী, হাদিস: ২২২৭)

ইসলামি শরীআতে ‘একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ করতে না পারলে পারিশ্রমিক পাবে না’এ ধরনের শর্ত দিয়ে কোনো চুক্তি করা বৈধ নয়।

আল্লামা ইবন রুশদ তার ‘আল-মুকাদ্দামাত’গ্রন্থে লিখেছেন, ‘কাপড়ের নির্দিষ্ট সংখ্যার ওপর এ চুক্তি করে লোক নিয়োগ দেওয়া যে, ‘কাপড়ের এত সংখ্যক বিক্রয় করতে না পারলে সে কোনো পারিশ্রমিক পাবে না’তাহলে চুক্তিটি বৈধ হবে না। কারণ এরূপ ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা কর্মচারীর অল্প সংখ্যক বিক্রয় দ্বারা যে উপকৃত হচ্ছে তা তার জন্য বৈধ হবে না।’ (২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০৯)

আর শ্রমবিহীন বিনিময়টি সুন্দরভাবে ফুটে উঠে তাদের ভিত্তিগত দিকে যা ইতোপূর্বে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, তাদের নীতিমালা রয়েছে, কোনো ব্যক্তি নির্ধারিত পরিমাণ পণ্য খরিদান্তে ডিস্ট্রিবিউটর (পরিবেশেক) হওয়ার পর যদি সে দু’জন ক্রেতা নিয়ে আসে এবং তারা প্রত্যেকে আরও দু’জনকে এবং সে চার জন আরও আটজনকে কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত করে, তবে প্রথম ব্যক্তি এবং দ্বিতীয় লেভেলের দু’ব্যক্তি নিম্ন লেভেলের আট ব্যক্তি ক্রেতা-পরিবেশকের সুবাদেও কোম্পানি থেকে কমিশন পেয়ে থাকে। অথচ এ আটজনের কাউকেই প্রথম ব্যক্তি ও দ্বিতীয় লেভেলের দু’ব্যক্তি কোম্পনির সঙ্গে যুক্ত করেনি; বরং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর নীতি অনুযায়ী এরা কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাদের সরাসরি ওপরের ব্যক্তির রেফারেন্সে এবং এর জন্য ওই ব্যক্তি নির্ধারিত হারে কমিশনও পাবে। এটি সুস্পষ্টই শ্রমবিহীন বিনিময় যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট, তাদের এ কারবারে বিনিময়বিহীন শ্রম ও শ্রমবিহীন বিনিময় দু’টিই পুরোপুরিভাবে বিদ্যমান রয়েছে যা শরীআতের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

(খ) একটি আকদ (চুক্তি)-এর জন্য আরেকটিকে শর্ত করা। মাল্টি লেভেল নেটওয়াকিং বৈধ না হওয়ার আরও একটি অন্যতম কারণ হলো এতে হাদীসে নিষিদ্ধ ‘একই চুক্তির জন্য আরেকটিকে শর্ত করা’ এর বিষয়টি রয়েছে। কারণ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ পণ্য ক্রয়ের শর্তেই শুধু ডিস্ট্রিবিউটর হওয়া যায়। অর্থাৎ কোম্পানি থেকে পণ্য ক্রয় ছাড়া ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে এখানে পণ্য ক্রয়কে ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার জন্য শর্ত করা হচ্ছে, যা হাদীসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একই আকদের জন্য আরেকটিকে শর্ত করা হালাল নয়।’ (তাবারানী, হাদিস: ১৬১০)

অন্য এক হাদীসে রয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) একই আকদে (চুক্তিতে) দু’টি আকদ (চুক্তি) করতে নিষেধ করেছেন।’(মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ৩৭৮৩)

এ প্রকারের বেচা-কেনা সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘একটি আকদ (চুক্তি)-এর জন্য আরেকটিকে শর্ত করা সুদী কারবার।’ (ইবন হিব্বান, হাদিস: ১০৫৩)

ইমাম শাফিঈ রহ. এ ধরনের হাদীসের দু’টি ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছেন, (১) বিক্রেতা বলল, আমি এ পণ্যটি তোমার নিকট নগদে বিক্রি করলে এত টাকায় বিক্রি করব আর বাকিতে বিক্রি করলে এত টাকায় বিক্রি করবো। অর্থাৎ নগদে কিনলে মূল্য কম ধরা হবে। (২) বিক্রেতা বলল, আমি তোমার নিকট এটি ধরা যাক একশত টাকায় বিক্রি করছি, তবে শর্ত হলো আমার নিকট তোমার ঘরটি এত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে হবে।

ইসলামিক স্কলারদের সর্বসম্মতিক্রমে এ দু’প্রকারের লেনদেনই বাতিল ও অবৈধ। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর পদ্ধতি ইমাম শাফিঈর ব্যাখ্যার দ্বিতীয়টির সঙ্গে মিলে যায়। কারণ তারা ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার জন্য পণ্য ক্রয়কে শর্ত করে থাকে। যা আকদের ওপর আকদের নামান্তর।

কোনো কোনো মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি উপরোক্ত শরয়ী সমস্যা এড়ানোর জন্য দু’টি পৃথক ফরমের ব্যবস্থা করেছে। একটি পণ্য ক্রয়ের অর্ডার ফরম, অন্যটি ডিস্ট্রিবিউটরশীপের আবেদন ফরম। তারা বুঝাতে চেয়েছে, এখানে পৃথক দু’টি চুক্তি হচ্ছে। অথচ মূলত কার্যক্ষেত্রে একটি চুক্তির জন্য অন্যটি এখনও জরুরি। অর্থাৎ পণ্য-ক্রয় ছাড়া ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া দুই ফরমবিশিষ্ট এ ধরনের কোম্পানির নীতিমালায় সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে, ‘আপনি কি জানেন যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য ক্রয় ছাড়া এখানে ডিস্ট্রিবিউটর হবার কোন সুযোগ নেই?’ (ডেসটিনি-২০০০ লিমিডেট, বিক্রয় ও বিপনন পদ্ধতি, পৃষ্ঠা : ২৬)

এমনকি এ সকল কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ ফরমেও বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে এসেছে। আবার ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার জন্য পণ্য ক্রয়ের শর্তের কথাতো দুই ফরমধারীগণও অস্বীকার করেন না; বরং তারা তো ডিস্ট্রিবিউটরদেরকে ‘ক্রেতা ডিস্ট্রিবিউটর’ নামেই উল্লেখ করেন।

সুতরাং দুই ফরমের ব্যবস্থা করায় ব্যবসাটি উপরোক্ত হাদীসের নিষেধাজ্ঞা থেকে বের হয়ে যায়নি, বরং যথারীতি আগের অবস্থাতেই বহাল আছে যা শরীআতে নিষিদ্ধ।

(গ) হাসিল হওয়া না-হওয়ার অনিশ্চয়তা। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং অবৈধ হওয়ার আরও একটি কারণ হলো, তাতে হাদীসে নিষিদ্ধ হাসিল হওয়া না-হওয়ার অনিশ্চয়তা রয়েছে। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) নুড়ি পাথর নিক্ষেপ করে ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত করা এবং বাইয়ুল গারার (অনিশ্চিত ক্রয়-বিক্রয় করা) থেকে বারণ করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৩৮৮১)

বাইয়ুল গারারের সংজ্ঞা : ইসলামি পণ্ডিতগণ বাইয়ুল গারার -এর সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। নিম্নে তা প্রদত্ত হলো : (১) আল্লামা কাসানী (রাহ.) বলেন, ‘গারার হচ্ছে এমন একটি অনিশ্চয়তা, যাতে হওয়া এবং না-হওয়া উভয় দিক বিদ্যমান।’ (বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৩৬৬)

(২) আল্লামা ইবনুল আসীর জাযারী (রাহ.) বলেন, ‘যার এমন একটি প্রকাশ্য রূপ রয়েছে, যা দ্বারা মানুষ এর প্রতি আকৃষ্ট হয়; কিন্তু এমন অদৃশ্য কারণ রয়েছে যে কারণে তা অস্পষ্ট। এর প্রকাশ্য রূপ ক্রেতাকে ধোঁকায় ফেলে। আর এর ভিতরের রূপ অজানা।’ (জামেউল উসূল, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৫২৭)

(৩) আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রাহ.) বলেন, ‘বাইয়ুল গারার ওই কারবারকে বলা হয়, যাতে পণ্য বা সেবা পাওয়া যাবে কিনা তা অনিশ্চিত অথবা চুক্তিভুক্ত ব্যক্তি নিজে তা যোগান দিতে অক্ষম অথবা যারা পরিণাম অজানা।’ (যাদুল মাআদ, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৭২৫)

(৪) কারো কারো মতে, বাইয়ুল গারার হলো, ‘যে কোনো কারবারের চুক্তির মধ্যে অনিশ্চয়তা।’ যেমন : পুকুরে বা নদীতে মাছ কেনাবেচা, আকাশে উড়ন্ত পাখি বেচাকেনা ইত্যাদি।

মোটকথা, যাতে হাসিল হওয়া বা না-হওয়ার অনিশ্চয়তা রয়েছে তাই হচ্ছে আল-গারার। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী, যে ব্যবসায় এ গারার পাওয়া যাবে তা অবৈধ ও নাজায়িয।

আল্লামা ইবন কুদামাহ তার ‘আশ-শারহুল কাবীর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ইবরাহীম হারবীকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, কোনো লোক যদি এ শর্তে মোরগ ভাড়া নিতে চায় যে, এ মোরগ তাকে সালাতের সময় ঘুম থেকে জাগাবে তবে এ ধরনের কারবার জায়িয হবে কি না? তিনি উত্তর দিলেন, না। কারণ এটি অনিশ্চিত কারবার। হতে পারে কখনো কখনো মোরগ ডাকবে না, আবার কখনো সালাতের সময়ের আগে ডাকবে বা পরে ডাকবে, আবার কখনো হয়তো তার মুখ থেকে ডাক বের করার জন্য প্রহারের প্রয়োজন হবে ইত্যাদি। সুতরাং নানাবিদ অনিশ্চয়তার সম্ভাবনা থাকায় এ ধরনের চুক্তি জায়িয নেই।’ (খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৩১৯)

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানির পদ্ধতির দিকে তাকালে অনুমেয় হয় যে, সেখানে বহু পদ্ধতিতে গারারের উপস্থিতি রয়েছে। একজন ডিস্ট্রিবিউটর যে চুক্তিতে কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো, লোকটি তার ডাউনলাইন থেকে কমিশন লাভ করতে থাকবে। অথচ তার নিজের বানানো দু’জন ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের বিষয়টি সম্পূর্ণই অনিশ্চিত এবং অন্যের কাজের ওপর নির্ভরশীল। কারণ তার নিম্নের নেটগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অগ্রসর না করলে লোকটি কমিশন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে; যে কমিশনকে কেন্দ্র করেই সে মূলত এ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

(ঘ) সুদের সাদৃশ্য ও দৃঢ় সন্দেহ। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং হালাল না হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, এতে শরীআত নিষিদ্ধ সুদের সাদৃশ্য ও সন্দেহ বিদ্যমান। ইসলামি আইন অনুযায়ী যে সকল কারবারে সুদের সাদৃশ্য ও সন্দেহ রয়েছে তা না জায়িয।

ইসলামি আইনবিদগণ এ কারণে বহু কারবারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কারণ মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম সুস্পষ্ট। এতদুভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহ ও সাদৃশ্য বিষয় যা অধিকাংশ মানুষই জানে না। কাজেই যে সাদৃশ্য ও সন্দেহ থেকে বেঁচে থাকে সে নিজের দ্বীন ও ইজ্জত রক্ষা করল। আর তাতে জড়ালো সে হারামে নিপতিত হলো।’ (বুখারী, হাদিস: ৫২)

অন্য এক হাদীসে এসেছে, ‘তোমাকে যা সন্দেহে ফেলে তা ছেড়ে তুমি নিশ্চিত জিনিসের দিকে ধাবিত হও।’ (sতিরমিযী, হাদিস: ২৫১৮)

ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা উমার (রা.) বলেছেন, ‘কুরআনের সর্বশেষ আয়াত হচ্ছে রিবা (সুদ)-এর আয়াত। মহানবী (সা.) এর মৃত্যু হয়ে গিয়েছে কিন্তু তিনি সুদের আয়াতের ব্যাখ্যা দেননি। কাজেই তোমরা সুদ এবং এমন জিনিস যাতে সুদের সন্দেহ রয়েছে তা বর্জন করো।’ (মিশকাত, হাদিস: ২৮৩০, ইবন মাজাহ, হাদিস : ২৪৭)

উমার (রা.) এর ঘোষণা হলো, যেহেতু মহানবী (সা.) সুদের আয়াতের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে যাননি সেহেতু যাতে সরাসরি সুদ রয়েছে তাতো বর্জন করতেই হবে পাশাপাশি যাতে সুদের সন্দেহও সাদৃশ্য রয়েছে তাও বর্জন করতে হবে।

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ সুদের সাদৃশ্য-এর বিবরণ এভাবে দেওয়া যায় যে, এসব কোম্পানিগুলোতে ডিস্ট্রিবিউটররা পণ্য ক্রয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ হয় কমিশন পাওয়ার আশায়। এতে বুঝা যায়, সে পণ্য ক্রয় বাবদ যে টাকাটি দিয়েছে তা শুধু ওই পণ্যের মূল্য হিসেবেই দেইনি বরং তা দেওয়ার পেছনে তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ডাউনলাইনদের কাছ থেকে কমিশন ভোগ করা। পণ্যের মূল্য প্রদানের পাশাপশি কমিশনের যে সুযোগের আশায় সে এ কারবারটি করছে তাই ইসলামি শরীআতের পরিভাষায় সুদের সাদৃশ্য।

কারো নেট চলমান থাকার কারণে সে নির্দিষ্ট টাকার মোকাবেলায় কমিশন পাওয়ার বিষয়টি যেমনি সুদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, তেমনি যার নেট একেবারেই অগ্রসর হয়নি তার বিষয়টিও সুদের সাদৃশ্য থেকে মুক্ত নয়। কারণ সে তো টাকা দিয়েছিল পণ্য এবং ডিস্ট্রিবিউটর হয়ে কমিশন ভোগ করার জন্য। অথচ ডিস্ট্রিবিউটরের কোনো সুবিধাই সে পায়নি। তথা কিছু টাকা বিনিময়ের অতিরিক্ত থেকেই যাচ্ছে যা ইসলামি আইনের দৃষ্টিতে সুদের সাদৃশ্য বা সন্দেহমূলক সুদ।

আর তাছাড়া উপরে আমরা পদ্ধতিগত দিকের প্রথম যে কারণ ‘শ্রমবিহীন বিনিময় এবং বিনিময়বিহীন শ্রম’ উল্লেখ করেছি তাও ইসলামী শরীআতের দৃষ্টিতে সন্দেহমূলক সুদের আওতাভুক্ত। কারণ সেখানে শ্রম না দিয়ে বিনিময় নেওয়াটি যেমন সুদ সাদৃশ্য, তেমনি শ্রম নিয়ে বিনিময় না দেওয়াটিও সুদ সাদৃশ্য।

(ঙ) জুয়ার সাদৃশ্য। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং ব্যবসা না জায়িয হওয়ার আরও একটি কারণ হলো, এর সঙ্গে জুয়ার সাদৃশ্য রয়েছে। ইসলামি পণ্ডিতগণ এ ব্যবসাকে জুয়ার সঙ্গে তুলনা করে একে হারাম ফতোয়া দিয়েছেন। এ ব্যবসায় একজন ডিস্ট্রিবিউটর পণ্য ক্রয় করার পর সে যদি তার ডান ও বাম হাত উভয় দিকে সমান্তরাল ডিস্ট্রিবিউটর বাড়াতে পারে তবে সে কমিশন পাবে অন্যথায় সে কোনো কিছুই পাবে না। এটি জুয়ার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর জুয়াকে ইসলামি আইন হারাম করেছে।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্‌ বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপুজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কার্য। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’(সুরা মায়িদা, আয়াত : ৯০)

(চ) বাতিল পন্থায় মানুষের মাল ভক্ষণ। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং হালাল না হওয়ার আরও একটি অন্যতম কারণ হলো, এর মাধ্যমে ‘অন্যায়ভাবে অন্যের মাল ভক্ষণ’করা হয়, যা ইসলামি আইনে নিষিদ্ধ। এ ব্যবসায় আপলাইনের ডিস্ট্রিবিউটররা ডাউনলাইন ডিস্ট্রিবিউটরের বিক্রি থেকে ‘তত্ত্বাবধানের’নাম দিয়ে যে বিশাল কমিশন ভোগ করে, ইসলামি আইনের পণ্ডিতগণ সেটাকে ‘অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ’-এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কারণ তাতে শ্রমবিহীন বিনিময় রয়েছে যা আমরা ইতোপূর্বের আলোচনায় সাব্যস্ত করে এসেছি।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্‌ অন্যায়ভাবে অন্যের মাল ভক্ষণকে সম্পূর্ণভাবে হারাম করে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা।’(সুরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯)

বিখ্যাত মুফাসসির আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘বিনিময়ের শর্তযুক্ত চুক্তিতে বিনিময়বিহীন উপার্জনই হল বাতিল পন্থায় উপার্জন।’(আহকামুল কুরআন (জাসসাস) খণ্ড ২, পৃষ্ঠা : ১৭২)

মোটকথা, এ আয়াতে ‘অন্যায়ভাবে’ বলতে এমন সব কারবারকে বুঝানো হয়েছে যা আল্লাহ্‌ ও তার রাসুল (সা.)নিষিদ্ধ করেছেন।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ উল্লেখ করেন, এখানে ‘অন্যায়ভাবে’বলতে ‘এমন সব পদ্ধতির কথা বুঝানো হয়েছে যা সত্য ও ন্যায়নীতি বিরোধী এবং নৈতিক দিক দিয়ে ও শরীআতের দৃষ্টিতে নাজায়িয।’

ওআইসির ইন্টারন্যাশনাল ফিকহ একাডেমির চীফ স্কলার প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার আবু গুদ্দাহ এ সংক্রান্ত তার ফতোয়ায় বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘…compound brokerage falls under the category of eating up another’s property unjustly and has an element of gambling in it. The main factor that contributes to this is the fact that compound brokerage automatically implies that a portion from the sales of the down line will be channeled to the up line.’ (The Awakening, November 2008)

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর কমিশন পদ্ধতিতে কিভাবে ‘জুয়াবাজী’ও ‘অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ’ জড়িয়ে আছে তার একটি চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়ে শেখ সালীম আল-হিলালী বলেন, ‘This type of business is pure gambling because the purpose is to develop continuous network of people. With this network, large number of people at the bottom of the pyramid (down line) pays money to a few people at the top (up line). In this scheme, no new wealth is created; the only wealth gained by any participation is wealth lost by other participants. Each new member pays for the chance to profit from payment of others who might join later.” (The Awakening, November 2008)

(ছ) প্রতারণা। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং হালাল না হওয়ার আরও একটি কারণ হলো, তাতে রয়েছে বড় ধরনের প্রতারণা। অর্থনীতির হিসেবে কোনো অবস্থাতেই তাদের এ ব্যবসায় এক মাসে ১০ বা ২০ শতাংশ লাভ হতে পারে না। তাই এ ধরনের লাভ দিতে হলে কাউকে না কাউকে ঠকাতে হবেই। ফলে শর্তের মারপ্যাঁচ বুঝে উঠার আগেই প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এক শ্রেণীর লোকেরা।

অথচ মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৯৫)

গ্রাম পর্যায়ে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ সকল কোম্পানির অধিকাংশ ক্রেতাই আপলাইনের অগণিত মধ্যস্বত্বভোগীদের কমিশনের কথা জানে না। এ হিসেবে তো এটি সুস্পষ্ট প্রতারণার শামিল।

পৃথিবীতে যত মাল্টি লেভেল ব্যবসা রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ সফল হয়েছে মিশিগানের ‘অ্যামওয়ে’ নামের এমএলএম কোম্পানি। সেখানে ১০ শতাংশ ডিস্ট্রিবিউটর লাভ বা সফলতার মুখ দেখেছে, বাকী ৯০ শতাংশ তাদের কস্টার্জিত অর্থ কোম্পানির ওই ১০শতাংশের পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেরা প্রতারিত হয়েছে।

(জ) বর্ধিত মূল্যে বিক্রয়। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং না জায়িয হওয়ার আরও একটি কারণ হলো, এ সকল কোম্পানি পণ্যের যথাযথ মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে তা বিক্রয় করে থাকে। আর এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয় যা শরীআত অসঙ্গত।

আমরা জানি, ট্রাডিশনাল মার্কেটিং-এ একটি পণ্য উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে উৎপাদক + এজেন্ট + পাইকার + খুচরা বিক্রেতা + ভোক্তা ইত্যাদি কতিপয় মধ্যস্বত্বভোগী থাকে। কিন্তু মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ এসকল মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের বাদ দিয়ে তারা নিজেরাই ডাউনলাইন ও আপলাইন নাম দিয়ে শত সহস্র মধ্যস্বত্ত্বভোগী সৃষ্টি করে চলছে। এ বিপুল সংখংক মধ্যস্বত্বভোগীকে কমিশন দিতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই কোম্পানিকে বর্ধিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হয়। তাই তারা প্রচলিত পণ্যদ্রব্য পরিহার করে এমন পণ্য মার্কেটে নিয়ে আসে যেগুলো সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারণা নেই।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘নাইজেলা’ নামক তৈল যার প্যাকেজ মূল্য ৬০০০ টাকা। মাত্র এ ৬০০০ টাকায় কোম্পানি ২৭৭৫ টাকা লাভ করে বলে স্বীকার করা হয়। এভাবে অন্যান্য পণ্যগুলোও দ্বিগুন বা তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হয়।

ইসলামি শরীআতে ক্রয়-বিক্রয় ও যাবতীয় চুক্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার প্রতি জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলামি আইনে পণ্যের গুণগত মান ও ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে। ভিন্ন কোনো পদ্ধতিতে বাজার প্রভাবিত করা শরীআতে নিষিদ্ধ।

সুতরাং পণ্যের মান বৃদ্ধি না করে কোনো কৌশল অবলম্বন করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করাকে ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। যে সব কৌশলের মাধ্যমে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হয় তার প্রতিটিই ইসলাম হারাম করেছে। যেমন : দাম বাড়ানোর জন্য দ্রব্য মজুত করা। যারা এরূপ করে ইসলামের পরিভাষায় তারা অভিশপ্ত।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বর্ধিত মূল্যে বিক্রির উদ্দেশ্যে পণ্য আটকে রাখে সে গুনাহগার।’ (মুসলিম, হাদিস: ২১৬৪)

অনুরূপ কৌশলে শহরের বাইরে থেকে আগত লোকদের থেকে অল্প মূল্যে মাল ক্রয় করে তা বেশি দামে বিক্রি করা হলে তা থেকেও মহানবী (সা.) বিরত থাকতে বলেছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) শহরে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি শহরের বাইরে থেকে আগত কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পণ্য কিনে তা শহরের বাসিন্দাদের কাছে বিক্রি করা থেকে বারণ করেছেন।’(মুসলিম, হাদিস নং: ৩৫২৪)

এ নিষেধাজ্ঞার ফলে শহরে বসবাসরত মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা লাভের বিষয়টি বন্ধ হয়ে গেলে তারা একটু বেশি পরিশ্রম দেখানোর জন্য আগে-ভাগে শহরের বাইরে গিয়ে পথিমধ্যে বিক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে, তা শহরে এনে বেশি দামে বিক্রয় করার কৌশল অবলম্বন করলে সে ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) শহরবাসীকে শহরমুখী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পণ্য ক্রয় করে তা শহরে এনে বেশি দামে বিক্রয় করতে বারণ করেছেন।’(মুসলিম, হাদিস : ৩৮৯১)

সুতরাং এটি সুস্পষ্ট যে, ইসলামি আইন দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি গুরুত্বসহ নিয়েছে। কোনো প্রকার কৌশল অবলম্বন বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা শরীআত সঙ্গত নয়। বৃহৎ অর্থনীতির অনিবার্য ক্ষেত্রসমূহে কিছু নিয়ন্ত্রিত মধ্যস্বত্বভোগীর অনুমতি দিলেও ভোক্তা ও উৎপাদকের মাঝে অনর্থক মধ্যস্বত্ত্বভোগীর সংখ্যা বাড়ানো ইসলামে নিষিদ্ধ।

(ঝ) ইজারা চুক্তির উসূলের পরিপন্থী। এমএলএম অবৈধ হওয়ার আরও একটি কারণ হলো, তাদের কোনো কোনো পদ্ধতি ইজারা চুক্তির মূলনীতির পরিপন্থী। আমরা জানি, এ সকল কোম্পানিগুলোর ব্যাখ্যা অনুযায়ী ডিস্ট্রিবিউটরশিপ চুক্তিটি শরীআতের দৃষ্টিতে ‘আকদুল ইজারাহ।’ আর ‘আকদুল ইজারাহ’এর দু’টি মৌলিক দিক রয়েছে। (১) শ্রম বা সেবা, (২) পারিশ্রমিক বা বিনিময়। আকদুল ইজারাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য এ দু’টি শর্ত বিদ্যমান থাকতেই হয়। কিন্তু কোনো কারবারে যদি এ দু’টির কোনো একটি না থাকে তথা সেবা বা শ্রম পাওয়া গেল কিন্তু বিনিময় পাওয়া গেল না, কিংবা সেবা বা শ্রম ছাড়াই বিনিময় পাওয়া গেল তবে সে কারবারটি ইসলামি আইনে বৈধ নয়। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ যেহেতু দুটোরই সম্ভাবনাই রয়েছে সেহেতু এ কারবার ও ব্যবসা হালাল নয়।

এমএলএম-এর সমর্থকদের যুক্তি ও তা খণ্ডন : যারা এ ব্যবসাকে বৈধ বলে তারা বহুস্তর সুবিধাকে জায়িয করার জন্য যে সকল যুক্তি প্রদান করে থাকে তার কিছু আমরা উপর্যুক্ত আলোচনায় অপনোদন করেছি। যেমন: দু’ফরমের ব্যবস্থা। নিম্নে তাদের আরও কিছু যুক্তি তুলে ধরে সেগুলো খণ্ডন করা হলো-

প্রথম যুক্তি : ‘বহুস্তর সুবিধা’সদকায়ে জারিয়ার ন্যায়। এই কারবারের সমর্থকরা শ্রমের বহুস্তর সুবিধাকে সদকায়ে জারিয়ার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘সদকায়ে জারিয়ায় ব্যক্তি যেমন একবার শ্রম দিয়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত এর ফল ভোগ করতে পারে তেমনি এখানে একজন একবার প্রত্যক্ষ শ্রম দিয়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত তা ভোগ করার বৈধতা রাখে।’

যুক্তি খণ্ডন : তাদের এ যুক্তির তিনটি উত্তর রয়েছে। (১) সদকায়ে জারিয়া একটি আধ্যাত্মিক বিষয় যার সঙ্গে অর্থ ও শ্রম নীতির কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ সদকায়ে জারিয়ায় ব্যক্তি যেই ফল পায় তা হলো ছাওয়াব যার কোনো আর্থিক মূল্য নেই। সুতরাং তাদের এ তুলনা বা কিয়াসটি যথাযথ হয়নি। নিরেট ছাওয়াবের বিষয়কে আর্থিক মূল্যের সঙ্গে তুলনা না করাই নীতিগত বিষয়। (২) সদকায়ে জারিয়ার সঙ্গে এমএলএম-এর তুলনা করতে হলে কোম্পানিগুলোকে ঘোষণা দিতে হবে যে, ‘প্রতিটি ব্যক্তি তার প্রত্যক্ষ শ্রমের ভিত্তিতে সে সরাসরি যার নিকট পণ্য বিক্রি করবে শুধু তার নিকট থেকে কমিশন পাবে। বাদবাকি যাদের ক্ষেত্রে তার প্রত্যক্ষ শ্রম নেই তাদের উপকার করার কারণে তাদের কাছ থেকে শুধু ছাওয়াবের আশা করবে ‘ তারা এরূপ ঘোষণা দিলে তাদের সঙ্গে ইসলামও একমত। (৩) সদকায়ে জারিয়ার বিষয়টি শরীআত প্রণেতা কর্তৃক স্বীকৃত এবং এর ছাওয়াব তিনি নিজ ভাণ্ডার থেকে দেন। এতে অন্য কারো ক্ষতি হচ্ছে না। কিন্তু এমএলএম কোম্পানিগুলো কমিশনটি নিজেদের তহবিল বা ভাণ্ডার থেকে দেয় না বরং তা নতুন ক্রেতার নিকট কমদামি পণ্যটি চড়া দামে বিক্রি করার মাধ্যমে বর্ধিত মূল্যের একটি অংশকে কেটে কেটে প্রদান করে। কাজেই সদকায়ে জারিয়ার সঙ্গে এর তুলনা অমূলক।

দ্বিতীয় যুক্ত : ডাউনলাইনের লোকদের পেছনে আপলাইনের লোকদের কোনো না কোনো শ্রম থাকে। তারা বলে, ‘আপলাইনের লোককে তার নেট সম্প্রসারণের জন্য প্রচুর পরিমানে খাটতে হয়। ‘সে ঘরে বসে থাকলে তার নেট অগ্রসর হতো না’অথবা ‘যেহেতু আপলাইনের লোকের সরাসরি প্রচেষ্টায় দু’জন লোক যুক্ত হয়েছে এবং তাদের মাধ্যমে আরো দু’জন, এভাবে নেট সম্প্রসারিত হয়েছে। কাজেই ধরে নেওয়া যায় যে, সকল ক্ষেত্রেই তার শ্রম রয়েছে।’

যুক্তির খণ্ডন : ইসলামি শরীআতের আইন মতে তাদের এ যুক্তিটি বাতিল যুক্তি। কারণ শরীআতের দৃষ্টিতে কোনো কারবার বৈধ-অবৈধ হওয়ার ভিত্তি হচ্ছে এর চুক্তিনামার শর্তাবলি। অর্থাৎ কোনো চুক্তিতে শরীআত নিষিদ্ধ ধারা উল্লেখ থাকলে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে। যেহেতু এমএলএম আইন অনুযায়ী অধীনস্থ নেট সম্প্রসারণে উপরস্থ ব্যক্তির শ্রম থাকুক বা না থাকুক নেট চালু থাকলে প্রত্যেকেই চুক্তি অনুযায়ী কমিশন লাভ করবে সেহেতু এ চুক্তিটিই শরীআত সম্মত হয়নি। আর তাদের দ্বিতীয় বাণী, ‘ধরে নেওয়া যায় যে, সকল ক্ষেত্রেই তাদের শ্রম রয়েছে’এটি ভিত্তিহীন। কারণ আপলেভেলে দু’ব্যক্তিকে যুক্ত করার কারণে ডাউনলেভেলের সকলের অন্তর্ভুক্তিতে তার শ্রম রয়েছে- এমন কথা সুস্থ বিবেক মেনে নিতে পারে না।

তৃতীয় যুক্তি : ‘বহুস্তর সুবিধা’বইয়ের প্রচার স্বত্ত্বের মতো। তারা বলে, একজন লেখক তার বইয়ের প্রতি সংস্করণের জন্য প্রকাশক থেকে টাকা পেয়ে থাকে, এমএলএম-এর কমিশনও সে ধরনের কিছু।

<p

Likes Comments
০ Share

Comments (2)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    কবিতা বেশ লাগল---------

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    নিজের কাছে নিজেকে থাকা হয়না আসলে।

    আমরা সবাই নিজেকে লুকিয়ে রাখি অন্যের কাছ থেকে। নিজেকে সাজাই অন্যের জন্যে। কখনো নিজের অজান্তেই অন্যের হয়ে যাই।