Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

অব্যয় অনিন্দ্য

১০ বছর আগে লিখেছেন

এরোপ্লেনের লাল আলো

‘কী বিশ্রী ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যাচ্ছে পাখিটা’- কটমট করে তাকালেন ঊনআশি বছরের বৃদ্ধ কাঞ্চন মজুমদার। পাখি তাঁর দু’চোখের বিষ; সরীসৃপ প্রাণীগুলোর যেই না পাখা গজালো, তারা ম...াটি-জল সব ভুলে গেল; খালি ফুরুৎ - কোথাও তাদের যেন দু’দণ্ড সুস্থির রাখার উপায় নেই। বিবর্তনের সূত্র মানতে গিয়ে এদের পাখা দেওয়ার সময় প্রকৃতি সাইকলজিক্যাল বিষয়টা ভাবেইনি!


কাঞ্চন ভালবাসতেন গাছ। গাছ তো আর পাখিদের মতো ফুরুৎ করে উড়ে যায় না। গাছে গাছে স্বপ্ন বাসা বাঁধে, ইচ্ছেগুলো হয় ফুলেল; ভালোবাসা ফলবতী হয়ে নতুন আশার বীজ বুনে চিরহরিৎ মায়ার ভরিয়ে দেয় জীবন। অথচ সোহাগী ভালোবাসতেন পাখি। এই পাখি আর গাছ নিয়ে কত খুনসুটি! সোহাগী পাখি পুষবেনই। স্বামীকে ফাঁকি দিয়ে কোত্থেকে সব টিয়া, ময়না, কবুতর দিয়ে ভরিয়ে তুলতেন বারান্দা। আর পাখিগুলিও ছিল সব যেন দার্শনিক পাখি। গীতার দর্শন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলত। সারাক্ষণ সোহাগীর আসক্তি থেকে নির্বাণের উপায় খুঁজত – আর দু’দিন পর পরই এক একটা করে ফুরুৎ। তখন কাঞ্চনের আনন্দ কে দেখে!

- ‘বুঝলে সোহাগী, বাগান কর, দুইটা গাছ লাগাও। গাছ পাখিদের মতো বেইমান নয়। গাছের ভালোবাসা শিকড়ে, তার দর্শন মায়ায়, যে কারও জন্য পথ চাওয়াতেই তার আনন্দ।’


সুযোগ অবশ্য সোহাগীরও আসত। হয়তো এক অলস বিকেলের রিমিঝিম আলোয় উঠোনের ওপর শখের জামগাছটার নিচে সোহাগীকে নিয়ে বসেছেন কাঞ্চন। আর তখুনি কোনো এক কূটনীতিক পাখির মনে হতো, ‘প্রেমকুঞ্জে পুরুষ তো সব সময়ই অস্ত্রহীন ও বুদ্ধিহীন, তাই এটাই সুযোগ’। আর কাঞ্চন হাত দিয়ে দেখতেন, তাঁর মাথায় লেপ্টে গেছে পাখির কূটনৈতিক হাগু। সঙ্গে অবশ্য বোনাস ছিল, সোহাগীর চোখের বিজয়িনী হাসি। আজ কত যুগ হয়ে গেল, সে বিজয়িনী চলে গেছে তাঁকে ছেড়ে।


বিয়ের এগারো বছর পরেই পাখিস্বভাবী সোহাগীর প্রাণপাখি ডানা ঝাপটিয়ে জন্মের মতো উড়াল দিল। ডানায় অত শক্তি ছিল না বলে রেখে গেল চারটে শাবক। কী আর করবেন কাঞ্চন; তিনি তো গাছস্বভাবী – বুকের ঘন ছায়া দিয়ে বড় করেছেন চারটে সন্তানকে।


আশ্চর্য! প্রকৃতির মতোই বিবর্তনের সূত্র মেনে এই শাবকদেরও পাখা গজিয়েছে তাঁর অজান্তে, তাঁরই শাখায় বসে; আর সময় মতো উড়েও গেছে লন্ডন, সিডনী, মেরিকায়। শুধু তাঁরই কোনোদিন পাখা হলো না। শেকড় ছেড়ে উড়তে পারলেন না। তবু মাঝে মাঝে ঊনআশি বছরের একজোড়া ছানিপড়া চোখ অমাবস্যা রাতে এরোপ্লেনের লাল আলোতে একটা কচি নাতনির পাখিমুখ খুঁজতে থাকে।

******* //অব্যয় অনিন্দ্য// ********

Likes Comments
০ Share

Comments (6)

  • - মিশু মিলন

    কবিতা ভাল লেগেছে অর্ঘ্য।

    শুভেচ্ছা.....

    - জাহাঙ্গীর আলম

    অসাধারণ ছব্দশিল্পের দৃশ্যপট ৷ নিরন্তর চলুক কবির তুলি ৷

    - আলমগীর সরকার লিটন

    কবিতা বেশ লাগল দাদা

    Load more comments...