Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মোস্তফা কামাল সোহাগ

১০ বছর আগে লিখেছেন

আমার কাছে একজন সুখী মানুষ রিক্সাওলা রহিম ………

LRB সেই বিখ্যাত গান 

"সুখেরই পৃথিবী, সুখেরই অভিনয়
যত আড়াল রাখো, আসলে কেউ সুখী নয়
নিজ ভুবনে চির দুখী, আসলে কেউ সুখী নয়"

সুখ আসলে কি, এটা আমার জানা ছিল না। আমি মনে করতাম যে মানুষ কখনও সুখী হয় না, মানুষ সুখী হওয়ার বা সুখী আছে, এটা সবসময় অভিনয় করে। আমি নিজেকে কখনও সুখী মনে করতাম না। আমি মনে করতাম, আমার যদি এটা থাকতো তাহলে আমি সুখী হতাম। দেখা যেত, আমি ওইটা পাওয়ার পরেও আমি সুখী হতাম না। যেমন, আমার একবার খুব ক্যামেরা কেনার ইচ্ছে হল, কিন্তু আমার কাছে টাকা না থাকায় কিনতে পারছি না। আমি মনে করতাম আমি এমন এক মানুষ যার কিনা একটা ক্যামেরা টাকা না। তার অনেক দিন পর আমি একটা ক্যামেরা কিনলাম কিন্তু আমি সুখী হতে পারলাম না। আমার এখন আর একটা জিনিষ চায়। আমি সবসময় চাওয়া বা চাহিদা কে সুখের সাথে মিশিয়ে ফেলতাম, কারণ আমি সুখের সংজ্ঞা জানতাম না। মানুষ সুখী হওয়ার জন্য কত কিছু না করে। আমাদের সমাজে এত অনিয়ম-দুনীতী শুধু মাত্র সুখী হওয়ার জন্য। কেউ মনে করে টাকা থাকলে মানুষ সুখী হয়, তাই তার টাকা চায় যে করে হোক। কেও মনে করে ক্ষমতা থাকলে মানুষ সুখী হয়, তাই তার ক্ষমতা চায় যে কোন উপয়ে হোক। কারও কাছে বাড়ি, গাড়ী সুখ। কারো কাছে সুন্দর পোশাক সুখ। আসলে সুখী মানুষ কে, এটা আমাদের কাছে এখনো কোটি টাকার প্রশ্ন। 

আমার কাছে, রিক্সাওলা রহিম পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ। তার পুরা নাম মোঃ আব্দুল রহিম। বাড়ি রংপুর। সে ঢাকা শহরের একজন রিক্সাওলা। দেখতে উজ্জাল কালো (মনে হয় রদে রিক্সা চালিয়ে এমন কালো হয়েছে), বয়স আনুমানিক ৩২-৩৩ বছর, স্বাস্থ্য ভাল।

২০০৮ এর কথা, আমি তখন United Internation University তে MSCE (Masters in Communication Engineering) এ পড়াশোনা করি evening time এ এবং Robintex Group এ চাকুরী করি। আমার বাসা ছিল, ধানমণ্ডি-১৯ (star kabab এর পাশে)। আমি, রাসেল ভাই, সবুজ দাদা, চয়ন, রাজিব এবং রাজী একসাথে থাকতাম। আমাদের বই-খাতা, জামাকাপড় এবং কোন কিছু দারকার হলে সবসময় ঢাকা নিউ মার্কেট যেতাম। তো আমি একবার ঢাকা নিউ মার্কেট গিয়েছিলাম, আমার একটা প্যান্ট কাটাতে। আমার কাজ শেষ হতে রাত ৮ বাজে গেল। আমি রাস্তায় গিয়ে রিক্সা খুজতে লাগলাম। অনেক সময় পর একটা রিক্সা ধানমণ্ডি-১৯ নাম্বার যেতে রাজী হোল। আমার ও সেই রিক্সাওলা রহিম কথা গুলা আজও আমার মনে আছে।

আমিঃ ঐ মামা যাবেন?
রিক্সাওলাঃ কই মামা?
আমিঃ ধানমণ্ডি-১৯
রিক্সাওলাঃ মামা ৪০ টাকা দিতে হবে।
আমিঃ ঐ মিয়া ২৫ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা কেন?
রিক্সাওলাঃ যে জ্যাম আছে, ৪০ টাকা না দিলে যাব না। (রাত ৭-৯টা পর্যন্ত খুব জ্যাম থাকে)
আমিঃ আমি নিরুপায় হয়ে ৩৫ টাকায় যাবেন?
রিক্সাওলাঃ যাব।

আমি রিক্সাতে উঠলাম। ঢাকা কলেজ এর সামনে গিয়ে জ্যাম পরলাম। আমি উপায় না পেয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। মনে সুখে সিগারেট টানছি এবং গুন গুন করে গান গাইতেছি। আমার প্রিয় গায়ক জুয়েল এর গান।

“ আমি অবাক হয়ে যায়
আমি সুরের দেশে হারায়
আমি দুচোখ বুজে কাদি-হাসি
শিশ দিয়ে গান গায়
আমি অবাক হয়ে যায়, আমাকে দাখে”

সিগারেট টা শেষ হওয়ার পর আমার কিছু ভাল লাগছে না। আমরা তখন ২০ মিনিটের মত জ্যামে বসে আছি। আমি খুব বোরিং সময় কাটাতে ছিলাম। আমি নিরুপায় হয়ে রিক্সাওলা সাথে গল্প শুরু করলাম।

আমিঃ মামা নাম কি?
রিক্সাওলাঃ মোঃ আব্দুল রহিম
আমিঃ দেশের বাড়ি কোথাই?
রিক্সাওলাঃ রংপুর।
আমিঃ বিয়ে করেছেন?
রিক্সাওলাঃ বিয়া করিছি।
আমিঃ মামার কি ছেলে মেয়ে আছে?
রিক্সাওলাঃ হু আমার একটা মেয়ে।
আমিঃ ঢাকাতে কত দিন যাবত রিক্সা চালান?
রিক্সাওলাঃ (সে কিছুটা বিরাক্ত হোল) ২ বছর।

আমি তার সাথে এর কথা না বলে, আর একটা সিগারেট ধরালাম। কিন্তু সময় কি করে কাটায়। আশে পাশে কোন ভাল মেয়ে চোখে পড়লনা। যে একটু পার্ট নিয়ে সময় কাটাব। আমার তখন রিক্সাওলা রহিম এর সাথে কথা বলা ছাড়া এর কোন উপায় নায়। কিন্তু রহিম তো কিছুটা বিরক্ত, একে সে জ্যামে রিক্সা নিয়ে বসে আছে এবং আমি তাকে জ্বালাতন করছি। কিন্তু আমি তো ন্যাসর বান্দা রহিম এর সাথে কথা বলতে হবে।
আমিঃ মামা সিগারেট খাবে?
রহিমঃ না।
আমিঃ কেন সিগারেট খাওনা?
রহিমঃ জী খায়।
আমিঃ তাহলে এই নেও, কোন ব্যাপার না। তুমিও মানুষ আমিও মানুষ। (রহিম আমার কাছ থেকে সিগারেট নিল। আর আমি জানি, এখন আমি তার সাথে কথা বললে সে বিরাক্ত হবে না)
আমিঃ আপনি কই থাকেন?
রহিমঃ মোহাম্মাদপুর বস্তিতে।
আমিঃ রিক্সা কি মোহাম্মাদপুরের?
রহিমঃ হু।
আমিঃ কোন এলাকায় রিক্সা বেশি চালাও?
রহিমঃ মোহাম্মাদপুর, ধানমণ্ডি এলাকাই।
আমিঃ আপনার রংপুরে কোন জমি-জাগা নাই?
রহিমঃ আছে খুব কম। আমার ছোটো ভাই থাকে।
আমিঃ সে কি করে?
রহিমঃ দিন মুজুর।
আমিঃ আপনি কি সারাদিন রিক্সা চালান।
রহিমঃ জী মামা।
আমিঃ কষ্ট হয়না। অন্য সবাই তো একবেলা রিক্সা চালায়?
রহিমঃ জী মামা কষ্ট হয়। কিন্তু কি করবো। মেয়েটা কে একটা ভাল স্কুল ভর্তি করবো। মেয়েটার জন্য এতো কষ্ট করি। মেয়েটাকে আমি খুব ভালবাসি। তার কোন কষ্ট যেন না হয় তাই এতো কষ্ট করি।
আমিঃ (কিছুটা নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। আমার মুখ থাকে কোন কথা বাহির হচ্ছে না। রহিম এর কথা শোনার পর মনে মনে ভাবলাম, আল্লাহ আমাদের সবার বাবা-মা কে জান একই ভালোবাসা দিয়ে এই জগতে পাঠিয়েছে।) আমি কিছুক্ষণ পর। আপনি বাসায় যান কখন।
রহিমঃ মামা কখন ৯, কখনও ১০ আবার কখন ১১ টায়। 
আমিঃ তখন আপনার মেয়ে জেগে থাকে?
রহিমঃ জী মামা, আমার মেয়ে আমি না আসলে ঘুমায় না। জানান মামা, আমার মেয়ে যখন আমাকে আব্বু বলে আমার বুকের মধ্যে আসে। আমার সারা দিন এর কষ্ট যেন কোথাই চলে যায়।

আমি নিশ্চুপ বসে থাকলাম। এর একটা সিগারেট ধরিয়ে, চিন্তা করতে লাগলাম। রহিম ও তার মেয়ে কে নিয়ে। আমরা তখন জ্যাম ছেড়ে ধানমণ্ডি-১৫ চলে এসেছি। আমি কোন কথা বলছি না। ধানমণ্ডি-১৯ এ আসার পর, আমি রহিম কে জিজ্ঞাস করলাম, আপনার মেয়ের নাম কি? রহিম বলল “রোক্সানা”। আমি রহিম কে ৪০ টাকা ভাড়া দিলাম। রহিম দাড়িয়ে আছে অন্য passenger এর জন্য। আমি হাঁটতে লাগলাম। এর মনে মনে বললাম, “রোক্সানা” তুমি পৃথিবীর সব চেয়ে luck কারণ তোমার কাছে রহিম এর মত একজন বাবা আছে। সে দিন রহিম আমার সুখের সংজ্ঞা বদলে দিল। আমার কাছে আজও মনে হয়, রহিম পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী একজন।

Likes Comments
০ Share

Comments (2)

  • - ঘাস ফুল

    অনেক ভালো লিখেছেন চিঠিটা সেলিনা আপা। দারুণ কিছু কথাও আছে এতে। আঞ্চলিক ভাষায় লিখেছেন বলে আবেদনটা বেশ জোড়াল হয়েছে। আজই বিস্তারিত মন্তব্য করছি না। শেষ পর্ব পড়ে তারপর বিস্তারিত মন্তব্য করবো। অনেক শুভ কামনা রইলো। 

    - নিষিদ্ধ কবি

    লিখাটা ভালো ছিল... অনেক বেশী ভালো...

    - সুলতানা সাদিয়া

    মায়ের অনুভূতিতে দেশপ্রেমের তীব্রতা হৃদয় ছুঁয়ে যায়। শেষটা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।

    Load more comments...