বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, চিত্র পাল্টে যায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের। বিকেলের ভ্রমণ আর আড্ডাপ্রিয় মানুষগুলো ঘরে ফেরার আগেই উদ্যানের বিভিন্ন রাস্তা আর আনাচে-কানাচে অবস্থান নেন তিন শ্রেণীর মানুষ। সাধারণ মানুষের চেয়ে কিছু ক্ষেত্রে তারা একটু আলাদা, একটু অন্যরকম। তাদের চলাফেরা আর আচার-আচরণে সহজেই চিনে নিতে পারেন অনেকেই। এই তিন শ্রেণীর মানুষ হলেন- মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী আর যৌনকর্মী।
বিকেল থেকে রাতের অন্ধকারে ওই তিন শ্রেণীর মানুষের অবাধ বিচরণের কারণেই হারিয়ে যেতে বসেছে স্বাধীনতার ইতিহাস বহনকারী এ উদ্যানের অহঙ্কার। এছাড়া উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশার নিরাপদ স্থান হয়ে ওঠায় প্রতিদিনই অস্বস্তিতে পড়ছেন উদ্যানে ঘুরতে আসা সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি বুঝে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকেই আর এখানে ঘুরতে আসেন না।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় এ উদ্যানে শিখা চিরন্তন ছাড়াও গড়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা স্তম্ভ এবং গ্লাস টাওয়ার। এ কারণে উদ্যানে বেড়েছে দর্শণার্থীর সংখ্যা।
কিন্তু উদ্যানে বেড়াতে বা আড্ডা দিতে আসা মানুষ মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী আর যৌনকর্মীদের কারণে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। এছাড়া উদ্যানটি মাদক গ্রহণের নিরাপদ জায়গা হয়ে ওঠায় অভিভাবকরাও চিন্তিত।
সূত্র মতে, গাঁজা থেকে শুরু করে ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ, ইয়াবাসহ সব ধরণের মাদক বিক্রি হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। আর মাদকসেবীরা ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কাছ থেকে এসব মাদক সংগ্রহ করে উদ্যানের মধ্যে বসেই তা সেবন করেন। এতে স্বস্তির জায়গাটুকু অস্বস্তিতে ভরে যায়। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ বাতাসে ছুটে বেড়ায় বিষাক্ত নিকোটিন।
রাত যত গভীর হয়, উদ্যানের চেহারা ততোই বিচিত্র হতে থাকে। গোল হয়ে বসা কিছু মানুষ গানের আসর জমিয়ে তোলেন। সঙ্গে চলে মাদক সেবন। এ আসরে মেয়েদের উপস্থিতিও থাকে চোখে পড়ার মতো। ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ‘দম’ মারতে থাকেন। তাদের পরিচয় অনেকের কাছেই অজানা নয়। আর এমন আসর বসে ঠিক শিখা চিরন্তনের পাশেই।
বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে উদ্যানটি সাজানো হয়, নেয়া হয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু আয়োজন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসে চেনা সেই দৃশ্য।
উদ্যানের ভেতরে অবৈধ ও আপত্তিকর যা কিছুই ঘটে, তা পুলিশের নাকের ডগায়ই ঘটে। কিন্তু কী এক অনিবার্য কারণে পুলিশ থাকে নীরব।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ উদ্যানের ভেতরে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছেন। অনেক হকারকেও মাদকদ্রব্য বেচতে দেখা গেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে পুলিশ মাঝে মধ্যে যে দুএকজনকে আটক করে না তা নয়। কিন্তু উচ্চমহলের চাপে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তারা ছাড়া পেয়ে যায়। ব্যবসা থামে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষুদ্র এ মাদক ব্যবসায়ীদের নেথপ্যে রয়েছে স্থানীয় মাদক সম্রাট, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, ছাত্রনেতা ও কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা। মাস গেলেই তদের পকেটে চলে যায় মোটা অংকের মাসোহারা। একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারাও এর সঙ্গে জড়িত।
Comments (7)
আমি এখন নিজেকেও ক্ষমা করতে পারিনা ।
আমি সহমত জানাই আপনার সাথে