Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

জাকিয়া জেসমিন যূথী

৯ বছর আগে লিখেছেন

বই আলোচনাঃ প্রেতসাধক নিশি মিয়া


বইমেলা
মানেই নতুনদের বই

নিজের বই

বন্ধুর বই

প্রিয়জনের বই

 

এবারে বইমেলায় প্রথম দিন না গিয়ে প্রথম শুক্রবার যাওয়ার ইচ্ছে জমিয়ে রেখেছিলাম। তবু তৃতীয় সন্ধ্যায় উদ্দেশ্য না থাকলেও অন্য একটা কাজে বইমেলায় যাওয়া হয়েছিলো। বাসা থেকে বের হবার আগেই তা জানা হয়েছিলো বলেই ক্যামেরাটাও ব্যাগে পুরে নিয়েছি। যেহেতু প্রথম আগমন তাই সেদিন শুধু ঘুরে ঘুরে স্টল পরিদর্শন করাই মূখ্য। এভাবে অন্যপ্রকাশ, ভাষাচিত্র, জ্যোতিপ্রকাশ, গাজী প্রকাশনী, জাগৃতি, শ্রাবণ স্টলকে সরিয়ে প্রিয়মুখ প্রকাশনী খুঁজছিলাম। কারণ ওখানে ‘ প্রেতসাধক নিশিমিয়া’ নামের একটা বই বেরুচ্ছে। এর প্রচ্ছদ ও প্রকাশ কাহিনী অনেকবার ফেসবুকে চোখে পরেছে। যদিও ভৌতিক কোন গল্প পাঠে আমি সেরকম আগ্রহী না, ভৌতিক গল্প আমাকে ভালোই ভয় দেখায় বলে। তবু এই বইটা নিয়ে কৌতূহল জেগেছিলো। কেন জেগেছিলো? এই নিশিমিয়া বিষয়ক একটা গল্প আমি ফেসবুকে রাজীব চৌধুরীর কোন একটা লিংকে পড়েছিলাম। আর লেখক রাজীব চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেয়া যাবতীয় লেখাই ভালো লাগে। চেহারা ও গড়নে এতটুকু একটা মানুষ সে নাকি স্থপতি, সেটা ভাবলেও আমার সবসময়েই বিস্ময় লেগেছে। আমার কাছে বোধহয় স্থপতিকে দেখতে হবে বিশালকায় এবং দীর্ঘ কোন মানুষ। তাই সে তুলনায় রাজীব চৌধুরীকে একটা পুচকে জিনিয়াস বলেই মনে হয়। যে একাধারে কবিতা লিখে। মজার মজার সব স্ট্যাটাস দেয়। মাঝেমাঝে দারুন সব স্কেচও করে। আর আমার-তার তুলনায় কিছুটা আলাদা ধাঁচের বক্তব্য নিয়ে গল্প লিখে। তো, এই পুচকে ছেলেটা একটা আস্ত বই প্রকাশ করে ফেলেছে আর তা নিয়ে বেশ উদ্দীপনাও চলছে সবার... সে বইটা তো হাতে নিয়ে দেখতেই হয়।

প্রকাশনীতে গিয়ে সামনেই ডিসপ্লে করে রাখা একটা ‘নিশিমিয়া’ হাতে নিয়ে আমি ভেতরের পাতাগুলো উলটে পালটে দেখছি। দোকানের বিক্রেতা আপুটি আমার হাতে আরেকটি কালো মলাটের বই এগিয়ে ধরেছে, ভালো করে দেখিও নাই সেই বইটার নাম কিংবা কোন লেখকের সেই বইটা। আমি মলাট উলটে দেখে চলেছি। ভেতরের পাতাটা সেবা প্রকাশনীর বই স্টাইলে; সেখানে প্রকাশনী সংক্রান্ত অনেক কিছু। বইয়ের পৃষ্ঠাটা একেবারেই আলাদা মানের। আমার কাছে অন্তত যে বইগুলো আছে, সেরকম নয়। কিছুটা নিউজপেপারের পৃষ্ঠার মত। কিন্তু পৃষ্ঠার মানটা এখানে আমার ভালোই লাগলো। ফ্ল্যাপে- মিলন গাঙ্গুলী যে বক্তব্য দিয়েছে, তা কিছুটা পড়লাম। তখনো আমি এই মিলন গাঙ্গুলীকে চিনি না। কিন্তু মনে হলো- খুব বিখ্যাত কেউ। বইটির উৎসর্গে দেয়া কথাগুলো লেখক নিজের হৃদয় থেকে লিখেছেন। ওটা পাঠে যে কেউ আবেগপ্রবণ হয়ে উঠবে। আমি স্টলে চেয়ে বলে উঠলাম-‘লেখক আসে নি মেলায়?’ ওরা আমাকে ভক্ত কেউ ভাবলো। আমি বললাম-‘এই বইটা আমাদের বন্ধুর, রাজীব চৌধুরী!’ বিক্রেতা আপুটি এবার খুব খুশী ও বিগলিত কণ্ঠে বললো-‘তাহলে তো অবশ্যই কিনবেন।’ ‘হ্যাঁ কিনবো অবশ্যই। লেখকের হাত থেকে’ বলে সরে এলাম সেখান থেকে।

unique
এর পর সেদিন আর কেনা হয়নি। তিন দিন পার করে গত শনিবার গিয়ে লেখকের হাত থেকেই নিলাম বইটা। অটোগ্রাফ সহ। ‘সাহিত্যাকাশে ধুমকেতু হয়ে এগিয়ে যাওয়ার’ শুভেচ্ছা বাণী সহ অটোগ্রাফ পেলাম। সাথে এক ফ্রেন্ড ছিলো, সে সহ তিনজনে ফটোসেশনও হলো কিছু। 

বইটা নিয়ে বাসায় ফেরার পরে বড় মামী প্রায় ছিনিয়ে নিচ্ছিলো বইটা-‘দাও নিয়ে যাই, পড়ে দিয়ে দেবো নে।’ আমি বই নিয়ে এসেছি, এটা নিয়ে আরও কিছু ফটো তুলে ফেবু’তে শেয়ার দেবো টেবো, তারপরে নিজে আগে পড়বো। তারপরে না অন্যকে দেবো!

unique

unique

অনেক বইয়েরই ফিনিশিং পড়ে নেয়ার অভ্যাস আছে আমার। কিন্তু ফেসবুক এ এই বইটার সম্পর্কে অনেকেই অনেক কিছু লিখেছে, যেখানে দেখেছিলাম-‘এক পর্ব না পড়ে অন্য পর্বে গেলে নাকি এই কাহিনী বোঝা যাবে না!’ তাই একেবারে শুরু থেকেই পড়া শুরু করে একেবারে শেষ পর্যন্ত পড়ে থেমেছি। আর পড়তে পড়তে ফ্ল্যাপে লেখা মিলন গাঙ্গুলীর কথা বিশেষ-‘হরর গল্প অনেকেই লিখে। কবর, মরা লাশ, কফিন! এইসবকে বাইরে রেখে পুরোই আলাদা আবহে তৈরি বহু তথ্য দিয়ে খেটেখুটে শ্রম দিয়ে লেখা হয়েছে এই বইটা’ মনে পরে গেছে বার বার। মিলন গাঙ্গুলী পাঠকদেরকে আহবান করেছে নিঝুম দুপুর কিংবা শীতের রাতে বইটা পড়ার অভিজ্ঞতা নিতে। আমি একই সাথে নিঝুম দুপুর এবং সবাই ঘুমিয়ে পরা একলা ঘরে শীতের রাতে লেপের ভেতরে শুয়ে বইটা পড়তে শুরু করেছি। পড়তে পড়তে শুধু ‘সামনে কী হয়’, ‘কী হবে’ তা জানতে ইচ্ছে করেছে। একবারেও পড়ার ইচ্ছা থেমে যায়নি। আর আমরা জানি-‘একজন ভালো লেখকের লেখার সার্থকতা এখানেই; পাঠককে তার লেখার ভেতরে আটকে রাখতে পারা।’ আর বইটি পাঠের পরে এটাও মনে হয়েছে-‘লেখক একটি সার্থক চরিত্র সৃষ্টি করেছেন যা একই সাথে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি তার চেয়ে বড় বয়সীদের কাছেও পাঠ যোগ্য একটি বই।’

unique

‘প্রেতসাধক নিশি মিয়া’ উপন্যাসের গল্পমালা গড়ে উঠেছে ‘নিশি মিয়া’ নামের এক প্রেতসাধককে ঘিরে। বইটা পড়তে গিয়ে মাঝেমাঝে মনের মধ্যে ‘ফিয়ার ফাইলস’ টাইপের টেলিভিশন এর ভৌতিক অনুষ্ঠান দেখছি বলে ভ্রম হতে পারে, কিন্তু প্রতিনিয়ত পাতার পর পাতা উলটে কাহিনীর ভেতরে যেতে যেতে মনে হয় লেখক অনেক সাধনায় নিশিমিয়া চরিত্রটির রূপ দিয়েছেন। বইটিতে ব্যবহৃত আরও অনেক পার্শ্বচরিত্রগুলোও কাহিনীর প্রয়োজনে যেন খুব সাবলিলভাবেই এসে গেছে। বইটি পাঠ করতে করতে মনে হতে থাকে-‘এরকম কিছু বুঝি সত্যিই আছে!’ পুরো কাহিনীটা পড়লে মনে হবে, নিছক গল্পের জন্য লেখা নয় বইটি, এতে লেখক ম্যাসেজও দিয়েছেন। বইটি সংগ্রহ করে মন দিয়ে পড়লেই জানা যাবে কি সেই বার্তা!  

বইয়ের নামঃ প্রেতসাধক নিশিমিয়া

লেখকঃ রাজীব চৌধুরী

প্রকাশনীঃ প্রিয় মুখ

স্টল নম্বরঃ ২২৬

প্রাপ্তিস্থানঃ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, একুশে বইমেলা, ২০১৫

আমি খুব সাধারণ পাঠক। এবং একই সাথে কঠোর সমালোচকদের কেউ নই। যেকোন লেখায় বানান-এর ভুল ধরা পর্যন্তই আমার সমালোচনার সীমাবদ্ধতা। অতি সাধারণভাবেই বইটা পড়েছি। তাই বইটি সংগ্রহ করার প্রাক-কাহিনী এবং পাঠের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশও সহজভাবে আমার লেখায় চলে এসেছে। সমস্ত বইয়ে টুক টাক দু একটা বানান টাইপিং মিস্টেক বলে মনে হলেও তা ধর্তব্যে ফেলার ইচ্ছে হয়নি কেননা ওরকম ত্রুটি ছাপাখানার মাধ্যমেও হয়ে যেতে পারে। লেখককে তার বইটির জন্য শুভকামনা জানিয়ে শেষ করছি। 

Likes ১৬ Comments
০ Share