Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান, লেনিনবাদ তত্ত্বের প্রবক্তা এবং কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিনের ৯০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী নেতা ভ্লা­দিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন। তিনি বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ। রাশিয়ান স্যোশাল ডেমোক্র্যাটিক লেবার পার্টি গঠনের সময় তিনি ছদ্মনাম গ্রহণ করেন। সাইবেরিয়ার লেনা নদীর নামানুসারে তিনি নিজের নাম রাখেন লেনিন। তিনি বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা এবং অক্টোবর এবং মহান নভেম্বর বিপ্লব-এ বলশেভিক দের প্রধান নেতা ছিলেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর লেনিন ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রাশিয়ায় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন। মার্ক্সবাদের বাস্তব প্রয়োগ করে তিনি রাশিয়ায় সকল কলকারখানা থেকে ব্যক্তিমালিকানা বিলুপ্ত করেন এবং শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন ১৯২৪ সালের ২১শে জানুয়ারি ৫৪ বছর বয়সে মস্কোয় মৃত্যুবরন করেন। আজ এই মহান নেতার ৯০তম মৃত্যুদিন, মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

ভ্লাদিমির উলিয়ানভ ইলিচ লেনিন ১৮৭০ সালে ২২শে এপ্রিল জার শাসিত রাশিয়া-র ভল্গা নদীর তীরবর্তী সিমবির্স্ক নামক ছোট শহরে জন্ম গ্রহন করেন। সিমবির্স্ক শহরটি রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ১,৫০০ মাইল দুরত্বে অবস্থিত ছিল। ভ্লাদিমির ইলিচ-এর পিতা ল্যা নিকোলয়েভিচ্ উলিয়ানভ ছিলেন একজন বিদ্যালয় পরিদর্শক এবং গণতন্ত্রবাদ-এর কট্টর সমর্থক। তাঁর মা মারিয়া আলেক্সান্ড্রাভনা উলিয়ানভা ছিলেন এক প্রথিতযশা চিকিত্সকের বিদুষী কন্যা এবং একজন বিশিষ্ট শিক্ষিকা। পিতামাতা-র বিচার বিবেচনা,লেনিন এবং তাঁর ভাইবোন দের মধ্যে গভীর ভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল। তাঁর দাদা আলেক্সান্ডার কে জার হত্যার ষড়যন্ত্রের অপরাধে ফাঁসি দেওয়া হয়। বিপ্লবী অ্যানা ইলিচনিনা ছিলেন লেনিন-এর দিদি এবং সহযোদ্ধা। ১৮৮৬ সালে ভ্লাদিমির ইলিচ-এর পিতৃ বিয়োগ হলে তাঁর মায়ের উপর সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব এসে পরে।


ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন ১৮৮৭ সালে সাম্মানিক স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু ছাত্রদের বিপ্লবী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিস্কার করে। ১৮৮৯ সালে তিনি সামারা যান এবং স্থানীয় মার্ক্সবাদী দের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৮৯১ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাস করে, সামারাতে আইন ব্যবসা শুরু করেন।

এরপর তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ চলে আসেন এবং শীঘ্রই সেখানকার মার্ক্সবাদী দের অবিসংবাদী নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এখানেই লেনিন ক্রুপস্কায়া-র সাথে পরিচিত হন। ক্রুপস্কায়া শ্রমিক এবং কৃষক দের মধ্যে সাম্যবাদ এবং বিপ্লবী আদর্শের প্রচারে ব্রতী ছিলেন। ১৮৯৫ সালে লেনিন কারারুদ্ধ হন এবং ১৮৯৭ এ তাঁকে পূর্ব সাইবেরিয়ার এক নির্জন স্থানে নির্বাসিত করা হয়। কিছুদিনের মধ্যে ক্রুপস্কায়াকেও সেখানে নির্বাসিত করা হয়। পরবর্তীকালে তাঁদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।

১৯০০ সালে নির্বাসন থেকে মুক্তিলাভ করে একটি সংবাদপত্র (বিপ্লবী প্রচারপত্র) প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে লেনিন পৃথিবীর বিভিন্ন বড় বড় শহর (মিউনিখ ১৯০০-০২, লন্ডন ১৯০২-০৩, জেনেভা ১৯০৩-০৫ ) সফর করেন। এই সময় তিনি জুলিয়াস মার্টয়-এর সাথে মিলিত হয়ে দেশের বাইরে থেকেই "ইস্ক্রা" (স্ফুলিঙ্গ) নামক একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন এর সাথে সাথে তিনি সর্বহারা শ্রেনী, তাদের অধিকার প্রভৃতি নিয়ে কিছু পত্র-পত্রিকা ও পুস্তক রচনা করেন। ১৯০২ সালে তিনি "আমাদের কি করতে হবে" শীর্ষক একটি পুস্তক রচনা করেন, যাতে বলা হয়- "বিপ্লবের নেতৃত্ব এমন এক অনুশাসিত দলের হাতে থাকা উচিত,যাদের প্রধান কাজ হবে অধিকারের জন্য লড়াই করা"।

নির্বাসনে থাকাকালীন লেনিন ৩০টি পুস্তক রচনা করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল "রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ", যা মার্ক্সবাদী দর্শনের উপর ভিত্তি করে রাশিয়ার অর্থনীতি সম্বন্ধে বিচার বিশ্লেষন করেছিল। এই সময়েই তিনি রাশিয়ার শোষিত শ্রমিক এবং সর্বহারা গোষ্ঠীকে নিয়ে একটি দল গঠনে উদ্যোগী হন। সকল কলকারখানা থেকে ব্যক্তিমালিকানা প্রত্যাহার করে সেগুলোতে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা ছিলো এর মূল উদ্দেশ্য। তিনি সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নের যে অর্থনৈতিক তত্ত্ব দেন, তা ‘লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতি’ নামে পরিচিত। তাঁর ভাবধারাকে ‘লেনিনবাদ’ বলে অভিহিত করা হয়-যা মার্কসবাদের উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত।

মহান এই মানবতাবাদী নেতা ৫৪ বছর বয়সে ১৯২৪ সালের ২১শে জানুয়ারি মস্কোয় মৃত্যুবরন করেন। কিন্তু কি পেয়েছেন তিনি? যে রাশিয়ার মানুষের মুক্তির জন্য তিনি আজীবন কষ্ট সয়ে কাজ করে গেছেন, সেই রাশিয়া তেই আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে অশ্লীল শ্লোগান ওঠে - লেনিনের মূর্তি ভাংগো !

ভেঙ্গে যায় সোভিয়েত রাষ্ট্র, লেনিনের মূর্তিও ভেংগে পড়ে। পূজিবাদীরা তাকে ডাকে শয়তান, সভ্যতা ধংসের প্রচেষ্টাকারী । ধার্মিকেরা নাস্তিক বলে উড়িয়ে দেয় তার সকল অক্ষয় অবদান। গুটিকয় যে কয়জন সমাজতন্ত্রের ধ্বজ্জাধারী বেঁচে আছেন, তাদের কীর্তি কলাপ দেখে লেনিন স্বয়ং ধরণীর কাছে প্রার্থনা করতেন দ্বিধা হবার জন্য ।

আজ এই মহান নেতার ৯০তম মৃত্যুবার্ষিকী। তবে পৃথিবীতে যতদিন অবিচার থাকবে ততদিন তিনি বেঁচে থাকবেন। তাই তিনি বেঁচে আছেন । তিনি বেঁচে থাকবেন। যেহেতু পৃথিবীতে এখনো অবিচার আছে। তাই তিনি বেঁচে আছেন অবিচারের বিরূদ্ধে প্রতিবাদের দৃঢ় কণ্ঠস্বর হয়ে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মার্কসবাদী রুশ বিপ্লবী এবং কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ ভ্লা­দিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিনের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

১ Likes ৪ Comments ০ Share ৪৬৯ Views

Comments (4)

  • - সনাতন পাঠক

    খুব সুন্দর লিখেছেন। শুভেচ্ছা 

    • - আলভী

    - আলভী

    আপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রিয় পাঠক।

    - আলভী

    Load more comments...