Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মামুন

৯ বছর আগে লিখেছেন

দুইজন বাবা

দুইজন বাবা

 

১৯৮৪ ইং সালে আমি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হই

আমার জীবনকে সম্পুর্ণ ওলট-পালট করে দিয়ে চিন্তা-ভাবনার জগৎটাকে সহ আমি এক ভিন্ন যায়গায় এসে পড়লাম যেনসবে ছয়টি ক্লাস পার করা বলতে গেলে এক  শিশুই তো ছিলাম তখনোসারাদিন ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ানো খুলনার চিরপরিচিত সেই মুক্ত পরিবেশ থেকে আমাকে নিয়ম-শৃংখলার এক আবদ্ধ ভূবনে পাঠানো হলযেখানে সবাধীনভাবে শ্বাস নেবার মতোও অবকাশ ছিল নাআর 'সিনিয়র' নামের কিছু দানব সদৃশ দু'পেয়েদের নিষ্ঠুরতায় সেই পরাধীন জগতটি আরো ভয়ংকর হয়ে উঠল আমার কাছে

 

শারীরিক এবং মানসিক টর্চারে আমার ঠাই হয়েছিল যশোহর সিএমএইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) এর কমিশন্ড ব্লকেআমার 'প্লুরাল ইফিউসন' হয়েছিলঅবস্থা খুবই সিরিয়াস আঁকার ধারণ করেআমি কেমন একটা ঘোরের ভিতর থাকতামআজ অনেক বছর হয়ে গেলেও আবছা আবছা সে সময়গুলোকে এখনো মনে করতে পারি

 

আমার আব্বা তখন খুলনা কাস্টমস হাউসে 'প্রিভেন্টিভ অফিসার' পদে কর্মরতপ্রতিদিন খুলনা থেকে অফিস করে তিনি আমাকে দেখতে আসতেনআমার সাথে কিছু সময় কাটিয়ে আবার বাসায় চলে যেতেন পরবর্তি দিনে অফিস করার জন্যআমার জ্ঞান ফিরলে আমি আমার আব্বাকে আমার পাশে বসা দেখতে পেতামতখন খুলনা থেকে যশোর এর রাস্তা ছিল খুবই খারাপআর আমার আব্বা একটি মটর বাইক চালাতেনসারাদিনের ক্লান্তিকে ঝেড়ে ফেলে বিকেল ৫টার পরে সেই বাইকটি নিয়ে প্রতিদিন আমাকে দেখতে চলে আসতেন সিএমএইচে!! এভাবে প্রায় ৪ মাস ওনাকে আসতে হয়েছিল

 

আজ আমি নিজেই সুন্দরী বাবু এবং জ্ঞানী বাবু'র পাপা!

আর আমার আব্বা থেকে অনেক দূরে রয়েছি... প্রায় ১৪ বছর ধরে

বছরে ও একবার তাঁর সাথে দেখা হয় নামোবাইলে কথা হয়তবে এখন আর তিনি সেইভাবে আমাকে চিনতে পারেন নাআমাদের চারভাই এর নাম্বার  তাঁর মোবাইলে সেভ করা রয়েছেতারপরও  অনেকক্ষণ কথা বলার পরে হঠাত বলে উঠেন, " কে তুই?"আসলে আব্বা আব্বার মতই রয়ে গেছেনআমিই পালটে গেছিনা হলে আমি কেন তাকে দেখতে যেতে পারি না?

 

আমার দুই মেয়েকে ছেড়ে সপ্তাহের ৫ দিন ঘন্টাখানেক দূরত্তের পথ থাকতে আমার কেমন কষ্ট হয় সেটা এখন অনুভব করছিআর আমার আব্বা আমাকে ছেড়ে এতোগুলো বছর হৃদয়ে কি যাতনা ই না অনুভব করছেন!

 

১৯৮৪ ইং সালে একজন বাবা তাঁর শত ব্যস্ততার মাঝেও তাঁর সন্তানকে প্রতিদিন সময় দিয়েছিলেনএরপর আরো অনেকগুলো বছর ও দিয়েছেন... যতদিন জীবিত থাকবেন দিয়ে যাবেন

কিন্তু সেই সন্তান আজ বাবা হয়ে তাঁর জনকের জন্য কিছুই করছে নাএতটাই যান্ত্রিক জীবনে সে অভ্যস্ত যে হৃদয়টাও তাঁর যন্ত্রে পরিণত হয়েছে

আসলে দুইজন বাবা লেখাটাই ভুল হয়েছে

এখানে একজন ই বাবা!

দুই সন্তান  এর জন্মনিবন্ধন কার্ডে আমার নাম লেখা থাকলেও আজো আমি বাবা হতে পারলাম না!!

Likes ১০ Comments
০ Share

Comments (10)

  • - রব্বানী চৌধুরী

    ভালো লাগলো পোষ্ট, জানা হলো বেশ, শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা জানবেন ভালো থাকবেন।