একজন লেখকের যে সমস্ত দায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার নিজের কাঁধে বর্তায়, সে সব দায় আমার নয় অবশ্যই। আমি লেখক হলে তা হয়তো বিতর্কের সৃষ্টি করতো। যেহেতু নিজেকে লেখকই মনে করি না, সেহেতু লেখকের দায় আমাকে ছুঁতে পারবে না বলে এতকাল একটি শক্ত বিশ্বাস লালন করে এসেছি মনের ভেতর। কিন্তু নিজের অপছন্দ হলেও কথা সত্য যে, কয়েক মাস ধরে আমাদের জন্মভূমিতে যেসব ঘটনা ঘটে চলেছে, তা দেখতে দেখতে আর শুনতে শুনতে বেজায় ক্লান্ত হয়ে গেছি মনে হচ্ছে। সে সঙ্গে যোগ হয়েছে কিইছু করতে না পারা আর বলতে না পারার অক্ষমতাও।
একজন অক্ষম মানুষের পক্ষে কী করা সম্ভব? তা হচ্ছে নিজে নিজে কষ্ট পাওয়া। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন সহ চারদিকেই কেবল অসাধু মানুষের জয়জয়কার। যার সঙ্গে শক্তি আর বুদ্ধিতে যখন যাকে পারি মোকাবেলা করি। কিন্তু কোনো পরিস্থিতিতে যেমন দেশটার এমন একটি নাজুক পরিস্থিতিতে আমরা কিছুই করতে পারি না। হয় দর্শক নয়তো পরিস্থিতি বা ঘটনার শিকার হওয়া ছাড়া। দেশটাতে যেন রাজনৈতিক আর ধর্মীয় মতবাদ কার্যকলাপ ছাড়া কিছুই করা সম্ভব নয়। পারলে মারো নয়তো পালিয়ে যাও। প্রতিবাদ করতে এসো না। ন্যায় অন্যায় দেখাতে এসো না। যদিও মগ রাজত্ব ততটা বড় আর শাসন ততটা শক্তিশালী নয়, তবু কেন আমরা কোটি কোটি নিধিরাম সর্দার?
সব কিছুর মূলে আছে অক্ষমতা। তাই প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের বদলে আমরা মেতে উঠি আত্মপ্রতারণায়। কেউ প্রেমের কবিতা লিখি, কেউ বা নতুন প্রেম প্রস্তাবকে শানিত করতে আশপাশের বন্ধুদের পরামর্শ নেই, কেউ বা কোনো অতীতের স্খলিত প্রেমকে কুড়িয়ে নিয়ে আকৃতি দিতে চেষ্টা করি। বদমাশ স্বামী বা বদমাশ স্ত্রী ভিন্ন পথে একে অন্যকে শায়েস্তা করতে ব্যস্ত। সরকারী আর বিরোধী দলের কথা নাই বা বলি। তবু কোথাও খানিকটা স্বস্তি কি আছে? কেউই যেন তৃপ্ত হতে পারছে না কিছু করেই। তার অর্থ শান্তি নাই কোথাও, তাই মনেও শান্তি নেই কারো। অশান্ত মন নিয়ে যা কিছু তৈরি করা হয় তাতে কোনো না কোনো ভাবে লেগে থাকে অশান্তি আর অতৃপ্তির ছায়া। ফলে শৈল্পীকতা বা সৌন্দর্যেরও ধরন আর প্রকাশ বদলে বদলে যায়। আমরা নিজেরাও বদলাতে থাকি। দায়সারা ভাব থেকে দায়হীন হবার নানামুখী ছুতো খুঁজি। কখনো পেয়েও যাই। যেমন ইদানীং মৌলিক কিছু লিখতে পারছি না। মাথায় গল্পের অঙ্কুরিত বীজ নিয়ে দিন কাটাই, পরিচর্যার আগ্রহ নেই। কবিতারা ডানা ঝাপটায়, আঙুল থমকে থাকে। দৃষ্টি পথে দাউ দাউ আগুন। নাকে আসে মানুষ পোড়া গন্ধ। কানে বাজে নিদারুণ হাহাকার। স্বার্থপর মায়ের লোভ আর প্রতারণার জালে বন্দী থেকে দিনকে দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সন্তান। একজন বাবা অন্য একজন বাবার সন্তানকে বেপথু করতে বসায় গণিকার আসর। নেশার রঙধনু। নিজের সন্তানের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা –“অন্যের পাতে ঠাডা পড়ুক না ক্যান” মানসিকতার উলঙ্গ উল্লাস দিনরাত। আমরা কোথায় যাবো? কিছু কি করতে পারবো আমরা?
(শুরু করতে হলে কিছু একটা লিখতে হবে। তাই...)
Comments (18)
ভাই খালিদ ওমর আপনাকে জানতাম জাহাজের লোক এখন দেখি আপনি ভুতের গল্পও ভাল লিখতে পারেন। খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভাই খালিদ ওমর, নান্নার জমিদার দেখতে গেলে কিভাবে যেতে হয়। একটু যাওয়ার বর্ননা দিলে কোন একদিন হয়তো ঘুরে আসব।
খুব মজা করে লিখেছেনতো,ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ। ভয় পেয়েছেন কি?