Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মাহাফুজুর রহমান কনক

১০ বছর আগে লিখেছেন

জমজ গল্প একটি কবিতা

 

 

 

(২০০৬ এর শেষ কী ২০০৭ এর শুরুতে যখন লেখালেখির শুরু তখন কত উচ্ছাস কত উদ্দীপনা ভয় কাজ করেছিল। আহা সেইসব সময়। সেই সময়ের দুটি গল্প সাথে একটা কবিতা আপনাদের পাতে তুলে দিলাম।)

বেদেকণ্যা

সাপ হাতে বেদেকণ্যা, দুলে
যেনো শরীরের ফণা তুলে
লোভ দেখায়, ক্ষোভ দেখায়
রঙ্গীলা সাপ ফোঁসফোঁসায়

হাঁক দিয়ে কয়, নিহত- ছোবল
নিবি নে, সস্তাদরে, বিনেপয়সায়
দুধরাজ, শঙ্খচুড়ার মিহিন ছোবল

গুপ্তস্থানে গুপ্তসাপের মাথায়
মণি আছে, নাভীকুপে লুকায়

দেহের ভাঁজে গোখরা আছে
নিবি নে, এক মধুর ছোবল
স্বর্গ পাবি, সুখের মত অনল



রেনুকা

প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। একেবারে দস্যি বৃষ্টি। রেনুকাদের উঠোনে রীতিমত স্রোত বইছে জলের। খোলা জানলা দিয়ে রেনুকা দেখছে রাতের বৃষ্টির সৌন্দর্য্য। ইলেকট্রিক বাতীর আলোয় যেনো রুপ ঠিকরে বেরুচ্ছে বৃষ্টির শরীর হতে। গত কয়েকদিন মধ্যরাতে বৃষ্টি হওয়াটা একটা নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে। রেনুকা এতে আনন্দিত। নিঃসঙ্গ রাতে তার কাছে এই বৃষ্টি আরোধ্য। সমস্ত প্রকৃতি যখন ঘুমে, রেনুকা তখন বৃষ্টি সঙ্গী করে রাত জাগে। এমন না যে রেনুকা শুধু বৃষ্টি হলেই রাত জাগে, গত কয়েক মাস রাতে তার ঘুম আসেনা। সবাই যখন ঘুমোতে ব্যাস্ত, রেনুকার ভিতরে তখন রাত জাগার প্রস্তুতি শুরু হয়। বিক্ষিপ্ত ভাবনা আর জমাট বাধা কষ্ট তাকে ঘুমুতে দেয়না। স্বপ্ন ভাঙ্গার কণাগুলো তার চোখের সামনে অনবরত উড়াউড়ি করে চোখের পাতা এক করতে দেয়না।

 

আজ রেনুকার চোখের কোণেও স্রোত বইছে। বৃষ্টির মতোই দস্যি। এতদিনের বাঁধ আজ ভেঙ্গেছে, রেনুকা কাঁদছে আর মনে মনে বলছে আমাকে ভাসিয়ে নাও বৃষ্টি আমাকে ভাসিয়ে নাও কান্না। না রেনুকা ভেসে যায়না। ভেসে যায় তার বিশ্বাস, ভালবাসা, আর অচ্ছুত মাতৃত্ব। উঠোনো যে জলের স্রোত বইছে রেনুকার মনে হচ্ছে সে জলে অসংখ্য মানব শিশুর অবয়ব ভেসে উঠছে। রেনুকা তার ডান হাতটা তার ক্রমশ উঁচু তলপেটে রাখে। সে বুঝতে চায় ভিতরের শরীরটা ঘুমে না জেগে।

 

শাকিলের সাথে রেনুকার সর্বগ্রাসী প্রেমের ফসল রেনুকার ভিতর বেড়ে উঠছে। চার বছরের প্রেমে বিশ্বাসটা এমন গভীর হয়ে উঠেছিলো যে শেষ পর্যন্ত শরীরের অধিকার শাকিলকে দিতেও রেনুকা ভাবেনি। শাকিলই যখন তার ভবিষ্যত তখন বর্তমানের সব চাওয়া পূরণ না করার মতো অযোক্তিক ভাবনাও মনে আসেনি রেনুকার। শাকিলের চাহনিতে কি যাদু ছিলো যে সুখের বেলায় ভাসার আশায় রেনুকাও একেক সময় অস্থির হয়ে উঠতো। আর এই অস্থিরতার অসতর্কতা আজ রেনুকাকে গ্রাস করতে উদ্ধত্য। শাকিল ভুল করেনি, তার মতো মধুকর বহু ফুলে উড়াউড়ি যার অভ্যেস সে আর রেনুকার প্রয়োজন অনুভব করেনি। শাকিলের চলে যাবার কিছুদিন পর রেনুকা বুঝতে পারে শাকিল তাকে একা রেখে যায়নি।

 

রেনুকা অবাক হয়ে ভাবে চারটি বছর সে মিথ্যের মধ্যে ডুবে ছিলো। শুধু রেনুকা নয় তার পরিবারও শাকিলের মায়াবি মিথ্যায় আচ্ছন্ন হয়ে তাদের সম্পর্কটা প্রশ্রয় দিয়ে গেছে। তার ফল আজ রেনুকা পাচ্ছে। তার পেটে এখন সে মিথ্যাই বেড়ে উঠছে। যা রেনুকাকে পরিবার সমাজ সবার কাছ থেকে আলাদা হতে বাধ্য করেছে। এই নির্বাসন এখন পর্য্যন্ত রেনুকাকে নষ্টা উপাধী থেকে মুক্ত রেখেছে। আজ পরিবারের সম্মিলিত ভাবে রেনুকাকে এই আপদ থেকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপদ আস্তাকুড়ে ফেলে রেনুকাকে পবিত্র করার আয়োজনের কথা রেনুকাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এও জানিয়ে দেয়া হয়েছে তার নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে।

 

আজ তাই রেনুকার ভিতের সব বাঁধ ভেঙ্গেছে। এতদিন আশায় ছিলো হয়তো শাকিল ফিরে আসবে। যা সে মিথ্যে ভেবছে তাই হয়তো সত্য হয়ে ভেসে উঠবে আঁধার ছিঁড়ে। আজ আশারও মৃত্যু ঘটলো। তার কেবলই পেটের সন্তানের কথা মনে আসছে। এই ভ্রুণটির কি দোষ? কেন তাকে পৃথবীতে আশার আগেই চির আঁধরে ডুবিয়ে দেয়া হবে। রেনুকা মনেপ্রণে চাইছে এটা যেনো দুঃস্বপ্ন হয়। কিন্তু তারপাশ থেকে সত্য সত্য শব্দ, তার ভিতরের শরীরটা এটাকে দ্রুবসত্য বলে চিংকার করে। চিংকারের শব্দে রেনুকা গুড়িয়ে যায়।

 

বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে রেনুকার চোখের স্রোতও বাড়ছে। এত জল রেনুকর চোখে, যেনো বৃষ্টির চেয়ে শতগুন বেশি। শাকিল একদিন তাকে বাহুবন্দি করে বলেছিলো-"তুই আমার ভীষন তৃষ্ণার বরফ শীতল জল, শুকনো বুকে উথাল পাথাল মেঘনা নদীর ঢল"। আজ তার ভিতরে কষ্টের ঢল বইছে। সে আর সহ্য করতে পারছেনা। সে আকুল হয়ে পেটের বাচ্চাটি একবার মা বলে ডাকতে বলে, সে কান পেতে থাকে। কোন শব্দ তার পেট থেকে বেরোয়না অথবা বৃষ্টির শব্দে সে কিছু শুনতে পায়না। বড্ড অভিমান হয় রেনুকার। সে বৃষ্টির কাছে প্রার্থনা করে, বৃষ্টির জল জমতে জমতে যেনো আকাশ ছুঁয়ে যায়। এই জীবন এই পৃথিবী সব কিছু অর্থহীন মনেহয় তার কাছে।

 

 

পাঁচ বরষা পরে.......................................

 

আকাশে বিশাল চাঁদ। জোস্না লুটোপুটি খাচ্ছে রেনুকাদের উঠোনে। নিত্যরাতের মতো ভয়ানক স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গে রেনুকার। অভ্যেস মতো সে জানলার কাছে গিয়ে বসে। অনেকটা ক্লান্ত রেনুকা। চোখ কোঠরে বসে গেছে, চোখের নীচে কালি জমেছে প্রচুর। ক্ষীণ দৃষ্টিতে রোজকার মতো জানলার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকায় রেনুকা। একটি তারার খোঁজে সমস্ত আকাশ চষে বেড়ায় তার চোখ। কোথাও নেই তার তারাটি, তার হারিয়ে যাওয়া তরাটি। জোর করে তার নাড়ী ছিঁড়ে যাকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে সে কোথাও নেই। রেনুকা হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। রাহেলা মেয়ের কান্না শুনে দৌড়ে আসেন। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে পাঁচ বছরে সহস্রবার বলা কথাটাই বলেন-" হে আল্লাহ আমার মেয়েকে শান্তি দাও, আমার মেয়েকে সুস্হ করে দও"।


নিলু

১।

নিলু বসে আছে জানালা খুলে। তীব্র শীতের রাত সাথে ধারালো বাতাস। বাতাসের ঝাপটায় নিলু কেঁপে কেঁপে উঠছে। তবু জানালা থেকে সরছেনা, বন্ধও করছেনা। সাদা কুয়াশায় অল্প দূরের বরই গাছটাও অস্পস্ট। হালকা চাঁদের আলোয় নিলু বরই গাছটার সবচেয়ে নিচের ডালটায় চোখ ফেলে আছে। আর কোন দিকে তার খেয়াল নেই। এমন রাতে নিলু জেগে জেগে রাতের রুপ দেখতে ভালবাসে। আজ যেনো সব রুপ ঐ ডালে জড়ো হয়েছে আর নিলুকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

নিলুর পাশে একটা টেবিল। টেবিলের উপর রাখা জিনিসগুলো সে হাত দিয়ে মাঝে মাঝে নাড়ছে। সাদা রশিটা টেনে এনে হাতের কাছাকাছি রাখে, রশির সাথেই রেখেছে বিষের ছোট বোতলটা। একটু দূরে টেবিলের শেষ প্রান্তে গোছানো বইয়ের উপর রেখেছে টাকাগুলো। দুইটা একহাজার টাকার নোট আর এগারটা পাঁচশ টাকার নোট। এগুলো তার মূল্য। তেরজন পূরুষ তাকে তেরো বার দেখেছে। সাকুল্যে সাতহাজার পাঁচশ টাকা তার কাছে জমা হয়েছে।

নিলু প্রত্যেকটা নোটে তারিখ এবং পুরুষগুলোর নাম খুব যত্ন করে লিখে রেখেছে। সর্ব প্রথম নোটে লেখা ১১/০৬/২০০৬ইং, নাম: মোঃ আসলাম মিয়া। আর শেষটায় ০৩/১২/২০১০ইং, নাম: মোঃ শাহিনুর আলম। এদের সবাই তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেছে। দাঁত দেখেছে, নখ দেখেছে এমনকি চুল সরিয়ে গাঁড়ে তিল আছে কিনা তাও দেখেছে। সব শেষে পান চিবুতে চিবুতে সবচেয়ে বয়স্কটা বলেছে, মাশাল্লাহ। মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে। ছেলের মামা বিরাট অফিসার, তিনি আসতে পারেননি। তার সাথে আলোচনা করে আমরা জানাবো। না কেউ আর জানায়নি। এসব ক্ষেত্রে এই না জানানোটাই জানানো। তার গাঁড়ে তিল নেই, তবুও সে দূর্ভাগা। একজন পুরুষও তার বর হলোনা।

দেখতে শুনতে নিলু গ্রামসেরা। লালচে রংয়ের শরীরের সবগুলো বাঁক অত্যন্ত মোহনীয়। স্কুল, কলেজে এই শরীরের জন্য কম জ্বালা সয়নি নিলু। কত চিঠি কতশত টুকরো হয়েছে তার কোমল আঙ্গুলের নিষ্ঠুরতায়। কত রোমিও আর রসিকের ঘুম হারাম করেছে তার ডান গালের কালো তিল। এখন ওগুলো অতীত, সূদূর অতীত। এখন নিলুর একটাই স্বপ্ন, মৃত্যু।

 

২।

আজ রাতেই সে মুক্ত হতে চায়, মুক্তি দিতে চায় এই সমাজ আর পরিবারকে। এখন শুধু সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ডালে ফাঁস নেবে না বিষ খাবে। আরেকটা কাজ আছে, সবুজকে একটা চিঠি লিখতে হবে। নিলু চিঠি লিখতে বসে।

 

সবুজ

আমি নিশ্চিত নই এই চিঠি তুমি পড়ছ কিনা। যেমন নিশ্চিত নই এক সময় বহু ব্যাবহৃত আজকাল একেবারেই অপাক্তেয় আমাদের গোপন ডাকবাক্সটা তুমি খুলবে কিনা। চিঠিটা তবু সেখানে রেখে গেলাম।

তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। সব দোষ আমার ভাগ্যের। যেদিন তোমার সাথে পালিয়ে গিয়ে পথেই তোমার বাবার লোকজনের কাছে ধরা পড়ে আবার ফিরে আসতে হলো তখনো তোমাকে আমি দোষ দেইনি। তখনো দোষ দেইনি যখন তোমার বাবা এক সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিলেন। এই পাঁচ বছর তুমি আমার সাথে কোন যোগাযোগ করনি, এতেও আমি তোমাকে দোষ দিতে পারিনা। তোমার কারনে সমাজ, পরিবার সব জায়গায় আমি অচ্যুত হয়েছি। বারবার বাজারের গরুর মতো পুরুষের সামনে নিজেকে টেনে নিয়ে গেছি, তবু কোন পুরুষ আমাকে তার খোয়াড়ের উপযুক্ত মনে করলোনা। না তার জন্যও আমি তোমাকে দোষ দিবনা। সব দোষ আমার, আমার নারীত্বের।

তোমাকে ভালোবেসে, ঘর ছাড়তে গিয়ে কি এতই বড় অপরাধ করেছি, যে আমাকে নষ্টা উপাধী পেতে হবে? আমার পরিবারকে কেন অপমান সইতে হবে? সে অপমান কেন আমার উপর দ্বীগুন হয়ে ছুটে আসবে? খুব বেশী লিখে ফেলছি। তোমার সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই। যে কথাটা বলতে চিঠি লিখছি, আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম প্রতিটি মূহর্ত, অপেক্ষায় থাকব পরজনমেও।

সুখে থেকো।

নিলু

 

৩।

চিঠি লিখে রশি, চেয়ার আর চিঠি হাতে ঘরের বাহিরে আসে নিলু। শীত থেকে বাঁচতে অনেকগুলো মোটা কাপড় পরেছে সে। তবুও শীত মানছেনা দেখে চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নেয়। বরই গাছের তলায় চেয়ার রেখে চিঠিটা রাখতে বাড়ীর বাহিরে যায়। ফিরে এসে ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তার গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। সে চেয়ারের কাছে ফিরে আসে। চেয়ারে উঠে বরই গাছের ডালে রশিটা পেছিয়ে নেয়। গলায় খুব যত্ন করে গিট দেয়য়। পা দিয়ে ঠেলে চেয়ারটা সরিয়ে দেয়।

সকালের পাখি ডাকতে শুরু করেছে। বরই ডালে হালকা দূলছে নিলুর নিথর দেহ। টুপটুপ করে ঝরছে ছোটছোট মরা বরই। কুয়াশায় ভিজছে নিলুর শরীর।

Likes Comments
০ Share

Comments (4)

  • - ধ্রুব তারা

    নারীদের ব্যাপারে আপনাকে অনেক অভিজ্ঞ মনে হল। লাভ গুরু হইতে পারেন। 

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    ভাইয়ের দেহি অনেক গিয়ান।

    - ঘাস ফুল

    নারীগো লইয়া পোষ্ট অথচ কোন নারীর এখানে উপস্থিতি নাই দেইখ্যা ধইরা নিছি আফনার কতাই সইত্য।