Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

স্মৃতিতে বাবার মুক্তিযুদ্ধ

মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতি লাভ করা মুক্তিযোদ্ধার কাছে চাদঁকে স্পর্শ করার মতো। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একজন মুক্তিযোদ্ধা তার জন্মমায়ের প্রাণ বাচাঁতে নিজের জীবন দ্বীধাবোধ করেনা। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার বাবা একজন গর্বিত বাবা। বাবার মুখে ছোটবেলা শুনেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। তখন বুঝতাম না মুক্তিযুদ্ধ কি। আজ বড় হয়ে বুঝতে পারলাম মুক্তিযুদ্ধ হলো মাতৃভূমি রক্ষা করার যুদ্ধ, যে যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ্য মানুষ জীবন দিয়েছে। কত মা-বোনে ইজ্জত হারিয়েছে। যার কারনে বাবার কাছে মুক্তিযুদ্ধ এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাবা যখন মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন তখন বাবার বয়স মাত্র উনিশ বছর। বাবা তখন বিয়ে করেননি। বাবা তার তরুন বয়সে জীবনের মায়া ছেড়ে দেশের মাটি রক্ষায় যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। বাবা দাদুকে না বলে গভীর রাতে প্রশিক্ষনের জন্য ভারতের উদ্দেশ্যে বাড়ি ত্যাগ করলেন। আমাদের গ্রাম থেকে দুটি গ্রাম পরে নদি ওখানে নৌকা রাখা আছে সেখানে গিয়ে বাবা সবার সাথে মিলিত হয়ে একসাথে যাবেন। কিন্তু বাবা জানতেন না কাদের সাথে তিনি যাচ্ছেন। বাবা নৌকার কাছে গিয়ে দেখতে তার বন্ধু দুইজন ওখানে আছে তারাও মুক্তিযুদ্ধে যাবে। বাবা তাদের দেখে খুশি হলেন এবং বুকে সাহস পেলেন। সবাই আসার পর ভারতের উদ্দেশ্যে নৌকা চললেন। সাগরের কাছে যখন তাদের নৌকা পৌছালেন তখন সাগরের ডাকাত তাদেরকে ধরে সুন্দরবনে নিয়ে গেলেন। তাদের দাবি তাদেরকে টাকা-পয়সা দিতে হবে। কিন্‌ত যারা দেশের জন্য যুদ্ধ করতে যাচ্ছে তারা টাকা পাবে কোথায়। কিন্তু ডাকাত বাবাদের অনুরোধ শুনলো না। তাদের অনেক মারধর করলেন। তাদের কাছে যে খাবার ছিল সব খাবার ওরা ডাকাতরা নিয়ে গেল। কোন খাবার বাবাকে দিল না। সাত দিন বাবা না খেয়ে আছে শুধু সাগরের লবনাক্ত পানি খেতে দেয়া হয় বাধ্য হয়ে ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রনায় লবনাক্ত পানি পান করে। কিন্তু পাষান্ড ডাকাত তাদেরকে কোন খাবার দেয়না। এভাবে এগার দিনের দিন সন্ধালগ্ন সময়ে বাবার হাতের রসি কিভাবে ছুটে গেল। বাবা সাহস করে পাশের জনের হাত বাধা রসি খুলে দিলেন। একজন ডাকাত সদস্য পাহাড়ার জন্য ওখানে ছিলেন। বাবা পিছন থেকে ডাকাতের মুখ চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দিয়ে ডাকাতের বন্দুক দিয়ে ডাকাতকে মেরে ফেলে। বাব সবার হতের বাধন খুলে দেয়। তারপর সবাই ওখান থেকে পালিয়ে ভারতের উদ্দেশে যাওয়ার জন্য চললেন কিন্তু বাবাদের দলের দুইজন বলে আমাদের আর যাওয়ার দকার নেই, চল আমারা বাড়িতে ফিরে যাই। বাবা বললেন জীবনের মায় ত্যাগ করে বাড়ি থেখে এসেছি এখন জয় না নিয়ে বাড়ি ফিরবো না তাতে যদি মৃত্যুও হেয় তা হাসিমুখে বরন করে নেব। সবাই বাবার খথায় আবার সাহস পেলেন। তিন দিন পর ভারতে পৌছালেন। ওখানে গিয়ে একদিন বিশ্রাম নেয়ার পর প্রশিক্ষনের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। এক মাস প্রশিক্ষনের পর বাবা নিজ দেশে যুদ্ধ করার জন্য হেলিকপ্টারে আসলেন।এসে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন করলেন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাবা অস্ত্র জমা দিয়ে বাড়ি চলে আসে। দাদু বাবাকে কাছে যেমনটা খুশি তেমনটা কষ্টে কেদেঁ ফেলেন। বাবা বয়স তখন বিশ বছর। বাবার বয়স যখন বাইশ বছর তখন দাদু বাবাকে মায়ের সাথে বিয়ে করিয়ে দেন। বিয়ের এক বছর পর বড় আপুর জন্ম হয়। তারপর বোনের পরে বোন আমি বোনদের ভিতর চতুর্থ। আমার পরে আমার একমাত্র ছোট ভাই। আজ সেই ভাইটি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে নিয়জিত আর আমি আমার ভাইয়ের সাত বছর আগেই পুলিশে যোগদান করি এখন আমরা দুই ভাই বোন পুলিশে চাকুরী করে দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় নিয়জিত। যে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। বাবার সেই দেশ রক্ষার কাজে তার সন্তান আমরা নিয়জিত। আজ বাবা নেই কিন্তু বাবার স্মৃতি এই দেশের মাটিতে লেগে আছে। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করে ঘরে ফিরলেও গত বছর আমাদেরকে কাদিয়ে এই দুনিয়া ছেড়ে না ফেরার দুনিয়ায় চলে গেছেন। পারলো না একজন মুক্তিযুদ্ধা তার বাংলা মায়ের কোলে বেশিদিন কাটিয়ে যেতে। তবে নিজ জন্মভূমির মাটি এখন তার আজীবনের বন্ধু হয়ে গেছে। বাবা আমার মুক্তিযুদ্ধ করে যে মাটি রক্ষা করেছিলেন, তিনি এখন সেই মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। বড্ড স্বরণ করি বাবা তোমাকে! যেখানেই থাকো বাবা! ভাল থেকো।

১ Likes ৪ Comments ০ Share ৮৭২ Views