কুর্চি কেমন আছ তুমি? শরীর ভাল আছে?
আর মন?
শরীরের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ মানুষের মন।
আমাকে তুমিই শিখিয়েছিলে শরীর ভালো আছে কিনা জানার সঙ্গে সঙ্গে মনের কথাও জানতে চাইতে।
কতদিন দেখিনা তোমায়। ভাবলে খুব অবাক হই, কি করে পারি এখন?
অথচ একসময় তোমাকে একদিন না দেখলেই কেমন অস্থির লাগতো। নির্ঘুম রাত কাটতো আমার। আমি জানি তোমারও। অথচ এখন কেমন বদলে গেছি আমরা দুজনেই। কত বছর একজন অন্যজনকে না দেখেই আছি। এক শহরে থেকেও আমরা কেউ কারো সঙ্গে দেখা করিনা। কষ্টের চাদরে ঢেকে রাখি বেদনার জল। কত মানুষের সঙ্গে দেখা হয় অথচ দৈবাৎ তোমার সঙ্গে দেখা হলনা এতো বছরে একবারও। আচ্ছা দেখা হলেই বা কি হত? তুমি কেমন করতে? আর আমিই বা কি করতাম? তবে তুমি মানসিকভাবে অনেক কঠিন। তুমি কি করতে জানিনা আমার যে উলটা পালটা কিছু একটা হয়ে যেত তা আমি নিশ্চিত। হা হা হা।
আজ কৃষ্ণচূড়া
রক্তজবা আর পলাশ ফুলের উৎসব!
ঝলমলে আলোকিত সকালে বাসন্তী হাওয়ায়
মন ছুঁয়ে থাকে ঘুঘুর বুকের মতো ওম
ইচ্ছে করে তোমার বুকের বকুল ফুলের গন্ধ নিতে!
আচ্ছা আমাদের প্রথম দেখা হবার দিনটির কথা মনে আছে তোমার? অনেক দিনতো হয়ে গেল, ভুলে গেছ কি? আমার কিন্তু স্পষ্ট মনে আছে। আমার নাম নীল শুনে তুমি হাসলে, বললে নীল আবার কারো নাম হয় নাকি? আমিতো এমন নাম শুনিনি। এটাতো খুবই পঁচা একটা নাম। আমি হেসেছি। বুঝেছিলাম তোমার খুব পছন্দ হয়েছে আমার নামটি তবু দুষ্টামির ছলেই কত কি বললে আমায়। খুব মনে হয় সেদিনের কথা, অথচ কতদিন পার হয়ে গেছে। কত শীত কত বসন্ত চলে গেছে। সেই সোনালী সময় কোথায় হারিয়ে গেছে- আমি আর তুমি এখন প্রৌঢ়; জবুথুবু হয়ে হাটি।
চাঁদের বনে
আজ আমি ছদ্মবেশের বাতাস হব
স্পন্দিত জ্যোৎস্নার ঝিকিমিকি আলোয়
তোমার নিকষ নাভিমূলে গুজে দেবো রক্তিম শিমুল!
কত ভাবনা, কত স্বপ্ন, একসঙ্গে পথচলা, দিনের পর দিন এক মন এক দেহ হয়ে পার করে দিয়েছি। নিয়তি আমাদের নিয়ে খেলেছে অনেক। আমরা সে খেলার পুতুল হয়ে দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা হয়ে দিন কাটাচ্ছি। অথচ এমন কি হবার কথা ছিল? আমাদের দুজনেরতো একসঙ্গে জীবন কাটানোর কথা ছিল । এক বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে জ্যোৎস্না দেখার কথা ছিল। নারকেলের চিরল পাতার ফাঁক গলে জ্যোৎস্না এসে পড়বে তোমার মুখে, আমি শুধু তাকিয়ে দেখবো আমার তোমাকে। একসঙ্গে কত খুনসুটি করে দিন কাটাবো। কি অবাক কাণ্ড কিছুই হলনা, তুমি হয়ে গেলে অন্যের।
বেনোজলে ভেসে যায়
বিষণ্ণ খড়ের মত শূন্য জীবন,
ভাঙ্গা লাঙ্গলের ভোতা ফলার সাথে
আজ সহমরণ।
মাঝ রাতে বৃষ্টি হলে আমার ঘুম হয়না, আসমান ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ে আর আমার মনের আসমানে মরুভূমির লূ হাওয়া বইতে থাকে। রাতের পাখিদের সঙ্গে আমিও জেগে থাকি, রাতের তারাদের সঙ্গে কত কথা বলি, সবাই ঘুমায়, আমার চোখে ঘুম আসে না। আমার চোখে ভর করে কত স্মৃতি। আমি জেগে রই তাদের সঙ্গে, কথা কই তাদের সঙ্গে। তোমাকে নিয়ে দোকলা হব ভেবেছিলাম; তা আর হয়নি; আমি একলাই রয়ে গেলাম।
তুমি ভাল থেক, সুখে থেক।
যে সুখের আশায় ঘর বেঁধেছ সে সুখের নদীতে তুমি সকাল বিকাল নাইতে যেও, তোমার সুখের নদীতে পাল তোলা নৌকা উড়ুক সে দোয়া করি।
শরীরের প্রতি যত্ন নিও।
ভালবাসা রইল।
ভালো থেক।
নীল
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফটোগ্রাফার ইমরান চৌধুরী
লোকেশানঃ Norrköping, Sweden, 2008
Comments (29)