Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজু আহমেদ

১০ বছর আগে

সর্বাঙ্গে ব্যথা, মলম দিব কোথা

 

ছোটবেলায় মুরুব্বীদের মূখে শুনতাম, তেতুল এমন একটি ফল যা দেখলে জিবে জল আসবেনা এমন মানুষ ধরাধামে নাই । চিরন্তন সত্য হিসেবে এ বাক্যের কোন তুলনা নাই । কিছু দিন পড়েই পড়লাম, হায়রে অর্থ ! তুই সকল অনর্থের মূল । দ্বীতিয় বাক্যটি বিশ্ববাসীর কাছে কিছুটা বিতর্কিত হলেও বাংলাদেশের মানুষের কাছে চিরন্তন সত্য হিসেবে সত্যায়িত হয়েছে । সে অর্থের লোভই মানুষকে দুর্নীতির সায়রে নিমজ্জিত করেছে । কয়েকবছর আগে টানা পাঁচ বার বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিপ্রবন দেশগুলোর মধ্যে একনম্বরে ছিল । আশার কথা, বাংলাদেশ এখন আর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন নাই । তবে বাংলাদেশের দুর্নীতি কমে যাওয়ার কারনে দুর্নীতির স্কেল থেকে শীর্ষ স্থান হারিয়েছে এটা ভাবা মোটেও উচিত হবে না । বরং বাংলাদেশের দুর্নীতি দিনকে দিন বেড়েই চলেছে । বাংলাদেশের তুলনায় অন্য কয়েকটি দেশ দুর্নীতিতে পাকাপোক্ত অবস্থান করে নেয়ার ফলে সাময়িকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান একটু নিচের দিকে এসেছে । তবে রেসের ঘোড়ার মত যে গতিতে আমাদের দুর্নীতির লাগামহীন ঘোড়া ছুটছে তাতে আমাদের হারানো শীর্ষস্থান (!) ফিরে পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না । বিশ্বের গবেষণা সংস্থার প্রতিও ততোটা বিশ্বাস রাখা যায় না কারন এ সকল সংস্থায়ও দুর্নীতি প্রবেশ করেছে । ভালো কোন গুনের কারনে বিশ্ববাসী আমাদের না চিনলেও চোর হিসেবে বাংলাদেশীদের বেশ সুনাম ইতিমধ্যেই অর্জিত হয়েছে । যার সর্বশেষ প্রমান পদ্মাসেতুর জন্য বিশ্ব ব্যাংকের ঘোষিত আর্থিক সহায়তা প্রস্তাব স্থহিতকরণ ।
       বাংলাদেশে দুর্নীতি কোন নতুন বিষয় নয়, অস্বাভাবিক বিষয়ও নয় বরং দেশের জন্মলগ্ন থেকে চলমান একটি স্বাভাবিক বিষয় ।  এদেশের মানুষ যদি দুর্নীতি বা চুরি-ডাকাতি না করে বরং সেটাই হবে অস্বাভাবিক । ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের মানুষদের উৎপত্তি যে পূর্ব-পুরুষ থেকে হয়েছে সেই পুরুষগুলো হয় সুলতান মাহমুদে নয়ত পর্তুগীজ চরিত্রের । এরা স্বভাবগতভাবেই লুটেরা । তারা এ উপমহাদেশে বার বার এসেছে শুধু মাত্র সম্পদ হরনের লোভে । এ সম্পদ লুন্ঠনকালীন সময়ে তারা এ ভূ-খন্ডে যে দুই চার মাস অপেক্ষা করেছে সে সময়ের প্রমোদ উল্লাসেই এ বঙ্গীয় মানুষেদের উৎপত্তি । শুনতে খারাপ শুনালেও এটাই বাস্তব । পূর্ব-পুরুষরা যদি চোর হয় তবে উত্তর-পূরুষরা সে চরিত্র পাবে, সেটাই হওয়া স্বাভাবিক । কিন্তু সব সময় স্বাভাবিক মাত্রা গ্রহন করা উচিত নয় । আদিম যুগের মানুষেরা যেমন উলঙ্গভাবে বাস করত আমাদেরও সেরকম থাকা উচিত ছিল ! আমরা সেটা করছি না । কারন আমরা সভ্যতার শীর্ষে আরোহন করার জন্য প্রতিনিয়ত ছুটছি । আমরা চাই সভ্য হতে । মানবতার মঙ্গল বুঝতে চেষ্টা করছি । তবে সেটা ভাষণে, উপদেশে । নিজের ব্যাপারে যেমন ছিলাম তেমনি আছি । ছয় বছরের একটি শিশু থেকে শুরু করে ষাট বছরের একজন বৃদ্ধও বোঝেন দুর্নীতি দেশক ধ্বংস করে । তারপরেও দুর্নীতিতে চলছে প্রতিযোগিতা । কে কার চেয়ে কত বেশি দুর্নীতি করতে পারে । অনেকক্ষেত্রে দুর্নীতিকে দুর্নীতিও মনে করা হয় না । দুর্নীতির স্থলে কতগুলো শ্রুতিমধুর শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে । এ শব্দগুলো শুনলে মনেই হবে না এখানে দুর্নীতি হচ্ছে । দুর্নীতিতে বর্তমান সময়ে ঘুষ আদান-প্রদান প্রথাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে । অথচ এই ঘুষ শব্দের সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বখশিস, উৎকোচ, উপরিকামাই । ঘুষ গ্রহীতা যেমন স্বাচ্ছন্দে ঘুষ গ্রহন করছে তেমনি ঘুষ দাতারাও বিনা প্রতিবাদে ঘুষ দিয়ে যাচ্ছে ।
      বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারত বিশ্বের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ ।  ভারতে দূর্নীতির বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিবাদ প্রতিরোধের চেষ্টা চালানো হয় । কৃষাণ বাবুরাও হাজারে (আন্না হাজারে) কযেক কিস্তিতে দিনের পর দিন ‍দূর্নীতি বন্ধের দাবীতে অনশন করেছে । একটি লোকপাল বিল পাশ করার জন্য লোকসভায় বারবার আবেদন করেছেন । কাজের কাজ কিছুই হয়নি । ভারতে তাও তো দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিবাদ হয়েছে বাংলাদেশে তাও হয়নি । কিছু বুদ্ধিজীবিরা দুর্নীতির ‍বিরুদ্ধে লম্বা ভাষণ দিলেও তারাই একের পর এক দূর্নীতির ফাঁদ পেতে যাচ্ছেন । বাংলাদেশে দূর্নীতি হওয়ার অনেকগুলো কারন আছে তবে সবচেয়ে বড় কারন রাজনীতি । বাংলাদেশের রাজনীতির কর্তাব্যক্তিদের প্রায় ৯০% দেশের ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রন করেন । তাই তাদের দল যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই তারা দুর্নীতিতে এক একজন মস্ত হিরো বণে যান ।আঙুল ফুলে কলাগাছ হতেও বেশি সময় নেন না । বাংলাদেশের কোন কোন সেক্টরে দুর্ণীতি হয় সেটা নির্দষ্ট করে বলা সম্ভব নয় তবে বাংলাদেশের এমন কোন সেক্টর নাই যেখানে দুর্নীতি হয় না, এটা মোটমুটি নিশ্চিত । স্থানীয় চৌকিদার থেকে শুরু করে প্রশাসনের সবেচেয়ে উর্ধের ব্যক্তিটিও দূর্নীতির বাইরে নয় । প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সবাই দূর্নীতির সাথে জড়িত । এদেশে দুর্নীতি অন্যান্য সামাজিক প্রথার মত পালনীয় প্রথায় পরিনত হয়েছে । বাংলাদেশের কিছু সরকারী সংস্থা আছে যেগুলোতে অকল্পনীয় দুর্নীতি হয় । নির্দিষ্ট করে কারো নাম বলার সৎসাহস আমার নাই তবে এসবস্থলে যে দুর্নীতি হয় তা অবর্ণনীয় । এমনও অনেক অফিসার আছে যারা সরকারী নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো এবং অন্যান্য সুবিধাদিসহ ৪০ হাজার  টাকা বেতন পান অথচ তার বাসা বাড়া এবং দুই সন্তানের শিক্ষাখরচ বাবদ মাসে খরচ হয় দুই লক্ষাধিক টাকা । অন্যান্য খরচ না হয় বাদ দিলাম । ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, যারা কর্মজীবনের প্রতিটি দিন ঘুষ গ্রহন করল, দূর্নীতি করল সেই তাদের পেনশন উত্তোলন করতেও ঘুষ দিতে হয় । শুধু কি চাকরিজীবি ! কুলি মজুর থেকে শুরু করে সবাই দুর্নীতির সাথে জড়িত । যে শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে দুর্নীতিরোধের শিক্ষা দেয়া হয়, দেয়া উচিত সেই শিক্ষাকাঠামোর আপদমস্তক দুর্নীতিতে মোড়ানো । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পিয়ন থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান প্রধান পর‌্যন্ত সবাই ঘুষ গ্রহন করছে । শুধু যে ঘুষ গ্রহন দুর্নীতি তা কিন্তু নয় । স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারও দুর্নীতির ধরন ।
    ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের রিপোর্ট অনুযায়ী শুধুমাত্র ২০১১ সালে বাংলাদেশে দুর্নীতির কারনে ক্ষতি হয়েছে এগার হাজার দুইশত ছাপ্পানো কোটি টাকা । এই দুর্নীতি প্রতিরোধে আমরা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বিদেশী প্রভূদের পানে ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে রেখেছি । বিভিন্ন স্বার্থের কারনে বিদেশী প্রভূরা আমাদেরকে ভিক্ষা অথবা ঋণ দিয়েই চলছে । সে টাকা দেশে এনে লুটপাটের রাজনীতি কায়েম করছি । সরকারকে পদ্মাসেতু নির্মানের টাকার জন্য ভিক্ষার হাত বাড়ানো লাগত না যদি কঠোর হস্তে দুর্নীতি দমন করতে পারত । বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নামে একটি সংস্থা আছে যাদের কাজ হল দুর্নীতি দমন করা । অথচ এ সংস্থার যে সকল সাবেক প্রধানরা ছিলেন তাদের অনেকেই আজ দুর্নীতির মামলায় আসামী । দুদক তার আসল দায়িত্ব পালন না করে বিদক এর ভূমিকা পালন করছে । গত ০৫-০৩-১৪ তারিখ পত্রিকায় দেখলাম চট্টগ্রামে দায়িত্বপালনরত একজন শিক্ষা অফিসার ঘুষের টাকা গ্রহন করার সময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হাতে নাতে ধরা পড়েছে । তার বিচার কি হবে সেটা কয়েক দিনের মধ্যেই জাতি জানতে পারবে । বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত লেখকের লেখায় পড়লাম, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসের চৌকট-খুঁটিতেও ঘুষ খায় । কথাটা অনেক কষ্টের হলেও বাস্তব । দুই ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কোন কাজ সারার চেয়ে চাপরাশিকে ৫০ টাকা ধরিয়ে দিলে সে কাজ যদি পাঁচ মিনিটে হয়ে যায় তবে কে আর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে ? অথচ এরকম একটি একটি কাজ যোগ হয়ে যখন লক্ষ কাজে পরিনত হয় তখন কতটাকা দাঁড়ায় তার হিসেব কার কাছেই বা আছে ? ছোট্ট একটা গল্প বলে লেখাটা শেষ করব-

   একজন লোক ‍দুপুরে শহরের কোন এক নামকরা রেস্টুরেন্টে ঢুকে ইচ্ছামত আহার করল । আহার সমাপান্তে বেয়ারা তার কাছে বিলের যে ভাউচার প্রকাশ করল তাতে দেখা গেল খাবারবাবদ বিল এসছে ২২৫০ টাকা । লোকটি বসেই আছে । বিলও দিচ্ছে না আর রেস্টুরেন্টও ছাড়ছে না । ঘটনা বেয়াড়া গড়িয়ে ম্যানেজারের কান পর‌্যন্ত গেল । অনেক কথার পর লোকটি জানালো তার কাছে মাত্র দুইশত টাকা আছে । সে এর বেশি মোটেও পরিশোধ করতে পারবে না । ম্যানেজার বাবু ন্যায় বিচার পাবার আশায় নিকটস্থ থানায় ফোন করল । সাথে সাথে পুলিশ হাজির । লোকটি নির্দিধায় পুলিশের সাথে থানায় চলে গেল । পরেরদিন লোকটিকে বাইরে ঘুরতে দেখে লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, বলতো হে ! কতটাকা জরিমানা দিয়ে মুক্তি পেলে ? লোকটি হেসে কুটি কুটি হয়ে বলল, আরো বলবেন না-পুলিশও না আর আগের মত নাই । ভেবেছিলাম ৫০টাকা দিয়ে মুক্তি পাব তাতো আর হলো না ১০০ টাকাই দিতে হল । ২২৫০ টাকার কাজ যদি ১০০ টাকায় সাড়া যায় তবে দোষ কি ?
     এটা নিছক একটা গল্প । একান্ত আপনভেবে পুলিশকে টেনে আনলাম । শুধু পুলিশ নয় বাংলাদেশের প্রতিপদের, প্রতিশ্রেণীর মানুষ আজ দুর্নীতির সাথে আষ্ঠে-পৃষ্টে জড়িয়ে গেছে । নিকট ভবিষ্যতে এ ব্যধিমুক্ত হওয়ার লক্ষণ অনেকে দেখলেও আমি দেখি না । তবে যত দ্রুত এ ধ্বংসের ব্যধি থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব তত দ্রুতই আমাদের উন্নতি আকাশসীমায় পৌঁছবে । আশার বানী হলো, সময় পাল্টাতে শুরু করেছে । কিছু সাদা মনের মানুষের সার্থহীন উদ্যোগের ফলে, সব মানুষের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া উচিত । শুধু আমাদের সৎপথে আগমনই সরকারকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নববলে বলীয়ান করতে হবে ।

রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
raju69mathbaria@gmail.com  

০ Likes ০ Comments ০ Share ৩৯৭ Views

Comments (0)

  • - চারু মান্নান

    বেদনা ক্ষত; প্রলেপ লেপনে বসন্ত ঘ্রাণ
    কবি,,,,,,,

    - মাসুম বাদল

    অশেষ ধন্যবাদ,

    বড় ভাই...

    - ওয়াহিদ মামুন

    অর্থবহ কবিতা। খুব ভাল লাগল।

     

     

    • - মাসুম বাদল

      অশেষ ধন্যবাদ...

    Load more comments...