গভীর রাত কালো অন্ধকার চারিদিকে সুনশান নীরবতা।
হঠাৎ বাতাসের ঝাপটা।আশে পাশের গাছগুলো দুলছে,
কখনো ডানে কখনো বামে কখনো এলোমেলো।
আজ কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড ভ্যাপসা গরম।তাপমাত্রা অনেক বেশী।
তিনদিন হলো সাজুর স্ত্রী মিলা,ছেলে সাবাব, মেয়েরা রুমি ও ঝুমি
আর ওদের নানা বাড়ির সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে।
সাজু ও মিলার বিয়ে হয়েছে আজ আট বৎসর।
প্রতিটি বর্ষায় সাজু আর মিলা খোলা নীল আকাশের নীচে বৃষ্টিতে ভিজে।
বর্ষায় সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যায়।সবমিলে ওদের সুখের সংসার।
কাজের ছেলেটা একটু আগে বেরিয়ে গেছে।
বাসায় কেউ নেই।সাজু অফিস থেকে এসে জানালার পাশের সোফায়
হেলান দিয়ে টিভি দেখছিলো।ইদানিংকার গুম অপহরন নিয়ে টকশো।
ভ্যাপসা গরম।হঠাৎ লোডসেডিং।অনেকক্ষণ বিদ্যুৎ নাই কি আর করা।
সাজু গরমে সোফায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিলো।একটু তন্দ্রা ভাব এলো।
দরজা খোলার হালকা আওয়াজ ।একটু ঠান্ডা অনুভুত হলো।
গরমে অন্যরকম ভালো লাগা অনুভুতি।ঘরে সুন্দর একটা সুবাস বয়ে গেলো।
সুবাসটি সাজুর খুব পরিচিত মনে হলো।যেন সেই প্রিয় কাঠালী চাপাঁর গন্ধ।
সাজুর বুঝতে দেরী হলোনা ওর ঘরে কে যেন এসেছে।
সাজু জানতে চাইলো কে তুমি এখানে?কে আমার ঘরে?
দরজাটায় আর একবার দুলে উঠে অন্য পাশে গিয়ে পড়লো।
কোন জবাব নাই অপর পক্ষের নীরবতা।
এবার সাজু কড়া গলায় জানতে চাইলো কে আপনি?
কথা বলছেন না কেনো? আপনার পরিচয়?
আপনি আমার ঘরে কেন?
আমি।
খুব পরিচিত মেয়েলী কন্ঠে জবাব এলো।
সাজু ভ্যাবাচাকা খেলো, ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলো
আমি মানে কে তুমি? কে? কে?
আমার ঘরে কেন এসেছো?
আমার ঘরে কিভাবে এলে?
তোমার ঘরের দরজা দিয়ে এসেছি।
কিভাবে এলে?
কেন তোমার দরজাতো খোলাই ছিলো ।
সাজু আমি মানে, আমি শিলা।
আমাকে চিনতে পারছোনা?আমি শিলা।
সাজু তোমার সেই দশ বৎসর আগের কথা মনে পড়ে।
শিলা?তুমি এখানে?কখন এলে?
রাস্তার লাইটের কিছুটা আলোর ছটা এসেছে সাজুর বসার ঘরে।
শিলার পড়নে শাড়ি।সাজু শাড়ির রংটা বুঝে উঠতে পারছেনা।
সাদা কালো শাড়ি। শিলা তুমি এখানে এতোদিন পর।
হ্যা আমি।তোমাকে দেখতে ইচ্ছা হলো তাই এসেছি।
অনেক দিন পর এলে।এতোদিন কোথায় ছিলে?
শিলা হঠাৎ আনমনা।
জবাবে জানালো ও আমি এতোদিন দেশের বাইরে ছিলাম।
আজ একমাস হতে চললো ছোট খালার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে দেশে এসেছি।
খালাতো বোনের বিয়ে নিয়ে খুব ব্যাস্ত ছিলাম।
গতকাল বিয়ের ধুমধাম শেষ হলো।
সামিরের কাছ থেকে তোমার বাসার ঠিকানা নিয়েছি।
আগামি কাল চলো যাবো তাই তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।
শিলা তুমি এলেতো এতোদিন পরে?
কি আর করা সাজু ইচ্ছা হলেও আসতে পারিনি।
সামির বললো মিলা আর তোমার সুখের সংসার।
আমি চাইনি তোমাদের কোন ক্ষতি হোক।
কয়েকদিন ধরে খুব গরম পড়ছে।
সময় খুব দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ খেয়াল হল,
তোমার দশ বৎসর আগের সেই প্রস্তাবটা।
সেই সময়ের সোনালী দিনগুলোর কথা।
একসাথে বত্তৃতা,বিতর্ক শহরময় ঘুরে বেড়ানো,
মামার দোকানের চা সিঙ্গারা খাওয়ার পরে হঠাৎ বৃষ্টি।
দৌড়ে শতবর্ষী গাছের নীচে আমি ও তুমি।
তোমার সেই প্রস্তাব একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা
আর জীবনের বাকি পথ একসাথে চলা।
আর কেন জানি হঠাৎ আমার কি হলো?
মনের অজান্তেই কিংবা ভুলে তোমাকে না বলা।
বৈশাখ মাসে দেশে আসার পর ভীষন ইচ্ছে হলো বৃষ্টিতে ভিজতে।
তোমাকে সেই সময়ে না বলাটা আমার জীবনের বড় ভুল ছিলো।
তাই অপেক্ষায় ছিলাম।যদি বৃষ্টি আসে একসাথে ভিজবো অনেকদিন পর আজ বৃষ্টি এলো।
বৃষ্টি আমার সেই প্রতিক্ষীত বৃষ্টি এসেছে। তাই এসেছি।
বৈশাখী বাতাস খেললো।
ঝুমঝুম বৃষ্টি নামছে
শিলা বললো চলো সাজু
চলো হাটি পায়ে পায়ে
হাত ধরে চলো
দুজনে পাশাপশি
অবগাহন করি বৃষ্টিতে
বৃষ্টির শীতল পরশে
ছুয়ে যাচ্ছে আমার শরীর আর তোমার স্পর্শ আমার হৃদয়।
হঠাৎ কার যেন আওয়াজ।কাজের ছেলে কাদির চিৎকার করছে স্যার উঠেন।
বৃষ্টিতে নিজে ভিজেছেন।সোফাটাও পুরো ভিজে গেছে।
জানালাটা বন্ধ করতে পারলেননা।ম্যাডাম আইসা আমাকে বকবেন।
স্যার মনে হয় ভাল একটা ঘুমদিলেন।
আমি বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর পরইতো দমকা হাওয়া শুরু হলো।
বাজারে পৌছানোর পরই ঝুমঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি।
সবাই ভিজছে আমিও ইচ্ছামত ভিজলাম।
ভিজতে ভিজতে বাসায় আসলাম।আর আপনিতো বাসায় বসে পুরো ভিজে গেলেন।
চলেন গরম গরম চা খাই আর গরম সিঙ্গারা ও পিয়াজু এনেছি।
সাজু কাদিরে কিছু না বলে সোফায় উঠে বসলো।
সাজুর মনটা খারাপ হলো।ভেজা সোফার জন্য নয়।
আর ভাবলো কাদিরটা আর একটু পরে আসলেই ভালো হতো।