Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আসিফ ভাই

১০ বছর আগে লিখেছেন

বর্ণিল সৌরভ

সকাল থেকেই সৌরভের উপর মেজাজ খারাপ বর্ণার। খবরটা দেওয়ার জন্য এতবার ফোন দিচ্ছে এরপরে ও ফোন ধরে না গাধাটা। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ এরপরে দরজার আওয়াজ। আর সৌরভের সারপ্রাইজ ভিজিট। অন্যদিনের চেয়ে ওকে আজকে একটূ খুশি মনে হচ্ছে। পাঞ্জাবি টাঞ্জাবি পরে খুব সাজগোজ করে আসলে ও উত্তেজনার বশে খেয়াল করে না বর্ণা।

সৌরভঃ আজকে তোকে একটা কথা বলব।
বর্ণাঃ আমিও তোকে একটা কথা বলব।
সৌরভঃ তুই আগে বল। লেডিস ফার্ষ্ট বলে একটা কথা আছে না।

বর্ণাঃ আমার না বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলে আমেরিকা থাকে। টেক্সাস ইউনিভার্সিটির টিচার। সামনের মাসে দেশে আসবে। এরপরের পরের মাসে আমরা টেক্সাসে চলে যাব। ভাবতেই ক্যামন জানি লাগছে। কিরে তুই চুপ কেন?

সৌরভঃ (আমতা আমতা ভাবে) না মানে, শুনছিলাম তোর কথা।

বর্ণাঃ তোর চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে খুশি হস নাই। হিংসা লাগতেছে নাকি? কিরে তোর হাতে গোলাপ কেন?

সৌরভঃ (আমতা আমতা ভাবে) না মানে এমনিতেই রাস্তা দিয়ে আসার সময় কিনতে ইচ্ছে করল, কিনে ফেললাম এই আর কি।

বর্ণাঃ এটা আমাকে দে। ফুলদানিতে রেখে দেই। তুই ছেলে মানুষ গোলাপ দিয়ে কি করবি। যাহোক, এবার তোর কথা বল।

সৌরভঃ বাদ দে। আজকে তাড়া আছে।

----------------

বর্ণাঃ তাহলে জার্মান চলে যাচ্ছিস শিওর।
সৌরভঃ হুম, এখন পর্যন্ত তো তাই জানি।
বর্ণাঃ আমেরিকার সাথে জার্মানের টাইপ গ্যাপ কেমন রে?
সৌরভঃ ঐখানে বিকাল ৪ টা মানে জার্মানে ১১ টা। কেন রে?
বর্ণাঃ না মানে তোকে ফোন টোন দিতাম ঐ অনুযায়ী তাহলে। আচ্ছা তুই জার্মান গিয়ে কি করবি বল তো।
সৌরভঃ (বোকার মত বলে) একটা গিফট শপ দিব। আমার দোকানে গিফট দিয়ে ভালবাসার মানুষকে কনভিন্স করবে সবাই।

(হা হা করে হেসে উঠে বর্ণা)

বর্ণাঃ তুই দিবি গিফট শপ। আর 'ভালবাসার মানুষ'!!!! তুই ভালবাসার বুঝোসটা কি বল তো একটু, শুনি।

(হঠাৎ কথা আটকে যায় সৌরভের)

সৌরভঃ (আমতা আমতাভাবে) না মানে তুই ও থাকতে পারিস তাহলে আমার সাথে। তুই তো এইসব বুঝিস। আমার সাথেই থাকিস সারাজীবন। তোকে ৫০% শেয়ার দিয়ে দিব আমার গিফট শপের।

বর্ণাঃ হে হে তোর সাথে সারা জীবন। আমি কি পাগল নাকি? শোন গাধা, তোর আর আমার লাইফষ্টাইল পুরাই আলাদা। আমার লাইফ যদি হয় গোধুলির ছায়া তাহলে তোর লাইফটা হচ্ছে মধ্যরাতের অন্ধকার। এখন তুই ই বল শেষ বিকালের ছায়া আর মধ্যরাতের অন্ধকারকে কি কখনো এক করা যায়?

সৌরভঃ মানুষ চাইলে সব পারে। তুই আমি চাইলে ও পারব।

বর্ণাঃ না এত পারা লাগবে না। এইসব থিওরি বাদ দিয়ে এইবার লাইফ নিয়ে একটূ সিরিয়াস হ। নাহলে পরে তোর জন্য পাত্রী খুজে পাব না কিন্তু।

সৌরভঃ (বিড়বিড় করে)পাত্রী খোজার কি দরকার। আয়নার সামনে দাড়ালেই তো হয়।

বর্ণাঃ কি বললি বুঝি নাই। একটু জোরে বল।

সৌরভঃ না কিছু না, চল তোকে বাসায় পৌছে দেই।

.......................

(১০ বছর পরে)
সময়ঃ বিকাল ৪ টা
স্থানঃ টেক্সাস

প্রতিদিন এই সময়টায় বাচ্চাদের নিয়ে পার্কে ঘুরতে আসে বর্ণা। দুইটা পিচ্চির একজনের বয়স সাত, একজনের চার বছর। রিসার্চের কাজে স্বামী ধ্রুব ব্যস্ত সব সময়। সরকারের কি যেন একটা সিক্রেট প্রজেক্টে কাজ করছে তাই বাসায় এসে ও খুব বেশী কথা বলে না। তাই সংসারে খুব বেশী সময় ও দিতে পারে না।

তাই তাকেই সংসারের প্রায় সব কিছুই গোছাতে হয়। ব্যস্ত জীবন, একটু ও ফুরসত নেই। যদিও প্রাচুর্য্যের অভাব নেই জীবনে তবু কেন জানি এখনো একটা গিফট শপের ৫০% পাওয়ার লোভটা প্রতিদিন জেগে উঠে। বর্ণা এ জীবনটা থেকে বের হতে চায়। অনেক চেষ্টা করে, তবু পারে না।

..................

সময়ঃ রাত ১১ টা
স্থানঃ মিউনিখ

মিউনিখের ব্যস্ত মোড়েই এই গিফট শপটার নাম 'বর্ণা'। মিউনিখের বেশীরভাগ মানুষই এই নামের মানে বুঝে না তবু এই গিফট শপটাতে সব সময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের ভীড় লেগেই থাকে। বন্ধু কিংবা ভালবাসার মানুষকে কনভিন্স করার জন্য এখানকার গিফটগুলো সব বয়সী মানুষের কাছে সমাদৃত।

প্রতিদিনের মত আজকে ও ১১ টার সময় দোকান বন্ধ করল সৌরভ। দোকানে থাকার সময়টা অনেক ভাল কাটে। যখন ভালবাসার মানুষগুলো একজন আরেকজনকে খুশি করার চেষ্টা করে এই দৃশ্যগুলো বিশেষ করে।

মিউনিখের রাস্তা দিয়ে হাটছে সৌরভ। দোকান বন্ধ করার পর থেকে বাসায় যাওয়ার সময় প্রতিদিন এ সময়টা ভেতরে একটা অন্যরকম কষ্ট কাজ করে। ৩ কিলোমিটার পথ হেটে বাসায় যায়। পাশ দিয়ে একটার একটা বাস কিংবা ট্যাক্সি চলে যায়। তবু সে হেটেই যায়।

আশেপাশের মানুষ যারা একটু খেয়াল করে তারা দেখে সৌরভ চোখ বন্ধ করে হাটছে। তবে কেউ ই যেটা দেখে না সেটা হচ্ছে মনে মনে নাম না জানা একজন মেয়ের হাত ধরে প্রতিদিন ঢাকার রাস্তা ধরে হাঁটে।

........................

শেষ কথাঃ

দুজন মানুষ, একই সময়ে পৃথিবীর প্রায় দু প্রান্তে দাঁড়িয়ে একে অপরের কথা ভাবছে। একজন দেখছে গোধুলির আলো আর অন্যজন মধ্যরাতের আকাশ। দুজনের কেউ জানে না এই গোধুলি আর মধ্যরাতকে কিভাবে এক করা যায়। তবু দুজনেই দুজনকে মিস করছে। প্রতিদিনই মিস করে।

এভাবেই দুজন মানুষের প্রতিদিনের গল্প না বলাই থেকে যায়। কেউ জানে না এই গল্প। উপরের গল্পটা খুবই কমন একটা গল্প। কারণ পৃথিবীতে এরকম দুজন মানুষদের সংখ্যা অনেক। আকাশের তারাদের মত এরা জ্বলজ্বল করে, ভেতরে একরাশ কষ্ট নিয়ে।

Likes Comments
০ Share