Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মোজাম্মেল কবির

১০ বছর আগে লিখেছেন

জন্মের দেনাঃ (একটি নিরস প্রসঙ্গ)

সংগীত পাগল আমার এক বন্ধু যার সংগ্রহে এমন দুর্লভ গান আছে যে অনেকেই হয়তো শিল্পীর নামই শোনেন নি। এই মুহুর্তে তার দরকার মাষ্টার মদনের একটি গান। এই শিল্পী ১৯৪০ সালে দুটি গান গেয়ে মাত্র তের বছর বয়সে মারা যান। এই দুটি গানের জন্যই শিল্পী ভারতবর্ষে অমর হয়ে আছেন। দুটি দুর্লভ গানের একটি তার কাছে আছে অন্যটি দরকার। রাত তিন টায় ফোন দিয়ে যখন জানতে চায় গানটি পাওয়া গেছে কিনা। তার প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে আমি সাথে সাথে সার্চ দিয়ে বের করে জানাই -তার সংগ্রহে থাকা একটি সহ মাষ্টার মদনের আটটি গান পাওয়া গেছে। বন্ধুর মন খারাপ হয়ে গেলো। তার নাকি এই গান আর না হলেও চলবে। এত সহজেই পাওয়া গেলে তা আর দুর্লভ কোথায়। মাত্র দুটি গানের একটি দরকার ছিলো আটটি নয়। আমার কাছে মনে হয় বৈষয়িক ও ভোগ সম্পর্কিত ভালোবাসা মাষ্টার মদনের দুর্লভ গানের মতোই। দুর্লভ বস্তুটি হাতে আসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তীব্র আকর্ষন থাকে। তারপর ক্রমেই সূচক পতন ঘটতে থাকে। আমার বন্ধুর থিওরী বেশ মজার। সে কম্পিউটার কিংবা নেট ব্যবহার করে না। তার মতে জীবনে কিছু স্বাদ অপূর্ণ না থাকলে নাকি বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না। বেঁচে থাকার সাথে ভালবাসা এবং ভোগের নিবিড় সম্পর্ক জড়িত। তাই মানুষ শুধু বেঁচে থাকতে চায়। মরতে চায় না। ভালবাসা আর প্রাপ্তি যখন পানসে হয়ে যায় বেঁচে থাকার কোন মানে খুঁজে পাওয়া যায় না। না পাওয়ার কষ্ট থেকে একই অনুভূতি জাগে মনে। প্রসঙ্গ মৃত্যু...

ভালবাসা এবং মৃত্যু এই দুটি ঘটনা নাকি মানুষের মনে সহানুভূতির সৃষ্টি করে। প্রথমটি জীবনে যোগ আর দ্বিতীয়টি বিয়োগ। পরেরটি নিয়ে আমরা কেউ ভাবতে খুব বেশী আগ্রহী না। কেউ কেউ মৃত্যু শব্দটি শুনে বিরক্ত হন। অথচ জন্মের পর থেকেই মৃত্যু আমাদের পিছনে ঘুর ঘুর করছে। পৃথিবীতে বার বার ঘুরে ফিরে আসার সুযোগ নেই। ভোগের নেশায় সঠিক কাজটি করতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করি। জীবনটাকে সার্থক করতে একাদিক বার পৃথিবীতে আসার প্রয়োজন এবং সুযোগ নেই। এক জীবনেই জীবনকে স্বার্থক করা সম্ভব। যা অনেকেই প্রমান করে গেছেন।

ভালোবাসা নিয়ে লেখায় পাঠকের চোখ যেমন ছানাভরা হয়ে উঠে মৃত্যু নিয়ে লেখায় ঠিক বিপরিত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। একবার একটি ব্লগে এই বিষয় নিয়ে লিখে একটু বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিলো। এক জনের মন্তব্যের সার কথা এমন- এই লেখা নাকি মৃত্যু চিন্তার কারণ, তার মতে এমন চিন্তা ষাটের পরে আসা উচিৎ। আমি ভেবে পাইনি ষাট বছর পার করে এই চিন্তা করার জন্য পর্যাপ্ত সময় আমার নামে বরাদ্ধ আছে কিনা। শেষে না আবার জীবনের অর্ধেকটা না জেনেই চলে যেতে হয়। করণ জীবনের পুরোটা কখনোই মৃত্যুকে বাদ দিয়ে হতে পারেনা। ভোগ সম্পর্কিত ভালোবাসা লিমিটেড। কেউ কেউ আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন। এই মুহুর্তে সেই বিতর্কে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।

নিষ্ঠুর এতটাই:

আসার ষ্টাইল একই রকম হলেও যাওয়ার ষ্টাইল ভিন্ন ভিন্ন হয়। সানী সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে। বাবা রহমতের মনে আনন্দ বুক ভরা গর্ব। সারা রাত নাইট কোচে জার্নি করে ছেলেকে নিয়ে ভোরে সিলেট শহরে পৌছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য। জার্নি করে শরির বেশ ক্লান্ত। একটি হোটেলে উঠে কিছু সময় রেষ্ট নিতে। দুই তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে দশটার দিকে ডেকে তুলতে বলে ছেলেকে। ঘুমোতে যায় রহমত। এই ফাঁকে সানী শহরটা একটু হেটে দেখতে বের হয়। দশটার দিকে বাবাকে অনেক চেষ্টা করেও জাগাতে পারেনি। এক সময় বুঝতে পারে বাবা আর জাগবেনা। বাবা জাগেনি। ঘুমন্ত বাবার নিথর দেহ এম্বুলেন্সে করে বাড়ি ফিরে সানী।

স্বনিয়ন্ত্রিত নাকি কাকতালীয় !

জন্মের পর থেকে আমার বড় জ্যাঠির বিছানায় বড় হয়েছি। মাকে মা আর জ্যাঠিকে আম্মা ডাকতাম। জ্যাঠির বয়স তখন ৯৭-৯৮ বছর হবে। আমি ব্যবসায়িক কাজে ১৫-২০ দিনের জন্য মালয়েশিয়া গেছি। যাওয়ার দুই দিন পর ফোন পাই আম্মার অবস্তা খুব বেশী খারাপ। যে কোন মূহুর্তে চলে যেতে পারেন। ২০১২ সালের ডিসেম্বর। প্রতিদিন দুঃসংবাদের আশংকায় দিন কাটে। এভাবে টানা চব্বিশ দিন পার করে জানুয়ারীর নয় তারিখ দেশে ফিরে আম্মার বিছানায় মাথার কাছে বসি। তখন অবস্তা এমন যে বোধ শক্তি নেই। কোন তরল খাবার মুখে দিলেও ফেলে দেন। আমি এক চামিচ পানি মুখে দিয়ে বেশ কিছুক্ষন বসে থাকি। ক্লান্ত শরির নিয়ে বিছানায় যাওয়া মাত্রই খবর আসে আম্মা নেই।

আমাদের সবার জীবনে একটি অনিবার্য দিন। যে দিনের পর আগামী কাল বলে আরেকটি নতুন দিন আসবেনা।

মৃত্যুভয়:

গোটা পৃথিবীতে মানুষের মনে যত প্রকার ভয় আছে তার মধ্যে এক নাম্বার ভয় হচ্ছে মৃত্যু ভয়। আমরা ভোগবাদী সাধারণ মানুষ মহাজাগতিক নিয়মকে সহজে মেনে নিতে পারি না। আমরা অস্থায়ী জগতে ক্ষণস্থায়ী জীবন নিয়ে বস্তু গুলো পেতে চাই স্থায়ী ভাবে। অথচ মহা মানবদের জীবন দর্শন অনেকটা ভিন্ন। তাদের কাছে জীবন মানে নেয়া না, দেয়া। তাই দেয়ার মাঝেই জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে পান। আর মৃত্যুকে ভয় তো নয়ই বরং এর মাঝে জীবনের পরিপূর্ণতা খুঁজে পেয়েছেন কেউ কেউ।

মনের গভীরে মৃত্যু!

অধিকাংশ মানুষ মনে করে জীবন চলমান। মৃত্যুর পর একটি চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর বাহিরে আরেকটি নতুন জীবন শুরু হয়। সেখানে ভালো কাজের জন্য পুরস্কার আর অপকর্মের জন্য তিরস্কার বা শাস্তির ব্যবস্থা আছে। তাদের যুক্তি হলো -আত্মা থেকে অস্তিত্ব দান করে স্রষ্টা মাতৃগর্বে পাঠায় তারপর পৃথিবীর মাটিতে। পৃথবীতে একবার আগমনের পর যেমন  মাতৃগর্ভে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই ঠিক তেমনি মৃত্যুর পর যেখানে স্থানান্তর করা হয় সেখান থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার উপায় নেই। তাই মৃত মানুষের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয় না। এমন বিশ্বাসীদের জীবন খুবই সাদামাটা হয়। কারণ তারা মনে করে মৃত্যুর পরই আসল জীবন। আরেক দল মনে করে মৃত্যুর পর পরপার বলতে কিছু নেই। মানুষ মারাগেলে পচনশীল প্রক্রিয়ায় মাটির সাথে মিশে যাবে এই হলো জীবনের সমাপ্তি। তাদের মতে পৃথিবীতে যত বেশী ভোগ করা যায় ততটাই লাভ।

একটি মজার ব্যাতিক্রম ব্যপার দুই দল মানুষের মধ্যেই কাজ করে। উভয়ের মনেই নিজ নিজ বিশ্বাস নিয়ে সন্ধেহপ্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। বছর তিনেক আগে একবার জনৈক ব্যক্তির সাথে সারাটা দিন কাটনোর সুযোগ হয়। যিনি নাস্তিক হিসাবে পরিচিত। নাম বলতে চাইছি না আপনি চিনেন তাকে। রাতে এক সাথে ডিনারের আয়োজন ছিলো আমার এক বন্ধুর বাসায়। আমরা চার পাঁচ জন খাবার টেবিলে বসে আছি তার আপেক্ষায়। পাশের রুমে তাকে খুজতে গিয়ে জায়নামাজে এশার নামাজে দাড়ানো অবস্থায় আবিস্কার করি। তার সন্ধেহ মৃত্যুর পর যদি সত্যিই আবার জীবিত করে পাপ পুণ্যের হিসাব চাওয়া হয় তাহলে তো বিপদে পড়তে হবে...

আবার এমন ধার্মীক মানুষের সাথে সঙ্গ লাভের সুযোগ হয়েছে। যিনি হজ করেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। অথচ জীবন যাত্রা বলে, যা ভোগ করার পৃথিবীতেই করতে হবে। পরপারের সুখের আশায় নিজেকে বঞ্চিত করলে ঠকার সম্ভাবনা আছে। নাস্তিক মানুষটিকে মনে হয়েছে তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে তৈরী আছেন আর আস্তিক মানুষটি নিজের মৃত্যুর কথা শুনে চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন। আচরনে মনে হয় অমরত্ব নিয়ে জন্মেছেন।

জন্মের দেনাঃ

বন্ধুরা কেউ কেউ বলে আমার লেখায় এমনকি চিন্তার মধ্যেও নাকি কঠিন হিসাব নিকাশের ছাপ খুঁজে পাওয়া যায়। পড়াশোনা ব্যবসা নিয়ে। পেশায় ব্যবসায়িক চাকুরী তার পর ব্যবসা। এই কারণেই হয়তো সব কিছুতেই লেনদেনের গন্ধ আবিস্কার করি। মুদ্রাদোষ বলে মৃত্যুকেও ব্যবসায়িক একটা হিসাব নিকাশের ছকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা না করে শান্তি পাচ্ছি না। সে হিসাবে মৃত্যু মানে জন্মের দেনা। এই দেনা শোধ করতেই হবে। ঋণ খেলাপী হওয়ার সুযোগ নেই। ঋণ শোধের বিকল্প নেই...

Likes Comments
০ Share

Comments (6)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    বিষন্নমুখর রোমান্টিক কবিতা

    শুভ কামনা---

    - সুখেন্দু বিশ্বাস

    বিরহ কাব্য ভালো লাগল ভাই মাহাবুব।

     

    শুভকামনা সতত।   

    - মাসুম বাদল

    কবিতা ভালো লেগেছে,ভাই!

    শুভকামনা...

    Load more comments...