Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পথিকৃৎ মহান শহীদ আসাদুজ্জামানের ৪৫তম শাহাদাৎবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান। যিনি শহীদ আসাদ নামে সমাধিক পরিচিত। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের আইয়ুবশাহীর পতনের দাবীতে গণ-আন্দোলনে পথিকৃৎ পুলিশের গুলিতে নিহত তিন শহীদদের একজন শহীদ আসাদ; অন্য দু'জন হচ্ছেন শহীদ রুস্তম ও শহীদ মতিউর। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি, দুপুরে ছাত্রদেরকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পার্শ্বে চাঁন খাঁ'র পুল এলাকায় মিছিল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান। পুলিশ তাদেরকে চাঁন খাঁ'র ব্রীজে বাঁধা দেয় ও চলে যেতে বলে। কিন্তু বিক্ষোভকারী ছাত্ররা সেখানে প্রায় এক ঘন্টা অবস্থান নেয় এবং আসাদ ও তার সহযোগীরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। ঐ অবস্থায় খুব কাছ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে এক পুলিশ অফিসার গুলিবর্ষণ করে। তৎক্ষণাৎ গুরুতর আহত অবস্থায় আসাদকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আজ শহীদ আসাদের ৪৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে তাঁর জন্য আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

শহীদ আসাদ ১৯৪২ সালের ১০ই জুন, নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ধানুয়া গ্রামের হাতিরাদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ আসাদ এর পুরো নাম আমানউল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। বাবা আলহাজ মাঃ মোহাম্মদ আবু তাহের বি এ বি টি এবং মাতা মতি জাহান খাদিজা খাতুন। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আসাদ ছিলেন চতুর্থ। আসাদের পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর পাঠশালা ও প্রাইমারী। শৈশবকাল থেকে আসাদ পড়াশুনায় মনোযোগী ছিলেন। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি খেলাধুলা, কবিতা আবৃতি, মাছধরা ও বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়া বেশ পছন্দ করতেন। প্রাইমারী পড়াশুনা শেষে ১৯৫৪ সালে তাঁর বাবা মাঃ মোহাম্মদ আবু তাহের তাঁকে শিবপুর হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। শিবপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৬১ সালে তিনি মেট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন। মেট্রিক পাশের স্বীকৃতি অর্জন করার পর ওই বছর তিনি সিলেটের এম সি কলেজে আই এ ভর্তি হন। কলেজ জীবনে তিনি পড়াশুনার পাশাপাশি কলেজের যাবতীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হতে থাকেন। এ সময় তিনি তৎকালীন ঐতিহ্যবাহী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠন পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন। এই কলেজে পড়াশুনাকালীন সময়ে তিনি ১৯৬২ সালের মহান শিক্ষা আন্দোলনের সাথে তিনি যুক্ত হন। ১৯৬৩ সালে তিনি ওই কলেজ থেকে আই এ পাশ করেন।

আই এ পাশ ওই বছর আসাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে সার্বক্ষণিকভাবে রাজনীতি শুরু করেন। তূখোড় মেধাবী এই তরুণ সমাজ বদলের স্বপ্ন বুকে ধারণ করে ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি ন্যাপে কাজ শুরু করেন। এ সময় পড়াশুনা, ছাত্র আন্দোলন আর মেহনতি মানুষের মুক্তির রাজনীতি ছাড়া তাঁর কাছে অন্য কোনো কিছুর মূল্য ছিলো না। অল্পদিনের মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা ও কাজের আন্তরিকতার কারণে তিনি রাজনৈতিক মহলে বেশ পরিচিতি অর্জন করেন। যার ফলে তিনি পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন ঢাকা হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিভাগে এম এ ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে এম এ ডিগ্রী অর্জন করার পর তিনি ওই বছর সিটি ল’কলেজে আইনে ভর্তি হন। এম এ পাশ করার কিছু দিন পর তিনি মাওলানা ভাসানীর নির্দেশে মেহনতি মানুষকে সংগঠিত করার জন্য নিজ গ্রামে চলে যান। নিজের ভবষ্যতের কথা, পরিবারে কথা না ভেবে কৃষক-শ্রমিক-ক্ষেতমজুর-শ্রমজীবী-পেশাজীবীর শোষণমুক্তির সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেন। এক বছরের মধ্যে শিবপুর, মনহরদী, রায়পুরা, নরসিংদীতে শক্তিশালী কৃষক সমতি গড়ে তোলেন।

১৯৬৮ সালের মাঝামাঝি ন্যাপের নির্দেশে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৬৮ সালে আরো ভালো ফলাফলের জন্যে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের জন্য চেষ্টা করছিলেন। পড়া লেখার পাশা পাশি এখানে তিনি স্বৈরাচারী আইয়ুব শাসন বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে ছাত্র-যুব-শ্রমজীবীকে সংগঠিত করেন।শহীদ আসাদ তৎকালীন ঢাকা হল (বতর্মান শহীদুল্লাহ হল) শাখার পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে এবং পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (ইপসু-মেনন গ্রুপ), ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত প্রাণ আসাদুজ্জামান গরীব ও অসহায় ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার বিষয়ে সর্বদাই সজাগ ছিলেন। তিনি শিবপুর নৈশ বিদ্যালয় নামে একটি নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং শিবপুর কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদেরকে সাথে নিয়ে আর্থিক তহবিল গড়ে তোলেন। স্বৈরাচারী আইয়ুব শাসন বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের সচেতন করে তুলতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মাওলানা ভাসানী পূর্ববাংলায় হরতাল ঘোষণা করেন। এই হরতাল সফল করার জন্য আসাদ শিবপুর, মনহরদী, রায়পুরা, নরসিংদীতে হাজার হাজার কৃষক-শ্রমিক-ক্ষেতমজুর-শ্রমজীবীকে নিয়ে সফলভাবে হরতাল পালন করেন। ওই এলাকায় হরতাল পালনের সময় কৃষকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এতে ওই এলাকার ৩ জন কৃষক নিহত হয়। আহত হন আসাদ। আহত আবস্থায় আসাদ ঢাকা এসে পত্রিকা অফিসে উক্ত ঘটনার বিবরণ দেন, যা পরের দিন পত্রিকায় ছাপা হয়।

এরপর তিনি ১৯৬৯ সালের সেই সংগ্রামময় উত্তাল দিনগুলিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় স্বৈরাচারী আইয়ুব শাসন বিরোধী জনমত গড়ে তুলতে থাকেন। জানুয়ারী মাসের প্রতিটি দিনই কেটেছে তাঁর লড়াই-সংগ্রাম আর আন্দোলনে। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি স্বৈরাচারী আইয়ুব শাসন বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে আসদ শহীদ হন। মৃত্যুকালীন সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এম.এ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। হাজারো ছাত্র-জনতা আসাদের মৃত্যুতে একত্রিত হয়ে পুণরায় মিছিল বের করে এবং শহীদ মিনারের পাদদেশে জমায়েত হয়। কেন্দ্রীয় প্রতিরোধ কমিটি তাকে শ্রদ্ধা জানাতে ২২, ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি সারাদেশে ধর্মঘট আহ্বান করে। ধর্মঘটের শেষ দিনে পুলিশ পুণরায় গুলিবর্ষণ করে। ফলশ্রুতিস্বরূপ আসাদের মৃত্যুতে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সরকার দু'মাসের জন্য ১৪৪-ধারা আইনপ্রয়োগ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। গণঅভ্যুত্থানের মহান জাগরণ এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য এক উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে এবং ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

কোন কোন মৃত্যু ইতিহাস হয়ে যায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে জনস্রোতের উদ্বেল জোয়ার আনে। আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদ, যিনি আসাদ নামেই সর্বাধিক পরিচিত, তাঁর মৃত্যু এমনি এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল ৬৯’-এর গণ-অভ্যুত্থানে। আসাদ এবং ৬৯’-এর গণ-অভ্যুত্থান এক অখন্ড সত্বা। '৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পথিকৃৎ মহান শহীদ আসাদুজ্জামানের ৪৫তম শাহাদাৎবার্ষিকী আজ। আইয়ুবী সামরিক স্বৈরশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে অকুতোভয় এ বীর সেনানীর শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

০ Likes ৭ Comments ০ Share ৯৫১ Views

Comments (7)

  • - চারু মান্নান

     pore chilam age,,,,,,,,,,কবি,

    মাঘের মৌনতা ভাঙে,পানকৌড়ির ডুবসাঁতারে!

    মাঘের মৌনতা ভাঙে,পানকৌড়ির ডুবসাঁতারে!

    • - আল ইমরান

      হুম। শুভকামনা রইল।

    - সকাল রয়

    ভালো লাগিল

    • - আল ইমরান

      ধন্যবাদ। 

    - ইকবাল মাহমুদ ইকু

    ভালো লাগলো 

    • - আল ইমরান

      ধন্যবাদ।

    Load more comments...