যদি ভুল না হই তাহলে আমার ধারণা আমাদের জেনারেশনের সবার লেখার শুরু হয়েছে তিন টাকা দামের ইকোনো ডিএক্স কলম দিয়ে। কয়েক কালারের কলম, উপরে কালো একটা ক্যাপ, ক্যাপের সাইডে একটা চিকন ডান্ডা। ঐটা কামড়াইয়া ফার্ষ্টের দিন ই বাকা কইরা ফেলতাম।
এই ইকোনো ডিএক্স কলম উলটা করে কিছুক্ষণ রাখলেই কালি পড়ত। এই কালিতে স্কুলের শার্ট প্যান্টের পকেট ভরায় নাই এমন পোলাপাইন মনে হয় না খুব একটা পাওয়া যাবে। তবে কিছু কিছু কলমের কালিতে আবার সেন্ট মারা থাকত। ঐগুলা নরমালি পাওয়া যেত না। মেলা টেলা হলে পাওয়া যেত।
ফ্রেন্ডদের মধ্যে যাদের বাবা ডাক্তার ছিল তাদের কাছ থেকে ওষুধ কোম্পানির সিল ওয়ালা তিন চার শিষ ওয়ালা কলম পেতাম। একেক ক্লিকে একেক কালারের শিষ বের হত। ওইগুলা নরমালি স্পেশাল কিছু লেখার জন্য রেখে দিতাম। আর পরীক্ষার সময় ইউজ করতাম রেড লীফ। আট টাকা দাম ছিল মে বি। দুই টাকা ছিল শিষের দাম।
কিছু লোকাল পেনসিল আর রাবার পাওয়া যেত। এর মধ্যে বিভিন্ন কালারের কিংবা ফ্লেভারের রাবার পাওয়া যেত। ঐগুলা অনেক বাসার বাচ্চা কাচ্ছা খেয়ে ও ফেলতো। তবে পেন্সিলের পিছনে একটা ডিফল্ট রাবার একটা পাতল টিনের খোপে থাকত। ঐটা কামড়াইতে গিয়া কতবার যে ঠোট কাটছি আল্লাহ ই জানে।
তয় যুগ এখন বদলাইছে। এখন এই ব্র্যান্ডগুলার একটা পাওয়া যায় না। এখন চলে ম্যাটাডোর, সেলো গ্রিপ এইগুলা। তার উপ্রে এখন তো টাইপিং এর যুগ। এখন আর চিঠি লিখি না কাউকে, লিখি মেইল। বেশী দরকার হলে ফোন। সিভি টিভি সব টাইপ করে সেন্ড করা লাগে। লেখার নেসেসিটি বলতে গেলে এখন নাই ই।
এখনের যুগ ডিজিটাল, আমরা ডিজিটাল, কলম পেনসিল নিয়া ভাবার টাইম নাই। এরপরে ও পোলাপাইন আড্ডায় বসলে ঐগুলা নিয়া আলোচনা হয়। মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে গেইম এইগুলা মেইন ষ্ট্রীম থাকলে ও ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে অফ টাইমে স্যারদের টেবিলের উপরে কলম দিয়ে পেন ফাইট খেলার এক্সপিরিয়েন্স এখনো অনেক আড্ডার হট টপিক।
আমাদের কিন্ডার গার্টেন স্কুলটা ছিল কম্বাইন্ড। ঐখানে এই কলম খেলা খেলতে গিয়া স্যারের মাইর খাইয়া মেয়েদের সামনে সারা ক্লাস কান ধইরা দাড়াইয়া থাইকা বহু টাইম পার করছি। তখন যে কি প্রেষ্টিজে লাগত। তবু পরের দিন সব নরমাল। আবার শুরু হত খেলা।
সত্যি বলতে আমাদের সময় এইসব সস্তা খেলা খেইলাই পোলাপাইন মানুষ হইত। আর এখন মোবাইল আর কম্পিউটারে দামী দামী গেইম খেইলা পোলাপাইন রোবট হইতাছে। জানি যুগের ট্রেন্ড এগুলা। তবু ও মাইক্রোসফট ওয়া্র্ডের হাজারটা ফন্টের চেয়ে আমার ইকোনো ডিএক্স এর হিজিবিজি ফন্ট টাই এখনো বেশী সুন্দর।
অ্যাট লিষ্ট ঐ কালির অক্ষরগুলোতে জীবনের অনেক স্বপ্ন কিংবা কল্পনা ছিল, যেটা টাইপের অক্ষরগুলাতে এখনো পাইনি। এবং কখনো পাবো ও না। হাজারো রঙের কলম আর হাজারো ফন্টের ভীড়ে এখনো ইকোনো ডিএক্সে লেখা স্বপ্নগুলোই ইউনিক।
Comments (1)
চমৎকার...
আপনার মতো লেখকদের কাছ থেকে গঠনমূলক কিংবা বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্য আশা করি মাসুম ভাই। তাতে করে আমরা কিছু শিখে নিতে পারবো। ধন্যবাদ মাসুম ভাই।
আসল দাদা ব্লগেই দেখলাম অনুগল্প অনুকাব্য বেশ ভাল লাগল একটা নতুন সৃষ্টি
খুবি সুন্দর লাগল
ভাল থাকুন----------
আমি ব্লগে ছাড়াও দেখেছি। ধন্যবাদ আলমগীর।
অনুগল্প যে আসলেই এতো ছোট্ট হবে ভাবিনি। ভালোই লাগলো মনে হল একটি দৃশ্যকাব্য।
গল্পটাতে বেশ ভালো একটা ঘটনা এবং বার্তা আছে রোদের ছায়া। ধন্যবাদ আপনাকে।