Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

হোসেইনী ব্রাহ্মণ

ভারতের একদল হিন্দু ব্রাহ্মণ শিয়া মুসলমানদের মত ইমাম হোসেনের স্মরণে মহররম পালন করে। তাদের দাবি তারা হোসেইনী ব্রাহ্মণ বংশের উত্তরাধিকারী। মহররম মাসের দশ তারিখে সারা পৃথিবীতে শিয়া মুসলমানরা প্রায় ১৩২৮ বছর গত হয়ে যাওয়া ইতিহাসের কথা স্মরণ করে সারা দিন অতিবাহিত করে- তারা ধর্মযুদ্ধে শহীদ হওয়া ইমাম হোসেনের জন্য বিলাপ করে। শিয়াদের মতই হোসেইনী ব্রাহ্মণ বংশের বংশধররা এই দিন ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে পালন করে। 

২০০৮ সালে তারা নতুন করে তাদের শতশত বছর পুরনো ঐতিহ্যকে পুনর্জীবিত করলো যা তাদের পূর্বপুরুষরা করতেন। খালি পায়ে তারাইয়া হোসেনবলে শোভাযাত্রা করে এগিয়ে চলে- বিলাপের সুরে নিজেদের বুকে আঘাত করে। এই ব্রাহ্মণদেরকে ভূমিহার ব্রাহ্মণ নামেও ডাকা হয়; আবার এদের অনেকে মহিয়াল ব্রাহ্মণ বংশেরও বংশধর। তবে এ ব্যাপারে খুঁজ নিয়ে দেখা যায় যে সব ভূমিহার বা মহিয়াল হোসেইনী ব্রাহ্মণ নয়। ভূমিহার বা মহিয়ালেরা ব্রাহ্মণ হলেও জীবন-জীবিকা এবং পরিবেশের কারণে বিভিন্ন পেশা গ্রহন করে। তাদের অনেকেই যোদ্ধা বা সৈনিক হিসেবে কর্মরত হয়। 

মহররমের শোভাযাত্রায় তারা একটি ব্যানারও বহন করেছিল। ভূমিহার ব্রাহ্মণ মহাসভার আহবায়ক অরুণ কুমার শর্মা বলেন- আমাদের পূর্বপুরুষও ইমাম হোসেনের সমর্থনে যুদ্ধ করেছিলেন এবং কারবালায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ইতিহাসের এই আত্মবলিতে আমরাও সমব্যতিত।

বিভিন্ন বইয়ের রেফারেন্স ও রেকর্ড অনুসারে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে হিন্দুরাও কারবালা যুদ্ধে হযরত মুহাম্মদের দৌহিত্র ইমাম হোসেনের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল- ৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর তারিখে ইমাম হোসেন যখন ইয়েজিদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত এক যুদ্ধে অবতীর্ণ হোন। হিন্দুদের মধ্যে এই সম্প্রদায় যাদেরকে পরবর্তিতে হোসেইনী ব্রাহ্মণ নামে নামকরণ করা হয়, তারা ফোরাত নদীর তীরে বসতি গড়েছিল। পরবর্তীতে তারা ভারত ফিরে আসে। তাদের অনেকেই নামের সাথে বিভিন্ন পদবী যুক্ত করে, যেমনঃ দত্ত, মহিয়াল, ত্যাগি ইত্যাদি। তাদের ঐতিহ্যগত পালিত লোকাচারে মূল প্রথাবিরোধী হিন্দু ও ইসলামের মিশ্রণ ছিল। 

এই শতাব্দীর সাম্প্রতিক ইতিহাসে প্রথবারের মত হিন্দুদের এই দল মহররমের সাথে তাদের সম্পর্কের দাবি করলো। প্রয়াত সুনিল দত্ত যিনি হোসেইনী ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের (মহিয়াল সম্প্রদায়েরও বলা হয়), মহররমের শোভা যাত্রায় অংশগ্রহন করতেন। কেন এই অনুষ্ঠান পালন থেকে এতদিন বিরত থাকা হয়েছিল- এই প্রশ্নের জবাবে একজন আইনজীবি জনাব শর্মা বলেন-আমরা বলতে পারি যে পিতা এবং প্রপিতামহদের ভুল ছিল যে তারা আমাদেরকে এই সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসি ঐতিহ্যের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে শিক্ষা দেননি।

শিয়াদের সাথে মহররমের শোভাযাত্রার অগ্রভাগে শিকলের সাথে বাঁধা ছোট তরবারির ফলক, ক্ষুর ও ছুরিতে নিজের শরীরে আঘাত করে উপেন্দ্র প্রসাদ শাহী বলেন- কারবালার যুদ্ধ ছিল মানবতা ও বিশ্বাসকে রক্ষা করতে। আমরা গর্বিত যে আমাদের পূর্বপুরুষও জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

মুখে মুখে প্রচলিত কাহিনী অনুসারে রাহাব সিধ দত্ত ইমাম হোসেনের পক্ষে কারবালা প্রান্তরে যুদ্ধ করেন এবং এভাবে নিজের সাত পুত্রকে উৎসর্গ করেন সেই যুদ্ধে। রাহাব ছিলেন একটি ক্ষুদ্র সৈন্যদলের দলনেতা যারা সেই সময় বাগদাদের নিকটে বসবাস করতেন। মুন্সি প্রেম চাঁদ তাঁর কারবালাউপন্যাসে ইমাম হোসেনের পক্ষে যুদ্ধ করা হিন্দুদের কথা উল্লেখ করেন এবং এদেরকে অশ্বথামার (মহাভারতের কৌরব ও পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র) বংশধর হিসেবে অভিহিত করেন।

হোসেইনী ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় বর্তমানে দ্রুতবিলুপ্তমান একটি সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের বর্তমান প্রজন্ম তাদের বংশানুক্রমিক ঐতিহ্য ত্যাগ করছে; অনেকের কাছে এসব অস্বাভাবিকও লাগছে। এ ব্যাপারে জনাব শর্মা বলেন যে- এই ঐতিহ্য নিয়ে আমাদের গর্বিত হওয়াই শ্রেয়; তিনি নিজ সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে একতাবদ্ধ করতে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জনাব শর্মা দাবি করেন যে- এদেশে ইসলাম আগমনের পূর্বেও আরবদের সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্ক ছিল
_________________________________________
সত্যিই অনেক ইতিহাসই আমাদের কাছে অজানা। যখন তা সামনে আসে- আশ্চর্যই লাগে।

রেফারেন্সঃ দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি ফয়জান আহমদ মুজাফফরপুর(উত্তর বিহারের একটি শহর) থেকে একটি রিপোর্ট দেন। ইন্টারনেট ভার্সন অনুসারে রিপোর্টটি ২১ শে জানুয়ারী ২০০৮ এ লেখা। 

০ Likes ২ Comments ০ Share ৬৮৩ Views