Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সেদিন বসন্ত বিকেলে আকাশে রোদ উঠেছিল (প্রতিযোগিতাঃ ২য় পর্ব... ক্যাটাগরি-২)

তখন শীতকাল। মাঘ মাসের প্রচন্ড শীত। ঢাকাতে বরাবরই অন্য জেলাগুলো থেকে শীত একটু কম থাকলেও তখন শীতের যতুটুকু তীব্রতা ছিল তাতেই জমে যাবার দশা। হলে থাকি বলে এমনিতেই রাত জাগা হয় বেশী। তবে শীতের তীব্রতায় সেদিন আগেভাগেই ঘুমিয়ে পড়েছি। রাত দেড়টা দিকে হঠাৎ করেই ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মুছতে মুছতে দেখি আমাদেও ব্লাড ডোনার গ্রুপের বাপ্পি ভাই ফোন করেছে। ফোন কানে নিতেই ভাই বলতে শুরু করলো, “তাড়াতাড়ি একটা ফোন নাম্বার লিখে নে, আর মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে চলে যা, রক্ত দিতে হবে, সিরিয়াস পেশেন্ট।”
আমি ঘুম জড়ানো কন্ঠেই বললাম, ভাই কিসের পেশেন্ট? রক্তের গুপ কি? খুব কি জরুরী?
ভাই বললেন, হ্যা। রক্তের গ্রুপ তোরটাই। আমাদের ভার্সিটিরই মেয়ে। মনে হয় সুইসাইড কেস।
আমি ততক্ষণে খাট থেকে উঠে বসেছি। বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছি। তবুও ভাইয়ের সাথে একটু ঠাট্টা করে বললাম, ভাই, এমনিতেই সুইসাইড কেস, তাও আবার অল্প বয়েসি মেয়ে। নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ডের জন্য আত্বহত্যা করতে গিয়েছিল। আমি রক্ত দিয়ে কি করব। লস প্রজেক্ট।
ভাই একটু শাসন করে বললেন, বাজে বকিস না। তাড়াতাড়ি কর।

রক্ত দান যখন শুরু করেছিলাম তখন একরকম শখের বশেই শুরু করেছিলাম। তারপর কবে যে সেটা একটা সমাজিক  দায়বদ্ধতা হিসেবে মনে গেথে নিয়েছিলাম টের পাইনি। দেরী করলাম না। মোবাইলটা পকেটে পুরেই বেড়িয়ে পরলাম। এমনিতেই রাত অনেক তার মধ্যে প্রচন্ড শীত। কোন রিক্সা পেলাম না।  বাধ্য হয়ে হেটেই রওনা হলাম। হাসপাতালে গিয়ে দেখি ভাই যেমনটা বলেছেন রোগীর অবস্থা তার থেকেও খারাপ।  নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত বলে এখনও কোন রক্ত পাওয়া যায়নি। মেয়েটির চেহারা একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। হাতে দেখলাম ব্যান্ডেজ। বুঝলাম কব্জির রগের সাথে তার বোঝাপড়া হয়েছে। নিয়মিত রক্ত দেই বলে আমার আর বেশী কিছু টেস্ট করতে হলো না। ডাক্তার রক্ত নিয়ে নিলেন তাড়াতাড়িই। রাত অনেক হয়ে গেছে, তাই রক্ত দিয়ে আর দেরী না করে হলে ফিরে এলাম। কিন্তু মনটা ভাল ছিল না। আমার বয়সী একটা মেয়ে, দুনিয়াটাই দেখলো না ঠিকমত তার আগেই পৃথিবীর ওপর থেকে তার মায়া চলে গেল!

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরেও মেয়েটির ঐ অর্ধমৃত চেহারাটা মন থেকে মুছতে পারছিলাম না। মেয়েটির কি হল খুব খোজ নিতে ইচ্ছা করছিল। নাশতা করেই বেড়িয়ে পড়লাম। হাসপাতালে পৌছে দেখলাম মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে। কেবিন নেওয়া হয়েছে। মেয়েটির পরিবারের কোন একজনের ফোন নম্বরটা আমার কাছে ছিল। তারই সাহায্যে তাদের খুজে বের করলাম। তবে ভেতরে গিয়ে এমন  একটা অবস্থায় পড়লাম যা আমি কখনও ভাবিনি। মেয়েটির মা আমাকে দেখে বুকে জড়িয়ে কাদঁতে শুরু করল। আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম। পরমুহুর্তেই সামলে নিলাম। মেয়েটির সাথেও কথা হল। আমাদের ইয়ারেই ‘লোক প্রশাসন’ বিভাগে পড়ে। নাম মিথিলা। মেয়েটির আত্বহত্যার কারণ জানতে ইচ্ছে করছিল বারবার  কিন্তু নিজেকে দমন করলাম। তবে কিছুক্ষণ পরে মেয়েটির মা নিজেই ঘটনা বলতে শুরু করলেন-
মেয়েটি তার নিজের মেয়ে নয়। বোনের মেয়ে। মেয়েটির বাবা-মা একসাথেই একটা রোড-অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। মেয়েটি তখনও অনেক ছোট। এরপর থেকে মেয়েটির খালা মেয়েটিকে নিজের মেয়র মত মানুষ করে। কিন্তু কয়েকমাস আগে মেয়েটি জানতে পারে ঘটনাটা। তখন থেকেই মেয়েটি একটা মানসিক আঘাত পায়। এর মাঝেই তারা মেয়েটির একটি সম্বন্ধ আসে। পরিবার থেকে  বিয়ে দিতে চায়। কিন্তু পাত্র মেয়ের পছন্দ হয়নি। পরিবার থেকে মেয়টিকে চাপ দেয়া হয়। মেয়েটা মেনে নিতে না পেরে পরিবারের ওপর অভিমান করে এই কাজ করেছে।

সেদিন চলে এসেছিলাম কিছু সময় পরেই। তবে মিথিলার সাথে তখন থেকেই আমার পরিচয়। শুধু পরিচয় বললে ভুল হবে, আস্তে আস্তে আমরা বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। দেখতে দেখতে প্রায় এক বছর কেটে গেল। এর মাঝে আমরা একসাথে লাইব্রেরী ওয়ার্ক করতাম, বিকেলে ঘুরতাম, শপিংয়ে যেতাম। ভালোই কাটছিল দিনগুলো। তবে বন্ধু থেকে আমরা যে দিন দিন আরও বেশী কিছু হয়ে যাচ্ছি তা টের পাচ্ছিলাম। কিন্তু বুঝেও না বোঝার ভান করে ছিলাম দুজনেই। এর মাঝে ১৪ই ফেব্রয়ারী কাছে চলে এল। খুব সকালেই দেখি মিথিলা ফোন করেছে। মিথিলা বলল এগারটার দিকে বের হতে হবে। পড়তে হবে লাল পাঞ্জাবী। কিসের যেন প্রোগ্রাম আছে। আমি জানি মিথিলার পাগলামির সাথে দ্বিমত করে জিততে পারব না। বাধ্য হয়ে লাল পাঞ্জাবী পড়ে বের হলাম। টিএসসিতে এসে দেখি মিথিলা বাসন্তী রং শাড়ি পড়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি মিথিলার কাছে গিয়ে ওকে একটু ক্ষেপানোর জন্য  বললাম, আজকের দিনে জানতাম বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডরা শাড়ী-পাঞ্জাবী পড়ে ঘুরে।
মিথিলা ভেংচি কাটলো। এরপর বললো, শোন, আমারও বয়ফ্রেন্ড নেই, তোরও গার্লফ্রেন্ড নেই। তাই বলে তো আমরা এই বিশেষ দিনটাকে নষ্ট করতে পারি না। তাই ভাবলাম আজ আমরা সারাদিন দুজনে রিক্সায় ঘুরব। বিকেল একসাথে বইমেলায় যাব এরপর দুজনে একসাথে ফুসকা খাব।
আমি হেসে বললাম, জো হুকুম জাহাপনা।

সাারাদিন ঘোরাঘুরির পর বিকেলে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে বসে ফুসকা খাচ্ছি দুজনে। মিথিলা এবার নতুন আবদার জুড়ে দিল, গোলাপ কিনে দিতে হবে। আমিও মজা পাচ্ছিলাম ওর কান্ড কারখানা দেখে। গোলাপ কেনার পর মিথিলা বলল, চুলে গেথে দে। আমিও তাই দিলাম। এরপর হঠাৎ করেই একটা সহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। আমার মনে হল কথাটা বলার জন্য আজই সর্বোত্তম দিন। মিথিলাকে বললাম, যদি সারাজীবনই তোর চুলে ফুল গেথে দিতে চাই, তুই কি তবে রাগ করবি?
মিথিলা হঠাৎ চুপ মেরে গেল। তারপর বলল, তোর রক্ত তো আমার রক্তের সাথে আগেই মিশে আছে, মনটা মিশে গেলেও খারাপ হবে না।
২ Likes ৪ Comments ০ Share ৬৯৪ Views