Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

নুসরাত জাহান আজমী

৯ বছর আগে লিখেছেন

মেয়েটির গায়ের রঙ কালো... (প্রতিযোগিতা-২০১৫, ৩য় পর্ব, ক্যাটাগরী -২ )

         

(১)

  সকাল থেকেই মায়ের চিন্তা করা শুরু, চিন্তাটা মিলিকে নিয়ে।নিজে থেকেই দোকান থেকে মিলির জন্য উপটান কিনে নিয়ে এসেছেনআর তা লাগানোর জন্য ওকে সেই সকাল থেকে বলছেন  সন্ধ্যায় কোন শাড়িটা পড়বে, তা ঠিক করলেন দু’ঘণ্টা যাবত।মা আর দাদী সবকিছুর চুড়ান্ত করছেনআর করবেই বা না কেন?? আজআবার ছেলেপক্ষ আসছে মেয়েকে দেখতে।ছেলে অস্ট্রেলিয়া পড়াশুনা শেষ করে ঐখানেই একটা ভালো চাকরি করছে।বাঙ্গালী মেয়ে বিয়ে করবে, তাই দেশে এসেছে পাত্রী দেখার উদ্দেশ্যে। পছন্দ হলে বিয়ে করে সাথেই নিয়ে যাবে।

  অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হওয়ায় মিলির মা রে রে করে ছুটে আসলেন।বললেন, আজ অফিসে যেতে হবেনা।সারাদিন ঘরেই থাকতে হবে মিলিকেবাইরে ধুলোবালির মধ্যে গেলে গায়ের রঙ নাকি আরো কালচে দেখাবে!মায়ের সেটাই চিন্তা।শুনে মিলির মন খারাপ হয়ে গেলো। মেয়ে বিয়ে দেবার জন্য এতটা উতলা হয় কোন মা??? নাকি মিলির মা-ই এমন, ভাবছে মিলি 

  আসলে মিলির মায়ের দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই।পাত্রী দেখার জন্য তাদের বাসায় পাত্রপক্ষ এইবার প্রথম আসছে তা না।এর আগেও আরও ১৯ বার এসেছিল।কেউ পরে বলেছে পছন্দ হয়নি।কেউ বা পরে জানাবো বলেও কিচ্ছু জানায়নি।তাই চিন্তাটা একটু বেশি মিলির মায়ের।আসল ঝামেলাটা হচ্ছে গায়ের রঙ নিয়ে। মিলির গায়ের রঙ কালো।সাধারণত, মায়েরা মেয়েদের সহজে কালো বলতে চায়না, যত কালোই হোক, মায়ের কাছেতো মেয়ে রাজকন্যাই থাকে। কিন্তু এদিকে মিলিকে শ্যামলা বলেও চালানোর উপায় নেই। মেয়েটা  একদমই কালো।

 

(২)

  মায়ের কথামত অফিসে না গিয়ে মিলি দুপুরে ভাত খেয়ে তার রুমে একটা গল্পের বই নিয়ে সময় কাটাতে চাইল। হঠাৎ করেই বাবার ছবির দিকে চোখ চলে যায় মিলির। ভাবলো,বাবা বেঁচে থাকলে কি এমনই মায়ের মতন চিন্তা করত, মনে হয় না।বাবার স্বভাব ছিল একদম মায়ের উল্টো।আজ বাবা বেঁচে থাকলে কি হত তা মিলি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারে।

  বাবা বেঁচে থাকলে মিলিকে অফিসে যাওয়ার জন্য বারন করত না।মায়ের অযথা চিন্তাটাকে পাত্তা না দিয়ে বলত, আমার মিলি মাকে আমি আমার কাছেই রাখব।অথবা বলত মিলির মা তুমি দেখে নিও আমার মিলি মাকে নিতে ঘোড়ায় চড়া রাজকুমার আসবে।মা যে নির্ঘাত ক্ষেপে যেত তাও মিলি ভাবতে পারছে বেশ।

  বাবাটা একদম অন্যরকম ছিল। মা তো চিন্তা ছাড়া কিচ্ছু করতেই পারেনা। আর মিলি যত বড় হয়েছে চিন্তাটাও যেন সাথে সাথে বেড়েছে। গায়ের রং একটু ফর্সা করার জন্য মায়ের সেকি কান্ড। ভীষণ অভিমান হয় মিলির। কালো বলে কি সে মানুষ না? কালো বলে কি তার সুন্দর একটা জীবনের অধিকার নেই?? এ কেমন সমাজ? যেখানে শুধু ফর্সা মেয়েদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়?   

  এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা এল। আর সাথে সাথে মায়ের চিন্তাটা আরও বাড়তে লাগল। সাথে দাদিরটাও যোগ হল।

  “ আজকালকার মাইয়ারা মুখে কতকিছু মাখেমুখটা একদম সাদা ধবধবা বানায় ফেলে। কিচ্ছু বুঝাই যায় না। আর আমাগো একজন মুখে কিচ্ছু মাখতেই চায়না। যত্ত সব ঢং” রাগে গজগজ করে এসব কথা বলতে বলতে মিলির দাদী তার রুমে ঢুকলেন ঝটপট তৈরি হওয়ার কথা বলার জন্য।

  মন খারাপ হওয়া সত্ত্বেও মিলি তৈরি হল, মিষ্টি কালারের শাড়িতে মিলিকে খুব মিষ্টি লাগছিল। পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে বসতেই সবাই যেন হঠাৎ করেই চুপ হয়ে গেলো। পাত্রের মা জিজ্ঞেস করলেন, কি নাম?? কোথায় চাকরি করে?? রান্নাবান্না পারে কিনা?? চুল কত বড় দেখল। মিলির হাত নিজের হাতে নিয়ে দেখল। অবশেষে, পাত্রের বোনের সাথে দাড় করিয়ে মিলির লম্বাটাও মেপে নিল।

  শিক্ষিত সমাজে এসব মূর্খের মত কাজকর্ম মিলির সহ্য হয়ে গেছে।এর আগেও যে এমন সব পরিস্থিতি আর প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে তাকেএত যত্ন নিয়ে মিলির মায়ের বানানো নাশতায় পাত্রপক্ষের আর কোন আগ্রহ দেখা দিল না।কিছুক্ষন কথা বলে ঘটককে সাথে নিয়ে চলে গেলো সবাই।

  মিলি বুঝে গেছে এবারো আগের মতনই উত্তর আসবে। যথারীতি সেই রাতে মা আর দাদীর মুখ ভার। মিলির নিজের কাছেই নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে। 

 আসলে পাত্রপক্ষকে আর কি দোষ দেবে মিলি ? কেউ কি চায়, তার ঘরের বউ কালো হোক? পুতুলের মত সুন্দর একটা বউয়ের শখ তো সবারই থাকে। নিজের ঘরের থেকে বরং বাইরের মানুষের কথা এখন সবাই বেশী চিন্তা করে। কেউ যদি বলে বসে বউ অনেক কালো, এমনটা শুনতে নিশ্চয়ই কোন শাশুড়ির ভালো লাগবে না।

 
(৩)

  রাতে শুয়ে শুয়ে মিলির ভাবনায় নানান খেয়াল ঘোরাফেরা করল।আচ্ছা, সবাই শুধু গায়ের রঙটাকেই প্রাধান্য দেয় কেন??? গায়ের রঙের ব্যাপারে মিলির তো কোন হাত নেই। আর বিয়ের নাম করে মেয়েদেরকে এইভাবে আর কতদিন বাছাই করা চলবে? এটাতো কোরবানির হাটের চেয়ে কোন অংশে কম মনে হয় না।আমাদের সমাজে মেয়েদেরকে আর কতভাবে হেয় করা হবে??

 আচ্ছা, ওরা কেন ভাবে না, মেয়ের গায়ের রঙ কালো হলেও তার ভালো একটা মন আছে।

 বাসার কাজের মেয়েটার বাবা-মাকে প্রতিমাসের ঔষধের খরচ যে মিলি দেয়, এটা তো পাত্রপক্ষ কখনো জানবে না।

 অথবা অফিসের দারোয়ানের মেয়েটার অসুখে মিলি যে রক্ত দিয়ে এল, কই এই ব্যাপারে তো কেউ কিচ্ছু জিজ্ঞেস করেনা।

  অফিসের পাশে সব সময় একটা পাগলি মহিলাকে দেখতে পায়। মাঝে মাঝে সেই মহিলাটাকে কিছু খাবার দাবার কিনে দেয় মিলি

এসব কাজ তো ওর গায়ের রঙের জন্য থেমে থাকেনি।

  অফিসের সবাই মিলির কাজের প্রশংসা করে। কালো বলে তো ওর পদন্নোতি থেমে নেই।
তাহলে শুধু বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্রপক্ষের কাছে মেয়ের গায়ের রঙটাই কেন প্রধান হবে??

  কালো বলে আর কত মেয়ে প্রতিদিন এই অপমানের মধ্য দিয়ে যাবে? তাহলে কি কালো মেয়েদের সুন্দর একটি ভবিষ্যতের আশা করা অমার্জনীয় অপরাধ?? নাকি কালো মেয়েদের স্বপ্ন দেখা বারন????

  সুন্দরের আশায় খুঁজে বেরানো আমাদেরই মতন কিছু হৃদয়হীন মানুষদের কাছে মিলির মতো এমন হাজারো মেয়েদের প্রশ্ন থাকে। অথচ চারিদিকে সুন্দর খুঁজতে থাকা আমরা এইসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময়ই পাইনা অথবা উত্তর দেয়ার মত কিছু খুঁজেই পাইনা। পুতুলের মত সুন্দর বউ এনে সবার সামনে নিজেদের বড় করায় সদা ব্যস্ত আমরা। কালো মেয়েদের দিকে তাকানোর সময় কই?????  

    সত্যি কথা বলতে কি,

কবি সতেন্দ্রনাথ দত্তের “মানুষ জাতি” কবিতায়

      কালো আর ধলো বাহিরে কেবল

       ভিতরে সবারই সমান রাঙা।

লাইন দুটো নিয়ে আমরা কেবল সারাংশ বা ভাবসম্প্রসারনই লিখে গিয়েছি। মর্মার্থ বুঝতে চাইনি কেউই, চেষ্টাও করিনি...                              

Likes ২৫ Comments
০ Share

Comments (25)

  • - মনজুরুল আলম প্রিন্স

    সুন্দর,,,ভালো লেগেছে

    - টোকাই

    ধন্যবাদ । emoticons শুভেচ্ছা জানবেন ।