ভালো থেকো।
কথাটি শেষ করে রনি আর একবারের জন্যেও পেছন ফিরল না।চোখ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অশ্রু। পৃথিবীর সমান বিষণ্ণতা আঁকড়ে ধরেছে তাকে।নিজেকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলছে সে। নিজের মনকে কোন ভাবেই শান্তনা দিতেপারছে না। এমন তো হওয়ার কোন কথাই ছিল না!
পিছন থেকে একটা গাড়ির হর্নবাজছে। কখন যে সে রাস্তায় চলে এসেছে খেয়ালই করেনি। গাড়ির হর্ন বেজেই চলছে।কিন্তু কোন ভাবেই সে নিজের মস্তিষ্ক কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। কোন মতেরাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। কি হচ্ছে তার সাথে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছে নারনি। পারবেই বা কি করে? তার জিবনের প্রিয় মানুষটির সাথে যে আজ বিচ্ছেদক্ষণ।
এইতোসেদিন, রনি তার প্রিয় মানুষটির সাথে বেড়াতে গিয়েছিল। সারাদিন একসাথে ঘুরেবেড়িয়েছে, গল্প করেছে, দুপুরে একসাথে খাবার খেয়েছে। বিকেলে ফেরার সময় বাসেরসবথেকে শেষের সিটে বসে গল্প করতেছিল। অনেক হাসিঠাট্টা আর দুষ্টুমি করে সময়কাটাচ্ছিল। হঠাৎ রনি বলে উঠল-
‘একটা কথা রাখবে?’
আরে কি এমন কথা যে আগেই জানিয়ে নিচ্ছ? বলেই ফেল। রনির দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল মিলি।
হুম, এই মিলিই হল রনি প্রিয় মানুষ, যাকে সে তার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবেসেছে।
রনি আবারও জিজ্ঞেস করল, আগে বল কথাটি রাখবে?
ঠিকবাংলা পাঁচ এর মত মুখ বাকিয়ে মিলি রনির দিকে না তাকিয়ে কর্কশ স্বরে বলেউঠল- ‘তোমার কোন কথা কি আমি রাখি না’!!! মিলির মুখের দিকে তাকিয়ে রনিরমনটাও খারাপ হয়ে গেল। তারপর রনি বলল থাক, পরে বলব। আর সাথে সাথে মিলি বলতেলাগলো, তুমি আসলেই একটা পাগল। পাগল বললে ভুল হবে। তুমি বড্ড বেশি পাগল। এইবলে হেসেই দিল। মিলিকে হাসি মুখে দেখে রনিও হেসে দিল।
আর তখনি রনিমিলির হাত চেপে ধরল। আর মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলল- ‘কথা দাও সারাটি জীবনআমায় ভালবেসে পাশে থাকবে? একা ফেলে চলে যাবে না তো আবার? কথা দাও।। হঠাৎনিরবতায় হারিয়ে গেল দু’জন। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে একে অপরের দিকে। কয়েকমুহূর্ত কেটে গেল। রনির চোখে পানি দেখে মিলি নিজের হাতে চোখের পানি মুছেদিল। আর মুছতে মুছতে রনিকে কয়েকটা ঝাড়ি দিয়ে বলতে লাগলো-
‘তোমারঅমনটা কল্পনায় আসে কি করে, তোমার দুঃসাহস দিন দিন বেড়েই চলছে’। আর কথাশেষ না হতেই রনির কাঁধে নিজের মাথা রেখে চোখ বুঝে চুপ করে রইল। রনি নিজেরমাঝে ভালবাসার শ্রেষ্ঠ অনুভূতি অনুভব করল। মিলির হাত শক্ত করে ধরে রইল। আরনিজেকে পৃথিবীর সুখীদের কাতারে খুঁজে পেল।
সেদিনের মত রাতে মিলিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে রনি তার বাসায় ফিরল।
পড়াশুনাআর টিউশনির চাপে গত একটি সপ্তাহে রনির সময়ই হয়ে উঠেনি মিলির সাথে দেখাকরার। ফোনেই যোগাযোগ। শেষ কথা হয়েছিল গত সন্ধ্যায়। মিলিকে খুব আতঙ্কিতলাগছিল। মিলি বার বার বলছিল রনিকে- তোমাকে কতদিন দেখি না। আমার না তোমাকেভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। আমার কেন জানি আজকে অনেক বেশি ভয় করছে। প্লিজ তুমিকালকে আসো না, দেখা করি। অতঃপর মিলি চুপ করে গেল। রনি অবাক হল, মিলিতো অমনঅবুঝ ভাবে কখন আবদার করে না।
সে মিলিকে বলল, ঠিক আছে। কালকে বিকেলে টিউশনি শেষ করে তোমার সাথে দেখা করব বলে ফোন রেখে দিল।
পরদিনদেখা হয়েছে ঠিকই, কথা হয়নি। ও চোখে চোখ রেখে হারিয়ে হাওয়া হয়নি। সেদিনরাতেই নাকি হঠাৎ ভীষণ রকমের অসুস্থ হয়ে পড়ে মিলি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াহয়েছিল, কিন্তু ডাক্তাররা মৃত বলে জানায়।
রনি যতক্ষণে জানলো, ততক্ষনেসে হারিয়ে ফেলছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জনকে। শেষ বারের মত পারেনি মিলিরহাতে হাত রেখে হয়নি শোনা কিসের অস্থিরতা ছিল মিলির। কেনই বা সে রনিকে ছেড়েঅভিমানে চলে গেল!
কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে অশ্রু বিসর্জনদিচ্ছে, আর খুব প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হচ্ছিল রনির, ‘‘কেন সে কথা রাখেনি!চিরদিন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেনই বা তাকে একা রেখে হারিয়ে গেল নাফেরার দেশে। একবারের জন্যেও কি সাথে নিতে ইচ্ছে করল না?’’
চরম অভিমানে রনি মিলির কবরের পাশে গিয়ে শেষ বারের মত বিদায় নিল।
আর বলল, ভাল থেকো।
_______________________________________©অ্যাব্স সোহেল (১৭/০৩/২০১৪ ইং)
Comments (1)
ভাল লাগল মান্নান ভাই।
ধন্যবাদ কবি এই বসন্তে ভাল থাকুন,,,
খুব কঠিন কথা। অনুভূতির দারুন প্রকাশ।
ধন্যবাদ কবি এই বসন্তে ভাল থাকুন,,,
গভীর চিন্তামগ্ন কথা । সবটা বুঝে উঠতে পারলাম না । কবিকে শুভেচ্ছা ।
ধন্যবাদ কবি এই বসন্তে ভাল থাকুন,,,