বাজারটার সামনেই প্রায় পঞ্চাশ মানুষের জমায়েত। সবাই লুঙ্গি পরিহিত। আজকালকার যুগে এত মানুষকে একসাথে লুঙ্গি পড়া অবস্থায় দেখা যায় না। অথচ আজ শুক্রবার, বাজার বন্ধ। বাজারের উল্টো পাশে অলস ভঙ্গীতে দোকানি তালা চাবি বিক্রি করার দোকানটা খুলছে। তার ভঙ্গীটা এমন যে সে ভেবেই রেখেছে আজ খদ্দের তেমন আসবে না। তবে পাশের কম্পিউটার দোকানটাই যেন বিরাম নেই। এই সকালেই কিবোর্ডের তাল তুলেছে কম্পিউটারওয়ালা। আর মাঝে মাঝে জড়ো হওয়া লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে নিজের চোখকে বিশ্রাম দেওয়ার চেষ্টা করছে। সাথে একটা ছোটখাটো হোটেল, ডিম ভাজার গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। সেই হোটেল থেকে ব্যাগ হাতে বের হয়ে এল এক যুবক, বোঝাই যায় স্থানীয় নয়। তার কপাল বেয়ে কয়েক ফোটা ঘাম গড়িয়ে পড়তেই ধাক্কা খেল লুঙ্গি পরিহিত এক লোকের সাথে। হাত থেকে পড়ে গেল পঁচিশ হাজার টাকার সোনালী রঙের মোবাইল সেটটা। সাথে সাথেই খিস্তি ঝাড়ল যুবকটা। ঠিক তখনই মিউনিসিপ্যালিটির ট্রাক এসে ডাস্টবিনে জমানো ময়লা নিতে শুরু করল। পচা গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে গেলেও কারো মাঝে ভ্রুক্ষেপ নেই। শুধু একটি ছোট বাচ্চা সকালে হাঁটতে বের হওয়া বাবার পাশে চলতে চলতে প্রশ্ন করে বসল, “বাবা এত গন্ধ কেন?” উত্তরে বাবা শুধু বলল, “হু”। বাচ্চাটা আবার জড়ো হওয়া লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, “বাবা ওরা কে?” এবার বাবা উত্তর দেয়, “রাজমিস্ত্রী”। ছেলেকে আর কোন প্রশ্ন না করতে দিয়েই রিক্সার জন্যে হাঁক মারে। হয়ত হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন। ততক্ষণে ধাক্কা খাওয়া যুবক রীতিমত ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে সেই লুঙ্গি পরিহিত লোকটার সাথে। “সালা, চাষার দল, দেখে চলতে পারিস না?” একটা মেয়ে হোটেল থেকে দ্রুত এসে যুবকটাকে থামায়। নইলে সেই চাষার সাথে হাতাহাতি মারামারি হয়ে যেত তার।
এতগুলো চরিত্রের মাঝে কোন চরিত্রই মূল গল্পের কোন চরিত্র নয়। যাকে কেন্দ্র করে এই গল্পের অবতারণা সে এই মুহূর্তে চায়ের দোকানে আরামসে চায়ে চুমুক দিয়ে বসে বসে এইসব দৃশ্য অবলোকন করছে। তার কোন বিষয়েই তেমন কোন তাড়া নেই। হাতে চায়ের কাপটা আজ সকালের তিন নম্বর চা আর সিগারেটটা দুই।
Comments (0)
valo laglo
ভাল । ভোট দিলাম।