বাংলা সাহিত্যের এক একাগ্রচিত্তের ক্ষুদ্র পাঠক হিসাবে মনটা আমার বিষন্নতায় ভরে যাচ্ছে দিন দিন। তুষের আগুনের মতো যন্ত্রনা জমা হচ্ছে হৃদয়ের গভীরে। বাংলা সাহিত্য আজ কোন দিকে ধাবমান। আমার চোখ শুধু ধ্বংসই দেখছে। আমি জানি, আমার বন্ধুদের তালিকায় অনেক জ্ঞানী, কবি ও লেখক আছেন আমি বিশেষভাবে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমার দুঃখের কারণ বাংলা সাহিত্যের শব্দ মাত্রায় ইংরেজি শব্দের আধিক্য। এবং কেন?? বিদ্যালয়ে পরীক্ষার সময় লিখতে গিয়ে যখন বাংলাতে সাধু- চলিত ভাষার মিশ্রণ করতাম তখন আমার শিক্ষকেরা ফলাফলের অঙ্ক কমিয়ে দিতেন। তবে আজ সেই বাংলা সাহিত্যে বাংলা-ইংরেজির মিশ্রণে কি করে গল্প/ উপন্যাস প্রকাশিত হয়? বাংলা সাহিত্য পরিষদ এ বিষয়ে কখনো কিছু ভাবছেন কী? আমি প্রথমে ক্ষমা চাইছি মুখগ্রন্থে ( ধন্যবাদ আমার প্রিয় কবি #অসীম সাহাকে যাঁর আজকের লেখা থেকে আমি “#মুখগ্রন্থ” শব্দটি আত্মস্থ করলাম) প্রকাশিত #লাবনী উপন্যাসের লেখক #মারুফ রেহমানের নিকটে। (শুধুমাত্র উদাহরণের জন্য ।) আমি সমালোচনা করতে চাই না শুধু আলোচনার জন্য বলতে হচ্ছে তাঁর এই উপন্যাসের খণ্ড অংশ পেলাম মুখগ্রন্থে যার মধ্যে আমি ( ড্রেসিং করা, ব্রাউন প্যাকেট, ইউ আর ওয়েলকাম, প্যাকেট, স্যালোয়ারের সাথে, ,ম্যাচিং এর,থ্যাংকস, ইউ আর ওয়েলকাম, ডিজাইনার, কালার, রঙ চেঞ্জ,)
এই শব্দ গুলো পেলাম। আমার আলোচনা এবার একটু বৃদ্ধি করতে চাই। বাংলা সাহিত্যের কিছু উজ্জ্বল নক্ষত্রের মাধ্যমে। যদিও আমি সবার সম্মন্ধে নিতান্তই অজ্ঞ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন ঊনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই লাভ করেন বিদ্যাসাগর উপাধি। সংস্কৃত ছাড়াও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তাঁর। কিন্তু তার পরও তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ করে তোলেন ও অপরবোধ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। রচনা করেছেন জনপ্রিয় শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয় সহ, একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা। কিন্তু কখনো কি তিনি বাংলা সাহিত্যে বিজাতীয় শব্দের ছোঁয়া লাগতে দেছেন?? না।
কবিগুরু ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত একাধারে ছিলেন বহু ভাষাবিদ। তিনি ইংরেজি ছাড়াও ল্যাটিন,গ্রীক, ফারসি, হিব্রু, তেলেগু, তামিল ইত্যাদি ভাষায় অনায়াসে কথা বলতে পারতেন।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনতৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তাঁর বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি, তাদেরকে ঘরে আরবী ও উর্দু শেখানো হয়।
রামমোহন রায় বারাণসী থেকে প্রথাগত সংস্কৃত শিক্ষার পর তিনি পাটনা থেকে আরবী ও পারসী ভাষা শেখেন। পরে তিনি ইংরেজী, গ্রীক ও হিব্রু ভাষাও শেখেন।
তারপর ও কি এসকল গুণী সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যের মধ্যে বিজাতীয় সাহিত্য কিংবা শব্দের প্রাধান্য দিয়েছেন? কখনো না। তাঁরা বাংলা সাহিত্যকে সর্বদা স্বতন্ত্র রেখে গেছেন। তবে আজ কেন কবি সাহিত্যকগণের মধ্যে এমন দশা? কেন এত বিজাতীয় শব্দের প্রতি মোহ? কেন আমাদের বাংলার মাধূর্যমণ্ডিত শব্দের ব্যবহার কমিয়ে বাংলা সাহিত্যের শিল্পকে ধ্বংসের প্রচেষ্টা। আমি বিশ্বাস করি অল্প বিদ্যা ভয়ংকার। তাই ভাষা আদায়ের মাসে আমার প্রিয় কবি-লেখকগণের কাছে একটাই অনুরোধ, দয়া করে আপনারা এই অন্ধ অনুকরণ বন্ধ করুন। বাংলা শব্দ ভাণ্ডার অনেক সমৃদ্ধ । বিশ্বের সকলের কাছে তা সমাদৃতও বটে। আমার মতো ক্ষুদ্র পাঠকদের, বাংলা সাহিত্যে অনুরাগীদের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যবিমুখ করার মধ্য দিয়ে মানসিক রোগী তৈরি করবেন না। সহস্রবার অনুরোধ করছি।
#প্রবীর (প্রবন্ধটি কারো মনে আঘাত দিলে বা এখানে কোনো ত্রুটি থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী)
Comments (0)
বেশ রোমান্টিক কবিতা
বাহ্!