Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

হরি দাস পাল

৮ বছর আগে লিখেছেন

বাতাসে প্রেম মিশে থাকে!

গ্রীষ্মকালের কিছু দুপুরবেলা শেষ হতে চায়না কিছুতেই। একরোখা সূর্য্যটা গো ধরে বসে থাকে অনেক্ষন। বঙ্গোপসাগর বাতাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এই বৃহত্তর ব-দ্বীপে। এরপর লোডশেডিং হয়ে ষোলকলা পূর্ণ হয়। এমন এক লম্বা দুপুরে বসে আছি পরিচিত চায়ের দোকানে।
আমি ছাড়া আর কোন চা পিপাসু নেই আশেপাশে। দোকানী নিজেই যেন আমার উপর বিরক্ত। আমার সামনের টেবিলে এককাপ গরম চা। একটা বিরাট সাইজের মাছি কাপের উপর ভনভন করে উড়ছে আর কাপের গায়ে লেগে থাকা কনডেন্সমিল্ক খাচ্ছে চেটে চেটে। আমি মনোযোগ দিয়ে মাছির কনডেন্সমিল্ক খাওয়া দেখছি। এমন সময় ভোম্বলের আগমন।
:হরি! তোকেই খুজছিলাম। আর দেরি করা যায়না, বুঝলি? যা করার এখনই করতে হবে।
ভোম্বলকে আমি ভাল রকমই চিনি তাই বিচলিত না হয়ে প্রশ্ন করলাম, নতুন করে আবার কি করবি রে ভোম্বল?
:কি করব আবার কি? ছেড়ে দেব ভাবছিস? ভোম্বল মুখুয্যে কে তো চেননা! থানায় মামলা করে দেব তখন চিনবে!
:কার নামে আবার মামলা করবি?
:চিনিস না মনে হয়? বিনোদিনী রায়! হুমমমম… এবার দেখব কোথা যায়!

বিনোদিনীকে আমি চিনি। গত অর্ধযুগ ধরে বিনোদিনীকে নিয়ে ভোম্বলের নানা প্রকার পাগলামির কথাও জানি। বারবার ব্যর্থ হয়েও ভোম্বলের দৃঢ়হ বিশ্বাস একদিন বিনোদিনীর মন গলবে। কিন্তু বিনোদিনী সেই যে মনের দরজায় খিল এটে বসে আছে ভোম্বলের শত ডাকাডাকিতেও সে দরজা আর খোলেনি। কিন্তু তারজন্যে তো আর কারও নামে মামলা করা যায়না। কিন্তু ভোম্বলকে বোঝায় কার সাধ্যি?

:কি অপরাধ? মানবতা বিরোধী অপরাধ। ৭বছর, ৩মাস, ১৮দিন নবাব নন্দিনীর পিছনে সার্কাসের জোকার হয়ে ঘুরলাম আর আমার জন্য ৭মিনিট সময় নেই তার কাছে! ভেবেছে পার পেয়ে যাবে? চরম বিচার হবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার হবে বলে রাখলাম।

:সবই মানলাম কিন্তু তোর হয়ে স্বাক্ষী দিবে কে? উল্টো ইভটিজিং কেসে ফেসে যাবি না তো?
:স্বাক্ষী হবে সেই পথের ধুলো যে পথ ধরে ও হাটে প্রতিদিন। ওর জন্মদিনে কেনা রং পেন্সিলের বক্স। স্বাক্ষী হবে অবহেলায় শুকিয়ে যাওয়া বকুল ফুলের মালা। ওর নামে যতগুলো প্রেমপত্র লিখেছি তার প্রতিটি অক্ষর। স্বাক্ষী হবে জোনাকির দল।
:তাহলে তুই মামলা ঠুকে দে। টাকা পয়সা কিছু লাগলে আমাকে জানাস।

প্রতুত্তরে ভোম্বল দাঁত খেচিয়ে বল্লো, তোকে জানাব কি রে? নিজে যে চা খাচ্ছিস তার বিল মেটাতে পারবি তো? বলেই যে গতিতে এসেছিল সেই গতিতে বেড়িয়ে গেল। আমি শুধু এক দৃষ্টিতে ভোম্বলের চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম।

ভোম্বলের উপর খুব মায়া হল যেন। ভোম্বল একজন সাদা মনের মানুষ। সত্যিকারেই সে বিনোদিনীকে ভালবেসেছিল। বিনোদিনের নামে সত্যিকারের কষ্ট পুষে রাখে রোজ।
যখন ভাবছিলাম, হুটকরে একটা এলোমেল বাতাস রাস্তার ধুলোবালি উড়িয়ে বড় রেইন ট্রি গাছের পাতাদের সাথে ধাক্কা খেল। পাতা থেকে বাতাস চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল পারমানবিক বোমারমত। ভোম্বল হনহন করে হেটে চলে যাচ্ছে। আমার মনে হল ভোম্বলের চুলের ভীতর থেকে, কপালের ভাজ থেকে, জামার বুক পকেট থেকে, বুকের ঘাম থেকে ভালবাসা গলে গলে বাতাসের সাথে মিশে যাচ্ছে। হয়ত এইবাতাসটি ভোম্বলের ভালবাসায় মাখামাখি হয়ে এক্ষুনি ছুটে যাবে বিনোদিনীর আঙিনায়।

আমার শুধু সামান্য কৌতূহল! বিনোদিনী কি জানে, বাতাসে কতটুকু প্রেম মিশে থাকে? কখনো কি জানবে?

Likes Comments
০ Share

Comments (1)

  • - প্রলয় সাহা

    হাতে আছে এক অজানা-
    সাম্রাজ্যের ম্যাপ,
    দলিলে লেখা আছে-
    অগোছালো গন্তব্য
    অনবরতঃ
    অবিরত-
    হেঁটে যাবার অভিপ্রায়,
    আছে নাভিশ্বাস নিমন্ত্রণ
    চোখে জড়ানো আছে;
    সুপ্ত রৌতিসা।

     

    বাহ্‌ বাহ্‌ বাহ্‌ 

    • - সুমন সাহা

      অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদাই। মন্তব্যে ভালোলাগা রইলো ভীষণ।

      শুভেচ্ছা জানবেন।

      ভালো থাকবেন। সবসময়।

    - নাসরিন ইসলাম

    ভালো লেগেছে। emoticons

    - সুমন সাহা

    অনেক শুভেচ্ছা জানবেন আপি। ভালো লাগলো জেনে আমারও ভালো লাগলো।

    ভালো থাকবেন। সবসময়।