Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

পাশা নূর

৯ বছর আগে লিখেছেন

আসলে আমরা কোথায় আছি

একটা বই পড়ছি; নাম “দি নিউ ডিজিটাল এজ” (নতুন ডিজিটাল যুগ)। ট্যাগ লাইনে লেখা রয়েছে – রিশ্যাপিং দি ফিউচার অফ পিপল, নেশন এন্ড বিজনেস (মানুষ, জাতি ও ব্যবসার ভবিষ্যতকে পুনঃর্গঠন)। বইটি যৌথভাবে লিখেছেন গুগলের চেয়ারম‌্যান এরিক স্মিডট এবং গুগল আইডিয়াস-এর ডিরেক্টর জ্যারেড কোহেন। বইটি একটি বেস্টসেলার।       বই পড়তে আমার সময় লাগে। আমি হুট করেই একটা বই শেষ করে ফেলতে পারি না। অনেক দিন ধরে একটু একটু করে পড়ি। একটি বই বেশ কিছু দিনের জন্য আমার সঙ্গী হয়ে থাকে। এবারেও তাই হচ্ছে। বইটি কিনেছিলাম এয়ারপোর্ট থেকে। প্লেনে বসেই কিছুটা পড়েছিলাম। তারপর পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা এগুচ্ছে- ধীর গতিতে।       তবে মজার ব্যাপার হলো, বইটা আমি যতই পড়ছি, ততই মুচকি মুচকি নিজের মতো করে হাসছি। বইটিতে বলা হয়েছে কীভাবে আমাদের জীবন পাল্টে যাচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে আমাদের এই পৃথিবীর মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তারা কীভাবে যোগাযোগ করবে, কীভাবে ব্যবসা পরিচালিত হবে, এবং সমাজ, দেশ, রাজনীতি, রাষ্ট্র পরিবর্তিত হবে ইত্যাদি। মূলত ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন পাল্টে দিচ্ছে এই গ্রহটিকে- এমনকি আফ্রিকার অনুন্নত একটি জাতিকেও। এটাই মূল বিষয়। পুরো বইটি যেহেতু পড়া শেষ হয়নি, তাই পুরো মন্তব্য করতে পারছি না। তবে সূচিপত্র এবং শিরোনাম থেকে সেগুলো অনুমান করতে পারছি। বইটার অনেক বিষয়ই সাধারণ মানুষের কাছে “বিজ্ঞান কল্পকাহিনী” মনে হতে পারে। কিন্তু আমি হাসছি ভিন্ন কারনে। এর অনেক কিছুই আমার এক যুগ আগের অনেক লেখার সাথে মিলে যাচ্ছে। (যারা আমার পুরনো লেখার সাথে পরিচিত, তারা বইটি পড়ে দেখতে পারেন)। পাশাপাশি এই বইটির প্রায় সবকিছুর সাথেই আমি একমত; এবং এর ভেতর যে এক ধরনের দর্শন রয়েছে, সেটাও আমার ভেতরের চিন্তার সাথে মিলে যাচ্ছে। তাই বইটি পড়ে বেশ আনন্দ পাচ্ছি।       বইটির একটি চ্যাপ্টারের অংশ রয়েছে সংবাদ মাধ্যম, সাংবাদিকতা এবং তার চ্যালেঞ্জ নিয়ে। বিষয়টি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার সাথে বেশ মিলে যাচ্ছে। তাই অনেকের সাথে বিষয়টি শেয়ার করছি। হয়তো কারো চিন্তার পরিবর্তন হলেও হতে পারে।       লেখকদ্বয় বলছেন, বর্তমান ইন্টারনেট এবং মোবাইল প্রযুক্তির বিকাশের ফলে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি খেয়েছে যে শিল্প তাহলো গণমাধ্যম, বিশেষ করে সাংবাদিকতা পেশাটি। নতুন এই প্রযুক্তি পুরো শিল্পটিকে একদম নতুন একটি মাত্রা এনে দিয়েছে, যা সাংবাদিকতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা লেখাপড়া করেছেন তাদেরও ধারনার বাইরে। রিপোর্টিং ফরম্যাট এবং মাত্রা পুরোপুরি ভিন্ন হয়ে গেছে। অনলাইন, টুইটার, ফেসবুক ইত্যাদির কারনে এখন প্রতিটি মানুষই হয়ে উঠেছে একেকজন সাংবাদিক। প্রথাগত সাংবাদিকতার ভিত্তিটিকে ভেঙ্গে দিয়েছে এই নতুন বিশ্ব। একজন গ্রামের মানুষই তার নিজের ঘটনার বর্ণনা দিতে পারছেন, যা মুহুর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে- যা আগে কল্পনাও করা যেতো না।       প্রথাগত সংবাদমাধ্যমগুলো বিশেষ করে সংবাদপত্রগুলো এখন আর ব্রেকিং নিউজ দিতে পারছে না, এবং পারবেও না। কারণ, এখন বেশি ব্রেকিং নিউজ পাওয়া যাচ্ছে টুইটারে, নয়তো ফেসবুকের স্ট্যাটাসে। ওসামা বিন লাদেনের বাড়িতে যে আক্রমন হয়েছিল, তা পাকিস্তানের সেই পাহাড়ি অঞ্চল থেকে একজন টুইট করেই জানিয়েছিলেন। এই পরিবর্তনের কারণে প্রথাগত সংবাদ মাধ্যমগুলো বিশাল একটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে; এবং তাদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। যে কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিশ্বের অনেক বড় বড় সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, নয়তো কর্মী ছাঁটাই করছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো পুরনো পত্রিকাকেও সাংবাদিক ছাঁটাই করতে হয়েছে।       একবার ভাবুন তো, সবার কাছেই স্মার্টফোন আছে, এবং তারা ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত। তাহলে তারা চাইলেই তাদের নিজেদের কথা কোথাও না কোথাও বলতে পারছে। তাহলে আর সাংবাদিক লাগবে কেন? হুম, তারপরেও কিছু সাংবাদিক প্রয়োজন হবে, যারা খুব ভালো এনালাইসিস লিখতে পারবেন। কিছু পাঠক থাকবে, যারা দুটি কারণে সংবাদপত্র পড়বে – (১) সংবাদের সত্যতা যাচাই করার জন্য (২) ভালো এনালাইসিস পড়ার জন্য। যে সকল সংবাদমাধ্যমগুলোকে মানুষ বিশ্বাস করে, তাদের কাছে মানুষ যাবে কোনও একটি সংবাদের সত্যতা যাচাই করার জন্য। পাশাপাশি, কোনও একটি বিষয়ের উপর এনালাইসিস, বিশ্লেষণ, মতামত ইত্যাদি পড়ার জন্যও মানুষ সংবাদপত্র পড়বে। তবে সেই সংখ্যাটি হবে খুবই কম। একটি এলিট শ্রেণী মূলত এই কাজটি করতে থাকবে।   ব্যাঙের ছাতার মতো অনলাইন!       আজকাল অনেক পাঠককেই বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখি। তারা গালি দিয়ে বলেন, ব্যাঙের ছাতার মতো শত শত অনলাইন সাইটে ভরে যাচ্ছে দেশ, নষ্ট হচ্ছে সমাজ।       কিন্তু আসলেই কি তাই? বর্তমান সময়টা পরিবর্তনের সময়, তাই অনেকেই সেই পরিবর্তনটি মানতে পারছেন না; বিরক্ত হচ্ছেন। সামনের দিনগুলো আরো কঠিন হবে। প্রায় প্রতিটি মানুষই একেকজন সংবাদ কর্মী হয়ে উঠবেন। বেশির ভাগ মানুষেরই নিজের ওয়েবসাইট থাকবে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সেলিব্রেটিদের নিজস্ব ব্লগ সাইট রয়েছে, যেখানে তিনি তার মত প্রকাশ করেন। এবং সেই মতামত থেকেই বের হয়ে আসে অনেক সংবাদ। ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত এমনকি বাংলাদেশেও চলছে এই বিবর্তন। আমরা কিছুদিন পরেই বাংলাদেশের অনেক সেলিব্রেটির নিজস্ব ব্লগ সাইটে তাদের খবর পাবো, যা প্রথাগত সংবাদমাধ্যমগুলো পাবেই না। আর পেলেও অনেক দেরিতে পাবে, ততক্ষনে বিষয়টি মানুষের মাঝে জানাজানি হয়ে যাবে। ফেসবুকে ইতোমধ্যেই এমন বিষয়ের প্রবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এই প্রচলন আরো বাড়বে।       একই সূত্র ধরে, আমরা অসংখ্য ওয়েবসাইট দেখছি। আমি এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। কারন, এই সাইটগুলো চালাতে গিয়ে তারা নতুন একধরনের প্রযুক্তিগত ব্যবসায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। তারাও শিখছে। আমি তো চাই, এই দেশে প্রতিটি গ্রামের মানুষও এটা শিখে ফেলুক। যত তাড়াতাড়ি শিখবে, ততবেশি জানবে — পরিবর্তন তত দ্রুত হবে। আর এই ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় আমরা একটি জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবো। আজকে হয়তো অনেক ওয়েবসাইট নিয়ে আমাদের অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু কয়েক বছর পরেই দেখবেন বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা পেতে শুরু করেছে। এটা সাময়িক। এবং এই বিবর্তনের মধ্য দিয়ে অনেক টেকনিক্যাল মানুষ তৈরী হয়ে যাবে। আমরা সবাই সবকিছু রেডিমেড চাই। রেডিমেড কোনো শিল্প হয় না, জাতি তো নয়ই। এগুলো সময়ের সাথে গড়ে ওঠে। আমরাও উঠছি। এটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে এর যে পরিবর্তন হবে, আমি তাতে নিশ্চিত।   সংবাদের মান!       বর্তমান সময়ের বেশির ভাগ মানুষের ক্ষোভ হলো সংবাদের মান নিয়ে। এটা ঠিক যে, একজন সাধারন মানুষের সংবাদ পরিবেশন, এবং একজন প্রফেশনাল মানুষের সংবাদ পরিবেশন এক হবে না। সংবাদ সোর্সের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, সেই সাথে তার সত্যতা এবং গ্রহনযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এবং এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।       আমরা যদি একটু খেয়াল করি কিভাবে সংবাদপত্র ছাপা হয়, তাহলে বিষয়টি পরিস্কার হতে পারে। সংবাদপত্র প্রকাশ হয় ২৪ ঘন্টায় এক বার। কেউ কেউ সান্ধ্য সংস্করণ বের করার চেষ্টা করেন বটে; তবে বর্তমান সময়ে সেটারও আর প্রয়োজন দেখা যায় না। সংবাদপত্রের একজন সাংবাদিক নিজে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেন। তারপর সেটা কয়েকজন মিলে এডিট করেন, প্রুফ দেখেন। তারপর অসংখ্য চোখের সামনে দিয়ে কাগজে প্রিন্ট হয়। এই পুরো কাজটি করা হয় ২৪ ঘন্টায়, কিংবা আরো বেশি সময় ধরে। তাই আজ সকালে যখন আমাদের টেবিলে কাগজের সংবাদপত্রটি আসে, তার ভেতর আসলে গতকালের সংবাদই থাকে, যদিও উপরে লেখা হয় আজকের দিনের তারিখ। একটি বড় দলের মানুষ যখন সারাদিন বসে ২৪ পৃষ্ঠার কাগজটি প্রস্তুত করেন, তার মান অবশ্যই অনেক ভালো হবে। (যদিও বাংলাদেশে ২/৩ টি পত্রিকা ছাড়া বাকিদের মান প্রশ্নবিদ্ধ)। এবং মানের কারনেই কিছু কিছু সংবাদপত্র টিকে থাকবে। মানুষ দিনের শেষে একবার দেখতে চাইবে, কাগজে কী ছাপা হয়েছে। এবং সেটাকেই মান হিসেবে নেবে।       কিন্তু অনলাইন মিডিয়া (ওয়েব সাইট, টুইটার, ফেসবুক ইত্যাদি) কিন্তু মানের দিকে তাকায় কম। তাদের প্রকৃতি হলো- কত দ্রুত বিষয়টি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। একজন যখন সেই কক্সবাজার থেকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে এই বলে যে, ওখানে সাগরের পানিতে ডুবে দু’জন মারা গেছেন- তার ভাষা এবং বহিঃপ্রকাশ মানুষ ভেদে ভিন্ন হবে। ওই মুহুর্তে আমাদের কাছে ওই তথ্যটুকুই মূল্যবান। এবং ওটাই সংবাদ। তারপর সময়ের সাথে সাথে সেই সংবাদ পরিণত হতে শুরু করে।       এখানে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো যে, সেই সংবাদে কিন্তু ভুলও থাকতে পারে। সবার টুইট এবং ফেসবুক স্ট্যাটাস কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারে। এবং মানুষই ধীরে ধীরে বুঝে ফেলবে, কোন তথ্যটি গ্রহণ করতে হবে, আর কোনটি হবে না। আর যারা ছাপার অক্ষরে কিংবা স্ক্রীণে যা-ই দেখেন তাই বিশ্বাস করেন, তাদের নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। তারা এখনো এই সমাজের জন্য প্রস্তুত হননি। একটি সমাজের সবাই তো আর সব কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকেন না। হয়তো তারাও একটা সময়ে পুরো বিষয়টিতে অন্তর্ভূক্ত হবেন।           তাই অনলাইন মিডিয়াতে তথ্য ভুল থাকতে পারে, এবং গুনগত মান প্রিন্ট মিডিয়া থেকে ভিন্ন হবে এটা মাথায় নিয়েই অনলাইনে এক্সেস করাটা সমিচীন। তবে অনলাইন মিডিয়াটা হলো লাইভ ডকুমেন্ট। ঘটনার সাথে সাথে যেকোনো মুহুর্তে তা পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন কেউ কেউ আজকাল খুব সিরিয়াসলী বলেন, স্ক্রীনশট রেখে দিয়েছি। এগুলো খুবই ছেলেমানুষি ধরনের কথাবার্তা। এখন সাগরে ডুবে ২ জন মারা গেছেন, একটু পর আবিষ্কার হতে পারে ৫ জন মারা গেছেন। তখন ওই সংবাদ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। এটাই ধর্ম। কিছুক্ষণ পর আবার সেটা ৩ হয়ে যেতে পারে। এটা একটা লাইভ ডকুমেন্ট, যা পরিবর্তিত হতে পারে। এটা সংবাদপত্র নয় যে পরের দিন একটি “ভুল সংশোধনী” বের হবে। অনলাইনে তখুনি ওটাকে এডিট করে দেয়া হবে।   সংবাদ কি অপেক্ষা করবে?       কিছুদিন আগে কানাডা প্রবাসী বন্ধু সাংবাদিক প্রশ্ন তুললেন, সাকিব আল হাসান যে কোচ-কে হুমকি দিয়েছে এর তো কোনো প্রমাণ নেই। পাপন এটা বলেছেন। তাহলে সাকিবের দেশে ফেরা পর্যন্ত কি সংবাদটি অপেক্ষা করতে পারতো না? তারপর তার মতামত নিয়ে রিপোর্ট করা যেতো না?       আমার বন্ধুটি যে চিন্তা দ্বারা ধাবিত- সেটা হলো সংবাদপত্র। সংবাদপত্রের কর্মীরা সংবাদের বিস্তারিত ট্রিটমেন্ট এবং সত্যতার জন্য অপেক্ষা করবে, তারপর যাচাই-বাছাই করে নিজেদের মতো করে রিপোর্ট লিখবে। বাংলাদেশে কীভাবে যেন একটা টার্ম সবার ভেতর ঢুকে গেছে- “অনলাইন সংবাদপত্র”। এটা ভুল টার্ম। সংবাদপত্র কখনই অনলাইন হয় না। ‘সংবাদপত্র’ অর্থ হলো কাগজে ছাপানো পত্রিকা। তার একটি ইন্টারনেট সংস্করণ থাকতে পারে। কিংবা ইলেক্ট্রনিক ভার্সন থাকতে পারে। কিন্তু সেটা অনলাইন নিউজপেপার নয়। নিউজপেপার শব্দটির সাথেই “পেপার” রয়েছে। এইটুকু কমনসেন্স প্রয়োগ করলেই বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হতে পারে।       সারা পৃথিবীতেই অনলাইন মিডিয়াগুলো যে সংবাদ কিংবা তথ্য প্রকাশ করে, তা সময়ের সাথে সাথে পরিণত হতে থাকে, যাকে আমরা ইংরেজীতে বলি ‘ম্যাচিউর’ হওয়া। ঘটনা যেভাবে এগুবে, অনলাইনও সেভাবেই এগুবে। যদি আগের উদাহরণটি আবার দেই- সাগরের পানিতে ডুবে প্রাথমিকভাবে জানা গেল ২ জন মারা গেছেন। একটু পর আবার জানা গেল ৫ জন; কিন্তু বিকেলের দিকে নিশ্চিত হওয়া গেল আসলে ৩ জন। একজন অনলাইন পাঠক এই উত্থান-পতনের সাথে সাথে ওঠা-নামা করবেন। এটা অনেকটা রোলার কোষ্টারের মতো। পাঠকরা এখানে সরাসরি জড়িত। তাই যারা চিৎকার করে বলেন, ভূয়া ভূয়া – এটাও আসলে সংবাদের অংশ। একটি মানুষ জন্মের পর শিশু হয়ে যেমন যৌবনে যায়, সংবাদও তেমনি। তাদেরও বয়স আছে। তাদের জন্ম হয়, কৈশরে পা দেয় এবং যৌবনে বিচরন করে। এবং এই পুরোটা সময় পাঠকও সঙ্গে থাকেন। আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া পাঠকদেরকে “raw” (কাঁচা) সংবাদও পড়তে দেন। যেমন আপনি চাইলে রয়টার্সের ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার আগেই দেখতে পারেন। একজন সংবাদকর্মী কী নিয়ে লিখছেন, এবং এডিট করছেন সেই সময়টাও আপনি চাইলে পড়তে পারেন। কিন্তু সেটা হয়তো পরিণিত রিপোর্টের সাথে কোনও মিল নাও থাকতে পারে।       অনলাইনে সংবাদ অপেক্ষা করবে না। আধুনিক পাঠকদেরকে এর সাথে মানিয়ে নিতে হবে। এবং ধীরে ধীরে সেটা হয়েও যাবে। এখন আমরা যা দেখছি সেটা হলো পরিবর্তনের ধাপটুকু। তাই হয়তো অনেক কিছুই চোখে লাগছে। এবং আমরা প্রতিবাদ করছি। কিছুদিন পর হয়তো বিষয়টাতে সবাই অভ্যস্ত হয়ে যাবো।       মোট কথা হলো, সংবাদ কারো জন্য অপেক্ষা করবে না। সংবাদ সময়ের সাথে পরিণত হবে। আর যারা একবারেই পরিণত সংবাদ পড়তে চান, তাদের জন্য ভালো হলো ছাপানো সংবাদপত্র পড়া। শুধু শুধু অনলাইনে এসে মন খারাপ করার কোনো অর্থ নেই। কারণ অনলাইন কখনই আপনাকে সংবাদপত্রের সেই ফ্লেভার দেবে না।   ওয়েব সাইট এবং হিট       যারা দীর্ঘদিন সংবাদপত্রের সাথে জড়িত (কিংবা চিন্তা চেতনায় এখনও পরিবর্তনটি মানতে পারছেন না), তাদের একটি অংশ প্রায়ই চিৎকার করেন- আপনারা হিট বাড়ানোর জন্য ফালতু সংবাদ দেন, কিংবা চটুল সংবাদ পরিবেশন করেন।       আমি জানি না, তারা কোন ভার্চুয়াল জগতে বাস করেন! একটি কাগজের সংবাদপত্র চায় তার সার্কুলেশন বাড়ুক, একটি টিভি চ্যানেল চায় তার দর্শক বাড়ুক- একইভাবে একটি অনলাইন মাধ্যম চাইবে তার হিট বাড়ুক। এটা একটি বেসিক ফরমূলা। একই কারনে ফেসবুক জনপ্রিয়। ইউটিউব যখন প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, তখন গুগল এটাকে কিনে রক্ষা করে। আজকে আমরা যেমন ইউটিউব ছাড়া ভাবতে পারি না, বছর দশক আগে কিন্তু এমনটা ছিল না। এবং ইউটিউব/ফেসবুকে প্রচুর ফালতু বিষয় থাকে। একেক মানুষ একেকটা বিষয়ের প্রতি আগ্রহ। সবার জন্য প্ল্যাটফর্ম করতে হলে, সবার জন্যই কনটেন্ট রাখতে হবে।       আমি আমার এই লেখাটার সাথে সানি লিওনের একটি ছবি দিলাম। অনেকেই বলতে শুরু করবেন, হায় হায়, সব গেলো; আমার বাচ্চা তো এটা দেখে ফেলবে! এখানে দুটি বিষয় বলা খুব জরুরী। আমি বলছি না, অনলাইনগুলো সবসময় মেচিউরড পাঠকদের জন্য কনটেন্ট দেবে। আমি বলতে চাইছি- আপনারা কি আপনাদের বাচ্চাদের হাতে ইন্টারনেট সংযোগসহ ল্যাপটপ, আইপ্যাড কিংবা মোবাইল ডিভাইস তুলে দিয়ে অন্যত্র চলে যান? অর্থ্যাৎ, একটি শিশু কি নিজের মতো করেই ইন্টারনেট ব্রাউজ করে? একটিবার কি আপনারা আপনাদের প্রিয়তম ওয়েবসাইট গুগলে গিয়ে ছবি সার্চ করেছেন? সেখানে “সানি লিওন” লিখে সার্চ করলে কী আসে, সেটা কি আপনারা জানেন না? আমি ঠিক নিশ্চিত নই! আপনার শিশুটিকে কি আপনি ইউটিউব ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন? ইউটিউব কি আপনার শিশুকে এডাল্ট কনটেন্ট দেখাচ্ছে না? আপনার শিশুকে কি আপনি ফেসবুক দিচ্ছেন? আপনি যখন ষ্টার প্লাস দেখেন, জী টিভি দেখেন, জলসা দেখেন তখন কি আপনার শিশুটি টিভির আশেপাশেই থাকে? নাকি অন্য ঘরে ঘুমায়? হিন্দি সিনেমার নাচগুলো নিশ্চয়ই আপনি উপভোগ করছেন! তাহলে বাংলা ভাষার ওয়েব সাইটগুলো সম্পর্কে ধারনা ভিন্ন কেন?       আর কারো বয়স যদি ১৮-এর বেশি হয়, তাকে নিশ্চয়ই আপনি শিশু বলছেন না। ১৮ বছর বয়সে তরুণরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। বর্তমানে কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছে যে পরিমাণ এডাল্ট কনটেন্ট থাকে (আমি পর্ণগ্রাফি বলছি না), ভারতীয় টিভি, এইচবিও-তে যে পরিমান এডাল্ট কনটেন্ট থাকে, সেই তুলণায় বাংলা ভাষার ওয়েব সাইটগুলোতে ততটা কি থাকে? তারচেয়েও বড় কথা, কেউ চাইলেই গুগল করেই দুনিয়ার সব এডাল্ট কনটেন্ট (পর্ণগ্রাফি-সহ) পেতে পারে।       আর এডাল্ট কনটেন্ট দিলেই কিন্তু সাইট হিট হয় না। আপনারা যদি বাংলাদেশের এবং বিশ্বের টপ সাইটগুলো দেখেন, সেগুলো কিন্তু এডাল্ট সাইট নয়। অর্থ্যাৎ মানুষ সবসময় ওই ধরনের কনটেন্ট পছন্দ করে না। তবে একটি সমাজে যেমন বিচিত্র রকমের মানুষ থাকে, এবং সেই কারণেই সমাজটা এতো বৈচিত্রময়, একই কারণে অনলাইনটাও বৈচিত্রময়। এখানে আপনি হরেক রকমের জিনিস পাবেন। যেটুকু আপনার আগ্রহ, আপনি সেটুকুই গ্রহণ করবেন।       আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে, গুগল প্লাস নামে গুগলের একটি সেবা আছে যার পেছনে গুগল বিলিয়ন ডলার খরচ করেই চলেছে। তারা এটাকে ফেসবুকের মতো বানাতে চাইছে। কিন্তু সুবিধা করতে পারছে না। কারন কি? হিট নাই। সব হিট ফেসবুক নিয়ে নিয়েছে।       মূল কথা হলো, অনলাইন মিডিয়াগুলো অন্যান্য মিডিয়ার মতো হিট চাইবেই। এমনকি, যারা ব্যক্তিগত ব্লগ সাইট পরিচালনা করেন, তারাও হিট চাইবেন। কিন্তু সেটা চাইলেই যে পাবেন, তার কোনও নিশ্চয়তা তো নেই!   অনলাইন ব্যবসা       অনেক মানুষের ধারনা, অনলাইন করে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। এর থেকে অজ্ঞ কেউ এই দুনিয়াতে আছেন কি না, আমার জানা নেই। খুব সংক্ষেপে অনলাইনের দুটি বিপত্তির কথা বলি। এক – পাঠকরা কখনই অনলাইনে টাকা দিয়ে কনটেন্ট পড়তে চান না। অনলাইন মানেই হলো ফ্রি। সংবাদপত্র টাকা দিয়ে কেনেন, কিন্তু কোনও ওয়েবসাইট টাকা দিয়ে এক্সেস করেন না। তাহলে যারা অনলাইন পরিচালনা করেন, তারা সেটা পরিচালনা করেন কীভাবে? সহজ উত্তর হলো বিজ্ঞাপন।       বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কি অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেয়? আর যারা দেয়, তারা কেমন পরিমান টাকা দেয়? কারো কোনও ধারনা আছে? :-)       বাংলাদেশ এখনও তেমন জায়গায় পৌছায়নি যে, কর্পোরেটগুলো ইন্টারেনেট বিজ্ঞাপনের জন্য তত টাকা খরচ করে। যেটুকু করে, তাও আবার ফেসবুক আর গুগলের জন্য বরাদ্ধ। একটি উদাহরণ দেই, বুঝতে সুবিধা হবে। আপনি দেখবেন সবগুলো মোবাইল কোম্পানী থ্রি-জি ইন্টারনেট নিয়ে কত লাফালাফি করছে। কিন্তু খেয়াল করে দেখেন, তারা কয়টি ইন্টারনেট সাইটে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে? যাদের ব্যবসাটাই অনলাইন নিয়ে, তারাই যখন বিজ্ঞাপন দিচ্ছে না, বাকিদের কী অবস্থা?       বাকিদের মধ‌্যে বেশি বিজ্ঞাপন দেয় ব্যাংকগুলো। জানেন তাদের রেট কত? বলেই দেই – একটি ব্যাংক কোনও একটি ওয়েবসাইটের জন্য মাসে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। আপনার অনলাইন চালাতে যে পরিমান খরচ, কতগুলো ব্যাংকের বিজ্ঞাপন পেলে তা উঠবে?   উপসংহার       লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই আজকের মতো আপাতত থামি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই বিষয়ে আরো লেখার প্রয়োজন রয়েছে, যা মানুষের কাজে লাগতে পারে। আমি যদি পুরো লেখাটার সারাংশ টানি তাহলে যা বলতে চেয়েছি তাহলো -   ১. ইন্টারনেট এবং মোবাইল প্রযুক্তি পুরো সাংবাদিকতা পেশাটাকে বদলে দিয়েছে। আমরা সবাই সেই পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি।   ২. অনলাইন মিডিয়া এবং সংবাদপত্র এক নয়। দুটো পুরোপুরি ভিন্ন মাধ্যম। দুটোর প্রকৃতি ভিন্ন। তাই দেখতে হবে ভিন্ন দৃষ্টিতে। আর আপনার দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টালে অনলাইনের কোনো সমস্যা নেই, সে তার মতো চলতেই থাকবে।   ৩. অনলাইনে সংবাদ কখনই কারো জন্য অপেক্ষা করবে না। এটা সময়ের সাথে সাথে বড় হতে থাকবে। এবং প্রতিমুহুর্তেই কনটেন্ট পরিবর্তন হতে পারে। এবং এক সময় গিয়ে সত্যটা প্রকাশিত হবেই।   ৪. আপনার শিশুদেরকে একা একা ইন্টারনেট দেবেন না। শিশুদের জন্য আলাদা সাইট রয়েছে, সেগুলো খুঁজে নিন। জনসাধারনের জন্য যেসকল পোর্টাল সেগুলো শিশুদের জন্য হবে না।   ৫. কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেটে অনেক কিছুই করে, যা অভিভাবক হিসেবে আপনার ভালো নাও লাগতে পারে।   ৬. অনলাইন সবসময়ই হিটের পেছনে ছুটবে। যারা হিটের পেছনে ছুটবে না, তারা ছিটকে পড়বে।   ৭. অনলাইন ব্যবসাটি বাংলাদেশে এখনও লাভজনক তো নয়ই, টিকে থাকার যুদ্ধে আছে। যারা কর্পোরেট সিদ্ধান্তে আছেন, তাদের উচিৎ হবে এই শিল্পটিকে সাহায্য করা।       আমার এই লেখাটি যদি কোনও কর্পোরেট এক্সিকিউটিভদের নজরে আসে, তাহলে তাদের জন্য অনুরোধ থাকলো- আপনারা বাংলা ভাষার সাইটগুলোকে কিছুটা হলেও সাহায্য করুন। একটি শিল্প এমনি এমনি দাঁড়িয়ে যায় না- তাতে অসংখ্য মানুষের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ আমেরিকা নয়, সিলিকন ভ্যালীও নয়। আমেরিকায় একটি প্রতিষ্ঠানে সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য অজস্র ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থাকে। দেখুন, টুইটার এখনও পুরো লাভে যেতে পারেনি। কিন্তু এর পেছেন কত মানুষ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেই সুযোগ নেই। তাই এখানে ইনোভেশন হয় না, ট্রেডিং হয়। তারপরেও অসংখ্য তরুন ছেলেমেয়ে অনলাইন নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে; বাংলায় কনটেন্ট তৈরী করছে। এই প্রচেষ্টা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বাংলা ভাষায় কনটেন্ট পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ যেমন এখন আর বাংলাদেশের টিভি দেখে না, কিছুদিন পর বাংলাদেশের মানুষ আর বাংলাদেশী সাইটও ভিজিট করবে না। কারণ, তেমন কোনো সাইটও টিকে থাকবে না। যারা সরাসরি বিজ্ঞাপনের সাথে জড়িত, তারা যদি বাংলাদেশের ৫০টি ওয়েব সাইটকে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দেন, তাহলে বাংলাদেশের ওয়েবসাইটগুলো আরো অনেক ভালো করতে পারবে।       আমি জানি, এই মহুর্তে অনেক সাইটই তেমন মান রাখতে পারছে না। কিন্তু একবার কি খেয়াল করেছেন, মান রাখার জন্য যে ধরনের মানুষ নিয়োগ দিতে হয়, অনলাইনগুলো তাদেরকে রাখতে পারছে কি না? যখন কর্পোরেটগুলো থেকে এই সাপোর্টটুকু তারা পাবে, তখন প্রতিযোগিতার কারণেই তাদেরকে ভালো করতে হবে। আর আমরা যদি এটাকে সাপোর্ট না দেই, তাহলে আপনি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি সবকিছু ইংরেজী কিংবা হিন্দিতে করে, তখন যেন আপনার মন খারাপ না হয়!
Likes Comments
০ Share

Comments (1)

  • - মোঃসরোয়ার জাহান

    ভালো হয়েছে

    • - আহমেদ রব্বানী

      ধন্যবাদ প্রিয় জাহান ভাই।