Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আ,শ,ম এরশাদ

১০ বছর আগে লিখেছেন

মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের "মুক্তিযুদ্ধ"।

লিখাটা কোন অসহায় মুক্তিযুদ্ধার জীবন কাহিনী নয়, যুদ্ধের টালমাটাল সময়ের কোন এক দুর্ধষ অপারেশনের নিঁখুত বর্ণনা নয়। নয় কোন লোভী, সুযোগসন্ধানী মুক্তিযুদ্ধার মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অগৌরবের আখ্যান।
লিখাটা কোন  মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রির সোল এজেন্ট দাবীকারী কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে সাফাই ও নয়। লিখাটা মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতার ঘোষনা নিয়ে হান্নান, জিয়া, বংগবন্ধু মুজিব, 26 শে মার্চ, 27শে মার্চ, স্বাধীন বাংলাবেতার, বেলাল মুহাম্মদের বয়ানের অহেতুক তর্ক নয়।
লিখাটা 70 দশকে জন্ম নেয়া একজন মানুষ হিসাবে আমার অনুভব,ভাবনা ,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা এ সবের কিছু দিক নিয়ে। সবার মত আমরও একটা রাজনৈতিক দুর্বলতা আছে তাই আমি নিজেকে নিরপেক্ষ দাবী করি না। সত্যিকার ভাবে একজন মানুষ তার মজ্জাগত ধারনা ,বেড়ে উঠা এ সব থেকে নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। হয়ত আমার লিখাটাও এ থেকে ব্যাতিক্রম নয়। লিখাটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। তাই এর বিপক্ষে কারো মত থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরুধ রইল।

বিষয় হিসাবে "মুক্তিযুদ্ধ" : আমার মতো 70 দশকে যারা জন্ম নিয়েছেন তাদের অধিকাংশই মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন রচনা বা লিখাকে তেমন আদর করে দেখেছিনা। আমার নিজের এক সময়ের বিরাট আগ্রহের বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ,মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।  টিভি চ্যানেলে সাদাকালো কোন ছবি বা ভিড়িও দেখালে আমি রিমোট আর আগপিছ করতাম না। দেখতাম ৭১ এর রণাঙ্গন।  কিন্তু এখনো মনে করি মুক্তিযুদ্ধ এবং এর চেতনা আমাদের সম্পদ। এই সম্পদ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে নেয়া উচিত। একটা জাতি অবশ্যই তার শেকড় এবং অভ্যুদয় সম্পর্কে এবং সেই সময়কে জানবে এবং শ্রদ্ধায় নত থাকবে। একটা দেশ বা জাতি জন্মের সময় যে মানস নিয়ে গড়ে উঠে সেটাকে ধরে রাখার জন্য আইনি সাংবিধানিক সুরক্ষাও দিয়ে থাকে অনেক দেশে।

মুক্তিযুদ্ধের দলীয় করন:

 মুক্তিযুদ্ধের সময় একটা রাজনৈতিক দলের(আওয়ামীলীগের) নেতৃত্ব দেয়ায় জনযুদ্ধটা অনেকটা দলীয়করণ হয়ে গেছে।  বিজয় দিবস, 7 ই মার্চ, স্বাধীনতা দিবসে অন্য দল গুলোর দায়সারা কার্যক্রমের কারণেই মুক্তিযুদ্ধটা আওয়ামী ঘরণার মনে করে অনেকে। বলতে পারি অন্য দল গুলা সুযোগ করে দিয়েছে আওয়ামীলীগকে। তাই এখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বলতে গেলে অনেকেই তেড়ে আসবেন আওয়ামীলীগের পক্ষে সাফাই গাইতে এসেছি বলে। অথচ এই রকম  হওয়া উচিত ছিল না। স্বদেশের অভ্যুদয় এবং পৃথিবীর ইতিহাসের এক অনন্য যুদ্ধ এবং সাহসের স্বাক্ষর ছিল এই যুদ্ধ। শীত ,বর্ষাকে উপেক্ষা করে, অপ্রতুল অস্ত্র নিয়ে, এ দেশের অকুতোভয় মানুষ গুলার জীবন বাজির যে আলোকচিত্র এখনো আমরা দেখি তাকে শ্রদ্ধা না করে পারি না। গায়ে একটা গেন্জি ও ছিল না অনেকের,লুঙ্গি পরে, গামছা পরে 1971 এর শীতকাল অতিক্রম করেছিল আমাদে মুক্তিযুদ্ধারা।

চোখটা বন্ধকরে যখন আমি প্রবেশ করি সেই টালমাটাল উত্তাল ,উৎকন্ঠার 1971 এর 26 শে মার্চ থেকে 16ই ডিসেম্বরে তখন আমিও হয়ে যাই একজন কাদায় মাখা লুঙ্গিপড়া মুক্তিযুদ্ধা। আমিও হয়ে যাই সদা উৎকন্ঠিত অনিরাপদ মা'য়ের কিংকর্তব্যবিমুঢ সন্তান । তাই কখনো দলীয় দৃষ্টিকোণে দেখে আমরা এর থেকে দুরে থাকতে পারি না। আমরা একদিকে যেমন (অধিকাংশই )মুসলমান,তেমনি বাংলাদেশী। বদরের যুদ্ধ ,উহুদের যুদ্ধ যেমন আমাদের প্রেরণা ,নিজের স্বাধীন আবাসভুমির জন্য আমাদের যে সম্মিলিত স্বঃতস্ফুর্ত জনযুদ্ধ সেটার থেকেও আমরা বিস্মৃত হতে পারি না। পারি না মুখ ফিরিয়ে নিতে যদি না রাজাকারের রক্ত আমাদের কলুষিত না করে থাকে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা:

মুক্তিযুদ্ধে যে সব সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল তাদের সব সময়ের প্রচেষ্টাই হলো মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে তোলা, হেয় করে তোলা। সে সময়ের যে চেতনা সেটাকে তাচ্ছিল্য করা। এই কাজটা ইদানিং বেশ ভালোভাবেই তারা করতে পারছে যখন অন্যান্য সংগঠন গুলা আওয়ামীলীগের বিরোধীতা করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কিছু বললেই চেতনাবাজ, চেতনাধারী, ট্যাগ লাগিয়ে উদ্ধাহু নৃত্য করে। কোন কোন ব্যাক্তি দোষী হতে পারেন চেতনা বিক্রি করে ফায়দা লুঠেন সন্দেহ নাই। কিন্তু চেতনার কি দোষ? বুঝাই যায় তাদের টার্গেট বিশেষ ব্যক্তি নয় তাদের টার্গেট মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হেয় করা।যারা হরহামেশা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে, খোলা ময়দানে দুর্ণীতি গ্রস্থ মুখে এই চেতনার কথা বলেন বেশ সস্তাদরে আমি সেরকম ভাবে কিছু আপনাদেরকে বলতে আসিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিস্তারিত তাত্বিক ব্যাখ্যাটার দিকে না গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, যে তাড়নাটা আমাকে স্পর্শ করে সেটার দিকেই আমার মনোনিবেশ। যুদ্ধের প্রেক্ষাপট,পটভুমি সবমিলিয়ে আমাদেরকে যে একটা প্রগতিশীল অসম্প্রাদায়িক চেতনার দিকে ধাবিত করেছিল সেটাই আমার আলোচনার উপজীব্য। পৃথিবীতে ধর্মীয় রাস্ট্রের জনপ্রিয়তা বেশী না ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জনপ্রিয়তা বেশী সেটা তর্কের বিষয়। তবে মনে হয় যুদ্ধপরবর্তী আমাদের কৃষ্টি,কালচার,মনোজগত সবটা মিলিয়ে আমরা(বেশীর ভাগ,যারা খেলাফত রাষ্ট্র চায় সেটা ভিন্ন কথা) ধর্মনিরপেক্ষ একটা অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের কল্পিত চিত্রই আমারা বেশী করে এঁকে থাকি। আমরা বিকেলে মঞ্চে কবিতা আবৃতিও করবো, আবার ফজরে কোরআন তেলাওয়াত করবো পরম বিশ্বাস বুকে নিয়ে। এমন একটা মধ্যপন্থী ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় কালচারই আমাদেরকে স্বস্তি দেয় বলে আমার বিশ্বাস। আমারা কেমন রাষ্ট্র দেখতে চাই সেটা আমাদের নির্ধারণ করতে হবে। যদি আমাদের মনোজগৎ মধ্যম ধর্মীয় এবং নিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় কালচারকেই সায় দেয় তাহলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এই চেতনাকে লালন করতে হবে, এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার মুলে যারা আঘাত করে "বাংলা হবে আফগান"বলে প্রকাশ্যে শ্লোগান তুলে তাদেরকে ঠেকাতে হবে।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার:

এটা নিয়ে বাজারে প্রচলিত হাজারো যুক্তি, কথা ,বিচারে প্রক্রিয়া, দীর্ঘসুত্রীতা ,তর্ক নিয়ে আমরা সবাই মোটামোটি টায়ার্ড। সেটা নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাই না। আমার দু একটা প্রশ্ন আপনাদেরকে শেয়ার করতে চাই কেবল।
পৃথিবীতে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনদেশে যুদ্ধের প্রকাশ্য বিরোধীতাকারীরা কি এত বেশী প্রতিষ্টিত, সম্মানীত হয়েছে ? আমি মানবতা বিরোধী অপকর্মগুলার দিকেও যাচ্ছি না। আমার জানা নেই কোন যুদ্ধের পরাজিত শক্তির খুব স্বল্প সময়ে এমন ভাবে প্রতিষ্টা লাভ করার নজীর। সে অর্থে আমরা বাংলাদেশীরা কি খুব বেশী উদার হয়ে যাইনি? এমনকি তারা ক্ষমাও চায়নি তাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। আলী আহসান মুজাহিদের দম্ভোক্তি  গুলাকি আমাদের একটুও বিচলিত করে না? সাকা চৌধুরির তাচ্ছিল্য কি আমাদেরকে বলে দেয় না যতদিনই চলে যাক না কেন,যত বুড়াই এরা হোক না কেন, এদের বিচার হওয়া উচিত? জাতি বিভক্ত হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লেও কি আলী আহসান মুজাহিদ,সাকা চৌধুরীর তাচ্ছিল্য আমাদের হজম করতে হবে? ক্ষমতার লোভে আমাদের রাজনৈতিক দল গুলাও সময়ে সময়ে তাদের প্রশ্রয় দিয়ে আজকে তাদের ফুলে ফেঁপে উঠার সুযোগ করে দিয়েছে। যারা আমাদের গনতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়, মনে প্রানে গ্রহন করতে পারেনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম,তাদের বিচার করা কি সমুচিন নয়? নির্বাসনে পাঠানো কি সমুচিন নয়?

বাংলাদেশ আসলে সব সম্ভবের দেশ। স্বাধীনতাবিরোধীরা জাতীয় পতাকাশোভিত গাড়িতে করে ঘুরতে পারে, আমরা তাদের হুজুর হুজুর করি,তাদের ফুঁ দেয়া পানি খেয়ে বলি আলহামদুলিল্লাহ "জয় পাকিস্তান।" কিভাবে  সম্ভব বাচ্ছু রাজাকার সফেদ পান্জাবি পরে বুক ফুলিয়ে হাঁটবে আর বীরঙ্গনা সখিনা বিবিরা সেটা সয়ে যাবে মুখ বুজে? হয় বাচ্ছু রাজাকারে বিচার হোক না হলে দোররা মারা হোক সকিনা বিবিকে। সখিনাবিবির দিকে চেয়ে ও আমরা আমাদের শেষ বাক্য কি  বলতে পারিনা কোন শর্ত না দিয়ে, কোন কিন্তু জুড়ে না দিয়ে "যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই, বিচার হোক। যুদ্ধাপরাধীর বিচার যদি চেয়েই থাকি মনে প্রানে তাহলে সেখানে আমাদের কনট্রিবিউশন কি? কেবল কি বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ করেই আমাদের দায়িত্ব শেষ? সরকারের প্রতি আমাদের সহযোগীতাই বা কি করেছি? আগেই বলেছি যুদ্ধাপরাধীরা এ দেশে এখন রুই -কাতল। পুঠিঁ টেংরা হলাম আমরা -যারা বিচার চাই । অথচ আমাদের মিড়িয়ার ভুমিকা কি আমাদের অবাক করে না? আমি নিয়মিত সব টিভি চ্যানেল দেখে থাকি। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের প্রশ্নে মিডিয়া গুলার দায়সারা আচরণ যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি সহায়তার নামান্তর। এই প্রশ্নে আমাদের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে থাকার কোন সুযোগ কি আছে। আমরা কেন মনে করবো এটা শুধু সরকারের কাজ? কেন মনে করবো না যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাওয়া মানে আওয়ামীলীগার হয়ে যাওয়া না? কেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষকের দল দাবী করা বিরোধীদল এই বিষয়ে শক্ত অবস্থানে নেই?

দলীয় করণের করাল গ্রাস, রাজাকারদের আস্ফালন, লোভী মুক্তিযুদ্ধাদের ডিগবাজি সব কিছু এড়িয়ে ও কি আমরা পারবো "আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে "সম্মানের আসনে রাখতে? পারবো কি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে না যেতে? আওয়ামীলীগার না বলেই কি টিভিতে মুক্তিযুদ্ধের কোন অনুষ্টান হলে সেখান থেকে টিভির চ্যানেল ঘুরিয়ে নিতে হবে? মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোন অনুষ্টান হলে ,7 ই মার্চের ভাষণ প্রচারীত হলে তাদের রাজনৈতিক বিরুধী পক্ষের সাপোর্টারের সেটা দেখতে নেই শুনতে নেই এমন হওয়া কি বাঞ্চনীয়?

Likes Comments
০ Share

Comments (6)

  • - মেজদা

    খুব ভাল লাগলো। বিশেষ করে "বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে/ বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে/ দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,/ দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।/ দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/ একটি ধানের শিষের উপরে/ একটি শিশির বিন্দু।"-র ঘটনা। ধন্যবাদ