সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। তেলবাহী একটি ট্যাঙ্কার থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ে হুমকির মুখে ফেলেছে বিরল ইরাবতী ও গাঙ্গেয় ডলফিনকে। একই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার। শুধু তা-ই নয়, ওই তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের পুরো জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ। সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত শ্যালা নদীতে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার লিটার তেল নিয়ে একটি ট্যাঙ্কারের অর্ধেকটা ডুবে যায় কয়েকদিন আগে। সে বিষয়ে গতকাল বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, মঙ্গলবার ওই তেলবাহী ট্যাঙ্কারের সঙ্গে আরেকটি নৌযানের ধাক্কা লাগে। এতে ট্যাঙ্কারের সামনের দিকের অর্ধাংশ পানিতে ডুবে যায়। এটি যেখানে ডুবেছে তা বিরল ইরাবতী ও গাঙ্গেয় ডলফিনের বিচরণ ক্ষেত্র। ট্যাঙ্কারটি ডুবে যাওয়ার পর তা থেকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তেল। সেই তেল ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। জোয়ারের সময় এই তেল পানিতে ভেসে ছড়িয়ে পড়ছে সুন্দরবনে। চারদিকে তেলের এক আস্তরণ পড়ে রয়েছে। এই তেল ছড়িয়ে পড়েছে অন্য নদীতে। সুন্দরবনের প্রধান বন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, শেলা ও পশুর নদীতে ৬০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এই তেল। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এমনিতেই সঙ্কটে। তার ওপর এ ঘটনা তা আরও বিপর্যয়ে ফেলেছে। ছড়িয়ে পড়া তেল পাড়ে কালো আস্তরণ তৈরি করেছে। এর কুপ্রভাব খুব শিগগিরই দেখা যাবে। এরই মধ্যে পানির মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ছোটখাটো পরিসরে পরিষ্কার অভিযান শুরু করেছে। আমির হোসেন বলেন, আমরা এখনও বড় আকারে পরিষ্কার অভিযান শুরু করি নি। এমন বিপর্যয়ে যে প্রযুক্তি দরকার তা বন বিভাগের হাতে নেই। তেল যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালিত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ভাসমান বয়া ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে স্থানীয় জেলেদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তেল ছড়িয়ে পড়া বন্ধে তাদের জাল ব্যবহার করতে। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত সুন্দরবন। এটি ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত বিশ্ব হেরিটেজ সাইটের আওতাভুক্ত। এখানে রয়েছে কয়েক হাজার রয়েল বেঙ্গল টাইগার। রয়েছে বিপুল সংখ্যক নদী ও খালের সমন্বয়। নিউ ইয়র্কভিত্তিক ওয়াইল্ডলাইফ কনসার্ভেশন সোসাইটির বাংলাদেশ শাখার প্রধান রুবায়েত মানসুর বলেন, ডলফিনের অভয়ারণ্য আছে এমন তিনটি স্থানের একটিতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই তিনটি এলাকাকে ডলফিনের অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয় ২০১১ সালে। সেখানে জেলেদের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। তবে ট্যাঙ্কার, বোটসহ অন্য নৌযান সেখান দিয়ে চলাচল করতে দেয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে তিনি ট্যাঙ্কার ডুবির এ ঘটনাকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট করছে না বলে অভিযোগ করেন। রুবায়েত মানসুর বলেন, এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সমন্বিত কোন পদক্ষেপ নেই। এরই মধ্যে বাতাস বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। জেলেরা বলছেন, তারা মৃত মাছ এরই মধ্যে ভেসে উঠতে দেখেছেন। এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কাঁকড়া পাওয়া যায়। তা-ও এখন হুমকির মুখে। যদি এই কাঁকড়া আক্রান্ত হয় তাহলে ডলফিন ও বাঘ আক্রান্ত হবে। ডলফিনের শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে কষ্ট হবে।