Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আবিদ রহমান

৯ বছর আগে লিখেছেন

নুপুর থাকলে, পা সুন্দর; চুড়ি থাকলে, হাত…

নুপুর থাকলে, পা সুন্দর; চুড়ি থাকলে, হাত…। আজ নুপুর নিয়ে নয়, শুধু ললনাদের ঝনঝনানির গোপন রহস্য চুড়ি নিয়ে কথা বলবো।
কিনে দে রেশমি চুড়ি
নইলে যাবো বাপের বাড়ি
দিবি বলে কাল কাটালি
জানি তোর জারিজুরি।’
হ্যাঁ, বাংলার নারীদের কাছে চুড়ির কদর সেই প্রাচীনকাল থেকেই,সাজগোজের সময় দুহাত ভরতি করে চুড়ি না পরতে পারলে সাজটাই যেন অসম্পূর্ণ রয়ে যেত।চুড়ি যে নারীর সৌন্দর্য অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয় এতে কোনও সন্দেহ নেই। আর বিশেষ করে যেকোন উৎসব আয়োজনের দিন জমকালো সাজের সঙ্গে একগুচ্ছ চুড়ি যেন না পড়লেই নয়!একটা সময় ছিল যখন যুবকের মনে কাঁপন তুলতো চুড়ির রিনিঝিনি রিনিঝিনি শব্দ। আর সেই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই তো বিদ্রোহী কবি লিখেছিলেন-
‘আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা,
তার কাঁকন চুড়ির কনকন’।
শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার ‘অরক্ষণীয়া’ উপন্যাসে নারীর চুড়িপ্রেম ফুটিয়ে তুলেছেন বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যে। বুড়ো মেসতুতো ভাই জ্ঞানদার হবু বউয়ের জন্য মাসিমা দুর্গামণির হাতে অতুল যেই আকর্ষণীয় চুড়ি তুলে দিয়ে ছিলেন, তার বর্ণনা এসেছে এভাবে :
তাহার রং এবং কারুকার্য দেখিয়া দুর্গামণি অত্যন্ত পুলকিতচিত্তে দাতার ভূয়োঃ ভূয়োঃ যশোগান করিতে লাগিলেন। চুড়ি দুগাছি কাচের বটে, কিন্তু সেরূপ মূল্যবান বাহারে চুড়ি পাড়াগাঁয়ে কেন, কলিকাতাতেও তখনো আমদানি হয় নাই। বস্তুত তাহার গঠন, চাকচিক্য এবং সৌন্দর্য দেখিয়া মায়ের নাম করিয়া অতুল নিজের টাকাতেই বোম্বাই হইতে ক্রয় করিয়া আনিয়াছিল।’
আর বাংলা গানে এসেছে :
‘আমার চুড়ির রিনিক ঝিনিক রে
তার কাছে লাগত বড় বেশ।’
হ্যাঁ, চুড়ির আবেদন সব সময়ই ছিল। হয়তো থাকবে নানা আঙ্গিকে। তবে এক সময় শুধু শাড়ির সঙ্গেই পরত ললনারা। তারা সোনা আর কাচের চুড়ি পছন্দ করতেন। এখন সময়ের নিয়মে ‘সময়’ বদলে গেছে। তারপরও চুড়ির আবেদন কমেনি। বরং হাল ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে চুড়ি নানান ফরমেটে-ডিজাইনে।
রেশমি চুড়ির ইতিহাস প্রায় একশ বছর আগের। তখন সম্ভ্রান্ত জমিদার ও নবাব পরিবারের নারীদের হাতে রেশমি চুড়ি থাকাটা ছিল অবধারিত। এখনো সেই রেশমি চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ আমাদের মনে দোলা দিয়ে যায়।তবে নতুন প্রজন্মের নারীদের কাছেও চুড়ি সমানভাবেই সমাদৃত।
এখন যুগ পাল্টেছে আর সেই সাথে পাল্টেছে চুড়ির ধরনও, রেশমী চুড়ির পাশাপাশি সমান ভাবে জায়গা করে নিয়েছে কাঠ, মেটাল আর প্লাস্টিক আর মাটির চুড়িও।কারণ এগুলো প্রচলিত ধারার বাইরে এসে চুড়ির বৈচিত্র্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
চুড়ি পরার প্রচলন মূলত শাড়ি বা লেহেঙ্গার সাথে হলেও আজকার ফতুয়া, লংস্কার্ট বা সালোয়ার কামিজের সাথেও তরুণীদের চুড়ি পরার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।তবে সেটা হতে হবে অবশ্যই পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাতে মানিয়ে যায়।
আমাদের দেশের প্রতিটি নারীর যেকোন উৎসব আয়োজনের দিন জমকালো সাজের সঙ্গে একগুঞ্ছ চুড়ি যেন না হলেই নয়! কারন যে কোনো বাঙালি নারীর সাজের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হলো কানের দুল, কপালে টিপ ও দু’হাত ভর্তি চুড়ি, বিশেষ করে রিনিঝিনি শব্দ তোলা একগুঞ্ছ কাচের চুড়ি। বাঙ্গালি নারীদের কাছে এর থেকে বেশি আকর্ষণীয় অলঙ্কার আর কিছুই যেন হতে পারে না! আর সেজন্যই যেন মনে হয় কেউ একজন তার প্রেয়সীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন “দিকবিদিকে ঘুরি, তোমার জইন্য আনছি দেখ লাল দুই মুঠ চুড়ি।”
নারীর হাতে রেশমি চুড়ি
বর্তমানে তরুনীরা শুধু শাড়ি বা সেলোয়ার-কামিজই নয়, ফতুয়া ও টি-র্শাটের সাথেও রেশমী চুড়ি পরে যাচ্ছেন অবলীলায়। সব বয়সের নারীর হাতে এ চুড়ি বেশ মানিয়ে যায় ।
খাঁজকাটা, রঙ্গিন কাঁচের চুড়ি
রেশমী চুড়ির পাশাপাশি আছে খাঁজকাটা, রঙ্গিন কাঁচের চুড়ি। এগুলো একদিকে যেমন বাংলা ঐতিহ্যের কথা বলে, তেমনি হালফ্যাশনেও যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা।
কাচের চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজ আর বাহারি রঙের মিশেলে জড়িয়ে আছে বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য। শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ, পোশাক যাই হোক না কেন এখনো অনেক আধুনিক তর”ণীর পছন্দের এক বিশেষ অনুষঙ্গ হচ্ছে কাচের চুড়ি।
অবশ্য আজকাল সব কিছুতেই লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। প্রচলিত ধারার বাইরে আধুনিক মানুষের আগ্রহ বেড়েছে নান্দনিকতার দিকে। তাই অতীতের সাদামাটা এক রঙের কাচের চুড়িতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে শিল্পের বাহারি ডিজাইনের ছোঁয়া। কাচের চুড়ির পাশাপাশি এখন কাচের চুড়ির ওপর নানা রঙের পাথর, চুমকি, জরিসহ বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে আনা হচ্ছে নতুনত্ব।
আবার কাচের চুড়ির আধিপত্যে ধীরে ধীরে ভাগ বসাচ্ছে চৌকো, ত্রিকোণ, ডিম্বাকৃতির প্লাস্টিক ও মেটাল চুড়ি। বস্তুত বাঙালি নারীদের এক অনন্য অলঙ্কার হচ্ছে চুড়ি। এমন অনেক নারীই আছে যারা যে কোনো পোশাকেই চুড়ি পরেন। চুড়ি ছাড়া তাদের দিনই কাটে না।
তবে আধুনিকতার কল্যাণে মেটাল, সুতা, চামড়া, ব্যাকেলাইট, রবার, কাঠ, মাটি, বিডস, পুঁতি, সিটি গোল্ডসহ নানা ধরনের চুড়ির ব্যবহার বাড়ছে।
এক সময় চুড়ি প্রধানত কাচ থেকে তৈরি হতো। তবে শামুকের খোল, তামা, ব্রোঞ্জ, সোনা ও হাতির দাঁতের চুরিও তখন ছিল।
চুড়ির সঙ্গে সখ্যতা
বাঙালি নারীর সঙ্গে চুড়ির গভীর সখ্য ঠিক কবে সৃষ্টি হয়েছে, তার কোনো প্রামাণ্য রেকর্ড আমাদের হাতে নেই। তবে চুড়ি পরতে ভালবাসেন সব বয়সী নারী। উৎসবের দিন জমকালো সাজের সঙ্গে চুড়ি এখন অপরিহার্য হয়ে গেছে। বলা হচ্ছে, হাতে চুড়ি না থাকলে সাজ ঠিক পরিপূর্ণতা পায় না। পত্রিকার বিশেষ পাতায় বিভিন্ন উৎসবের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পছন্দসই চুড়ি পরার প্রেসক্রিপশন হামেশাই চোখে পড়ে।
Likes Comments
০ Share

Comments (2)

  • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

    খুব ভালও লাগল।

    • - সোহেল আহমেদ পরান

      আন্তরিক ধন্যবাদ প্রিয় কবি যূথী।  ভালো থাকুন

    - ফাতিন আরফি

    এর আগে পড়া কবিতাটির চেয়ে বেশ দুর্বল লাগলো কবি। শুভকামনা রইল।

    • - সোহেল আহমেদ পরান

      ধন্যবাদ প্রিয় ফাতিন আরফি গঠনমূলক সুন্দর মন্ত্যবের জন্য। প্রচেষ্টা থাকবে ভালো করার। আশা করি পাশে থাকবেন।

       

      শুভেচ্ছা

    • Load more relies...