Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সময়ের চাকা

এই ধর ধর...। আহারে ...। পুরা গায়ের উপর দিয়া উঠাইয়া দিলো... মাথাটা দিয়া তো লোকটার রক্ত পড়তেছে। ভাই একটু ধরেন... হাসপাতালে লইয়া যাই...

বুধবারের সন্ধ্যা ৮ টা ১৯ মিনিটের দিকে এভাবেই হুইহুল্লোর শুরু হয় মতিঝিল মোড়টাতে। একজন কে একটা বাস চাপা দিয়ে চলে গেছে। আর সাথে সাথে ভীড় জমে উঠেছে ... লোকটার হাতের ৪ টা কমলা ছড়িয়ে গেছে রাস্তার মাঝে। একটা কমলা পিষ্ট হয়ে গেছে গাড়ির চাকার নিচে।

বুধবার সকাল ৬ টা । ঘড়ির তে টি টিট টি টিট করে এ্যালার্মটা বেজে উঠলো। সাথে সাথে আসাদ সাহেবের মেজাজটাও গরম হয়ে গেছে।।
- ধুর। এতো তাড়াতাড়ি ৬ টা বাজার কোন মানে হয় ?

আসাদ সাহেব ছা পোষা একজন মানুষ । প্রতিদিন তাকে সকাল সকাল উঠে কাজে যেতে হয়। মতিঝিল একটা অফিস এর সামান্য বেতনের চাকরী করেন।
আসাদ সাহেব কে রাগে গজ গজ দেখে তার স্ত্রী বলল - কী হল ? মেজাজ টা গরম মনে হচ্ছে ? মুখে একটু মায়া মেশানো হাসি ।
- হবে না গরম! এ্যালার্মটা বাজার আর সময় পায় নাই। এতো তাড়াতাড়ি বাজার কি দরকার ছিল?
- এ্যালার্ম তো সময় মতোই বেজেছে। এবার একটু জোরেই হেসে ফেলল।
এতে আসাদ সাহেবের মেজাজ বাড়লোই , কমার কোনও লক্ষন নেই।

মিনু, আসাদ সাহেবের স্ত্রী বলল - যাও । আর রাগতে হবে না। গোসল করে এস । আমি তোমার খাবার রেডি করছি।
- হুম যাচ্ছি। বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলেন। আর আসাদ সাহেবের স্ত্রীও রান্না ঘরে।

সকাল ৭:৩০...
- কি গো! হলো......? অফিস এর যে সময় হয়ে যাচ্ছে ।
- এই তো ... এই যে। রেডি হয়ে খাবার ঘরে এলেন আসাদ সাহেব।
- এই নাও তোমার টিফিন । আর সাবধানে যেও কিন্তু........।
-আচ্ছা...। বলে ৬ বছরের টিপু কে ঘুমের মাঝে এক পলক দেখে বের হয়ে গেলেন তিনি। আসবেন সেই রাত ৯ টায়।

সকাল ৭:৪৫...
আসাদ সাহেব বাসে বসে আছেন। বাসে করেই তাকে সবসময় মতিঝিল যেতে হয়। সেখানে প্রত্যহ যেতে যেতে অনেকের সাথেই আসাদ সাহেবের পরিচয় হয়ে গেছে। এমন কি বাসের হেল্পারের সাথেও। এতোটাই ভাব যে যদি তার কাছে কোনও দিন টাকা ভাংতি না থাকে তাহলে হেল্পার বলে উঠে……
- থাক মামু ! অইন্য দিন দিয়েন। মাত্র ১০টা টেকাই তো।

আসাদ সাহেবের বাস চলছে । আচমকা বাসের ব্রেক কষলো ড্রাইভার! আসাদ সাহেবের পিছের লোকটা তার গায়ে এসে পরলো। হাস্যকর কান্ড বটে তবে মেজাজ গরম হলো ড্রাইভারের এর উপর ।
- ঐ বেটা এভাবে ব্রেক কষলি কেন ? মানুষ তো মাইরাই ফেলবি।
সাথে সাথে অন্য ব্যাক্তির কথা - আরে ভাই। ওদের কাছে কি আমাদের জীবনের মূল্য আছে ? ওরা তো দুইটা বাস মিলাইয়া রেস লাগতে রাস্তায় নামছে।
কথা চলতে থাকে বাসের যাত্রীদের মধ্যে। একজন বলেন, একটা বাসকে ওভারটেক করতে গিয়া হঠাত সামনে একটা ভিখারী আইসা পড়ছিল। কিন্তু প্রশিক্ষিত চালক তারে বাঁচায় দিছে।
প্রশিক্ষিত ব্যাপার টা ভেবে আসাদ সাহেবের একটু হাসিই পেলো।

সকাল ৮:০০ টা ...
আসাদ সাহেব অফিসে ঢুকেই টেবিলে অনেক গুলো ফাইল দেখতে পেলো।
-নাহ। আসতে না আসতেই কাজ। ধুর......
আর কিছু না ভেবে কাজের মাঝে ডুবে গেলেন তিনি।

রাত ৮ টা ......
আসাদ সাহেব বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন।
-বাসগুলো এতো দেরি করে কেন কে জানে ? পাশে দাড়িয়ে থাকা এক লোক আসাদ সাহেব কে লক্ষ্য করেই বলেছে। জবাবে আসাদ সাহেব একটু হাসি দিয়ে মৌন সম্মতি জানালেন।
তারপর ঐ লোকটা অনেক কথাই বলছেন। কিন্তু আসাদ সাহেব এর মন অন্য জায়গায় । রাস্তার ওপারে কমলাওয়ালার কাছে। গোটা কয়েক কমলা নিবেন বলে ঠিক করেছেন , তার টিপুর জন্য। অনেকদিন আগেই তাকে বলেছিল " বাবা,কমলা খাবো! "

তিনি গেলেন রাস্তার ওপারে।
-ও ভাই, কমলা কতো?
-এক দাম ভাই ! হালি ৬০ টেকা।
- কম হবে না?
- না ভাই। তয় রাইত হইয়া গেছে গা। আমিও আর থাকুম নাহ। লন ৫৫ টেকায় লন।
- আচ্ছা, দুই হালি দিন ।
- এই লন ভাই।
টাকা দিয়ে খুশী মনে বাকী টাকা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে রাস্তা পার হতে থাকেন আসাদ সাহেব।
হঠাৎ করে একটা বাস সামনে এসে পড়লো...। আর আসাদ সাহেব ধাক্কা খেলো পুরো পেট বরাবর। হাতের কমলা রাস্তায় ছড়িয়ে গেছে। আর আসাদ সাহেব ও মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে তার... রাস্তার সবাই হুর হুর করে এসে পড়লো। মুহুর্তেই ভিড় হয়ে গেলো সেখানে……
- এই ধর ধর!
-আহহারে এ এ এ ......
-পুরা গায়ের উপর দিয়া উঠাইয়া দিয়া গেলো!
- মাথা থেইকা তো অনেক রক্ত বাইর হইতাছে......
- ভাই, কথা না বইলা আসেন আমরা ধইরা উনারে হাসপাতালে নিয়া যাই...
এই সব কথাই ভেসে আসে ভীড় থেকে।
বাকীটা শুধুই কল্পনা………….

রাত ৮:২০ ......
রাত ৯:২০ ......
রাত ১০:২০......

সময় বাড়তে থাকে । আবার পরের দিন সেখানে যে যার কাজের মতো কাজে আসতে থাকে। শুধু আসাদ সাহেবই আর এলেন না। জীবন থেমে থাকেনা কারোই। আসাদ সাহেব বিহীন সবাই চলতে থাকে যে যার মতো।

১ Likes ৩ Comments ০ Share ৪৮০ Views