Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আ,শ,ম এরশাদ

১০ বছর আগে লিখেছেন

দ্রাবিড় মঙ্গোলীয়ান ভাসাভাসি

কিছুক্ষণ পর পর মুষ্টিবদ্ধ হাতের কোণা দিয়ে চশমাটা নাকের ঠিক জায়াগায় বসানোটা তার মুদ্রাদোষ । অন্য মানুষ এই কাজে বুড়ো আঙ্গুল ব্যবহার করে কিন্তু এমি ব্যবহার করে মুষ্টিবদ্ধ হাত। আর সে জন্য আমি এমিকে দেখলেই তাকে খেঁপিয়ে তুলতাম তার ব্যতিক্রমী চশমা ঠিক করার সাইন দেখিয়ে। যখনই আমি সেটা দেখাতাম তখনই এমি অনেক হাসতো। চায়নীজদের হাসিতে সারল্য আছে তবে এমির হাসিটাতে অনেক বেশী সারল্য ছিল। অবশ্য এমিও আমার একটা মুদ্রাদোষ চিহ্নিত করে আমাকে খেঁপাতে চাইত। আমি যখন কফিকাপ বা গ্লাস ধরতাম, তখন অবচেতনে আমার কানি আঙ্গুলটা গ্লাসকে হোল্ড না করে স্ট্রেইট থাকত। দুই ভিন দেশের দুই হৃদয়ের সে এক স্বপ্ন ময় দিনের কথা মনে পড়লেই কেমন জানি হয়ে যাই।

সে সেকি আকাশ ফাটানো বিলাসী পরিকল্পনা আমাদের! ব্রেকফাষ্ট করবো ভেনিস,লাঞ্চ- কানাডা, ডিনার-জ্যাকসন হাইটস।
আবার এক দমবন্ধ হাসি। এমি হেসেই কুটি কুটি। এত দুরে দুরে যাবে!! আর ওখানেতো আমার প্রিয় “ডাক নেক” (রাজ হাঁসের গলার বারবিকিউ) পাবো না! বিমান কই? প্রাইভেট বিমান লাগবে না? হাসির মাত্রা থামিয়ে কপট গম্ভীর হয়ে বলি:
-ভাল কথা মনে করেছ তো এমি !!
হ্যাঁ তাহলে প্রথম কাজ হবে  এ্যারোপ্লেন কেনা। এই ধর ছোট খাট একটা বিমান ৬ অথবা ৮ সীটের। আবারো এমির বারাবরের মত বুদ্ধিদীপ্ত হস্তক্ষেপ। তোমার এই এক ইঞ্জিনের বিমান ঐ সব দেশে নামতে দিবে? তাছাড়া কত ঝামেলা। সাথে সাথে মুলতবি হয়ে গেল বিমান ক্রয়।

আবারো কল্পনা বিলাস !! এমন সন্ধ্যায় কল্পনার সাত রং ঘোড়ায় যদি না চড়ি তবে সন্ধ্যেটা আমাদের অভিশাপ দেবে। সমুদ্রের তলদেশে বিয়ের অনুষ্ঠান করলে কেমন হয়! দুবাই হাইড্রোপলিস!!!এটা শুনেই কোষ্টা কফির কাপটাতে এমির হাসির বাস্প। হালকা একটু কফি সামনের লাল রং টেবিলে পড়ে গেলে আমিও হাসি বেশ। বেশী হাসলেও দেখি চোখে পানি আসে!! ভাগ্য ভাল লেক পাড়ের এই কোষ্টা কফি শপে আশেপাশে তেমন ভীড় নেই এখন।আচ্চা ঘুরলাম ফিরলাম কিন্তু স্থায়ী নিবাস কোথায় হবে? মাই কান্ট্রী অর জেনেভা অর পেরু অর বালি দ্বীপ অর প্যারিস অর নিউজিল্যান্ড অর মস্কো অর মরক্কো অর ইয়ুর কান্ট্রী? ঠোঁটে অনামিকার দু’টা আলতো বাড়ি দিয়ে তারপর এমি বেশ গম্ভীর হয়ে বললো নো আদার কান্ট্রি অনলি মাই কান্ট্রি চায়না, মিন চুংগুয়া। মাই কান্ট্রী ইজ ওকে ফর লিভিং। -তোমার দেশেই হবে সংসার পাঠ! মোটামুটি নাতিশিতোষ্ণ (৩ মাস বেশ ঠান্ডা পড়ে) এই সিটিটাই তোমার পছন্দ! পৌরুষ ফলিয়ে বলি “নো” “নো” শুড বি মাই কান্ট্রী । স্বামীর দেশেই সংসার করা লাগে- আন্ডারস্ট্যান্ড ডিয়ার এমি!! হোক একটু গরম, গরীব, একটু অপরিস্কার। আমার দেশের ফল ফলারের স্বাদ আর উষ্ণ আতিথেয়তা অন্য কোথাও পাবে না তুমি। এমি হাত ও মাথা ঝাকিয়ে “নো” “নো” করতেই থাকে। আমার আবারো ফ্যান্টাসি! আমি বলি সকালটা তোমার দেশে আর বিকালটা আমার দেশে হলে কেমন হয়! কারন তোমাকে আমার দেশের “শ্রাবনসন্ধা” দেখাতে খুব ইচ্ছে আমার। তুমিতো বৃষ্টি দেখনি তেমন। কেবল তুষার পাত দেখেছ।
গত বছরের প্রথম তুষারপাত দেখতে দেখতে আমরা সে দিন কত স্ট্রবেরী খেয়েছিলাম! মনে আছে এমি?

এই ধর একটা উপ শহরে গাছ গাছালিপূর্ন গেরস্ত বাড়ি টিনের চাল। মেহগনি জাম জারুল গাছ ছুঁয়ে ছুঁয়ে বৃষ্টির শব্দ ও পানি । কাকের না ভেজার ব্যর্থ প্রচেষ্টা- টুনটুনি দোয়েলের এই বিপদেও না থামা শিষ-ধ্বনি। তুমি আমি রুলিং চেয়ারে পাশাপাশি এক “শ্রাবণ সন্ধ্যা” উপভোগ করবো। চেয়ে থাকব মোহনীর রাতের আগমনী গান কেমন করে আসে। এইতো এক “রেইনি ইভনিং”! “বৃষ্টি তোমাকে দিলাম আর শ্রাবন সন্ধাটুকু চেয়ে নিলাম” গানটা চলবে ফুল ভলিউমে।আমি যখন শ্রীকান্তের গানটা একটু সুরের সাথে  বলছিলাম এমি তখনই বলে উঠে “ইউ যাষ্ট সাং অ্যা বাংলা Song? তোমার এই প্রশ্নে ছেদ পড়ে মোহময় এক শ্রাবণ সন্ধ্যার স্বাপ্নিক বর্ণনার।।
ইয়েস—ইটস মাই ফেবারিট বাংলা সং। বাংলা শিখাই না বলে কপট রাগের চিমটি কাটার ব্যাথা এখনো পাই ডানবাহুর পেশীতে। এতো জোরে কেউ চিমটি দেয় এমি!!

একটার পর একটা ফ্যান্টাসি আর মুলতবি। স্থায়ী নিবাসের সিদ্ধান্ত মুলতবী রেখে আবারো চলে বিয়ে পরবর্তী ছয় মাসের ট্যুর প্ল্যান নিয়ে। এবার এমিই প্রস্তাব দেয় সেভেন মেন মেইড ওনডার অর নমিন্যাটেড অল ন্যাচারাল ওনডার? না হেসে কি পারি! আমি বলি আনসার ইজ ভেরি শর্ট, বাট অ্যারিয়া ইজ ভেরী ভাষ্ট। হালং বে ,মালদ্বিপ, কিলিমাঞ্জারো, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, ব্ল্যাক ফরেষ্ট, ডেড-সী, অ্যামাজোন, স্পেন, নিউজিল্যান্ড,মিশর, ব্যাংকক- পাতায়া, সুন্দরবন, কক্সবাজার,গোয়া,রাজস্থান, নেপাল, টেমস নদী,আরো কত কত নাম ভেসে উঠল মুহুর্তেই আমার।

সেই দিনের সেই বিশ্বময় সুন্দর জায়গা গুলার ছবি ভেঙ্গে যায় কফি শপের মেয়েটির “ইউ নিড মোর” জিজ্ঞাসায়। কখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল খেয়াল নেই। “নো থ্যাঙ্কস” বলে  খুলে রাখা জ্যাকেট, হাতের গ্লাভস পরে নিই বাসায় ফেরার তাড়নায়।রোববারের সন্ধ্যে গুলা কি খুব দ্রুতই শেষ হয়! এত ঠান্ডা এ বছর ! রাস্তায় ট্যাক্সির সংখ্যাও কমে গেছে মনে হয়!

যেতে যেতে মনটা হালকা বিষন্ন হয়ে উঠে। ফ্যান্টাসিতো অনেক হলো । কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন। দুই দেশের দুই নরনারীর প্রেম হয় কিন্তু স্থায়ী করানোটা অনেক জটিল। রাষ্ট্র নামক দেয়ালে অনেক অনেক  শ্যাওলা। সেটা পরিস্কার করা অনেক জটিল। সেদিনের বিদায় মুহুর্তে ও বলেছিলাম “টুমরো উইল হ্যাভ এ ব্যাটার ডে”। সীমানা পেরোনো ভালবাসার সব জটিলতার অবসান হবে। পাসপোর্ট ভিসার নিত্য চিন্তা আর করতে হবে না। আমি তোমার দেশেই থাকতে পারবো। মুল সমস্যা যখন টাকা তখন সেটা ভাগ্য বিধাতা আমাদেরকে দিবেই। বিধাতা কি এতই নিষ্টুর ! আমাদের পরিণত বয়সের নিখাঁদ ভালোবাসাটা থেঁতলে দেবে? সে দিনের তোমার আনত ছল ছল চোখের ছবি পাবলো পিকাসো যেন এঁকে রেখে গেছে আমার মনে স্থায়ী চিত্রকর্ম হিসাবে । যে ছবি জলে ভিজবে না, আগুনে পুড়বে না, সময়ের ধুলো জমবে না কোনদিন, সেদিনটাও থেকে গেছে মনের আমাজন গহীনে। আজ ও যেমন করে মনে পড়ে গেল——

সে এক কপট স্বপ্নময় দিন। না সেদিন আমি জিতিনি লটারীর ৫ কোটি টাকা। এমনকি প্রতিদিন লটারি কিনতাম । বিধাতা ও মাঝে মাঝে দু’ভাগ করে রাখে এক হৃদয়। তাই যথারীতি ফিরে আসি ভিসা এবং ওভারসিজ কন্ট্রাক শেষে। এমিকে দিয়ে এসেছিলাম তবুও কিছু আশ্বাস। তুমি হয়ত বুঝে নিয়েছিলে ফিরা কি হবে আর !  এয়ারপোর্টের অনেকেই হয়ত উপভোগ করেছে  গ্রে-কালারের একটি ছেলের সাথে মংগোলীয় ফর্সা ত্বকের এক তরুণীর অনেকক্ষণ ধরে করা শেষ হাগ। চোখের জলে এয়ারপোর্ট থেকে তুমি কেমন করে ফিরেছিলে সেদিন!!! ভাবলে এখনো—–

আজ এই বিজন বেলায় সেই লেকের পাড়ে আবারো আমি । ভাগ্য আমাকে আবারো নিয়ে এসেছে। আবারো কোষ্টা কফির কাপ হাতে। খুব ইচ্ছা হয়েছিল তোমাকে জানাতে। আমি তোমার দেশে আবারো পা রেখেছি । এত বড় দেশে তোমাকে খুঁজে পাব না, তা জানি। আমাকে ভুলার প্রচেষ্টায় তুমি অনেক আগেই পাল্টিয়েছ সব যোগাযোগ মাধ্যম:ইমেল,ফোন নাম্বার সব-সব—-।

সব মুছে ফেলেছ হয়ত–”kemon aso tomi” এই বাংলা লাইনটাও কি ভূলে গেছ!! তোমার মুখ থেকে শুনতে ইচ্ছে করছে।এমি কোথায় তুমি ?বেঁচে আছো ?কেমন আছ তুমি? তুমি জেনে অবাক হবে আমি এখন অনেক চায়নিজ বাক্য বলতে পারি ।

(শব্দনীড়ে প্রকাশিত)

Likes ১১ Comments
০ Share

Comments (11)

  • - কামাল উদ্দিন

    চমৎকার একটা বিষয় উপস্থাপন করেছেন, আমাদের মনে হয় আরো উদার হওয়া উচিৎ

    • - মোঃ ফাহাদ খন্দকার

      জি ভাই,

       

      এনামুল হক শতকের পর বার বার আফ্রিদি তাকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে গেছেন। কিন্তু খারাপ লাগলো এনামুল তার দিকে একবারও তাকালো না। এটা কি শুধুমাত্র রাজাকার জাতি বলে তার সাথে এমন করা হল!!!!?? 

       

    - কামাল উদ্দিন

    • - মোঃ ফাহাদ খন্দকার