Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সময়-চরিতঃ সত্যে হৃদয় জাগে



সময় চলে। চলে। ঘন্টা। দিন। মাস। বছর। সতত আবর্তনশীল সময়। সময় সব সময় একই রকম থাকে না। কখনো মধুর। কখনো অম্ল। আবার কখনো অম্ল-মধুর। সময়ের এই পথচলায় সময় আমাদের সঙ্গী করে নেয়। সময় পাল্টায়ও। সেই প্রাগৈতিহাসিক থেকে আধুনিক বা উত্তরাধুনিক। সময় ইতিহাস হয়ে থেকে যায় তার ধরন-ধারণের মধ্যে। তবে সময়ের সবচেয়ে বড় যে গুণ, তা হলো সময় অনেক কিছু ভুলিয়ে দেয়। এর বিপরীত ব্যাখ্যাও থাকতে পারে। কিন্তু Time is the best healer – এটা মন থেকে মেনে নিয়েই সময়ের হাতে আমরা অনেক কিছু সঁপে দিয়ে নিশ্চিত বা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সময়ের ঐতিহাসিক বা বৈশিষ্টগত ব্যাখ্যায় যাবার অভিপ্রায় আমার নেই। নেই যোগ্যতাও। আমি শুধু এই সময়ের দু’একটি অনুষঙ্গের আলোকপাত করার প্রয়াস নিচ্ছি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার টুকরো যোগ করে।

এই সময়টা- বর্তমান সময়টা একটু যেনো অস্থির। ঠিকভাবে সঠিক কোনো ক্যাটাগরিতে ফেলা যায় না।

মানুষের চিন্তা ও চেতনায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সত্যটাকে সহজভাবে নিতে চায় না কেউ। সহজ চিন্তাকে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে হয়। সরলতা বা সহজ সত্যের প্রকাশকে ভেবে নেয়া হয় সহজলভ্য দুর্বলতা বা বোকামী হিসেবে। চালাকী আর ধূর্ততার জয় যেনো সর্বত্র। দ্বিমত নেই, স্ট্র্যাটেজিক হওয়া ভালো। কিন্তু স্ট্র্যাটেজিক হবার নামে মিথ্যা আর কপটতার আশ্রয় নেয়া যখন স্মার্টনেস হয়, তখন মূল্যবোধের গলায় ফাঁস পড়ে বৈকি।

ব্যক্তিগত, সামাজিক, আর্থসামাজিক বা রাজনৈতিক – সকল পর্যায়ে মিথ্যাচার-পাল্টা মিথ্যাচার যেভাবে চলছে, তা দেখে লজ্জিত না হয়ে পারা যায় না। বড় বড় পদে থেকেও আজ কেউ মিথ্যাচার করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।

মিথ্যের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য উত্তরাধুনিক অনেক টেকনোলজি ব্যাপকভাবে সহায়ক। মোবাইল ফোনে মিথ্যে বলা যায় অনায়াসে। অনেকসময় হাস্যকরভাবেও। সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যমেই মিথ্যের চর্চা (!) আজ সংক্রামিত। অবলীলায় মিথ্যে বলে, মিথ্যে পরিচয় দিয়ে সম্পর্ক / বন্ধুত্বের নজির ম্যালা। এসবের কুফল এখন প্রায়ই খবরে দেখা যায়। ফেসবুক এগিয়ে এক্ষেত্রে। স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো বিভিন্ন মেগাসিরিজের মধ্য দিয়ে শিখিয়ে যাচ্ছে মূলত মিথ্যাচার নানা পারিবারিক ষড়যন্ত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে। এসব কতোটা শিল্পের চর্চা তা ভেবে পাওয়া ঠাউর করা যায় না।

এমন অনেক উদাহরণ দেয়া আজ আর কোনো কঠিন না। সত্যি বলতে কি, মিথ্যেকে স্মার্টনেস বা গর্ব করার অনুষঙ্গ মনে করলে সমাজে সত্যের চর্চা সুদূর পরাহত হবে সেটাই স্বাভাবিক। গুণের মর্যাদা দিতে না পারলে গুণী হয় না। সত্যের মূল্যায়ন না করলে তাই বুঝি সত্য আর বিকশিত হয় না!

পরিস্থিতি যেনো এরকমঃ
“সত্য মিথ্যার কি যে খেলা চলে !
দায়তো বুঝা কে যে সত্য বলে ।
মিথ্যে বলেই যেনো তৃপ্তি
মিথ্যেবাদীর মুখেই দীপ্তি
সত্য মিথ্যার যাচাই তবে কলে?”

(কল=মেশিন)

সত্য, মিথ্যে, স্ট্র্যটেজিক সত্য/মিথ্যে, চালাক, বোকা ও বুদ্ধিমান — ইত্যকার বিষয়ে প্রসঙ্গত ব্যক্তিগত দু’টি অনুষঙ্গ উল্লেখ করছিঃ

অভিজ্ঞতা ১ঃ কিছুদিন আগে ফেসবুকে বিপরীত লিঙ্গের একজনের কাছ থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাই। সাধারণত, কোনো রিকুয়েস্ট পেলে সংশ্লিষ্ট প্রোফাইল ভিজিট করে বিশেষ আপত্তিকর কিছু না থাকলে একসেপ্ট করে নিই। উনাকেও নিয়েছি। দুদিন পর, এই নতুন বন্ধুর কাছ থেকে ইনবক্সে মেসেজ পেলাম।
“হাই ফ্রেন্ড, কেমন আছো?”
প্রথমেই ‘তুমি’তে একটু থতমত খাই আমি। হয়তো এতোটা আধুনিক (!) হতে পারি নি বলেই। জানার চেষ্টা করি- আমার নতুন বন্ধুটির পরিচয়। তিনি একজন কলেজ স্টুডেন্ট। এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তখন আমি বিনীতভাবে জানালামঃ ” আমাকে আপনি সম্বোধন করলে ভালো হয়। কারণ আমি একজন বয়স্ক মানুষ।” তাকে জানালাম আমার বয়স চার-দশক পূর্ণ হয়েছে। মেয়েটি বুদ্ধিমতী। বুঝতে পেরে সরি বলে ‘আপনি’তে উত্তীর্ণ হলেন তিনি।

অভিজ্ঞতা ২ঃ মানুষের মনের কথা বুঝা বড় কঠিন। কিংবা অসম্ভব। বিশেষত, কেউ যদি সত্যি লুকায়, তা কী সবসময় জানা যায়? এই যে, আমার মাথার চুলের কতো অংশ পাকা তা কেবল জানে- শ্যামল কমফোট সেলুন-এর রতন। প্রতিবার হেয়ারকাটের পর রতন যতন করে মাথায় কালো রঙ লাগিয়ে দেয়।

উপরোক্ত ঘটনাদ্বয়ের আলোকে আমার ব্যাখ্যা হলো- ফেসবুকে আমার নতুন বন্ধুটিকে যেচে সত্য বলাটা জরুরি ছিলো। নইলে তা হতো কপটতা – মিথ্যাচার। এর কন্সিকুয়েন্সও নেগেটিভ হতে পারতো। এর নাম – সহজ সত্য। এরূপ সহজ সত্যকে ছোট করে দেখার উপায় নেই।

আর পরের বিষয়টিতে আসি। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস না করে, তবে আমি কখনই যেচে বলতে যাই না যে আমার মাথার অনেক চুল শ্বেতবর্ণ ধারণ করেছে। আর কেউ যদি প্রাসঙ্গিক কোনো কারণে জানতে চায় চুলের ব্যাপারে, তখন দ্বিধাহীন বলি সত্যটি। সহজ সত্য আর স্ট্রেটেজিক হতে মিথ্যাচার করার প্রয়োজন আছে কি? না।

শেষ করতে বলতে চাইঃ

ঢাকতে গিয়ে একটি মিথ্যে
দশটি মিথ্যে লাগে
সত্য কভু দেয় না ধোঁকা
সত্যে হৃদয় জাগে।

আসুন সত্যের চর্চা করি। সত্যের মধ্যেই মনের সুখ বিরাজ করে।

ঢাকা
২০১৫০১২১

২ Likes ২১ Comments ০ Share ৪৪৭ Views

Comments (21)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    emoticons

    - টোকাই

    কলম সঙ্গী উদাসী নির্জন রাতে কত কথাই না বলা হতো ডায়রির সাথে।

     

    দারুণ...