Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মোস্তফা কামাল সোহাগ

১০ বছর আগে লিখেছেন

আমি ও আমার বন্ধু রফিকুল ………!!!!

অনেক দিন ধরে আমার এক বন্ধুর কথা বার বার মনে আসতেছে, কিন্তু মোটেও নাম মনে করতে পারছিলাম না। আমার চাচাতো ভাই মজনুকে ফোন দিলাম, তাকে সব কিছু খুলে বললাম। মজনু ভাই বলল, তার নাম হল রফিকুল। মজনু ভাই আমার চেয়ে ৬ বছরের বড়। কিন্তু আমার আর মজনু ভাই এর সম্পর্ক বন্ধুর চেয়েও অনেক কিছু। আমি তার সাথে সব কিছু শেয়ার করতে পারি। মজনু ভাই একটা অদ্ভুত রকম মানুষ। তার সাথে কোন কিছু শেয়ার করে, কোন সমাধান পাওয়া যায় না। তার পরেও, তার সাথে শেয়ার করে একটা অন্য রকম মজা পাওয়া যায়। একদিন মজনু ভাইকে বললাম, আমার একটু হাসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কোন কারণ ছাড়া কি হাসি আসে। দেখলাম মজনু ভাই হও হও হও হেসে উঠল। আমার মজনু ভাইয়ের হাসি দেখে খুব হাসি পেল। আসলে, মজনু ভাই এর সাথে আমার সৃতি গুলা লিখলে একটা সুন্দর উপন্যাস হয়ে যাবে। যদি মজনু ভাই কে নিয়ে কোন দিন লিখতে হয় তাহলে সেই লিখাটার নাম দিব “আমার প্রাণপ্রিয় মজনু ভাই”। 

(বলে রাখা ভাল, আমার গ্রামের বাড়ি আমাদের সাতক্ষীরা বাড়ি থেকে ১৫ কিঃ মিঃ দূরে। আমার বাবা ছিল একজন সরকারী কর্মকর্তা। আমার বাবার ও দাদার অনেক জমি-যাগা আছে। তাই গ্রামের বাড়িতে আমি এক্সট্রা খাতির পেতাম। আমার বাবার সাথে প্রায় গ্রামের বাড়ি যাওয়া হত। আজ বাবা বেঁচে নাই, তারপরেও গ্রামে আজ আমাদের একটা আলাদা সুনাম আছে, যেটা শুধু মাত্র আমার বাবার জন্য।) 

যাই হোক, নিজের উপর কিছুটা বিরক্ত হলাম। কি করে আমি তার নামটা ভুলে গেলাম। আসলে আমাদের এই যান্ত্রিক জীবনে, এটা অতি সাধারন একটা ব্যাপার। রফিকুল এর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়, আমি যখন ক্লাস-৫ এ পড়ি। আমি ক্লাস ৫ এর বিত্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদের গ্রামের স্কুল এ ভর্তি হয়ে ছিলাম। কারণ আমি সাতক্ষীরাতে যে স্কুল এ পড়তাম, সেই স্কুল থেকে বিত্তি পরীক্ষা দেওয়া যেতনা। আমার সাতক্ষীরা স্কুল এর নাম ছিল “মোসলেমা কিন্ডার গার্ডেন”। আমার প্রিয় শিক্ষক ছিল ইব্রাহীম স্যার। ইব্রাহীম স্যার, আমাদের বিত্তির কোচিং করাতেন। তিনি খুব সুন্দর আর্ট করতেন। আমার প্রথম আর্ট শেখা তার কাছ থেকে। আমি খুব ভাল আর্ট পারি, ধরুন আমি একটা হাতি আঁকালাম, কিন্তু বোঝের উপাই নায় আমি হাতি না ঘোড়া এঁকেছি। ইব্রাহীম স্যার আমাদের যেমন ভাল পড়াতেন, তেমন দুষ্টামি করলে মারতেন। একবার গরম এর ছুটির সময় আমাদের কোচিং চলছিল কিন্তু স্কুল ছুটি। স্যার আমাদের একটা পড়া দিয়ে একটু বাইরে গিয়ে ছিলেন, তো আমরা স্যার চলে যাওয়ার পর, পড়া বাদ দিয়ে দুষ্টামি করছিলাম। স্যার দূর থাকে দেখে একটা লাঠি নিয়ে আসলেন। লাঠি বলা ভুল হবে। একটা পুরাতন বেঞ্চ এর পায়া খুলে নিয়ে আসলেন। প্রথমে ফারুক থাকে মারা শুরু করলেন, তার পর বাদশা, তার পর শাহাজান, তার পর দাখি স্যার হাসতে হাসতে ক্লাস এর বাইরে চলে গালেন। আমরা তো অবাক। কিছুক্ষণ পর দাখি আমাদের রুপালি (সদ্মনাম) প্পেশাব করে দিয়েছিল ভয়ে। so sweet রুপালি, শুদু মাত্র তার জন্য আমি মাইর খাওয়া থেকে বেচে গেলাম।

আমি গ্রামের বাড়ীর স্কুল এ ভর্তি হওয়ার পর প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক ও ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ৩ মাস গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। রফিকুল আমার গ্রামের স্কুল এর ফাস্ট স্টুডেন্ট ছিল। আমি যাওয়ার পর সে এর ক্লাস ৫ এ ফাস্ট হতে পারে নায়। রফিকুল আমাদের গ্রামের বাড়ীর পাশের নদীর এক মাঝির ছেলে ছিল। নদীটার নাম বেতনা। নদীটা খুব সুন্দর। এই নদী থেকে রফিকুন ও আমার বন্ধুত্ব।
রফিকুল দেখতে কিছুটা শ্যামলা, স্লিম ফিগার। যখন কথা বলত তার কথাটা কিছুটা বাজত। কিন্তু আল্লাহ তার হাসি খুব ভাল দিয়েছেন। সে যখন হাসত, তার চেহারার ভিতর একটা আপন আপন ভাব চলে আসত। একবার তাকে বললাম আমি নৌকা চালাতে পারি না, তুমি কি আমার নৌকা চালাতে শেখাবা। তো রফিকুল স্কুল শেষ এ তার বাবার নৌকাটা নিয়ে হাজির। রফিকুল আমাকে নৌকা চালাতে শেখাল। পরের দিন, তাকে আমি একটা ice-cream খাওয়ালাম। আমাদের গ্রামের স্কুল এর পাশদিয়ে প্রতিদিন একজন ice-cream বিক্রয় করতে করতে যেত এবং গান বাজাতো। গানটা আমার এখনো মনে আছে ……

“দেখা হে পেহেলি বার সাজান কি আখমে মে পেয়ার
দের টাকা সের...... দের টাকা সের...... দের টাকা সের
আব যা কি আয়া মেরে বাছাইন দিল কো কারার”

লোকটা মাঝে মাঝে মাইকে বলত, ১টা আটআনা, ২টা ১ টাকা। ভারি মজার ice-cream। আমি ১ টাকা দিয়ে ২ টা ice-cream কিনে ২ জন মিলে খাচ্ছি। এর দেখাচ্ছি কার জিভ কত কালার হল।

একবার শীতের রাতে আমার খেজুরের রস খেতে ইচ্ছে করছিল। আমি মজনু ভাই কে বললাম। মজনু ভাই বলল আমাদের খেজুর গাছ আজ কাটে না, রস কই পাব। কিন্তু আমি নাসর বান্দা আমাকে খেজুরের রস খাওয়াতে হবে। তো আমি আর মজনু ভাই রফিকুল এর সরপন্ন হলাম। রফিকুল তার চিরচেনা হাসি দিয়ে বলল, চল তোকে আজ খেজুরের রস খাওয়াব। রফিকুল এর বাড়িটা আমাদের গ্রামের বাড়ীর নদীর পাশে। নদীর পাশে কিছু খেজুরের গাছ ছিল, যেটা অন্য লোকেদের। রফিকুল আমাকে খুজে খুজে ভাল খেজুরের রস খাওয়াল। রফিকুল এর সাথে কত বিলে ও নদীতে মাছ ধরতে গেছি, আর কত কিছু করেছি। 

এখান খেকে ১৪-১৫ বছর আগে, রফিকুল এর সাথে আমার দেখা। সে তখন লেখাপড়া আর করেনা। টাকা পয়সার জন্য সে আর লেখাপড়া করতে পারে নাই। তার বাবা, একা তাদের সংসার চালাতে পারতো না। তাই সে আমাদের নদীর মাঝি। সে কখনও আমার বা মজনু ভাই বা আমাদের সাতক্ষীরা বাড়ীর কারও কাজ থেকে ভাড়া নিত না। আমাদের নদীতে এখন ব্রিজ হয়ে গেছে। আমরা এখন আর নৌকা দিয়ে নদী পার হয় না। তাছাড়া লাস্ট ১৪ বছর ধরে আমি সাতক্ষীরা বাইরে। গ্রামের যাওয়া খুব একটা হয়না। যদি যাই তাহলে সময় পায় না বেশি। আজ আমি জানি না, রফিকুল কি করে। মাঝে মাঝে নিজে কে খুব ঘৃনা করি, নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হয়। 
রফিকুল আমি জানি, ওই দিন গুলা আর ফিরে পাব না। তোমার সাথে ওই দিন গুলা আমার জীবনের বেষ্ট দিন না হলেও, আমার ছোটবেলার খুব আনন্দের কিছু দিন। আমি খুব লজ্জিত তোমার নাম আমার মনে ছিল না এবং তোমার কোন খোজ ও আমার কাছে নাই। তবে আবার বাড়ি গিলে আমি তোমাকে খুজে বাহীর করবো ইনশাল্লাহ। তোমার সাথে করে আবার ফিরে যাব সেই দিন গুলাতে। তুমি কি এখনো আমাকে নিয়ে নৌকাতে ঘুরতে বাহির হবে? একটা সুন্দর হাসি দিয়ে আপন করে নিবে? আমাকে শীতের রাতে খেজুরের রস খাওয়াবে? এক সাথে ice-cream খাবে? তুই কি একবার এই কবিতাটা শুনাবি;

তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,
কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া;
ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী
পারের খবর টানাটানি করি;
বিনাসুতি মালা গাথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;
বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তটের হিয়া।
তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে, ছোট সে কাজল গাঁয়,
গলাগলি ধরি কলা বন; যেন ঘিরিয়া রয়েছে তায়।
সরু পথ খানি সুতায় বাঁধিয়া
দূর পথিকেরে আনিছে টানিয়া,
বনের হাওয়ায়, গাছের ছায়ায়, ধরিয়া রাখিবে তায়,
বুকখানি তার ভরে দেবে বুঝি, মায়া আর মমতায়!

বন্ধুরা আমার এই লেখার কারণ গুলা হল;
১। আমরা অনেকে কর্ম ব্যাস্ত জীবন ও সংসারের দায়িত্ব এর জন্য অনেক কাছের কিছু মানুষকে ভুলে যাই। 
২। ভাগ্যের করুণ দোষে অনেকে আমরা লেখাপড়া করতে পারি নাই। যেমন আমার বন্ধু রফিকুল।

Likes Comments
০ Share

Comments (2)

  • - আজিম হোসেন আকাশ

    শুভ কামনা।

    • - বাংলার পাই বাপা

      ধন্যবাদ ভাই। আপনার জন্যও শুভ কামনা রইল।

    - চারু মান্নান

    বাহ দারুন কবি, এই বসন্তে ভাল থাকুন,,,

    • - বাংলার পাই বাপা

      মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই। আপনার মত বড় কবির মন্তব্য পেলে নিজের উপর বিশ্বাস টা বেড়ে যায়। শুভ কামনা জানবেন

    - আলমগীর সরকার লিটন

    কবিতা পড়লাম বেশ এক ভাবনাময়

    শুভ কামনা

    • - বাংলার পাই বাপা

      মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কবি। আপনার মত বড় কবির মন্তব্য পেলে নিজের উপর বিশ্বাস টা বেড়ে যায়। শুভ কামনা জানবেন