Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শুঁটকি মাছ

১০ বছর আগে লিখেছেন

গল্পঃ প্রিয়তমা তোমার জন্য ভালোবাসা

ভাবতে অবাক লাগে,একটা সময় যে মানুষটাকে ভালবেসে পৃথিবীটা ফিরিয়ে দিতে পারতাম আজ আমি তাকেই এত ভয়াবহ রকম ঘৃণা করছি! আজকাল ইচ্ছে হয় সুসানকে খুন করে ফেলি। ওকে খুন করার ইচ্ছেটা খেয়ালি চিন্তা না। আমি আসলেই ওকে খুন করতে চাইছি। আমার লাইসেন্স করা পিস্তলটা বাসাতেই আছে। ইচ্ছে করলেই ওকে খুন করা যায়। ওকে খুন করলে না হয় খুব বেশী হলে জেলেই যাব। ওর মত ভন্ডটাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে জেলে যেতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই।

আজ সুসান বাসায় ফেরার সাথে সাথেই ওকে খুন করতে হবে। আরো ঘন্টাখানেক বাকি আছে ওর বাড়ি ফিরতে। 

ড্রয়ার থেকে পিস্তলটা বের করা দরকার। ওয়ারড্রবের কোন ড্রয়ারে যে পিস্তলটা রেখেছিলাম কে তাও খেয়াল নেই। সুসান প্রায়ই বলে পিস্তলটা ব্যাংকের লকারে রেখে আসতে। না রেখে এসে ভালই করেছি। পিস্তলটা হাতের কাছে আছে বলেই হয়তো আজ ওকে খুন করার ইচ্ছাটা হয়তো আরো তীব্র হয়েছে । 

এই ড্রয়ার ঐ ড্রয়ার খুজে চলছি, রাজ্যের জিনিসপত্র দেখছি, অথচ পিস্তলটাই পাচ্ছি না। সুসানের ড্রয়ারে ভেবেছিলাম পিস্তলটা থাকতে পারে। ওখানে পিস্তলটা না পেলেও একটা ডায়েরী পেলাম। ডায়রীটা পড়া দরকার। কিন্তু তার আগে দরকার পিস্তলটা। 

আরো কিছুক্ষণ খোজাখুজির পর পিস্তলটা পাওয়া গেল। এটাকে হাতের কাছেই রাখি। বেশ্যাটা আজ বাড়ি ফেরার সাথে সাথে ওকে গুলি করব। তার আগে ওর ডায়েরীটা পড়ে ফেলি। 

ডায়েরীর ওপরে লেখাঃ তোমাকে নিয়ে।


পৃষ্ঠা ১
এরিক, 
আমার কাছে মাঝে মাঝে মনে হয়- তোমার সাথে দেখা না হলে, কিংবা তোমার ভালবাসা না পেলে আমার জন্ম হওয়াটাই মিথ্যা হয়ে যেত। বিশ্বাস করো, আমার এখন আর কিচ্ছু দরকার নেই। আমার কোনো চাহিদা নাই। আমি কেবল মনে প্রাণে চাই যেন প্রতিদিন সকালে উঠে আমি তোমার মুখটা দেখতে পাই। এরচেয়ে বেশী আর কিচ্ছু চাই না এরিক।

পৃষ্ঠা ২
এরিক, 
তুমি কখনও আমাকে বলেছো, “আমি তোমাকে ভালবাসি”- এটা আমার স্মৃতিতে নেই। তুমি গত তিন বছরে একবারও বলনি যে তুমি আমাকে ভালোবাসো। প্রয়োজন নেই বলার। এ নিয়ে সত্যিই আমার কোনো অভিযোগ নেই। কারণ, যে মুহূর্তগুলোতে তুমি আমার দিকে তাকাও আমি তাতে দেখতে পাই-তুমি আমাকে ভালোবাসো; যখন তুমি আমাকে স্পর্শ কর তখন আমি তাতে ভালোবাসার আবেশ পাই। সত্যি বলতে তোমার ভালবাসাটা আমার কাছে অক্সিজেনের মত মনে হয়। আমার চারপাশে ভালোবাসাটাকে তুমি এমন ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছো যে মুখ ফুটে আর “ভালোবাসি” কথাটা বলার প্রয়োজন নেই। 

পৃষ্ঠা ৩
এরিক,
তুমি এত বোকা কেন বলোতো? আজকে শপিংমলে উইনের সাথে দেখা হল। বাড়ি ফেরার পথে তোমাকে আমি বললাম যে একটা সময় উইনের সাথে আমার বন্ধুত্বর চেয়ে কিছু বেশী একটা সম্পর্ক ছিল। কথাটা শোনার পর থেকে তোমার মুখ এমন কালো হয়ে গেল কেন? গ্রেড এইটের সেই ব্যাপারটাকে নিয়ে তুমি এত সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছিলে কেন? উইনের সাথে যা ছিল তা হয়তো আদৌ প্রেম ছিল না। হয়তো কেবলি মোহ ছিল। আর আজকের এই আমি তো শুধুই তোমাকে ভালবাসি। এইটুকু কেন তুমি বুঝতে পারলে না?

পৃষ্ঠা ৪
এরিক,
তুমি বদলে যাচ্ছো। তুমি আমাকে অবিশ্বাস করা শুরু করেছো। তুমি মুখ ফুটে কিছুই বলনা। তবু আমি বুঝি- তুমি আমাকে অবিশ্বাস কর। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটাকে কেন এত পলকা ভাবছো? কেন তুমি বোঝোনা যে তোমার ভালবাসাটাকেই আমি শেষ আশ্রয় ভাবি? আজকাল আমার চারপাশের বাতাসটাকে অসহ্য লাগে এরিক। প্লিজ তুমি আমার দিকে আবার আগের মত করে তাকাও। আবার আগের মত করে স্পর্শ কর।


পৃষ্ঠা ৫

এরিক, 
আমরা আজকাল ভালবাসার অভিনয় শুরু করেছি। প্রতিদিন রাতে এক সাথে ঘুমাতে যাই, পাশাপাশি শুয়ে থাকি, কখনও আমার শরীর তোমার স্পর্শ পায়, কিন্তু সব মিলিয়ে আমার মনে হয় যেন আমাদের দুজনার মাঝে একটা বিষধর সাপও শুয়ে থাকে। আমাদের অনবরত ভালবাসার অভিনয়ে সময় সেই সাপটা যেকোনো সময় ফনা তুলে মাথা জাগিয়ে ভালোবাসাটাকে আলগা করে দিচ্ছে। এমন কেন হচ্ছে এরিক? আমার দুস্বপ্নগুলোও তো এত বিশ্রী ছিল না।

পৃষ্ঠা ৫
এরিক,
মাঝে কিছুদিন তোমার চোখের চাহনীতে ভালোবাসা দেখিনি। কেমন একটা নিষ্পৃহ ভাব নিয়ে তুমি আমার দিকে তাকাতে। কিন্তু আজকাল আমার কেন জানি মনে হয় তোমার চোখের ভিতর আমি সেই বিষধর সাপটাকে দেখতে পাই। তুমি কি আমাকে খুন করতে চাইছো? কি জানি হয়তো আমার ভুলও হতে পারে!

পৃষ্ঠা ৬
এরিক,
তুমি আসলেই আমাকে হত্যা করতে চাইছো। এরিক তুমি উন্মাদ! তুমি বদ্ধ উন্মাদ!

পৃষ্ঠা ৭
এরিক 
আমার আজকাল পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। আমি জানি, আজ কিংবা কাল তুমি আমাকে খুন করবেই। আমি যতই বলি না কেন উইনের প্রতি একটা সময় আমার যে অনুভূতি ছিল তার ছিটেফোটাও এখন নেই, সেটা তুমি কিছুতেই বিশ্বাস করবে না। আবার আমি যদি পালিয়ে যাই তাহলে তোমার ভেতরে এই বিশ্বাসটা আরো দৃঢ় হবে যে আমি তোমার চেয়ে উইনকেই বেশী প্রাধান্য দেই। অদ্ভুত দোলাচলের মাঝে বসবাস করছি আমি!

পৃষ্ঠা ৮
এরিক
আমার ভিতরে আরেকজন মানুষ বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। আমি মা হতে চলেছি। আমার ভিতরে তোমার সন্তান বেড়ে উঠছে এরিক! কি দারুন ব্যাপার তাইনা? কিন্তু আমি এই খবরটা তোমাকে দিতে ভয় পাচ্ছি। তোমার যদি মনে হয় যে এই সন্তান তোমার না! যদি সন্তানের খবর দেয়া মাত্র তুমি কোনো সুযোগ না দিয়ে আমাকে হত্যা কর? আমার সন্তানটাকে আমি এখন পৃথিবীর সবচাইতে বেশী ভালবাসি। হয়তো তোমার থেকেও বেশী ভালোবাসি এরিক!


এইটুকু পড়ার পর আমার মাথাটা কেমন খালি খালি মনে হল। সুসানের প্রতি আমার আচরণ ভেবে নিজের প্রতি বিশ্রী রকম বিতৃষ্ণা লাগল। আমার অনাগত সন্তানটার জন্য কিরকম যেন মনটা আকুলি বিকুলি করে উঠল। কতগুলো এলোমেলো আবেগে আমার চারপাশ যেন ভরে উঠেছে।

সুসানকে আর একটু হলেই আজ আমি হত্যা করতাম। একই সাথে হত্যা করতাম আমার অনাগত সন্তানকে। আজ সুসান আসলেই ওর কাছে মাফ চাইতে হবে। 

নিচে গাড়ির আওয়াজ পেলাম। সুসান এসে গিয়েছে হয়তো। লিফটটায় কি যেন সমস্যা হয়েছে। কাজ চলছে। বেচারী সুসানকে সিড়ি বেয়েই উঠতে হবে। সুসান আসার আগেই দরজা খুজে দাঁড়িয়ে রইলাম। আজকে ওকে দেখার সাথে সাথে বলব- “সুসান তোমাকে আমি প্রচন্ড ভালবাসি। এই পৃথিবীর কাউকে এর চেয়ে বেশী ভালোবাসি না।”

সিড়ি বেয়ে বেয়ে সুসান আসছে। ওকে দেখেই আমি দৌড়ে ওর কাছে গেলাম। আমাকে দৌড়ে আসতে দেখে ও কেন যেন আতংকিত হয়ে গেল।
কোনো ভাবে চিৎকার দিয়ে বলল, “তোমার হাতে পিস্তল কেন?”
তারপর আচমকাই সিড়ি থেকে পা ফসকে পড়ে গেল।
একটা সময় আমি দেখলাম, সুসান সিড়ির গোড়ায় পড়ে নির্জীব হয়ে পড়ে আছে। মাথার পিছনের অংশটা ভেঙ্গে তা থেকে মগজের কিছু অংশ বের হয়ে এসেছে।

অবাক হয়ে দেখলাম, যতটা চেয়েছিলাম তার চেয়ে ভয়াবহভাবে সুসানের মৃত্যু হয়েছে।

Likes Comments
০ Share

Comments (6)

  • - সুখেন্দু বিশ্বাস

    স্বপ্ন ভঙ্গের গাঁথা দারুণ লেগেছে।

     

    শুভেচ্ছা সতত বৈশাখী ঝড়।       

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      ধন্যবাদ

    - মাসুম বাদল

    সারাদিন হেঁটে ক্লান্ত বিধ্বস্ত কিশোরী ঘরে ফিরেই স্বপ্নের ডালা খুলে বসে

    প্রতিদিন কত সভ্য মানুষ! তাকে ছিঁড়ে খায় চোখের ইশারায় তার হিসেব কষে আনমনে।

     

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      অফুরন্ত ধন্যবাদ মাসুম ভাই