Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

জুলিয়ান সিদ্দিকী

১০ বছর আগে লিখেছেন

বিস্মৃতির ক্ষণ

শরতের মধ্যরাতে জানালা দিয়ে জোছনা গলে গলে পড়ছে মমতার মুখের এক পাশে। জাহিদ বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিল নিঃসাড় ঘুমিয়ে থাকা স্ত্রীর মুখের দিকে। এই মুখটাই এক সময় কতটা অসহায় হয়েছিল। একটি সংসারের স্থিরতা পেতে মনে মনে কতটা অস্থির ছিল। খড়কুটো আঁকড়ে ধরবার মতো যার তার সঙ্গেই প্রেমে জড়িয়ে যাওয়ার মতো ভুলগুলো করেছে। কিন্তু জাহিদ ভাবে যে,মমতার কি তখন একবারও মনে হয় নি বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া মানে সংসারের হাতছানি নয় বা জীবনের স্থিরতার আশ্বাস নয়?কোনো সংসারী পুরুষের কাছ থেকে তো তার সংসারের বাইরের নারীর জন্য একরাশ প্রতারণাই বরাদ্দ থাকতে পারে। মমতার মনে সে কথা উদয় হয় নি একবারও। যে কারণে নানা রকম বিপদে জড়িয়ে যেতে যেতে কোনো রকমে উদ্ধার পেয়ে গেছে।

 জাহিদের মনে হচ্ছিল একমাত্র মমতার জন্যেই পারে সব কিছু করতে। আর সে কারণেই প্রবল বিক্রমে অস্বীকার করতে পেরেছিল পারিবারিক নানা নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল। যদিও ভাই বোনেরা নানা যুক্তি তুলে ধরে চেয়েছিল তার সিদ্ধান্তকে ভিন্নমুখী করতে। কিন্তু সে জালে ধরা না দিয়ে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিল,তার ভাই মন্টুর কথা। যে আজ অবধি প্রায় বিচ্ছিন্নই থেকে গেছে তাদের পরিবার থেকে। তার জীবনে তো কোনো সংকট তৈরি হয় নি ভাই-বোনের অভাবে? তাদের যদি অতটাই সমস্যা হয়,তাহলে সম্পর্কের সুতোটা কেটে দিতে পারে অনায়াসেই। এ নিয়ে সে কখনোই অভিযোগ করবে না। তবু মমতার কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করবার ভাবনাটুকু মনে ঠাঁই দিতে পারে না। মমতার সঙ্গে প্রতিশ্রুত সে অনেক আগে থেকেই, তাকে নিরাশ করা মানে এক ধরনের আত্মপ্রতারণাই। না হয় সে একজন লোভের কাছে নতজানু না হলো। এতকাল যখন কোনো লোভের কূপে ঝাঁপিয়ে না পড়ে বেঁচে থাকতে তেমন অসুবিধা হয়নি,বাকি জীবনেও লোভের কাছে হেরে যাবে না বলেই তার বিশ্বাস। মমতাকে নিয়ে মোটামুটি সুখী হতে তার অসুবিধা হয়নি কোনো দিক দিয়ে। মানুষ কখনোই পুরোপুরি সুখী হতে পারে না,আর এ কথা জানে বলেই মমতাও তেমন কোনো চাপের মুখে ফেলেনি তাকে। বাধ্য করেনি এমন কিছু করতে যা তাকে নিদারুণ অস্বস্তিতে ফেলে দিতে পারে।

 মমতা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন খুব বেশি করে তাকে আদর করতে ইচ্ছে হয় তার। এ ব্যাপারটি অবশ্য জানে মমতা। তবে এ নিয়ে তার একটু আপত্তি আছে,যা তার একান্ত নিজস্ব বিষয় বলে মনে হয়। এ নিয়ে জাহিদও কিছু বলেনি। ঘুমটা একান্তই নিজস্ব। তার সঙ্গে জাগতিক কিছুর সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। কথাগুলো এক অর্থে ঠিকই মনে হয়। কিন্তু ঘুমের মাঝে নিজের অজান্তে প্রিয় মানুষটির আদর পেতে কেমন লাগে তা জানা হয় না বলেই খানিকটা আক্ষেপ থেকে যায় তার মনে। তার মানে এ নয় যে ব্যাপারটি মোটেও পছন্দ নয় তার। কখনো কখনো তার ঘুম ভেঙে গেলে চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ পড়তে দেখেনি জাহিদ। সে সময় বরং মমতা তাকে জড়িয়ে ধরে ফের চোখ বোজে। আর মমতার সেই নির্ভরতার মুহূর্তটাতে নিজেকে সত্যিই সুখী মনে হয় জাহিদের যে, একজন অন্তত তার জীবনে রয়েছে যার কাছে সে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

 হঠাৎ করেই হাওয়ায় জানালার পর্দাটা দুলে উঠলে জাহিদের ভাবনার ঊর্ণাজাল এলোমেলো হয়ে যায়। হয়তো এখনই বৃষ্টি শুরু হবে। বর্ষা শেষ হয়ে গেলেও আজকাল আকাশ যেন খানিকটা জল ধরে রাখে পাত্রের তলানির মতো করে। তাই যখন তখন ছিটিয়ে দিয়ে শিশুসুলভ চাপল্যে মেতে উঠতে দেখা যায়। তখনই হঠাৎ মমতার কণ্ঠস্বরে সে চমকে ওঠে। ফিরে তাকায় তার মুখের দিকে। চোখ বন্ধ। হয়তো স্বপ্নের ঘোরে কথা বলছে ভেবে তেমন একটা গা না করলেও তাকিয়ে ছিল তার মুখের দিকেই। তখনই মমতা ফের বলে ওঠে,তুমি উঠলে কখন?

 -আরে আমি তো ভাবছিলাম স্বপ্নের ভেতর কথাগুলো বলছিলে। বলে,জাহিদ মমতার মুখোমুখি হয়ে বসে।

 একটি হাতে কোলবালিশের মতো করে জাহিদের হাঁটু সমেত ঊরু পেঁচিয়ে ধরে মমতা বলল,আমি তো ঘুমাইনি। চোখ বুজে ব্যথাটাকে ভুলতে চেষ্টা করছিলাম।

 -তাহলে আমাকে বললে না কেন? বলতে বলতে মমতার মাথাটাকে টেনে নিজের ঊরুতে উঠিয়ে নেয় জাহিদ।

 দুহাতে আবার জাহিদের কোমর জড়িয়ে ধরে মমতা বলে,বলে কী হবে? এ ব্যথা নিয়েই আমাকে বাঁচতে হবে বাকি জীবন।

 -তা ঠিক আছে,সেই সময়টুকু পর্যন্ত আমিও তো আছি তোমার সঙ্গে। বলতে বলতে মমতার চুলের ভেতর দু হাতের আঙুলগুলো দিয়ে হালকা ভাবে বিলি করতে থাকে। তখনই মমতা মাথাটাকে আরেকটু জাগিয়ে দিয়ে জাহিদের পেটের কাছে নিয়ে আসে।

 মমতার এমন করাটা বেশ পরিচিত জাহিদের। এ থেকে বোঝা যায় ব্যাপারটা তার যেমন পছন্দের তেমন ভালো লাগারও। এ সময় দুজনের কেউই কথা বলে নিজেদের বোধকে অসাড় করতে চায় না। সময় গড়িয়ে চলে। কখনো ঘুমিয়ে পড়ে মমতা। আর ব্যাপারটা টের পেলেই বেশ খানিকটা ঝুঁকে পড়ে মমতার গালে,কানে চুমু খায় সে। সে সময় মমতার ঘুম সহজে ভাঙে না। সে ডুবে থাকে গভীর আর প্রশান্ত ঘুমের এক জাদুর জগতে। তখন তার শরীর মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠতে থাকে। জড়িয়ে ধরে রাখা কোমরের কাছটাতে তার হাতের আঙুলগুলো চেপে বসতে থাকে মৃদু নড়াচড়ায়। কোনো কোনো দিন ঘুমে জড়িয়ে আসে জাহিদের দু চোখ। তবু সে বসে থাকে। সে ঘুমিয়ে পড়লে বা সরে গেলে যদি ঘুম ভেঙে যায় মমতার! এমন কত না বিনিদ্র রাতের সহচর হয়ে রাত জেগেছে সে মমতার সঙ্গে। রাতের পর রাত কেটেছে নির্ঘুম। আর নিজে অনুভব করেছে কী এক যন্ত্রণায় ক্রমাগত বিলীন হতে হতেও কোনো এক আশ্চর্য শক্তিতে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে।

 এর আগে দিনভর অফিসের কাজ করেছে জাহিদ। সহজ আর স্বাভাবিক থাকতে নিজের সঙ্গেই যুদ্ধ করেছে। মমতার সেই সময়কার নানা মানসিক দ্বন্দ্বের কঠিন সময়গুলোতে দূর থেকে তাকে দেখেছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। যতটা পেরেছে মনোবল যুগিয়েছে। পলে পলে, দিনে দিনে পরস্পর মনের কাছাকাছি এসেছে। সহমর্মিতা থেকে সহযোগিতা আর দুটো মিলে মিশেই যেন কখন নিজেদের অজান্তে রোপণ করে দিয়েছিল একটি ভালোবাসার চারা। যাকে বাঁচিয়ে রাখতে মুখোমুখি হতে হয়েছে আরেকটি বিরূপ সময়ের। আত্মীয় স্বজনের বিরোধিতার মুখে সব সময়েই তাকে থাকতে হয়েছে নির্বিকার। প্রতীবাদ হীন। যেন তার নিজস্ব ইচ্ছে অনিচ্ছা বলতে কিছু নেই। যেন তার জন্মই হয়েছে অন্যের ইচ্ছেগুলোর যূপকাষ্ঠে গলা পেতে দিতে। কিন্তু আর সে চুপ থাকে নি। সে সঙ্গে তার সে রূপের দর্শন আগে বা পরেও কাউকে দেখতে হয় নি। কিন্তু সে সময়টাকেও পার করে আসতে পেরেছিল প্রবল মনের জোরেই। আসলে মমতার হেরে যাবার জন্যে জন্ম হয় নি। জন্ম হয় নি নিয়তির হাতে পড়ে পড়ে এক তরফা মার খাওয়ার জন্যে। নিয়তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর জন্যে তার প্রয়োজন ছিল একজন সহযোদ্ধার। আর সেই সহযোদ্ধাই যে জাহিদ তা বুঝতে অনেক দেরি হয়েছিল মমতার। তবে শেষ পর্যন্ত সে পেরেছিল তাকে চিনতে।

 মমতা যখন গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকে তখন তার মাথার নিচ থেকে ঊরু সরিয়ে বালিশটা গুঁজে দিতে কোনো অসুবিধা হয় না জাহিদের। মশারীটা খাটিয়ে দিয়ে বিছানার চার পাশে ভালো মতন গুঁজে দিয়ে উঠে আসে পাশের সোফাটায়। পরদিন অফিস থাকলে খানিকটা ঘুমিয়ে নিতে চেষ্টা করে। কোনো কোনো দিন মমতা নিজেই তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়ে হাসিমুখে মাথার চুলগুলো নেড়ে দিয়ে বলে- বউয়ের সেবা করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলে?

মমতার ডাকে ঘুম ভাঙে জাহিদের। আজকে অফিস নেই?

 -আছে। বলে,চোখ ডলে উঠে বসতে বসতে মমতা তাকে ছেড়ে চলে যায় কিচেনে। এককাপ হালকা রঙ চা নিয়ে এসে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,সময় কিন্তু বেশি নেই!

 

চা খেতে খেতে জাহিদের মনে পড়ে যে,আজ তার অফিস নেই। দশটা-এগারটার দিকে তাকে যেতে হবে ব্যাঙ্কে। নতুন একটা লোনের ব্যাপারে খানিকটা খোঁজ-খবর করতে হবে। এম ডি নিজে যেতে পারছেন না। ভোর ভোর তার মেয়ের শ্বশুর বাড়ি ছুটতে হবে জানাজায় শরিক হতে। ব্যাপারটা তার নিজের মনে ছিল না বলে গতকাল ফেরার পর মমতাকে বলা হয় নি। নয়তো আরো কিছুক্ষণ ভালো মতনই ঘুমানোর সুযোগ পেতো সে।

 চা খাওয়া হয়ে গেলে মুখের ভেতরটা কেমন টকটক মনে হয়। এ অবস্থায় একটি সিগারেটের জন্যে মনটা কেমন কেমন করে। কাপ হাতে সে উঠতে গেলে দেখতে পায় মমতা এদিকেই আসছে। চেহারায় গতকালের মাইগ্রেনের ধাক্কা কোনোরকম বিমর্ষতার ছাপ রেখে যায় নি। যেন এ জগতে কেউ সুখী থাকলে সেই আছে এমন একটা বিভা তার চোখে মুখে। এ রূপটি বেশ পছন্দ জাহিদের। মানুষের মনের ভেতর যদি সুখ সুখ ভাবটা না থাকে,তাহলে তা চেহারায় ফুটে ওঠে না।

 -কি,আরো ঘুমাবে?

 উজ্জ্বল মুখে বলতে বলতে চায়ের কাপটার জন্য হাত বাড়ায় মমতা। তখনই জাহিদ তার হাত টেনে ধরে পাশে বসিয়ে দেয়। বলে, আজ অফিসে দেরি করে গেলেও চলবে। কাল বলতে ভুলে গেছি।

 কাপ হাতে ধরিয়ে দিয়ে মমতার কোমর জড়িয়ে ধরে জাহিদ। তখনই এক হাতে জাহিদের কাঁধ জড়িয়ে ধরে ভারসাম্য বজায় রাখতে রাখতে মমতা বলল,আমি আজকে ভেবেছিলাম,তোমার সঙ্গেই বের হবো। আপুটা ফোন করেছিল একবার দেখা করতে।

 তখনই জাহিদ মমতার বুকে নাক চেপে ধরে ঘ্রাণ নেয়। জাহিদের এমন করাটার অর্থ বোঝে মমতা। কিন্তু তারই বা কী করবার আছে? গত রাতে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে গেল বলে জাহিদের দিকে মনোযোগ দিতে পারে নি। পরপর বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল নানা কারণে কেউ কাউকে উপযুক্ত সঙ্গও দিতে পারছিল না। সকালে মমতার ঘুম ভাঙল অস্বস্তি নিয়ে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর হঠাৎ করেই সকাল থেকে তলপেট ব্যথা করতে আরম্ভ করেছে। একটু একটু করে গড়াচ্ছেও সাদা স্রাব। এ সময়টা থেকেই জাহিদ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে আরম্ভ করে পরবর্তী দশদিনের জন্যে। জাহিদের ভেতরকার অস্থিরতা টের পেয়ে মমতা বেশ দোটানায় পড়ে যায়। সত্য কথাটা বললে যত কষ্টই হোক নিজ থেকে আর আগ্রহ প্রকাশ করবে না। হঠাৎ করে তার হতাশ মুখটা মনে মনে কল্পনা করতে গিয়ে নিজেরই খারাপ লাগতে আরম্ভ করে। অবশ্য সময়টা এমন কিছু নয়। ইচ্ছে করলে না মানলেও চলে ধর্ম কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞানও নিষেধাজ্ঞা জারি করে নি। কিন্তু নিজের মন থেকে সায় পায় না বলে জাহিদ আগ্রহ প্রকাশ করে না।

 তার মনে হচ্ছিল যে,গত রাতটাই ছিল তাদের জন্য সব দিক দিয়ে উপযুক্ত। কিন্তু বিকেল থেকে যদি মাথার যন্ত্রণাটা বেড়ে না যেতো তাহলে তো সমস্যাই হতো না। আর জাহিদও এমন যে, তার স্ত্রীর মুখ খানিকটা বিরস দেখলেই অস্থির হয়ে ওঠে। এ নিয়ে অযথা অস্থির হতে অনেকবার নিষেধ করেছে মমতা। কিন্তু কে শোনে কার কথা। জাহিদের ভালোবাসার প্রকাশটাই এমন যে, তাকে কোনো দিক দিয়ে নিরাশ করতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে হয় না।

 জাহিদ আরো নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে মমতাকে। মমতারও ইচ্ছে করছিল না বাধা দিতে। হাতের কাপটাকে রেখে দিতে একবার উঠবে বলে ভাবলেও জাহিদের মোহ কেটে যেতে পারে ভেবে জানালার গ্রিলের ফাঁকে কাত করে রেখে দেয় কাপটি। এদিকে জাহিদের মুখ উঠে আসে গলার কাছাকাছি। এমন অবস্থায় নিজেকে সঁপে দিতেই পছন্দ করে সে। কিছুক্ষণ ঘাড়ে আর গলায় ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া অদৃশ্য ভালোবাসার ছোপ রেখে যেতে থাকে। চুলোয় কী চাপিয়ে ছিল মনে করতে পারে না মমতা। তবে যেটা ছিল তা সেদ্ধ হতে সময় লাগবার কথা। তাই হালকা আঁচে বসিয়েছিল বলে ততটা তাড়া ছিল না।

 জাহিদ আরো বেশি ব্যস্ততা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লে মমতাকেও দাঁড়াতে হয় আর খুবই সতর্কতার সঙ্গে সরে যেতে থাকে বিছানার দিকে। কিন্তু কতটা পেছনে বিছানা সে দূরত্ব জানা ছিলো না বলে পিছু হটতে হটতে এক সময় ভারসাম্য হারায়। সে সঙ্গে জাহিদও প্রায় হুমড়ি খেয়ে তার ওপর গড়িয়ে পড়ে বিছানায়। সে যেন জানতোই এমন কিছু একটা হবে। আর তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই উপগত হতে পারে মমতায়। মমতা কী করবে সে সিদ্ধান্তে পৌঁছুবার আগেই অন্তর্লোকে উপলব্ধি করতে পারে আসলে সে নিজেই  জাহিদের চেয়ে আরো কয়েক মাত্রা বেশি বুভুক্ষু হয়েছিল।

 দুজনের সমান কাতরতা ছিল বলেই হয়তো খুব স্বল্প সময়েই তারা নিজেদের অবস্থান বুঝতে পারে। বুঝতে পারে আসলে সব কাতরতাই এক সময় ক্লান্তিতে পরিণত হয়। আর সে কথা তাদের জানা ছিল বলেই একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে আরো নিবিড় ভাবে। চঞ্চুতে চঞ্চুতে মেতে ওঠে ফের। ওদিকে তরল কিছু উপচে পড়ে চুলার আগুনের সংস্পর্শে ছ্যাঁত ছ্যাঁত শব্দে বাষ্প হতে থাকলেও যেন তাদের শ্রবণযন্ত্রের আশপাশে ভিড়তে পারে না সে সব শব্দের আর্তনাদ।

(সমাপ্ত)

Likes ২১ Comments
০ Share

Comments (21)

  • - মুহাম্মাদ আরিফুর রহমান

    আমার অপেক্ষার একটা পোস্ট।

    সবগুলো পরেছি।

    অসাধারণ !

    • - জিয়াউল হক

      ধন্যবাদ আরিফুর ভাই। আমার পোস্টের জন্য আপনার অপেক্ষা আমার এগিয়ে যাবার প্রেরনা।

    - ঘাস ফুল

    প্রহসনের সালিশির রায়ের আগেই কল্পনা নিজের রায় নিজেই কার্যকর করে ফেলেছে। এমনি হয়ে আসছে আমাদের অসহায় মানুষদের জীবনে। যাদের ভাগ্যের চাবি থাকে রইচ কেরানি আর কালাচান শেখের মতো অমানুষদের হাতে, আর পিছনে কলকব্জা নারে এই গল্পের চেয়ারম্যানের মতো মানুষেরা। এই সব সমাজে ওমেদ আলীর মতো নীতিবান মানুষদের কথার কোন মূল্য নাই। বরং টাকাওয়ালা নীতিহীন মানুষদের বিবেকহীন কথা এই সমাজে বেশী গৃহীত হয় কিংবা গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়। নিজেদের অসহায়ত্বের জন্য সমাজের মানুষগুলো সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পায়, পাছে না খেয়ে মরতে হয় যদি। ধিক্কার জানাই এই সব সমাজের অধিপতিদের। গল্পটা পুরোটাই পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আগাগোড়াই আপনি ভালো লিখেছেন। আমাদের সমাজের একটা পারফেক্ট সালিশির চিত্র পুরো গল্পে উঠে এসেছে। কল্পনাকে ঘিরে সালিশির কর্মকাণ্ড আপনি বেশ সুন্দর করে বিন্যাস করেছেন। কথাচ্ছলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে ইংগিত দিয়েছেন। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগলো জিয়াউল। সুন্দর গল্পটার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন। 

    • - জিয়াউল হক

      ধন্যবাদ ভাই ঘাসফুল! আপনি সাথে আছেন এটা আমি ইদানিং সবসময় অনুভব করি। কেন যে কে জানে! যখন উদাস মনে পথ চলি তখনও হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় আপনিও বুঝি সাথেই আছেন। সত্যি আছেন কি ?

    • Load more relies...
    - ইকবাল মাহমুদ ইকু

    প্রতিতি পর্ব ই পরেছি ... খুব ভালো লাগসে... 

    • - জিয়াউল হক

      গল্পটি ধৈয্য সহকারে পাঠ করার জন্য ধন্যবাদ ইকবাল ভাই।

    Load more comments...