Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

জিয়াউল হক

১০ বছর আগে লিখেছেন

মানুষ (গল্প প্রতিযোগিতা-২০১৪)

    শীতের কুয়াচ্ছন্ন সকালটাকে পাড়হীন সাদা শাড়ি পড়া নব্য বিধবা রমনী ভাবতে দ্বিধা হয় না। বস্ত্রহীন শরীরে যখন কুয়াশা লেগে সাপের দেহের মতো হিম হয়ে আসে, তখন চারপাশে তাকালে মনে হয় সত্যি পাড়হীন সাদা শাড়ি পড়া কোন নব্য বিধবা রমনী ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে পাথরের মুর্তির মতো। আর তার রক্ত জমে বরফ হয়ে গেছে অকালে পতি বিয়োগের শোকে। তাই তার হিমেল ছোঁয়ায় মনুষ্যদেহ ঠকঠক করে কাঁপে। সর্বাঙ্গ কাঁটা দিয়ে ওঠে। দাঁতে দাঁতে যুদ্ধ হয়। চোখ তুলে তাকালে মনে হয় দিগন্ত পায়ের কাছে। দৃষ্টি তার সাদা কুয়াশা শাড়িতে বাঁধা পেয়ে ফিরে আসে বারংবার।
নব্য বিধবা রমনীর পতি বিয়োগের শোকের মতো ক্রমাগত কুয়াশা যখন বাড়তে থাকে আর তার শুভ্র আঁচল উড়িয়ে নিতে ধেয়ে আসে উত্তরীয় হাওয়া, তখন মনে হয় মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে। আসছে মৃত্যুদূত ! এক হাতে কাফনের কাপড় অন্য হাতে নিশ্চিত মৃত্যুর বিভীষিকাময় নৈরাশ সমুদ্র। তবু সেই সমুদ্রের মাঝেই খড়ের আগুন জ্বলে এখানে মুত্যুদূতকে তাড়াবার জন্য। জ্বলে ঘরে ঘরে, উঠোনে উঠোনে, সকাল থেকে সন্ধ্যা। জ্বলে প্রতিদিন।
কিন্তু তবু এরা অতৃপ্ত। যদি সমস্ত ভূ-পৃষ্ঠ জুড়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে মহাকাশটাকে পুড়িয়ে শীতের বিধবা সকালটাকে দগ্ধ করে মারতে পারতো, হয়তো তবেই এরা তৃপ্ত হতো। তা যখন পারে না, তখন অতৃপ্ত থাকবেই তো ? এমন হাড় কাঁপানো শীতেও যাদের গায়ে এককানি বস্ত্র নেই। পায়ের নিচে জুতা নেই। কী নিয়ে তৃপ্ত হবে তারা ? কারো কারো এক ফোটা সরিষার তেলও নেই ঘরে। হাত-পা আর মুখ-মন্ডল যেন গ্রীষ্মের রৌদ্রে ফাটা শুষ্ক জমিন। আর সে চির চিরে ফাটা জমিনের মধ্যে যখন কুয়াশা ঢুকে ভীষন টাটায়, তখন প্রাণ পাখিটা যেন উড়– উড়– করে।
তবে শীতের প্রতিদিন যারা পল্লীর শীতার্ত জীবনের উষ্ণতার জন্য এই মহা আয়োজন করে, তাদের বেশির ভাগেই সাত আট কি ন’বছরের কিছু ন্যাংটা আধা ন্যাংটা ছেলে মেয়ে। যাদের পরনে থাকে হাফ প্যান্ট, গায়ে মলিন শার্ট অথবা সস্তা নিলামী সোয়েটার। আর পায়ের জন্য তো জুতার বালাই নেই বললেই চলে। যদিও দু’এক জনের পায়ে দেখা যায়, তবে তা যেন বিগত কোন যুদ্ধে সাধারন মানুষের প্রাণ ভয়ে পালানোর সময় ফেলে যাওয়া। জুতার ফিতার গুটি যতবার ছিড়েছে ততবারই আগুনে গলিয়ে অথবা লোহার চিকন তার দিয়ে সেলাই করা হয়েছে। জুতার তলা ক্ষয়ে মাটির সাথে মিশে যেতে চলেছে। তবুও রক্ষে নেই। কারণ, পায়ের নিচেও কাঁটা দিয়ে আছে হিমেল বসুমতি।
ধনীর ননীর পুতুলের মতো বেলা দশটা অবধি লেপ-তোষকের বিছানায় শুয়ে থাকার অভ্যাস এদের নেই বলে, যদিও লেপ-তোষক নেই শীতবস্ত্রও নেই বিছানায় শুয়ে থাকাই মঙ্গল; তবু ভোর হলেই মুরগীর ছানার মতো পিল পিল করে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে এরা। আবার সমস্ত রাত না খাওয়া মুরগীর ছানাগুলো যেমন ঘর থেকে বেরিয়েই কোথায় একটা পোকা না কুটো পড়ে আছে দেখলেই দ্রুত ছুটে গিয়ে গিলতে শুরু করে, এরাও তেমনি শীতের তাড়নায় বাইরে বেরিয়েই কোথায় কার চুলার পাড়ে কিংবা খড়ের ঢিবির গোড়ায় একটু খড় পড়ে আছে দেখলেই শুরু হয় ছুটাছুটি আর কলরব। যেন কার চল্লিশার খানাদানার আয়োজন।
ছুটাছুটি আর কলরবের মধ্য দিয়ে কেউ নাড়াটা, কেউ খড়টা কুড়িয়ে এনে একত্রিত করে। তারপর কেউ একফোটা আগুন এনে দেয় তাতে। খড়কুটো পুড়িয়ে স্বদর্পে জ্বলতে থাকে আগুন। প্রতিদিন সমস্ত আকাশ ধোঁয়ায় আর কুয়াশায় একাকার। কখনো সে ধোঁয়ার সাথে মিশে যায় অনেকেই। তবু কুয়াশাসিক্ত খড়ের আগুনের কুন্ডলিকে ঘিরে বসে থাকে এরা। ভাবখানা এমন যে, কোন মহাদেশ জয় করার ফন্দি আঁটে সবাই। আর সে জয়ের তীব্র আকাংখার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে এদের মনে। খড়ের প্রজ্জ্বলিত আগুন যেন তারই ইঙ্গিত বহন করে। কিন্তু হিমেল হাওয়ায় কুকড়ে আসা হাত দু’খানা যখন আগুনের উপর তুলে ধরে সবাই, তখন ঠিক যুদ্ধে পরাজিত অস্ত্র সমর্পণকারী সৈনিকের মতোই মনে হয় এদেরকে। আর হ্যাঁ এরা তো কোন এক যুদ্ধে পরাজিতই। যে যুদ্ধের নাম ’অন্ন-বস্ত্রের যুদ্ধ’।
অগ্নিকুন্ডের আয়োজন ছেলেরা করলেও আসলে বুড়োরাও আসে আগুন পোহাতে। অবশ্য তারা আসে সব আয়োজন শেষে আগুন জ্বলে উঠলে। এমনকি এই সব ছেলেদের অত্যাচারে খড়ের ঢিবির খড় উজার হলো বলে রৈ রৈ আওয়াজ তোলা ধনী গৃহস্থ মকবুল মিয়াও একবার এগিয়ে আসে তার অশীতিপর হাত দু’খানা সেকে নিতে। এরা তখন মকবুল মিয়ার মুখের দিকে আঁড় চোখে তাকায়। তাকানোর অর্থ হলো ‘তোমার খড়ের ঢিবি থেকে একটু খড় নিলেই রৈ রৈ করো আর এখন আগুন পোহাতে শরম করে না তোমার ?’। বিশেষ করে পল্টু নামের ন’দশ বছরের ছেলেটি মকবুল মিয়াকে সহ্যই করতে পারে না এই জন্য। তাই সে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করে। ইচ্ছে করেই কিছু ভেজা খড় তুলে দিয়ে ধোঁয়াটা বাড়িয়ে দেয়। মকুবুল মিয়ারও শকুনের চোখ। ঠিক ধরে ফেলে ব্যাপারটা। তারপর ক্যাক করে কানটা টেনে ধরে পাশেই আগুন পোহাতে থাকা পল্টুর দাদা ছমির উদ্দিনকে দেখিয়ে মকবুল মিয়া বলে, ‘দ্যাখ তোর নাতি মোর সাথে বিটলামী করে।’
ছমির উদ্দিন যেন এমন সুযোগের অপেক্ষাই করে সব সময়। তার ঘুনে ধরা দেহ-মনে বিরক্তি লেগেই থাকে। এমনিতে মজুর খাটা সংসারে নিরন্তর টানাটানি, তার উপর ছোট ছোট নাতি-নাতনীদের উৎপাত, একমাত্র দিন মজুর ছেলের একগুয়েমী, আর ছেলের বউয়ের তীর্যক কথা তার কাছে বিষবত মনে হয়। তাই সে ফটাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় পল্টুর মাথায়। চড় খেয়ে পল্টু মাথা ধরে উঠে যায় সেখান থেকে একটু দূরে। তারপর নিঃশব্দে কাঁদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কারণ, পল্টু জানে কান্নার শব্দ যদি মায়ের কানে যায় তাহলে আবার মায়ের হাতের দু’চারটি চড়-থাপ্পর অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে। যেনতেন কারণে ছেলের গায়ে হাত তোলাটা তার মায়ের অসহ্য বলে শ্বশুরের প্রতি জেগে উঠা ক্ষোভটা সে ছেলের উপরই বর্ষন করে থাকে। পল্টু তাই নিঃশব্দে কাঁদে আর বুড়ো শকুন মকবুল মিয়ার দিকে তীব্র ক্ষোভ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। একবার গায়ের ময়লাচ্ছন্ন শার্টটা দিয়ে চোখও মোছে। দাদা ছমির উদ্দিন কটমট করে তাকায়।
ছমির উদ্দিনের ঘুনে ধরা শুষ্ক কঠিন হাতের চড়টা পল্টু নিঃশব্দে হজম করলেও তবু পল্টুর মা খবরটা কিভাবে যেন জেনে যায় যে, পল্টুকে তার দাদা একটা চড় মেরেছে। কেন মেরেছে সেটা বড় কথা নয়; আসল কথা এমন হাড় কাঁপানো শীতে সামান্য আঘাতও শরীরে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে। পল্টুর মা তাই তীব্র ক্ষোভে জ্বলে ওঠে শ্বশুরের প্রতি। ক্ষোভটা অবশ্যি শেষ পর্যন্ত ছেলের উপরই বর্ষিত হয়। পল্টু এবার শব্দ করেই কাঁদে। যে কান্নায় তার শীত-গরমের অনুভূতি একাকার হয়ে যায়।
ক’দিন ধরেই পাশের বাড়ির নায়েব আলীর গম ক্ষেতের পাখি তাড়াবার কাজে নিয়েজিত ছিল পল্টু। বিনিময়ে দু’বেলা খাবার পেতো সে। কিন্তু কনকনে ঠান্ডায় খোলা মাঠে তার যেতে ইচ্ছে করে না আর। আজ সকালে যায়নি বলে নায়েব আলী এসেছিল একবার। পল্টুর মা সে জন্য আরও ক’টা মার বসিয়ে দেয় পল্টুর পিঠে।
ইদানিং পল্টুর ভিতরে অবাধ্যতা কাজ করে। তার ইচ্ছা হয় সে অবাধ্যই হবে। কারো আদেশ সে আর মানবে না। কারো কথা সে আর শুনবে না। না দাদার কথা, না বাবা-মা’র কথা, না অন্য কারো কথা। কারণ, কথায় কথায় সবার হাতে মার খেতে হয় তার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মায়ের কথায় তার বাধ্য হতে হয় এক কারণে, ক্ষুধা পেলে তাকে খেতে দিবে কে। পল্টু তাই আর উচ্চবাচ্য করে না। চোখ মুছতে মুছতে রওয়ানা হয় নায়েব আলীর গম ক্ষেতের দিকে।
শীত পড়লেই কুয়াশার সাথে সাথে উত্তরীয় হিমেল বাতাস কেন বেড়ে যায় পল্টু তা না জানলেও হঠাৎ সে চিন্তিত হয়ে পড়ে। যে চিন্তার কোন আগা মাথা নেই। সে উদাস হয়ে হাঁটতে থাকে ক্ষেতের আইল ধরে। ঘাসে লেগে থাকা কুয়াশার জলে তার কচি পা দু’টো ভিজে যায়। আর তাতে জমির ধূলো মিশে গিয়ে কাদা হয়ে যায়। সে দিকে তার যেন ভ্রুক্ষেপ নেই। যেতে যেতে এক সময় তার দাদার কথা মনে হলে সে ভাবে, এই বুড়োটাই তার একমাত্র শত্রু। তার সব রকম স্বাধীনতায় সেই আগে হস্তক্ষেপ করে। অথচ ফটিকের দাদাটা কত ভাল। যেখানেই যায় ফটিককে সে সঙ্গে করেই নিয়ে যায়। কত গল্প শোনায় ফটিককে। আবার মায়ের কথা মনে হলে তার খুব রাগ হয় মায়ের উপর। পল্টুর মনে হয় তার মা খুব বোকা। কারণ, বোকা না হলে সে ঐ বুড়োটার কথা শুনে তাকে মারবে কেন।
নায়েব আলীর গম ক্ষেতের একপাশে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে পল্টু। আর শীতের প্রকোপে হি হি করে ওঠে। অকারণেই বাড়ির দিকে ফিরে তাকায় একবার। কিন্তু বাড়িটা কুয়াশার চাদরের আঁড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেছে। ক্ষেতের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া সড়কটা অস্পষ্ট দেখায়। জমির ও মাথায় ক’টা শালিক গমের বীজ গুলো খুঁটে খুঁটে খেয়ে চলে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই পল্টুর। কী এতো ভাবে পল্টু ? পল্টু হয়তো উদাস হয়ে ভাবে বড়রা এতো নিষ্ঠুর কেন !

‘এই খোকা শুনে যাও তো।’
পল্টু হঠাৎ খেয়াল করে সড়কটায় দাঁড়িয়ে ব্যাগ হাতে কোট টাই পড়া একজন লোক তাকে ডাকছে। কিন্তু তাকেই ডাকছে কি ? এদিক ওদিক একবার দেখে নিয়ে দু’কান সজাগ করে লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকে পল্টু। লোকটার সাথে একটি ছেলেও আছে। পল্টুর চেয়ে খানিকাটা বড়ই হবে বোধ হয়। সেও স্যুট পড়া। গায়ে কালো রংয়ের জ্যাকেটও আছে। পল্টুর বাপ যেদিন কাজের সন্ধানে শহরে যায়, সেদিন পল্টু এরকম একটি জ্যাকেট কিনে আনার কথাই বলেছিল তার বাপকে। কিন্তু বাপ তার আজও ফেরেনি। কতদিন সে তার মাকে জিজ্ঞেস করেছিল ‘বাবা কবে আসবে’ ? উত্তরে তার মা বলেছে ‘আর কয়েক দিন পরেই আসবে’। কিন্তু আসেনি। পথে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা আবার ডাকে, ‘এই খোকা শোন তো.. কাছে আসো।’
পল্টু এবার এগিয়ে যায় সড়কটার কাছে। ভাল করে তাকিয়ে দেখে লোকটাকে সে চেনে না। শহর থেকে সকালের ট্রেনে এসেছে বোধ হয়। এক মূহুর্তে আন্দাজ করে নেয় পল্টু। তারপর কাছে গিয়ে কৌতুহলী চোখে তাকায় লোকটার দিকে। তবে সুন্দর জ্যাকেট পড়া নিজের চেয়ে খানিকটা বড় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকেই পল্টুর মনযোগ বেশি। এত শীত তবু সে তার মতো হিহি করে কাঁপছে না। লোকটা এবার পল্টুকে জিজ্ঞেস করে, ‘মুহিনদের বাড়িটা কোন দিকে বলতে পারো ?’
মুহিনকে চিনতে পল্টুর দেরি হয় না। দক্ষিণ পাড়ার সরকারদের বাড়ির মুহিন। যাদের বাড়িতে একটা ধান ভানা মিল আছে। পল্টু সে বাড়িতে কতদিন গিয়েছিল। লোকটা মুহিনের কে হতে পারে আন্দাজ করার চেষ্টা করে পল্টু। তাৎক্ষণিক হাত তুলে দিক নির্দেশ করে পল্টু বলে, ‘ওই দিকে। সামনে একটা মোড় আছে, তারপর একটা বটগাছ, তারপর...।’
লোকটা খুশি হয়ে বলে, ‘আচ্ছা আচ্ছা। বুঝতে পেরেছি। কুয়াশায় দিক ভুলে গেছি তো।’ লোকটা যেতে উদ্যোত হয়। তারপর কি ভেবে আবার বলে, ‘এই ছেলে এভাবে খালি গায়ে আছো কেন ? শীত করে না তোমার ?’ পল্টু না বাচক মাথা নাড়তে গিয়ে আবার শরীর দুলিয়ে হিহি করে ওঠে ঠান্ডায়। লোকটা হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চলে সাথে তার ছেলেটাও। পল্টু তাকিয়ে থাকে তাদের প্রস্থান পথে।
লোকটা কুয়াশার আঁড়ালে অদৃশ্য হওয়ার আগেই পল্টুর মনে পড়ে গম ক্ষেতের কথা। তাৎক্ষণিক সে ক্ষেতের দিকে তাকায় কোন শালিক পড়েছে কিনা। এতক্ষণে মন খারাপটা তার কেটে গেছে। কি ভেবে আবার সে লোকটার দিকে তাকাতে গিয়ে দেখে লোকটা আবার ফিরে আসছে। পল্টু কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে থাকে লোকটার দিকে। আবার বোধ হয় জিজ্ঞেস করবে কিছু। লোকটা কাছে এসে বলে, ‘তোমার বাবা কি করে খোকা ?’
‘বাবা শহরে কামে গেছে।’ উত্তর দেয় পল্টু। লোকটা তার ব্যাগ মাটিতে রেখে সাথে থাকা ছেলেটির গা থেকে জ্যাকেটটা খুলে নিয়ে পল্টুর দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, ‘এটি তোমার গায়ে পড় তো।’ তারপর তার ছেলেকে বলে, ‘তোমাকে আবার একটা কিনে দেবো।’
পল্টু বিভ্রান্তের মতো ঝটপট জ্যাকেটটা গায়ে পড়ে কাকতাড়–য়ার মতো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে লোকটার দিকে। এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকটা তার ছেলের হাত ধরে এগোতে থাকে সামনের দিকে। পল্টু অর্থহীন দৃষ্টিতে তাকিয়েই থাকে লোকটার প্রস্থান পথে।
এক সময় কুয়াশার আঁড়ালে লোকটা আর তার ছেলে অদৃশ্য হয়ে গেলে পল্টু কি ভেবে পাগলের মতো ছুটতে থাকে বাড়ির দিকে। এবং বাড়িতে গিয়ে ব্যাস্ত হয়ে ডাকতে থাকে তার মাকে। পল্টুর মা ধরমড় করে আঙ্গিনায় এসে দেখে পল্টু তার শরীরের চেয়ে খানিকটা বড় একটা কালো জ্যাকেট গায়ে দাঁড়িয়ে আছে অদ্ভুত ভঙ্গিতে। ‘কার এটা ?’ জিজ্ঞেস করে পল্টুর মা। পল্টু উত্তর দেয়, ‘হামার।’ পল্টুর মা আবার বলে, ‘কে দিলে ?’
পল্টু বলে, ‘একটা মানুষ।’

Likes ১২ Comments
০ Share

Comments (12)

  • - ঘাস ফুল

    অত্যাচারী স্বামীকে তালাক দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করলে মোটেই কোন নারী চরিত্রহীনা হয় না। এমন কী নুতন বর বয়সে ছোট হলেও। আপনার গল্পের এই বক্তব্যের সাথে আমি একমত। 

    গল্পটি আরও গুছিয়ে লিখতে পারলে আপনার বক্তব্যতা আরও জোড়াল আবেদন রাখতে সক্ষম হত। আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা রইলো শামস। 

    - আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

    মেসেজ আছে গল্পে। ধন্যবাদ, শামস রাসিদ শাওন।

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    ভাল গেলেছে। তবে মনে হয় আরেকটু ভাল হতে পারতো।

    Load more comments...