শিশুটি অসহায়ের মতো শুয়ে আছে তালগোল পাকিয়ে
ঠিক যেমনটি থাকে তার মায়ের কোলে নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে।
শিশুটির থেকে আসছে না কান্নার কোন ধ্বনি
ঠিক যেন ঘুমিয়ে গেছে সে শেষ করে খেলাখানি।
শিশুটির মাথাটা মোড়ানো শুভ্র কাপড় দিয়ে
ঠিক যেন সে মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে।
শিশুটি ঘুমাচ্ছে পরম তৃপ্তিতে ঠোঁটে নিয়ে হাসি
ঠিক যেন বলছে সে মা তোমায় ভালোবাসি।
শিশুটি হাঁটি হাঁটি পা করে যেন পড়ে গিয়েছে অন্য জগতে
ঠিক যেন চোট লেগেই নীল হয়েছে ছোট্ট মুখটিতে।
শিশুটি আধো বোলে মা বলে ডাকছে না আর
ঠিক যেন ধরেছে এত রাতে কষ্ট হবে মার।
শিশুটিকে কোলে নিয়ে কোন ছড়া বলছেন না মা
ঠিক যেন শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেছে তার সোনা।
শিশুটির কোমল নাসারন্ধ্রে তুলা গুজে দিল কেউ
ঠিক যেন বয়ে গেল আর এক পলকা বিষাদের ঢেউ।
শিশুটি তখনও ঘুমিয়ে মায়ের কোলে চিরপরিচিত আবহাওয়ায়
ঠিক যেন পার্থিব জগতের এক অবিচ্ছেদ্য মায়ায়।
শিশুটি করছে না কোন অসম্ভব কোন বায়না চড়ে বাবার পিঠে
ঠিক যেন সব চাওয়া-পাওয়া আজিকে তার গেছে মিটে।
শিশুটি আর খেলছে না অফিসফেরত ক্লান্ত বাবার সাথে
ঠিক যেন সব খেলা সে খেলবে কাল হাশরের মাঠে।
শিশুটি দুষ্টুমির হাসি হাসছে না বাবার কোলে মূত্র পরিত্যাগ করে
ঠিক যেন সব হাসি তার অধর থেকে গেছে সরে।
শিশুটিকে ঘিরে অনেক মানুষ ভীড় জমিয়েছে এই গভীর রাতে
ঠিক যেন এসেছে সবাই মহাযাত্রায় তাকে এগিয়ে দিতে।
শিশুটির কোন কিছুতেই বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই কেননা সে আজ স্বাধীন
ঠিক যেন এই নীরব ক্ষণে তার হৃদয় এতটুকু হৃদস্পন্দনহীন।
শিশুটি আজ নিয়তির নিমর্ম বলিদান
ঠিক যেন এমনই বিধির বিধান।
শিশুটি আজ চলে গেছে প্রিয় মাকে ছেড়ে
ঠিক যেন হারিয়ে গেছে পরপারের ভীড়ে।
শিশুটির এই প্রয়াণে মার বুকে জাগে অসীম শূণ্যতা
ঠিক যেন এক পলকে হারিয়ে গেছে সমস্ত কর্মব্যস্ততা।
শিশুটি ঘুমিয়েই থাকে মায়ের বুকে আস্থাশীল উষ্ণতায়
ঠিক যেন এক ফোঁটা শিশির কচুপাতার ডগায়।
শিশুটির মা নিষ্পলক তাকিয়ে থাকেন অজানা ভবিষ্যতে
ঠিক যেন খেলছে তার সন্তান কোন নতুন আঙিনাতে।
শিশুটির ঘুমও ভাঙেনা, মার অশ্রুও থামে না
ঠিক যেন এভাবেই কাটতে থাকে মহাকাল।
শিশুটি চলে গেছে, রেখে গেছে তার স্মৃতি
ঠিক যেন এমনই কঠিন জীবনের নীতি।
মরে না সেই স্বল্প ক্ষণের ফোঁটা ফুল, থেকে যায় ঘরের প্রতিটি কোণে
রয়ে যায় চিরকাল মায়ের ব্যথিত মনে মনে।