Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজীব নূর খান

৮ বছর আগে

হঠাৎ ভয়

রাত এক টা। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি।কিচ্ছু ভালো লাগছে না । বারবার হিমির কথা মনে পড়ছে । কতদিন হয়ে গেল তার সাথে দেখা হয় না, কথা হয় না । সময় কত দ্রুত চলে যায়! হিমিকে প্রশ্ন করেছিলাম- আচ্ছা, বলত ভালোবাসা কি ? হিমি বলেছিল- এই যে তোমাকে ভালো লাগে, তোমার হাত ধরে বসে থাকতে ইচ্ছা করে, তোমাকে আদর করতে ইচ্ছা করে, তোমাকে রান্না করে খাওয়াতে ইচ্ছা করে এটাই হচ্ছে ভালোবাসা ।আমি বলেছিলাম- এই ভালোবাসাটা কি চিরদিন থাকবে? তখন হিমি আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে ছিল। মোবাইলটা হাতে ভাবছি হিমিকে একটা ফোন দিবো কিনা ! কেমন একটা দ্বিধা, একটা সংশয় মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় । হয়তো মনের মধ্যে এক আকাশ অপরাধ জন্মেছে ।একটা কবিতার বই হাতে নিলাম- আজ সারারাত কবিতা পড়ে কাটাবো । "সে চুম্বন, আলিঙ্গন, প্রেম-সম্ভাষণ,/ অতৃপ্ত হৃদয় মূলে/ ভীষণ ঝটিকা তুলে,/ উন্মত্ততা, মাদকতা ভরা অনুক্ষণ,/ মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন" ।

ইচ্ছা করছে কাউকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনাই।এত রাতে কাকে শোনাবো কবিতা ?কেউ নেই । কোথাও কেউ নেই ।একা আমি খুব একা । চা খেতে ইচ্ছা করছে খুব ।পরের কবিতা আবৃত্তি করলাম। এটা আমার মুখস্ত । এক সময় আমার অনেক কবিতা মুখস্ত ছিল। "কষ্ট দিয়ে কষ্ট দিয়ে রান্না কাজ ঘরমোছার পাকে/ আমি বেঁধে রেখে দিই আমার ঐ দু:খী মহিলাকে/ তাকে ছেড়ে চলে যাবো? জায়গা নেই আমার যাবার/ এ বয়সে সব ছেড়ে সে-ই বা কোথায় যাবে আর?"। হঠাৎ করে আমার খুব ভয় লাগছে । মনে হচ্ছে আমার আশে পাশে কেউ আছে । আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি না । কিন্তু তার নিঃশ্বাসের শব্দও পাচ্ছি । হয়তো সে এখন তার অদৃশ্য হাত দিয়ে আমার গলা টিপে ধরবে ।অথবা আমাকে মেরে টুকরো টুকরো করে তূরাগ নদীতে ফেলে দিবে ।ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে ।খুব ভয় লাগছে । মনে হলো, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।এখনই এসে আমাকে ধরবে ।আমি কোথায় যাবো? কাকে ডাকব ?

ঢং ঢং করে ঘড়ি বেজে উঠল- রাত তিনটা । আমি বিছানায় শুয়ে আছি ।কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম- জানি না । একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নে দেখি- নুহাশ পল্লীতে হুমায়ুন আহমেদ আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব গল্প করছেন । আমি তাদের পাশে গিয়ে বসলাম ।রবীন্দ্রনাথ আমাকে বললেন- চা খাও। আমি চায়ে চুমুক দিয়ে দেখি চিনি ছাড়া চা । আমি বললাম চিনি ছাড়া চা আমি খাই না । হুমায়ুন আহমেদ বললেন- এখন চিনি কোথায় পাবো ? আমি বললাম, তাহলে এক চিমটি লবন কি পাওয়া যাবে ?হুমায়ুন আহমেদ লবনের বদলে চিনিই ব্যবস্থা করে দিলেন । আমাদের তিন জনের চা শেষ হওয়ার রবীন্দ্রনাথ বললেন-আমরা তিনজন মিলে একটা করে প্রেমের গল্প লিখব ।সময় এক ঘন্টা । হুমায়ুন তুমি লিখবে রুপাকে নিয়ে, আমি লিখব লাবণ্য কে নিয়ে আর রাজীব নূর তুমি লিখবে হিমিকে নিয়ে । আমি বললাম স্যার আমি পারব না । রবীন্দ্রনাথ বললেন, তুমি পারবে- আমি হিমিকে নিয়ে তোমার কিছু লেখা পড়েছি । ভালো লিখেছো । একজন প্রকাশক এসে আমাদের তিন জনের হাতে সাদা কাগজ আর কলম ধরিয়ে দিল ।আমার মনে হচ্ছে- বিশাল সমুদ্রের মাঝে ডুবে যাচ্ছি।

আমি জানি, স্বপ্ন মানুষের একটি মানসিক অবস্থা, যাতে মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় বিভিন্ন কাল্পনিক ঘটনা অবচেতনভাবে অনুভব করে থাকে। ঘটনাগুলি কাল্পনিক হলেও স্বপ্ন দেখার সময় আসল বলে মনে হয়। অধিকাংশ সময়ই দ্রষ্টা নিজে সেই ঘটনায় অংশগ্রহণ করছে বলে মনে করতে থাকে। অনেক সময়ই পুরনো অভিজ্ঞতার টুকরো টুকরো স্মৃতি কল্পনায় বিভিন্ন ভাবে জুড়ে ও পরিবর্তিত হয়ে সম্ভব অসম্ভব সব ঘটনার রূপ নেয়। স্বপ্ন সম্বন্ধে অনেক দর্শন, বিজ্ঞান, কাহিনী ইত্যাদি আছে। হঠাৎ আমার খুব গান শুনতে ইচ্ছা করছে- এই গান টা, "ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি সোনার চাইতে খাটি নগদ রক্ত দিয়ে কেনা/ শত্রু বা হানাদার একটি কনাও তার কেড়ে নিতে কেউ পারবে না।/ ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি সোনার চাইতে খাটি নগদ রক্ত দিয়ে কেনা,/ কসম সেই খোদার একটি কনাও তার কেড়ে নিতে কেউ পারবে না।/ রঙ্গের তুলিতে আঁকা সবুজের ছায়া ঢাকা সুজলা সুফলা পরিপাটি/ লক্ষ শহীদ গাজী রেখেছে জীবন বাজী করেছে স্বাধীন এই মাটি।"

আকাশ ফরসা হতে শুরু করেছে । আমি ব্যালকনিতে এসে দাড়িয়েছি । ভোরের আকাশ দেখা দারুন একটা ব্যাপার । এর মধ্যে একটা কাক আমার ব্যালকনির সামনে দিয়ে উটে গেল । কাক কে দেখে একটা ঈশপের গল্প মনে পড়ল। গল্পটা এই রকম- এক শিয়াল দেখল যে এক কাক মুখে মাংস নিয়ে গাছের ডালে উঠে বসলো। সে ভাবল মাংসটা তার পেতেই হবে। সে গাছের নিচে গিয়ে কাককে ডেকে বলল “শুভ সকাল কাক মাদাম। আপনাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে। আপনার পালকগুলো অনেক সুন্দর। আপনার গলার আওয়াজও নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর হবে। আমাকে একটা গান শুনান। আমি বাধিত হব তাহলে। আপনাকে আমি তাহলে পাখির রানী বলতে পারবো”। কাক যেই ক্যা ক্যা শুরু করলো। তার মুখ থেকে মাংস পড়ে গেলো। আর শিয়াল সেই মাংস নিয়ে দৌড় দিলো। এই গল্পের মরাল টা আপনাদের জ্ঞান দিয়ে বুঝে নিবেন ।

আমার গল্প এখানেই শেষ । আপনারা ভালো থাকবেন । একটা পরামর্শ, বিদ্যুৎ অপচয় করবেন না এবং রান্না শেষে চুলা বন্ধ করে দেবেন ।
০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৪৮ Views