নানা বিষয়ে আমাদের দেশ বাংলাদেশ নিয়ে অনেকের হতাশা। প্রবাসী বাংলাদেশীরাও দু:খ করেন দেশের অবস্থা দেখে। তারপরেও আমরা আমাদের এ প্রিয় দেশ "বাংলাদেশ"কে অনেক ভালোবাসি। ভাবুন একবার, দেশের অসংখ্যা খারাপ বিষয় থাকতে পারে কিন্তু দেশটা কিন্তু আমাদেরই। আর এর পরিবর্তনের কাজটাও কিন্তু আমাদেরই করতে হবে। চাইলে অবশ্য আপনি এ বিষয়টি এড়িয়ে যেতেই পারেন! ভাবতে পারেন দেশের ক্ষতি হচ্ছে আমার কি? আবার বিষয়টি কিন্তু এমনও নয় যে আপনাকেই সব কাজ করতে হবে। আপনি আপনার কাজটি ঠিক ভাবে করুন, দেশ এমনিতেই বদলে যাবে। এমনই চিন্তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাত। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) দেশেকে এগিয়ে নিতে নিয়েছে "ওয়ান বাংলাদেশ" নামের বিশেষ উদ্যোগ।
লক্ষ্যটা কিন্তু দারুন। আগামী পাঁচ বছরে ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি, ১ মিলিয়ন পেশাদার তথ্যপ্রযুক্তি জনশক্তি তৈরী, প্রতিবছর এক কোটি মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহারের আওতায় আনা এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও আইটি খাত থেকে ১% অবদান রাখার লক্ষ্য নির্ধারন। বেসিস বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও আইটি শিল্পের পাঁচ বছরের রূপকল্প হিসেবে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় আনুষ্ঠানিক ভাবে এ কার্যক্রম চালু করে। কি হবে এ প্রকল্পে? মূলত সফটওয়্যার ও আইটি শিল্পের ‘ওয়ান বাংলাদেশ’ রূপকল্প অর্জনের মধ্য দিয়ে ২০২১ সালের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্প অর্জন এবং বাংলাদেশের ১০ কোটি তরুন- তরুনীরা কাজ করে দেশকে উচ্চ আয়ের দেশে পরিনত করাই এ কার্যক্রমের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।
নানা খাতের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিতেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সফটওয়্যার খাতে এগিয়ে যাওয়ার হারও বেড়েছে। বেসিসের তথ্য অনুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে সফটওয়্যার ও আইটিইএস রপ্তানি থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এখন দেশের শীর্ষ ১৫টির একটি বাংলাদেশ। ১৯৯৭ সাল থেকে যাত্রা শুরুর পর থেকে বর্তমানে বেসিসের ৭০০’র বেশি সদস্য নিয়ে কাজ করা বেসিস গণমূখী হয়ে সাধারণ মানুষকে আরো বেশি তথ্য-প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করতে চায়। তথ্যপ্রযুক্তিতে যে বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য দারুন জায়গা সে বিষয়টি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্র্যান্ডিং করছে বেসিস। আর এ উদ্যোগকে সামনে রেখে তাই বেসিস এবং সরকার যৌথ ভাবে ওয়ান বাংলাদেশ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে বেসিস নানা ধরনের কাজ করছে। বেসিসের উল্লেখযোগ্য নানা কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, স্থানীয় তথ্য-প্রযুক্তি ও তথ্য-প্রযুক্তি সেবাদানকারী কোম্পানীগুলোর জন্য বাজার সৃষ্টি করা, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি ও বিশ্বব্যাপী এ শিল্পের ব্যান্ডিং করা, সদস্য কোম্পানীগুলোর জন্য দক্ষতা উন্নয়ন ও আইটিকে শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে সদস্য কোম্পানীগুলোর মধ্যে ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন উদ্যোগ সমন্বয়, প্রশিক্ষণ প্রদান ও সম্পদের সমন্বয় করা ইত্যাদি।
সম্প্রতি এ ওয়ান বাংলাদেশের কাজটি শুরু করেছে সংগঠনটি। ওয়ান বাংলাদেশ কার্যক্রম নিয়ে রয়েছে দুটি ভিডিও। প্রথম ভিডিওটিতে (ওয়ান বাংলাদেশ) রয়েছে ওয়ান বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য নিয়ে বিস্তারিত। এছাড়াও রয়েছে আরো একটি ভিডিও। এতে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত রয়েছে। এতে যুক্ত আছেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিকের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং বেসিস সভাপতি শামীম আহস। ভিডিওটি দেখা যাবে ওয়ান বাংলাদেশ ঠিকানায়।
ওয়ান বাংলাদেশের অন্যতম কয়েকটি লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে- ২০১৮ সালের মধ্যে সফটওয়্যার ও বিপিও খাত থেকে এক বিলিয়ন ডলার আয় করা, সফটওয়্যার ও বিপিও প্রফেশনালস এক মিলিয়ন করা, এ খাত থেকে জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন এক শতাংশ যোগ করা এবং একটি লক্ষ্য একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন নিয়ে এগিয়ে চলা।
দেশকে তো সবাই ভালোবাসি। তাই নিজে নিজে ভাবি দেশের জন্য কি করা যায়? হোক না সেটা অল্প কিন্তু দেশের জন্য তো কাজটা। তাই সবাই নিজে নিজের কাজের পাশাপাশি দেশের জন্যই কিছু করার কথা মনে রাখুন। আর যে কাজটি আপনার নিজের সেটি ভালোভাবে করুন। দেশ এগিয়ে যাবে। আর বেসিসের এ স্বপ্ন পূরণ মানে দেশের উন্নয়ন। বেসিসকে এমন উদ্যোগের জন্য অভিনন্দন।