শুধুমাত্র “নারীর ক্ষমতায়ন” কথাটা বলে বলে চায়ের কাপে ধোঁয়া তুলে আর অসংখ্য সভা-সেমিনারে হাত-পা ছুড়ে চিৎকার করে গলা ফাটালে অদৌ কিছুই হবেনা। প্রথমে দেখতে হবে, “নারীর ক্ষমতায়ন” বিষয়ে একজন নারী নিজে কতটা সচেতন? ছোটবেলা থেকে একটি কথা শুনে শুনে মাথাটা ধরে গেছে, তা হল- পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারী চিরকাল অবহেলিতা আর নির্যাতিতা। একটি বার একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখা যাক, এই ধারাবাহিকতায় একজন পুরুষ আসলে কতটা দ্বায়ী?
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে (এখানে আমি শুধুমাত্র আমাদের দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশের কথা বলছি। এরমাঝে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমাজ ব্যবস্থার কথা ভেবে ভুল করবেন না।) আমাদের দেশের ৯৫ শতাংশ গর্ভবতী নারীই একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেবার কথা কল্পনা করে। এই ভাবনা তার মনে এমনিতেই যে জন্ম নেয় তা কিন্তু না। এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য সুনির্দিষ্ট কারণ। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের কর্তা অর্থাৎ একজন পুরুষ কিংবা একজন বাবা সারাক্ষণই ব্যাস্ত থাকে উপার্জনের মাধ্যম তথা চাকুরী, ব্যাবসা অথবা অন্য কোন পেশায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একজন নারী কিংবা মা সংসারের যাবতীয় রক্ষনাবেক্ষনের দিকে লক্ষ্য রাখে। এই মা তার গর্ভের দুটি সন্তান অর্থাৎ একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মাঝে ছেলেটির ব্যাপারে সর্বদাই একটু বেশি সহানুভূতিশীল হয়, মেয়েটির ব্যাপারে একটু সুক্ষ্ণ অবহেলা পরিলক্ষিত হয়। কারণটা খুবই সহজ, একজন মা জানে যে- তার মেয়েটি হল টেম্পোরারি বা ক্ষণস্থায়ী। কারণ বিয়ের পরই সে অন্য কোন সংসারে গিয়ে স্থায়ী হবে। অথচ তার ছেলেটি থেকে যাবে তার নিজের কাছে, যে তার বৃদ্ধ বয়সে তার দেখভাল করবে। অর্থাৎ সহজেই একটি বিষয় পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়, সমাজ তো অনেক বড় বিষয় কিন্তু একজন নারী প্রাথমিক অবহেলার শিকার হয় শৈশবে, পরিবার থেকে। তাও আবার কিনা তার মা অর্থাৎ অন্য একজন নারীর কাছ থেকেই। এখানে তাহলে পুরুষ শাসিত পরিবারের দোষটা কোথায়?
একটি বিষয় হয়তো অনেকেই পরিষ্কার ভাবে জানেন না, কিংবা অনেকেই আছেন যারা বিষয়টি জানা সত্ত্বেও অস্বীকার করেন। বিষয়টি সবার জ্ঞাতার্থে একটু সংক্ষেপে আলোচনা করছিঃ
প্রথমতঃ পৃথিবীতে স্বতন্ত্র একটি প্রানী হিসাবে জন্মগ্রহনের পর থেকেই একজন পুরুষ স্বাভাবিক ভাবেই একজন নারীর থেকে শারীরিক ভাবে শক্তিশালী, শক্ত-সমর্থ আর আকৃতিতে বড় হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে একজন নারী শারীরিক ভাবে নরম, কোমল আর নাজুক প্রকৃতির হয়ে থাকে, যেটা কার্যক্ষেত্রে তাদের উভয়ের আচরনে ব্যাপক ভাবে পরিলক্ষিত হয়। প্রকৃতিগত ভাবে একজন পুরুষের মাঝে থাকে হিংস্রতা, প্রতিযোগী মনোভাব আর সহজাত নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা। অপর দিকে একজন নারীর মাঝে থাকে মমত্ববোধ, ধৈর্য্য, সন্তান কিংবা অন্যদের প্রতি সেবামুলক মনোভাব আর সহানুভূতি। সুতরাং একে অপরের সাথে প্রতিযোগীতার দৌড়ে একজন নারী সব সময়ই একজন পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে থাকে।
দ্বিতীয়তঃ শারীরিক ক্ষমতার পর আসা যাক মানসিক ক্ষমতার বিষয়ে। পৃথিবীর বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে একটি বিষয় নিশ্চিত করেছেন যে, একজন পুরুষের মস্তিষ্ক স্বাভাবিক ভাবেই একজন নারীর চেয়ে আকৃতিতে বড় হয়ে থাকে। পুরুষের করোটি অর্থাৎ মাথার খুলিতে যে পরিমান নিউরোন এবং সিন্যাপ্স থাকে, নারীর খুলিতে তার চেয়ে কম পরিমানে থাকে। যার দৌলতে একজন পুরুষ সব সময় একজন নারীর চেয়ে বেশি চিন্তাশীল হয়ে থাকে। এছাড়া পুরুষের মাঝে থাকে আত্মত্যাগ বা ছাড় দেবার মানসিকতা, যা নারীর মাঝে সত্যিই অনুপস্থিত। পুরুষ হয়ে থাকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আর সাহসী, অপরদিকে নারীরা হয়ে থাকে ভীত-সন্ত্রস্ত আর হিংসুটে প্রকৃতির। অতএব, পুরুষ আর নারীর মাঝে এইসব ভেদাভেদ কিন্তু পুরুষ শাসিত সমাজ তৈরি করেনি। এই ভেদাভেদ যদি কেউ সৃষ্টি করেই থাকে তবে সে আর কেউ না, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর স্বয়ং। যিনি এই পৃথিবীতে অন্যান্য প্রানীর সাথে “হোমোস্যাপিয়েন্স” অর্থাৎ কিনা মানব সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছেন।
নারীর সৌন্দর্য্য চর্চাঃ
প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে আজকের এই আধুনিক সময় পর্যন্ত সমস্ত পৃথিবীব্যাপী একটি বিষয় প্রচলিত। তা হল নারীর সৌন্দর্য্য চর্চা। এটা কিন্তু এমনি এমনি আসেনি, নারীরা একটি বিষয় খুব ভাল ভাবে অনুধাবন করে যে, তারা শারীরিক ভাবে পুরুষের তুলনায় অসুন্দর। তাই তারা বরাবরই সৌন্দর্য্য চর্চা নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। এই প্রকৃতিতে এটা ব্যাপক ভাবেই প্রমানিত। আচ্ছা, আসুন- একটু প্রমান দিই। প্রথমেই বলি একটি রাজকীয় প্রানীর কথা। তার নাম সিংহ, সিংহের মুল সৌন্দর্য্য হল তার ঘাড়ের লম্বা কেশর। মজার বিষয় হল কেশর শুধুমাত্র পুরুষ সিংহের থাকে। সিংহীর ঘাড়ে কোন কেশর নেই। আচ্ছা, ময়ূর কেন সুন্দর? ময়ূর সুন্দর তার রঙ্গিন বর্ণিল পেখমের জন্যে। আর পেখম হয়ে থাকে শুধুই পুরুষ ময়ূরের, নারী ময়ূর বা যাকে বলে ময়ূরী তার কোন পেখম নেই। হরিণের সৌন্দর্য্য হল তার মাথার বিচিত্র আকৃতির সিং এর জন্য। মাথায় বিচিত্র আকৃতির সিং থাকে শুধু পুরুষ হরিণের। স্ত্রী হরিণ তথা হরিণীর মাথায় সিং ওঠেনা। এভাবে এক এক করে সকল প্রানীর দিকে খেয়াল করে দেখুন, তফাৎ সহজেই চোখে পড়বে। আর এই কারনেই পুরুষ কখনও সৌন্দর্য্য নিয়ে মাথা ঘামায় না। কারন সে জানে, সে এমনিতেই সুন্দর।
নারীর ব্যাপক ক্ষমতাঃ
এখানে কয়েকটি ইতিহাস বিখ্যাত ঘটনা তুলে ধরছি, যাতে নারীর ক্ষমতা ব্যাপক ভাবে প্রকাশ পায়।
(১) প্রাচীন মিশরীয় সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রার নির্বুদ্ধিতার জন্যে বিখ্যাত ফ্রেন্স জেনারেল মার্ক এ্যান্টনি মৃত্যু বরণ করেন, এই সম্রাজ্ঞীর কারণেই সম্রাট জুলিয়াস সিজার কয়েক বছর সুষ্ঠু ভাবে রাজ্য পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছিলেন।
(২) স্পার্টার কুইন হেলেনের জন্যে সৌন্দর্য্য মন্ডিত ট্রয় নগরী পুড়ে ছারখার হয়েছিল।
(৩) ব্রিটেনের রাজা পঞ্চম জর্জের ছেলে- রাজপুত্র এ্যাডওয়ার্ড একজন মার্কিন নারী “মিসেস সিম্পসন” এর প্রেমের কারনে রাজত্ব ত্যাগ করেছিলেন।
(৪) ব্রিটেনের কুইন ভিক্টোরিয়ার শাসনামলেই ব্রিটিশরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অধিকৃত সাম্রাজ্যগুলো হারায়।
(৫) ইসলামের ইতিহাসে ব্যাপক ভাবে আলোচিত ঘটনা ছিল- মহানবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর দৌহিত্র, খলিফা হযরত আলী (রাঃ) এর পুত্র অত্যন্ত উন্নত চরিত্রের অধিকারী ইমাম হাসান (রাঃ) তাঁর স্ত্রী জায়েদা কর্তৃক বিষ প্রদানে নিহত হয়েছিলেন।
অতএব, এত এত আলোচনার দ্বারা আমি কিন্তু নারীকে অপমান কিংবা ছোট করার চেষ্টা করছিনা। কারণ নারীদের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন বিরোধ নেই। এখানে যা কিছু লিখেছি, সবই প্রমানিত সত্য। তাই বলছি- এত বোকার মত চিৎকার, হৈ-চৈ করার কোন মানেই হয়না। তারচেয়ে যেটা সত্য, যেটা শাশ্বত, সেটা মেনে নেয়াই বরং বুদ্ধিমান কিংবা বুদ্ধিমতীর কাজ।
লিখেছেনঃ কৃষ্ণেন্দু দাস (বাপ্পী)
E-mail: captainbappy@gmail.com
Comments (1)
প্যারা করে লিখলে ভাল হত। ভোট