১
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সকালে চায়ের টেবিলে দৈনিক পত্রিকায় চোখ রাখার আগেই ঘুরে আসেন ব্লগ গুলোতে-জনগণ তার সম্পর্কে কি মন্তব্য/সমালোচনা করছে আর নিজেকে সেভাবে শোধরানোর চেষ্টা করেন। সে সময় হয়তো বেশী দূরে নয় যখন আমাদের সরকার প্রধানরা কিছু বলার বা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে খোজ নিতে বাধ্য হবেন পাবলিক ফ্রিকোয়েন্সী। বছর পাঁচেক আগে যখন ব্লগিং শুরু করি এই দেশে একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারী আমলার কাছে নিজের পেশার পাশাপাশি ব্লগার পরিচয়টি তুলে ধরলে তিনি কিছুক্ষন আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকেন। ভাবটা এমন - এ আবার কোন প্রজাতি! ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ব্লগাররা নিজেদের যোগ্যতায় নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। আজ ফুটপাতের দোকানীর কাছেও ব্লগাররা পরিচিত। আজ দেশের সরকারের ও ব্লগারদের অবজ্ঞার সুযোগ নেই। ব্লগারদের দাবীর মুখে সরকার কাদের মোল্লার ফাঁসির ব্যপারে সংসদে আইন পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। ব্লগের গুরুত্ব বুঝতে পেরেই হয়তো ব্লগারদেরকে স্বপক্ষে এনে স্বার্থ হাসিলের প্রাণান্ত চেষ্টায় লিপ্ত। এই বিষয়ে ব্লগারদের একটু সচেতন থাকতে হবে। আজকের বিষয়টিই উল্যেখ করা যেতে পারে -ব্লগারদেরকে উস্কে দিয়ে দূতাবাস এলাকায় নিয়ে সরকার লাঠি পেটা করে চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছে। ব্লগারদের একটি বিষয় মনে রাখা উচিৎ, বাংলাদেশে পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও করাই প্রতিবাদের সঠিক ভাষা হতে পারে না। কূটনৈতিক পাড়ায় এমন সমাগমে অন্যান্য দেশের দূতাবাস নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলতেই পারে। ইতিমধ্যে মার্কিন দূতাবাস তাদের আশংকার কথা বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে। এভাবে দূতাবাস ঘেরাও করে খুব ভালো সুফল আসবে বলে আমি মনে করি না। বরং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আমি ব্লগারদেরকে উদ্দেশ্য করে এই জন্যই বলছি যে গণজাগরণ মঞ্চের জন্ম ব্লগারদের হাতেই। বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের এমন জাগরণ ইতিপূর্বে দেশবাসী দেখেনি। তাই শুরুতে কিছু ভুল ভ্রান্তি থাকতে পারে। অদক্ষ কোন সিদ্ধান্তে শক্তি অপচয় করা ঠিক হবে না। সামনে দেশ গড়ার অনেক কাজ বাকী পড়ে আছে।
২
আজকের পরিবর্তন সবার জানা- মোবাইল থেকে ইমেইল, ফেসবুক আর সিটিজেন জার্নলিজম-ব্লগ গুলোতে পৃথিবীর বাংলা ভাষা ভাষী মানুষের সাথে নিজের মনের কথা গুলো শেয়ার করার অপূর্ব সুযোগ। সব পরিবর্তনই ঘটলো আমাদের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মের চোখের সামনে। সেই হিসাবে আমাদের প্রজন্ম অনেক ভাগ্যবান। আজকের শিশুরা ডাক পিয়নের জন্য প্রাণের ব্যকুলতা নিয়ে কাগুজে স্পর্শের আবেগি অপেক্ষার স্বাদ বুঝবেনা কোনদিন। ওদের জীবন আমাদের আগের প্রজন্মের চাইতে এমনকি আমাদের চাইতেও অনেক বেশী গতিশীল হবে সন্ধেহনেই। কিন্তু পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে গেলো প্রিয় মানুষের কাল্পনিক হৃদয় স্পর্শের বেদনাদায় কমধুরতা! মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছে- “বন্ধু জানিনা তুমি কেমন আছো...... দিন গুলি কিভাবে কাটাও......” এই গানের স্বাদ। যদিও প্রায়ই একটা চিঠির অপেক্ষায় থাকতে মনটা খুব কাঁদে- চিঠি আসেনা... আসবেনা... বার বার ফিরে আসি ব্লগে বন্ধুর চিঠির আশায়। অনেকটা সেই প্রিয় মানুষের ছোঁয়া পাওয়ার মতোই। অনেক নতুন বন্ধু খুব চমৎকার লিখছেন। আমার ও প্রেরণা জাগে তাদের মতো ভালো লেখি- আঘাত করে আমার ভালো না লিখতে পারায়-অপারগতায়। অনেক কিছুই পড়ি- মন্তব্য কখনো করা হয় কখনো হয়না। ব্লগে সিরিয়াস লেখা খুব বেশী আশা করা যেমন ঠিক না, তেমনি একেবারে হালকা ভাবে নেয়ার বিষয় না। হয়তো এই ব্লগই একদিন প্রসব করবে আগামী দিনের তুখোড় কিছু লেখক। যাদের লেখনি কাঁপিয়ে দিবে অপশাসনের ভিত। আগামী প্রজন্ম হয়তো সংগঠিত হবে এই ব্লগের মতই সাইট গুলোর মাধ্যমে। নিয়ন্ত্রণ করবে রাজনীতি- পরিবর্তন করবে সরকার। ডিজিটাল দৈনিক পত্রিকার সাথে পাল্লা দিবে ব্লগ-কিংবা আরও ছাড়িয়ে যাবে। কাগুজে পত্রিকাও হয়তো উঠে যাবে একদিন। হয়তো এই সময়টা চলছে তারই রিহের্সাল।
তাই বন্ধুরা এখনই প্রস্তুত করি নিজেদেরকে। লেখায় উঠে আসুক সময়েরকথা- মানুষেরকথা, অন্যায়েরতীব্র-সৃষ্টিশীলপ্রতিবাদ, ভালোর আকুন্ঠ সমর্থন। আমাদের লেখা হোক অশালীনতামুক্ত-লেখা হোক সৃষ্টিশীল। বাংলা ব্লগ দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। ব্লগ হোক পরিবর্তনে রহাতিয়ার।
Comments (8)
বোধ ভালো লেগেছে ...
শুভেচ্ছা আপনার জন্য!
ভ্লোলেগেছে ল;এখাটি। ধন্যবাদ জানবেন। আশা করছি ভালো আছেন। শুভকামনা নিরন্তর
খুব সুন্দর লিখেছেন