Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শেষ রাতের আঁধার

১০ বছর আগে লিখেছেন

বেঁচে থাকা ভালবাসা

 

- আবার কবে আসবি?


মায়ের কথায় মুখের দিকে তাকাল হিমেল। আবার কবে আসবে? এসে কি হবে? এবার এসেও খুব একটা লাভ হল, তা না। অনেক দিন ধরে, আসবে আসবে করেও আসা হয় না বাসায়। এবার ক্লাস মিস দিয়েই চলে আসল। না আসলে চলত না। পকেটের কথা চিন্তা করতে হবে। বাসের হেল্পারের সাথে অনেক ঝগড়া করে, ৮০ টাকার ভাড়া ৩৫ টাকা দিল। পকেটে ছিল ৩৮। ছাত্র ভাড়া। হেল্পার এতদূরের ছাত্র নিবে না। কোন হাফ ভাড়া নাই। আর হিমেল দিচ্ছে, হাফ ভাড়ার চেয়েও ৫ টাকা কম। এ মানা যায় না। হিমেলও দিবে না বেশি। অবশেষে কয়েকটা খারাপ কথা বলে, হেল্পার চলে যায়। ওসব হিমেল শুনে না। পকেটে টাকা না থাকলে নানা জনেই নানা কথা বলে। ওসব শুনলে হয় না। বাসায় এসে ৪ দিন ধরে পকেটে ঐ ৩ টাকা নিয়ে ঘুরল। এখন চলে যাচ্ছে ঢাকাতে। টাকার খুব দরকার ছিল। কয়েকদিন খুব কষ্ট করে চলতে হল। বন্ধুদের থেকেও ধার করল ৩০০ টাকা। এখন মা আগামী সপ্তাহের জন্য খরচ দিল ৫০০ টাকা। ৩০০ টাকা বন্ধুদের দিয়ে দিলে, থাকবে ২০০ টাকা। ২০০ টাকা দিয়ে চলা যায় নাকি? গত সপ্তাহে এতো খরচ হত না। তিশার সাথে দেখা করতে হল। খুব করে বায়না ধরল, বাণিজ্য মেলায় যাবে। নিয়েও গেল। তিশা কিছু কিনবার আবদার করেনি। তবুও কিছু না দিলে কেমন যেন দেখায়। বার বার বলে হিমেল, নাও না কিছু। দাম বেশি, তিশা নিবে না কিছু। তবুও অনেক জোরাজুরির পর, এক জোড়া কানের দুল কিনল। অত ছোট ছোট দুইটা কানের দুল, দাম নিল ৩৫০ টাকা। কোন মানে হয়? সব ডাকাত। সপ্তাহের শেষ দিকে টানাটানি। ধার করে চলেও তাও শেষ, তাই চলে আসল বাসায়। কিছু টাকা নিতে হবে। এভাবে কষ্ট করে চলা যায় না। কিন্তু  মা এতো কম টাকা দিল, কিভাবে হয়? মেজাজ খুব খারাপ। মাকে এতো করে বলল, এতো কম টাকায় চলে না। মা বুঝেন না। মা বলেন, এতো টাকা পাব কই? সংসার তো চালাতে হয়।
হিমেল জানে কতটা কষ্ট করে মা সংসার চালান। বাবা থাকলে একটা কথা ছিল। বড় ছেলে হিসেবে সংসারের দায়িত্ব এখন হিমেলের নেবার কথা। হিমেল নিতে পারেনি। পড়াশুনাই শেষ হল না। আবার সংসার দেখা। এখন মায়ের থেকেই টাকা নিতে হয়। উল্টাপাল্টা খরচ করে খুব একটা হিমেল তাও না। অন্য বন্ধুদের তুলনায় কিছুই করে না। তবুও সপ্তাহ শেষে টাকা থাকে না। কিভাবে কিভাবে যেন ফুরিয়ে যায়। দুপুরে খায় ফুটপাথের দোকানে, রাতেও ওখানে। সকালে বন্ধের দিন ঘুমায়, ক্লাসের দিন ক্লাস করে। ঐ তালে খাবারের কথা মনে থাকে না। মনে থাকে না ঠিক না, মনে আনে না। দুই বেলা খেয়েও টাকা নেই। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে হিমেল। বাসায় গেলেই মা বলেন, কিরে তুই এতো শুকিয়ে গেছিস কেন? খাস না ঠিক মত?
- মায়েদের কাছে সন্তানকে সবসময় শুকনাই লাগে।


উত্তর দেয় হিমেল। খুব বলতে ইচ্ছা করে, মা তুমি যে টাকা দাও, তাতে আমার চলে না। দুই বেলা খুব কষ্টে খেতে পারি। ঢাকায় খাবারের দাম বড় বেশি। আম্মু খুব ইচ্ছা করে তোমার রান্না খেতে। এতো জঘন্য খাবার।
তবে বলা হয়না মুখ ফুটে। চোখের কোণায় জল আসলেও, অন্য দিকে ফিরে বাতাসে তা শুকিয়ে নেয় হিমেল।
প্রতিদিন সকালে তিশা কল করে বলবে, এই সকালের নাস্তা করেছ?
প্রতিদিনই হিমেল বলে, এইতো মাত্র করলাম।
প্রতিদিনই মিথ্যে বলে। মিথ্যাটুকু না বললে, তিশাও সকালের নাস্তা করবে না। এই পাগলামির কোন মানে হয় না। হিমেলের টাকা নেই, তাই খায় না। তিশার তো অভাব নেই, হিমেল না খেলে তিশা খাবে না কেন? এভাবে ভালবাসা দেখানোর মানেও হয় না। হিমেল জানে, তিশা ভালবাসে হিমেলকে। শুধু শুধু হিমেলের সাথে খেয়ে না খেয়ে, ভালবাসা দেখাবার কিছু নেই।
টাকা শেষ হবার পর, যখন বাসায় ফোন দিয়ে মাকে বলে, মা টাকা শেষ। পাঠাতে পারবে কিছু টাকা?
মা চুপ করে থেকে বলেন, হ্যাঁ দেখি। আজ একটু কষ্ট করে চল। কাল পাঠাব।


মা ঠিক পরদিন পাঠিয়ে দেন টাকা। হিমেলের মাঝে মাঝে নিজেকে বড় অপদার্থ লাগে। খুব রাগ হয় নিজের উপর।
তবে এবার কেন যেন মায়ের উপর রাগ হচ্ছে। এতো করে বলল, এবার টাকা দরকার একটু বেশি। কিছু বই কিনতে হবে। মা তাও ৫০০ টাকা দিল। বই না কিনুক। ধারের টাকা শোধ করতে তো হবে। ৫০০ টাকা দিয়ে মা আবার জিজ্ঞেস করছেন, আবার কবে আসবে?
একটু রাগে রাগে বলল হিমেল, জানিনা কবে আসব। সামনে পরীক্ষা আসতে দেরী হবে।


এখনও ভিতরে ভিতরে রাগ লাগছে। মা বললেন, বাবা শুকিয়ে গেছিস। একটু ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করিস।


২০০ টাকা হাতে থাকবে, তা দিয়ে কি খাবে, কি করবে? রাগে রাগেই বলল, আরে খাই। এক কথা এতবার বলার কি আছে?


মা আস্তে করে হাত রাখেন মাথায়। মা কাঁদছেন। প্রতিবার বাসা থেকে যাবার সময় এভাবে কাঁদবেন। কাঁদার মত কিছুই না। এভাবে কাঁদেন যেন, হিমেল আর কখনও ফিরে আসবে না।
- আবার কাঁদছ তুমি? আমি কি আর ফিরে আসব না নাকি?
- তাড়াতাড়ি আসিস।
- হ্যাঁ আসব।


হিমেল চলে আসে। পিছন ফিরে তাকায় না। তাকালেই মায়ের ভেজা চোখের মুখ দেখতে হবে। পকেটে টাকাটা রেখে হাঁটছে। বাসে চড়ে খানিক পরেই চলে যাবে। মা পিছন থেকে ডাক দিলেন একবার। আবছা ভাবে শুনল হিমেল। তবে ফিরে তাকাল না। মায়া বাড়াবেন শুধু। মা বাবার মুখগুলো সবসময় মায়া বাড়িয়ে দেয়। অনেক বেশি মায়া বাড়িয়ে দেয়।


আজ অনেক সুন্দর জোসনা। বন্ধুদের ৩০০ টাকা শোধ করে, এখন পকেটে ১৬০ টাকা নিয়ে ঘুরছে হিমেল। ৪০ টাকা বাস ভাড়া গেল। আবার ছাত্র ভাড়া দেবার জন্য কথা কাটাকাটি করল, হেল্পারের সাথে। রাতে খাবে কিনা বুঝছে না। খেলেই কতগুলো টাকা শেষ। এর চেয়ে এক রাত না খেয়ে থাকুক। মোবাইলের কল বেজে যাচ্ছে। মা কল করছেন। ধরতে ইচ্ছা করছে না। বেশ কয়েকবার করার পর ধরল হিমেল, হ্যালো আম্মু।
- হ্যাঁ বাবা, কেমন আছিস?
- হ্যাঁ ভাল।
- রাতে খাইছিস?
- হ্যাঁ খেলাম।
- কি দিয়ে?
- এইতো মুরগীর মাংস।
- একটু কষ্ট করে চল বাবা। বুঝিস তো সংসারের কি অবস্থা। তোর খরচ আবার হেনার খরচ। আমি কাল পরশু তোর বই কেনার টাকা পাঠিয়ে দিব। আর তো কয়েকটা দিন। ভাল মত পড়িস বাবা। পাস করে চাকরি পাবি, তাহলেই তো সব শেষ।


হিমেল চুপ করে আছে। আস্তে করে নিঃশ্বাস ফেলল একটা। মা বলে যাচ্ছেন, খাবি কিন্তু। না খেয়ে কষ্ট করবি না। টাকা শেষ হলে বলিস।
- আচ্ছা। আম্মু বলব। রাখি এখন।


হিমেল আর কিছু শুনতে পারছে না। রেখে দিল। আরও মায়া বাড়িয়ে দিত মা তাহলে। খুব কষ্ট হচ্ছে বুকের মাঝে। কেন কষ্ট হচ্ছে জানে না। মাকে আবার কল করতে ইচ্ছা করছে। বলতে ইচ্ছা করছে, মা তুমি এতো ভাল কেন? তোমার মত তো ভাল আর কেউ হয় না কেন? এতো ভালবাস কেন? এতো মায়া বাড়াও কেন? আমার মত মিথ্যুক ছেলেকেও, এতো আদর কর কেন? এতো চিন্তা কর কেন?


কথাগুলো হয়ত সারাজীবন বুকের ভিতর, রয়ে যাবে। কোনদিন বলা হবে না। বলা হয় না কথাগুলো। খুব খারাপ লাগছে হিমেলের, সকালে মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য। চোখের কোণা বেয়ে জল পড়ছে। মাকে সরি বলতে ইচ্ছা করছে। মায়ের কাছে মাফ চাইতে ইচ্ছা করছে। মা হয়ত রাগ করেনি। মায়েরা কখনও রাগ করে না। অনেক কষ্ট দিলেও না।


তিশা কল করেছে হিমেলকে। জানে জিজ্ঞেস করবে, রাতে খেয়েছে কিনা। না খেলে খাবে না। এই মেয়ে কেন হিমেলকে ভালবাসে? হিমেলকে ভালবাসার কিছু নেই। হিমেলের সাথে তিশার যায় না। শুধু শুধু মায়া বাড়াচ্ছে। কাছের মানুষকে ভুলে থাকা যায় না, এই মায়ার কারণে। মায়া বাড়িয়েই যায়। ভালবেসেই যায়। তবুও তিশাক আর মায়া বাড়াতে, দিতে চায় না হিমেল। কল রিসিভ করবে না তিশার। তিশার জন্য মায়ের কাছে মিথ্যা বলতে হল। ওখানে তিশার দোষ নেই, তবুও। তিশা জীবনে না থাকলে, হয়ত এই মিথ্যে গুলো আর আসবে না। দানা বাধবে না মনের কোণে। ভালবাসার মানুষ হিসেবে, কিছু দিতে ইচ্ছা করবে না। বন্ধুর থেকে ধার করতে হবে না। বই কেনার কথা বলে ,মায়ের কাছে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে না। ভালবাসা সবার জন্য না। হিমেল জানে, মায়ের চোখের জল মুছে দিতে হবে। ছোট বোন হেনাকে অনেক বড় করতে হবে। ভালভাবে পড়াশুনা করে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। এতো দিন যদি তিশা অপেক্ষা করে, তবে তিশাকে জীবনের সাথে জড়াবে। মায়া বাড়াবার সুযোগ তখন দিবে। এখন দিতে চায় না।


আকাশের পানে তাকাল হিমেল। এখনও আলো দিয়ে যাচ্ছে চাঁদটা। এই জোসনা গায়ে লাগছে,সাথে এক ফোঁটা দুই ফোঁটা বৃষ্টি। কখনও মেঘ ঢেকে যাচ্ছে চাঁদটা, কখনও আলো দিচ্ছে। জীবনের মত ঠিক। চোখ দিয়ে পানি পড়ে যাচ্ছে। কেঁদে যাচ্ছে হিমেল। মাঝে মাঝে একা একা কাঁদতে বড্ড বেশি ইচ্ছা করে। এই কান্না কাউকে দেখাতে ইচ্ছা করে না। মাকেও না, তিশাকেও না। এরা মায়া বাড়িয়ে দিবে। সব মায়া ধরে তো চলা যায় না। সব ভালবাসা বাঁচিয়ে রাখা যায় না। কিছু ভালবাসা মন থেকে বলে, বাঁচিয়ে রাখার টান আনতে। আর কিছু ভালবাসা মনের কোণে থাকে। জীবনের জটিলতায় কখনও কিছু ভালবাসা হারিয়ে যায়। কিছু ভালবাসা সব শেষেও রয়ে যায়। মাকে ভালবাসে হিমেল, এই ভালবাসা বেঁচে রবে। তিশাকেও ভালবাসে। আপাতত তা বুকের কোণে থাকবে, কিছু জটিলতায়। কখনও ফিরে আসতে পারে, আবার হারিয়েও যেতে পারে। তবে মায়ের চোখের কোণের জল, আর দেখতে চায় না হিমেল।

Likes Comments
০ Share

Comments (4)

  • - ঘাস ফুল

    আপনার মতো আমারও গুঁড় তৈরি করার প্রক্রিয়া একবার দেখার সুযোগ হয়েছিল। দারুণ উপভোগ করেছিলাম সেই রাতটা। আজ আপনার পোষ্ট দেখে সেদিনের কথা মনে পড়ে গেলো। ছবিগুলো খুব সুন্দর তুলেছেন কামাল ভাই। ছবিতে ছবিতে আখ মাড়াই দেখে নিলাম। 

    • - কামাল উদ্দিন

    - শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

    আহারে মিঠাই আগে কত গরম গরম মিঠাই খাইছি। আপনার ছবি দেইহা হেই সব কথা মনে পরতেছে।

    • - কামাল উদ্দিন

    - শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

    আহারে মিঠাই আগে কত গরম গরম মিঠাই খাইছি। আপনার ছবি দেইহা হেই সব কথা মনে পরতেছে।

    • - কামাল উদ্দিন

    Load more comments...