খুব সম্ভবত একটু পরেই আমার ট্রেন,
ঘড়ির কাটায় গুনে গুনে- ঠিক পনেরো ঘন্টায় ছাড়বে গাড়ি।
হাত ঘড়িটার আয়ু ফুরিয়ে গিয়ে-
সাতটা চল্লিশে দাঁড়িয়ে আছে চারদিন আগে থেকে।
অনেক কিছু ভেবে চিন্তে অবশেষে বাড়ি ছাড়ছি আমি…
হয়তো আর ফেরা হবেনা এ তল্লাটে।
এই রাস্তা, চায়ের দোকন- বটতলার মোড়ের নিতাই লন্ড্রী,
তোমাদের পুরানো কাঠের দোতলা বাড়ি আর এই ষ্টেশন,
সবকিছুই হবে ধোঁয়াটে কোন স্মৃতি।
মগজের সব অলি-গলি পার হয়ে স্বপ্নেরা এসে হানা দেবে একদিন-
এইখানে, সেইসব পথে- যেখানে হেঁটেছি শৈশবে,
কিংবা সেই ঝিলে যেখানে নৌকা চেপে কেটেছে অগুনতি বেলা।
সময় যেন ব্যস্ততা ভুলে থমকে গেছে এক অজানা পলে, অথচ-
আমি বসে আছি ষ্টেশনে, একটু পরেই আমার ট্রেন।
আমি ছেড়ে যাব আমার ঘর, আমার পরিচিত সব মানুষ আর তোমাকে…
যে তোমাকে দেখব বলে বটতলা থেকে নতুন বাজার,
সাইকেল চেপে কলেজ মোড়… এভাবে কেটেছে দিন।
তারপর সময়ের স্রোতে সব দিন রাত মিলে হয়েছে একাকার
নতুনত্বের অভিপ্রায়ে আমিও নিজেকে বদলে নিয়েছি এরপর।
সবকিছু ভুলে তাই হঠাৎ স্বেচ্ছা নির্বাসন
সবাই জানবে- হারিয়ে গেছি আমি,
লাল চাদরের মত হাওয়ায় ছড়াবে আমার উপাখ্যান।
এসব যখন নির্ধারিত হতে হতে পরিপূর্ণের অপেক্ষায়-
তখন আমার হাতে তোমার চিঠি,
তুমি বলেছ তোমার ভালবাসার কথা।
যে ভালবাসার জন্যে একদা হয়েছি ব্যাকুল,
যে তোমাকে পাবার আশায় নিরুদ্দেশ হয়েছে আমার প্রতিক্ষণ-
সেই তোমায় পেয়েও আজ আমি সর্বহারা।
টিক টিক করে এগিয়ে আসছে সময়,
আর একটু… হয়ত আর একটু পরেই আমার ট্রেন,
ঘড়ির কাটায় গুনে গুনে ঠিক পনেরো ঘন্টায় ছাড়বে গাড়ি।
আমি ছুটে যাব সামনে, এই সময়কে পেছনে ফেলে এক অনতিক্রান্ত সময়ে…
-কৃষ্ণেন্দু দাস, (প্রথম শ্রাবন, ১৪২২ বঙ্গাব্দ)