Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজু আহমেদ

১০ বছর আগে

সড়ক দূর্ঘটনা, লাশের স্তুপ অথচ..........

 

 

 মৃত্যু সর্বযুগে, সর্বকালে, সর্বস্থানে সব পরিবেশের জন্যই বেদনা বিদিত সে মৃত্যুটি যদি সড়ক দূর্ঘটনায় হয় তাহলে তো বেদনার সীমা থাকে না স্রষ্টার বা প্রাকৃতিক কারনে যে সকল মৃত্যু হয় সেগুলো রোধে মানুষের করণীয় কিছু না থাকলেও অস্বাভাবিক মৃত্যু যেমন মেনে নেওয়া যায় না তেমনি এড়ানো যায় একটু সচেতনা এবং সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমেই হাজার হাজার  অপমৃত্যু থেকে আমাদের দেশের মানুষ রক্ষা পেতে পারে   প্রতি দিনের খবরের কাগজের পাতা উল্টালে কিংবা টেলিভিশনের চ্যানেল পাল্টালে মৃত্যের সংখ্যা গণনা কিংবা অপমৃত্যের স্বজনদের আহাজারি হররোজকার ব্যাপার মৃত্যুকে মানুষ ভয় করে স্বভাবসূলভভাবেই মৃত্যুকে এড়াতে চায় যে সকল প্রকার মৃত্যু এড়ানো যায় তার মধ্যে সড়ক দূর্ঘটনা কবলিত হয়ে মৃত্যুবরণ বা পঙ্গুতবরণকে খুব সহজে এড়ানো যায় আমাদের দেশের অতীতের দূর্ঘটনাগুলো যে সকল কারনে ঘটেছে সেগুলো পর্যালোচনা করে এবং ভবিষ্যতে এ কারনগুলো এড়িয়ে চললে দূর্ঘটনার মাত্রা প্রায় শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব

 

 

 

প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজ উল্টালে এত সংখ্যক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যের খবার পড়তে হয় যেটা প্রযুক্তির যুগে মেনে নেয়া আসলেই কষ্টকর সড়ক দূর্ঘটনার খবর এমন সহজলভ্য হয়ে গেছে যাতে কোন মৃত্যু বা লাশ আমাদের দুঃখ ভারাক্রান্ত করে না কিংবা কষ্ট দেয় না কেবল যাদের আত্মীয় স্বজন সড়ক দূর্ঘটনায় আহত কিংবা নিহত হন তারাই এর মর্ম উপলব্ধি করতে পারে আমাদের বিপদ আমরাই ডেকে আনি ২০১০ সালের ৮ই জুলাই তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছিল বাংলাদেশে ৪,৫০,০০০ গাড়ী চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ভূয়া গাড়ীর চালকেরা সে সকল প্রতিষ্ঠান থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পান সে সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও গাড়ীতে চলেন   কিছু টাকার লোভে তারা অপরের জীবনকে যেমন হুমকির মূখে পতিত করেন তেমনি নিজেদের জীবনকেও হুমকির মূখে ফেলেন যে জাতির কাছে জীবনের চেয়ে টাকার মূল্য বেশি সে জাতি যত পরিশ্রম করুক এবং যত মেধাবীই হোক বিশ্ব সভ্যতায় সভ্য এবং বুদ্ধিমান জাতি হিসেবে নাম লেখাতে পারবে না

 

 

 

বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১.৩ মিলিয়ন মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে এবং ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন মানুষ মারাত্মকভাবে পঙ্গুত্ববরণ করে   আয়তনে বিশ্বের ৯৩ তম অবস্থানে বাংলাদেশের অবস্থান থাকলেও সড়ক দূর্ঘটনার ক্ষেত্রে  প্রথম দশ দেশের মধ্যে অবস্থান করছে (অষ্টম স্থানে)   বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১২ জন মানুষ অর্থ্যাৎ প্রতিমাসে ৩৬০ জন, বছরে ৪৩২০  জন মানুষ মারা যায় অতি সম্প্রতি এ সংখ্যাটি আরও বেড়েছে   বিভিন্ন সংস্থা এবং সংগঠন জোর-তৎপড়তা চালিয়েও দূর্ঘটনা নিয়ন্ত্রনে তো আনতে পারছেই না বরং তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়ক দূর্ঘটনার মাত্রা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পথচারীসহ নানা স্তরের অসংখ্য মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় পতিত হযে মারা যাছে পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিটির এরকম অপমৃত্যুর কারনে অনেক পরিবারকে পথে বসতে হচ্ছে আবার অনেক পরিবার আহতের চিকিৎসা ব্যয় এবং পঙ্গুত্বের বোঝা বইতে বইতে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হচ্ছে   সড়ক দূর্ঘটনা কবলিত হয়ে যারা মৃত্যুবরণ করে তারা একপ্রকার বেঁচে গেলেও যারা বেঁচে থেকে পঙ্গুত্ব বরণ করে তাদের আহাজারিতে এবং স্বজনদের দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে প্রতিবছর সড়ক দূর্ঘটনার কারনে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে যা তৃতীয় বিশ্বের একটা উন্নয়ণশীল দেশকে বারবার পিছনে ঠেরে দিচ্ছে সড়ক দূর্ঘটনা পিছনে যেমন প্রশাসনিক দুর্নীতি কাজ করে তেমনি মানুষের অসচেতনাতও বহুলাংশে দায়ী মানুষ এমন ভাবে হুশ হারিয়ে জীবনের মূল্যকে তুচ্ছ করে ছুটছে যাতে কখন কোন দূর্ঘটনা ঘটে তার প্রতি আদৌ কোন ভ্রক্ষেপ নাই

 

 

 

কিছু টাকা বা কোন এমপি মন্ত্রীর সুপারিশে দেশের এমন কিছু মানুষ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্ত হচ্ছেন যাদের গাড়ী চালনা সম্পর্কে নূন্যতম যতটুকু জ্ঞান আবশ্যক তাও তাদের নাই কিছুদিন আগে একটি দূর্ঘটনার পর ড্রাইভারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তিনি ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কেই অবগত নন তিনিই একমাত্র ড্রাইভার নন যিনি ড্রাইভিং সম্পর্কে এমন অজ্ঞ বাংলাদেশে তার মত এমন হাজার হাজার ড্রাইভার আছে যারা বিভিন্ন দুর্নীতি কিংবা স্বজনপ্রীতীর মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন এদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া আর হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দেয়ার মধ্যে খুব বেশি তফাৎ নাই বাংলাদেশে যে সকল কারনে সড়ক দূর্ঘটনা হয় সেগুলের মধ্যে কিছু কারন আছে একেবারে সাধারন অথচ এই সাধারণ কারনগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ না করার কারণে সিংহভাগ দূর্ঘটনা হয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা বিশিষ্ট জনের মতামতে জানাগেছে এরকম কয়েকটি দূর্ঘটনার কারন

 

           *    চালকের দক্ষতার অভাব,

 

    *     যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি,

 

    *     জনসাধারণের ও চালকের ট্রাফিক আইন না মানা,

 

    *     রাস্তাঘাটের পর্যাপ্ত পরিচর্যার অভাব,

 

    *     চালকের গতিসীমা না মানা,

 

    *     যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং করা,

 

    *     জনসাধারণের যত্রতন্ত্র রাস্তা পার হওয়া এবং ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করা,

 

    *     অপরিকল্পিত নগরায়ণ,

 

    *     ডেসা, ওয়াসা, টেলিফোন লাইন স্থাপন,

 

    *     অপর্যাপ্ত, অপরিকল্পিত ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মান এবং

 

    *     রাস্তায় ডিভাইডারের অভাব

 

 

 

আইনে প্রয়োগের দূর্বলতা, আইনের অপব্যবহার এবং দোষীদের পূর্ণ শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে সড়ক দূর্ঘটনা লাগামহীনভাবে বাড়তেই থাকবে সড়ক দূর্ঘটনা রোধকল্পে বাংলাদেশের বিভিন্নমেয়াদের সরকার বিভিন্ন আইন প্রনয়ন করলেও সেগুলো বিভিন্ন জটিলতা এবং উদ্যোগের অভাবে বাস্তবায়নের মূখ দর্শন করে নি রাস্তায় যান চলাচলের এমন একটি আইন করা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী গাড়ী, মোটরযান এবং মোটর সাইকেল সর্বোচ্চ ৭০ মাইল, মধ্যম আকারের কোষ্টার ৩৫ মাইল এবং মালবাহী যানের অবস্থা ভেদে ১০-৩৫ মাইল গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে কিন্তু এই নির্দেশনা দেশের বেশিরভাগ ড্রাইভার জানেন না জানলেও মানেন না ফলে প্রতিনিয়তই তাদের সড়ক দূর্ঘটনার সম্মূখীন হতে হচ্ছে গতিসীমা নিরুপণ এবং এ সকল দ্রুত গতিসম্পন্ন ড্রাইভারদের নিয়ন্ত্রন করতে হলে রাস্তায় তাদের গতিসীমা পরিমাপ করা উচিত বাংলাদেশের দীর্ঘ ১৪ হাজার কিলোমিটার রাস্তায় মোটর যান গতি নির্ধারক যন্ত্র মাত্র ৩৮টি সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করতে হলে এ গতি নির্ধারক যন্ত্র আরো কয়েকগুন বাড়াতে হবে

 

 

 

প্রশাসন যদি উদ্যোগী হয় এবং আইনের যথাযোগ্য প্রয়োগ হয় তবে দূর্ঘটনা রোধ কঠিন কাজ নয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে রাজধানী ঢাকাসহ এর আশে পাশের এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় ৬১৭টি মামলা দায়ের করা হলেও কেউ সাজাপ্রাপ্ত হয়নি সমগ্র বাংলাদেশের একই চিত্র যদি আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে অপরাধীরা মুক্তি না পেত তাহলে ২০০৯ পরবর্তী সময়ে সড়ক দূর্ঘটনা অবশ্যই কমে আসত আইনের দূর্বলতা এবং প্রশাসনের দূর্নীতির কারনে সেটা হয়নি যেকারনে ড্রাইভাররা দূর্ঘটনা করেও তেমনি বিচলিত হন না কিংবা দূর্ঘটনার পূর্বেও সতর্কতার সাথে গাড়ী চালান না দূর্ঘটনা রোধের জন্য অন্যতম প্রয়োজন হল প্রশস্ত রাস্তা উন্নত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি শহরে ৩৮ ভাগ রাস্তা থাকা উচিত  কিন্তু বাংলাদেশে তথা ঢাকাতে রাস্তার পরিমান মাত্র ৭-৮ভাগ এছাড়াও দেশের সংকীর্ণ সড়কগুলিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাসসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন যোগ হচ্ছে এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশে রেজিষ্টার্ড ১৪ লাখ কিন্তু রেজিষ্টার্ডবিহীন গাড়ী আছে ৩ লাখের উপরে কাজেই সড়কে তুলনায় গাড়ীর পরিমান অত্যাধিক বেশি হওয়ায় সড়ক দূর্ঘটনার পরিমানও বাড়ছে

 

 

 

সকল সমস্যা এবং কারন উদঘাটনের পরেও দেশের সড়ক দূর্ঘটনা বন্ধ করে দেওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া যায় না তবে জনসচেতনা এবং নিয়ম-নীতির অনুসরণ সড়ক দূর্ঘটনাকে অনেক কমিয়ে আনতে পারে   সেজন্য বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগনকে সচেতন এবং ট্রাফিক আইন কানুন সম্পর্কে জানতে হবে সড়ক দূর্ঘটনা রোধে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের চলচিত্র জগতের পরিচিত মূখ ইলিয়াস কাঞ্চন একক কোন প্রচেষ্ট দ¦ারা কোন বিশাল কাজে সফলতা পাওয়া যায় না ইলিয়াস কাঞ্চন আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন আমাদের ষোলকোটি হাত যদি তার হাতের সাথে জোটবদ্ধ হয় তবে অচিরেই দেশের কোন মানুষকে সড়ক দূর্ঘটনার অপমৃত্যু কিংবা কোন স্বজনকে স্বজন হারানোর আহাজারি নিয়ে বাঁচতে হবে না দেশের সংস্কৃতি জগতের উজ্জ্বল নক্ষত তারেক মাসুদ কিংবা মিশুক মুনিরের মত আর কাউকে যেন সড়ক দূর্ঘটনার ভায়াল থাবা গ্রাস করতে না পারে আজ এই মূহুর্ত থেকে আমাদের সকলের স্লোগান ইউক সবার জন্য নিরাপদ সড়ক চাই

 

 

 

 

 

রাজু আহমেদ কলাম লেখক

 

 

 

০ Likes ২ Comments ০ Share ৬২৮ Views

Comments (2)

  • - মাসুম বাদল

    একবার এসে দেখে যাও….
    ঢেলে যাও তোমার অগ্নী নেভানোর জলটুকু
    দেখে যাও সত্যি কি মিথ্যা
    কতটা তোমায় আজও ভালবাসি।

     

     

    চমৎকার একটি কবিতা উপহার দেবার জন্য 

    অশেষ ধন্যবাদ ও শুভকামনা... 

    • - রুদ্র আমিন

      সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মাসুম বাদল ভাই।

    - মোঃসরোয়ার জাহান

    ঢেলে যাও তোমার অগ্নী নেভানোর জলটুকু
    দেখে যাও সত্যি কি মিথ্যা
    কতটা তোমায় আজও ভালবাসি।

    ---------------shundor

    • - রুদ্র আমিন

      ধন্যবাদ সরোয়ার ভাই।

    - আজিম হোসেন আকাশ

    শুভ কামনা। ভাল থাকুন।
    বেশ ভাল লাগল।

    • - রুদ্র আমিন

      ধন্যবাদ ভাই।

    Load more comments...