জানালার পর্দা গলে দিনের আলো উঁকিঝুকি দিচ্ছে। গায়ের ওপর থেকে লেপ সরিয়ে দেয় নিশি। মাথার নিচের বালিশটাও সরিয়ে একপাশে রেখে দু পায়ের পাতা সোজা টান টান করে দুই হাত শরীরের দু পাশে আড়াআড়ি করে রাখে। একটু পরে উপুড় হয়ে শোয়। দুই পা টান টান। হাত দুটো ভাঁজ করে কপালের নিচে রাখা। ঘুম থেকে জেগে ইয়োগার আসনের মাধ্যমে একটু একটু করে আড়মোড়া ভাঙ্গে ওর। তিন চারটা ইয়োগা-আসন হালকাভাবে নেয়ার পরে বক্স খাটের ড্রয়ার থেকে ট্যাব টা নিয়ে সুইচ অন করে। নোটিফিকেশনে ইমেইল আর ফেসবুক বার্তা আসে। ট্যাব ওপেন হতেই একটি বার্তা ছুটে আসে__
কিশোর: আপি, কেমন আছো? শুভ সকাল।
নিশি চোখ রগড়ায়। পাশের ঘর থেকে মায়ের কথা ভেসে আসছে, “মেয়েটার এই বেলা করে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস আর গেলো না!”
কয়েক মিনিট পেরোয়। কিশোরের দ্বিতীয় বার্তা ছুটে আসে___
“আপি, এইটা কিন্তু ঠিক না! মেসেজটা দেইখ্যাও তুমি শুভ সকাল কইবা না? এত কিপটা ক্যা তুমি?”
“হুঁ, শুভ সকাল। কাল রাত থেকে মেজাজ গরম!”
“ক্যান, কী হইছে?”
“কি হয় নাই?
রাইত বিরাইতে মাইয়াগো সেলফি চাইয়া বেড়াস!
এসব করার জন্যেই তোরা ইন্টারনেট ব্যবহার করিস?
এই তোদের আসল রূপ?
এই তোরা লেখক?
সৃজনশীল মানুষ বলে পবিত্র মনের হয়!
এই তোদের পবিত্রতা!”
“আপি, এইসব তুমি কি কইতাছো? আমি কবে তোমার সেলফি চাইলাম?”
“তুই চাস নাই অন্য কেউ চাইছে! তুইও লেখক, সেও লেখক!”
“আপি, কি হইছে খুইলা কও তো!”
“অপরিচিত মেয়ে মানুষ দেখলেই তোদের আপনি থেকে তুমি তে নামতে দেরী হয় না!”
“কে এইটা? কার রাগ তুমি আমার উপরে দেখাইতেছো, বু?”
.
নিশি রাগে ক্ষোভে অবিশ্বাসে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে। কিছু বলে না। এরই নাম কি শিক্ষা? ইনবক্সে সেলফি চাওয়া ছাড়া কি এনাদের কোন কাজ নেই? এটাই কি এখনকার ধারা? চিনি না। জানি না। পরিচিত হওয়া মাত্রই দুদিন না গড়াতেই ইনবক্সে ছবি দিতে হবে, কেন? ফেসবুক এলবামে তো কত ছবি সেগুলা দেখে মন ভরে না। মাঝ রাতে সেলফি চাই! আজব চিড়িয়া সব!
.
কিশোর আবার নক করে, “বু, কি হইছে খুইলা বলো তো!”
নিশি বলতে শুধু করে…
.
… এই গেলো সোমবারের ঘটনা। ফেসবুক টাইমলাইনে বন্ধুদের একক বইয়ের বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলাম। রাত সাড়ে দশটা পেরিয়েছে। এর মধ্যে মাসুম আশফাক নামের একজন মেসেঞ্জারে নক করলো।
: আপনার কোন বই বের হচ্ছে কি বইমেলায়?
তার সাথে আগে কখনো কথা হয়নি। কীভাবে সে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে এসেছে, আমার নাকি তার অনুরোধে সেটা মনে পরছে না। তাই তার প্রোফাইলে গেলাম। ফ্রেন্ডশিপ চেক করে দেখি ছ মাস। তার কভার ফটোতে একটা বইয়ের বিজ্ঞাপন। কিন্তু তার সাথে কোন বিবরণ লেখা নেই। কার বই, গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস না কবিতার বই কিছুই লেখা নেই। প্রোফাইল চেক করলাম। কিছু এলবামে ক্লিক করলাম। চেহারা সুরত ভদ্র। কথা বলা যায়। রিপ্লাই দিলাম,
: নাহ। একক কোন বই এবারেও না। কয়েকটা সংকলনে লেখা আসছে।
: ফাইন। কবিতা?
: কভার ফটোতে ছবি দিয়ে রেখেছি।
: ভালো। (বলে নিজের বইয়ের ছবি শো করলো।)
: হ্যাঁ, দেখলাম।এটা কত নম্বর বই?
: প্রথম এবং উপন্যাস।
: খুব ভালো। কোন প্রকাশনী?
: সূবর্ণ।
: মেলায় গেলে দেখবো নে।
: অনেক ভালো থাকবেন। মেলায় এলে ফোন দিতে পারেন। যদি আপনি চান। আর... আপনার লেখা আমি পড়তে চাই।
: আমার লেখা পড়তে হলে সংকলনই সংগ্রহ
Comments (20)
বাহ এ ভাবে গপ্পে হয়