নাফিস দাঁড়ায় নীলার ছায়ায়
প্রচণ্ড গরমে নাফিস কানে হেড ফোন দিয়ে বাসে বসে আছে । বাস ছাড়ার কোন নাম নেই । তারপরও ওর কেন জানি অজানা আবেশে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে । এখনও বাসটা পুরোপুরি ভরে নি । যদিও ওর পাশের ছিটে একজন মাঝ বয়সী লোক বসে আছে তারপরও কেন জানি মনে হচ্ছে আশে পাঁশে যদি কোন সুন্দরি মেয়ে এসে বসে তাহলে ভ্রমনের ক্লান্তি টা হয়তো অনেক খানি লাঘব হবে । কিছুক্ষণ পর একজন মাঝ বয়সী লোকের সাথে ছিপ ছিপে গড়নের বেশ সুন্দরী একটা মেয়ে এসে নাফিসের বাঁ পাশের সারির সিটে বসে পরল । বাস ছেড়ে দেয়ার পর এই প্রথম বার মেয়েটার সাথে নাফিসের চোখা চোখি হলো । উভয়েই যেন খানিকটা লজ্জা পেল । নাফিসের গন্তব্য রংপুর থেকে শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ গেট । ও এম বি বি এস ২য় বর্ষের ছাত্র । জামালপুর জেলার একটা প্রত্যন্ত গ্রামে ওর বাড়ি । নৌকায় আসতে ভয় পায় বলে ওকে বাসে করে রংপুর হয়ে বগুড়া আসতে হয় । এই ভাবে আরও কয়েকবার বাসে মেয়েটার সাথে ওর চোখা চোখি হলো কিন্তু কথা বলার মত কোন উপায় ছিল না । ওর মাথায় একটা দারুন বুদ্ধি খেলা করল । পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কথা বলার ভান করে মোবাইলটা কানে ধরল ; হ্যালো , রাহুল , আমার নতুন নাম্বারটা নি তো । জোরে জোরে মেয়েটাকে শুনিয়ে শুনিয়ে নাম্বার বলতে থাকল । ও যা ভেবেছিলো তাই হলো । মেয়েটা ও নাম্বারটা মোবাইলে উঠিয়ে নিলো । নাফিস ওর গন্তব্যে এসে নেমে পরল । রাতে এনাটমির বইটা সামনে নিয়ে মেয়েটার কথা ভাবছিলো । এমন সময় একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো ।
; হ্যলো, আপনি কি ? সেই ছেলেটা না । বাসের মধ্যে নাম্বার দেয়ার জন্যে কথা বলার ভান করছিলেন । আপনি তো মনে হয় মেয়ে পটানোর ওস্তাদ ।
; কি যে বলেন না ? আমি মোটেও ওস্তাদ নই । আপনাকে দেখে নাম্বারটা দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না । তাই একটু অভিনয় করতে হলো ।
তারপর কথা শুরু হলো । মেয়েটার নাম নীলা । রংপুর শহরে থাকে । বগুড়ায় নানুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছে । এইবার এস এস সি পরীক্ষা দেয়ার কথাছিলো কিন্তু অসুস্থতার জন্যে দিতে পারে নি । কথা বলতে বলতে প্রায় ভোর হয়ে এলো । সেদিনের মতো তাদের কথা বলা শেষ হলো । এভাবে প্রায় প্রতিদিনই ওরা কথা বলতে বলতে আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছে কেউ টেরই পায় নি । দিন দিন একে অন্যের প্রতি দুর্বল হয়ে পরছিলো । বছর খানি কেটে গেলো । ওরা দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলো । যেহেতু নীলা মেয়ে অগত্যা নাফিস কেই রংপুর যেতে হলো । ওরা পার্কে দেখা করলো । একটা মেজেন্টা কালারের থ্রি পিস পরে এসেছিলো মেয়েটা আর নাফিস সাদা রঙের টি শার্ট পরে । সেদিনই প্রথম নাফিস নীলাকে ওর ভালোবাসার কথা জানালো । নীলা এই দিনটার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো । নীলা ওর হাতটা বাড়িয়ে দিলো । প্রথমবার একে অন্যের হাত ধরলো । এক পশলা সুখের অনুভূতি দুইজনের হৃদয় ছুয়ে গেলো । সেদিনের মতো নাফিস চলে আসলো । জীবনের পথ ধরে ভালোবাসার রঙ্গিন বেসাতি এগিয়ে চলল নতুন সপ্ন নিয়ে । তারপর ওরা অনেক বার দেখা করেছে কিন্তু নীলা সবসময় নাফিস কে শুধু হাতটাই ধরতে দিয়েছে । পাছে গুনা হবে এই ভয়ে । নীলা এস এস সি পাশ করে কলেজে ভর্তি হলো আর নাফিস ৪র্থ বর্ষে । নীলা একদিন কথা বলতে বলতে ওর মায়ের কাছে ধরা খেল । ওকে অনেক বুঝানোর পরে কোন কাজ হলো না । অগত্যা নীলাকে ঢাকায় ওর মামার বাসায় জোর পাঠিয়ে দেয়া হলো কিন্তু নিলার পাগলামির কাছে সব হার মেনে গেলো । একটা মাত্র মেয়ে বাবা মায়ের বড় আদরের । তাই ওকে আবার রংপুর নিয়ে আসা হলো । ওর বাবা ব্যাংকের কর্মকর্তা । নীলার বাবা নাফিসের সাথে কথা বলতে চাইলেন । নীলাকে বললেন নাফিস কে যেন ওদের বাসায় আসতে বলে । নাফিস ওদের বাসায় আসার পরে নীলার বাবা নাফিস কে বেশ পছন্দ করলেন । মেডিকেলে পরে , দেখতে – শুনতেও বেশ ভালো । নাফিস খুশি মনে চলে আসলো । নীলার প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হলে ওরা সবাই নিলাদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে চলে গেলো । সেদিন নীলা নাফিস কে বলল তুমি যেন এখন আমাকে কল না দাও । আমি কাজিনদের সাথে নদীতে গোসল করবো । নাফিস ওকে সাবধান করে দিলো যাতে ও বেশি পানিতে না নামে যেহেতু ও ভালোভাবে সাতার জানে না । নীলা বলল আমি গোসল সেরে ভেজা শরীরে তোমাকে কল দিবো , কেমন লাগে তোমাকে কল দিয়ে বলবো । এই বলে ফোন রেখে দিলো । কাল পরীক্ষা তাই নাফিস আর নীলাকে কল দিলো না । পরদিন পরীক্ষা দিয়ে এসে নীলার নাম্বারে কল দিলো কিন্তু বন্ধ পেল । সারাদিন চেষ্টা করলো , এইভাবে দুই দিন চলে গেল । নাফিস ভাবলও নীলার কি কোন বিপদ হলো নাকি ? ও নীলাদের গ্রামের বাড়ির পথে রওনা দিলো । নীলা আগে ওকে ওদের গ্রামের বাড়ি সম্পর্কে বলেছিলো । নীলাদের বাড়ির সামনে অনেক লোকজন দেখে চমকে গেলো । কি হয়েছে ? জানার জন্যে একজনকে জিজ্ঞাসা করলো । শুনার পরে ওর মাথাটা ঘুরে গেলো । নীলার বাবা এসে নাফিস কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো । সেই দিন নাকি নীলার সাথে আরো তিনজন কাজিন যমুনা নদীতে ডুবে মারাগেছে । তিন দিন পরে আজ ওর লাশ পাওয়া গেছে । কেউই ওকে নীলাকে শেষ দেখটা দেখতে দিলো না , সহ্য করতে পারবে না বলে । জানাজা শেষে নাফিস চলে আসলো । ও কোন কথা বলতে পারছিলো না । পরদিন ভাইবা তে ওকে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করা হলো ও কিছুই বলতে পারলো না । এক সময় জ্ঞান হারিয়ে পরে গেলো । বন্ধুরা ধরে ওকে হোস্টেলে নিয়ে আসলো । মেয়েটা প্রায়ই ওকে বলতো তুমি পড়া ছেরে দিয়ে একটা চাকুরী করো আমরা সংসার করবো । অনেকটা পাগল কিছিমের মেয়ে ছিলো । সেদিন রাতে ও বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো । মাথার ওপর একটা ছায়া দেখতে পেলো...... আবছা আলোয় ছায়ার মুখটা নীলার মতো লাগছিলো ...... তারপর নাফিস জ্ঞান হারাল ......।।
Comments (2)
ভাইয়া ভালো লিখেছেন।