Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শফিক সোহাগ

৮ বছর আগে

সিবিএ-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় টু রাঙ্গামাটি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় - সেন্টার ফর বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (সিবিএ) এর তৃতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের সুবাদে সকল ব্যাচের এমবিএ শিক্ষার্থীদের সাথে পারস্পরিক আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হয় । ফলে সিবিএ স্টুডেন্টস ফোরাম আয়োজিত স্টাডি ট্যুরটা আমার জন্য ছিল অনেকটা স্পেশাল । সিবিএ ক্যাম্পাস থেকে আমরা সকাল ৯ টায় রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । বিভিন্ন ব্যাচের এমবিএ শিক্ষার্থীরা ৪ টি বাসে বিভক্ত ।বন্ধু রবি তার ব্যাচমেডদের বাসে থাকায় তাকে খুব মিস করছিলাম । প্রত্যেক বাসেই লাগানো আছে মাইক এবং বাসের ভিতরেও সাউন্ডবক্সে চলছে গান । আমরা মেতে উঠেছি উল্লাসে ! একজনের গান শেষ হতেই আরেকজন শুরু করছেন আর সবাই মিলে সুর মিলিয়ে যাচ্ছেন । গানের সাথে সাথে সেরে নেওয়া হল সকালের নাস্তা । আঞ্চলিক গান, দেশাত্মবোধক, ব্যান্ড, বাউল, জারি-সারি, ছায়াছবির গান, বাংলা-হিন্দি ও রসাত্মক সব প্রকারের গানই চলছে । সেই সাথে আমাদের বাসে থাকা কাপলদের নিয়ে রসাত্মক আলোচনায় সবাই মেতে উঠি । একসময় আমি চেপে বসি সদ্য বিবাহিত ইমতিয়াজ-সুরভী কাপলের উপর । দু’জনই সিবিএ’র শিক্ষার্থী । কিভাবে কি হলো সে গল্প সবাইকে শোনাতে বললাম । বাদ গেলো না আতা-তমা জুটিও । এভাবে একের পর এক । এদিকে আমার বন্ধু শাহরিয়ার ও ইয়াছিন আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো । তারা সবার সামনে আমার জন্য সুন্দরী পাত্রী “খোঁজ দ্যা সার্চ” অপারেশন ঘোষণা করলো । এবার সবাই চেপে বসলো আমার ঘাড়ে । কেউ কেউ আমাকে নিয়ে বানিয়ে ফেললো খোঁচা স্বরূপ গান-কবিতা ।

 

বেলা ১২ টার খানিক পর আমরা পৌঁছে গেলাম রাঙ্গামাটি । বাস থেকে নেমেই আমরা লঞ্চ ঘাটে যাই । সেখানে আগে থেকেই দোতলা বড় একটি লঞ্চ ভাড়া করা ছিল । এরপর শুরু হল হ্রদের বুকে লঞ্চ ভ্রমণ । ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে এই হ্রদের সৃষ্টি। কৃত্রিম এ হ্রদের আয়তন ২৯২ বর্গমাইল। এ হ্রদের সাথে কর্ণফুলী, কাচালং আর মাইনী নদীর রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক । উচু-নীচু পর্বত শ্রেণী পরিবেষ্টিত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। পাহাড়গুলি সংকীর্ণ উপত্যকায় ভরপুর এবং হালকা বন ও লতায় আকীর্ণ। এর বুক চিরে বয়ে চলেছে হ্রদ।রাঙ্গামাটিতে এলেই চোখে পড়ে হ্রদ-পাহাড়ের অকৃত্রি সহাবস্থান যা দেশের আর কোথাও দেখা মেলেনা। অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন ৫০৯৩ বর্গমাইল বা ১৩১২৮ বর্গকিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে মিজোরাম ও পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি।

 






বিশাল জলরাশির উপর দিয়ে ছুটে চলেছে আমাদের লঞ্চ । চারপাশে সবুজের সমারোহ-পাহাড় আর পাহাড়ি বন । সূর্যের কিরণে চারপাশ সোনালী ও সবুজ মিশ্র রূপ ধারণ করেছে । ফলে সূর্যের কিরণে প্রচণ্ড তাপ থাকা সত্তেও কারও মাঝে ক্লান্তির ছোঁয়া নেই । সবাই ফটোগ্রাফিতে ব্যস্ত । লেক ও পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম রাজবন বিহারে । এখানে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় ও বিভিন্ন ধর্মীয় মূর্তি। আমরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াতে শুরু করলাম । আর ফটোগ্রাফি তো চলছেই । এমন সময় ভার্সিটির ছোট বোন আর্চনা কানুনগো বলল, ‘ভাইয়া এখানে বৌদ্ধদের একজন ধর্মীয়গুরুর মৃতদেহের মমী সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে । চলুন ওটা দেখে আসি, ওটাও হতে পারে আপনার লেখার উপাদান” । আমি সেদিকেই চললাম । আমার সাথে আরও ছিল বন্ধু রবিন, রানা, জান্নাত ও আর্চনা । নুজহাত যেতে পারলো না কারণ তার মাথায় নেকাপ পরা ছিল । ওখানকার কর্তৃপক্ষ টুপি ও নেকাপ পরিধান করে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন । রুবিকেও নেকাবের কারণে প্রবেশ করতে না দেয়ায় চলে যেতে দেখলাম । আমরা নুজহাতকে নিচে রেখেই দোতলায় উঠলাম । সেখানে গিয়ে আরেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হলো । নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন আর প্রবেশ করা যাবে না । আমি রাজবন বিহার কর্তৃপক্ষের প্রধানের কক্ষে গিয়ে আমার পরিচয় জানালাম এবং আমার টীমকে মমী দেখার বিশেষ সুযোগ প্রদানের জন্য অনুরোধ করলাম । তিনি সাদরে সেই অনুরোধ রাখলেন । আমরা পিছন দিকের সংরক্ষিত বিশেষ পথ দিয়ে সেখানে গেলাম ।  বৌদ্ধদের ধর্মগুরু সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে'র মৃতদেহ সেখানে মমী করে সংরক্ষিত দেখতে পাই ।    সোনালী ফ্রেমে কাঁচের বক্সে শোয়ানো অবস্থায় রাখা আছে বনভান্তে’র মমী । বনভান্তে ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এবং ৩০ জানুয়ারি ২০১২ সালে পরিনির্বাণ লাভ করেন ।

 



সবাই লঞ্চে উঠে পরেছে । লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষায় । কিন্তু আমরা মমী দেখে এসে ছবি তোলায় ব্যস্ত । একের পর এক ফোন আসছে । আমরা দৌড়াতে লাগলাম । আমরা লঞ্চে উঠার পর লঞ্চ আবার চলতে শুরু করলো । কিছুদূর যাওয়ার পর লঞ্চ নোঙর করলো সমতা ঘাটে । সেখানে এক রেস্টুরেন্টে আমাদের দুপুরের খাবারের অর্ডার দেওয়া ছিল । খাবারের প্যাকেট নিয়ে লঞ্চ চলতে শুরু করলো ঝুলন্ত সেতুর উদ্দেশ্যে । আমরা লঞ্চেই দুপুরের খাবার সেরে নিলাম ।

 

বেলা গড়িয়ে চলেছে গোধূলির পানে । আমাদের লঞ্চ ঝুলন্ত সেতুর পাশে এসে নোঙর করলো । সবাই লঞ্চ থেকে নেমে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়লো ফটোগ্রাফিতে । রাঙ্গামাটির বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে ঝুলন্ত সেতু অন্যতম । ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে রাঙ্গামাটি শহরের শেষপ্রান্তে কর্ণফুলী হ্রদের কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয় পর্যটন হোলিডে কমপ্লেক্স। এখানে রয়েছে মনোরম ‘পর্যটন মোটেল’। এলাকাটি‘ডিয়ার পার্ক’ নামেই বেশি পরিচিত। এখানেই রয়েছে ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ মনোহরা ঝুলন্ত সেতু। এই ঝুলন্ত সেতু দেখার জন্যই প্রতিদিন দেশ বিদেশের বহু পর্যটক রাঙ্গামাটিতে ভিড় করেন ।





নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ভূমি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা জনবৈচিত্র্যর এক অনন্য মিলন ক্ষেত্র। এখানে দশভাষাভাষি এগারটি জাতি সত্ত্বার বসবাস রয়েছে। এরা হচ্ছে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, চাক, খিয়াং, খুমী, পাংখোয়া, বোম ও লুসাই। ভাষাও সংস্কৃতির বিচারে এক জাতিসত্ত্বা অন্য জাতিসত্ত্বা থেকে স্বতন্ত্র।নৃতাত্ত্বিক বিচারে তাদের সকলেই মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠিভুক্ত। সংখ্যাগরিষ্ঠতারদিক থেকে ‘চাকমা’হচ্ছে প্রধান জাতিসত্ত্বা। তাদের পরেই মারমা, ত্রিপুরা ওতঞ্চঙ্গ্যাদের অবস্থান। অন্যান্য সাতটি জাতিসত্ত্বার সংখ্যা অতি নগন্য।তারা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার মোট জনসংখ্যার ১.২৭% মাত্র। রাঙ্গামাটির দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পিলওয়ে,     সুবলং ঝর্ণা, উপজাতীয় যাদুঘর, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, পেদা টিং টিং, যমচুক, রাইংখ্যং পুকুর,  ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজার রাজবাড়ি ও  ন-কাবা ছড়া ঝর্ণা অন্যতম । সময় স্বল্পতার কারণে সবগুলো স্থান ঘুরে দেখা সম্ভব হয় নি ।

 

পূর্বেও বহুবার রাঙ্গামাটি ভ্রমণ করেছি । তবে ভার্সিটির বন্ধুদের সাথে রাঙ্গামাটি ভ্রমণটি আমার জন্য ছিল অনাবিল আনন্দদায়ক ও চির স্মরণীয় ।  

 

 

Email : shafiq_shohag@yahoo.com

১ Likes ০ Comments ০ Share ৬৩৭ Views