Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মোজাম্মেল কবির

১০ বছর আগে

সভ্য হতে কতো যুগ প্রয়োজন?

শিশু কালে মনে করতাম চোর মানুষ না, এক প্রকার জন্তু। এদের রাক্ষসের মতো দাত থাকে, ধারালো নখ থাকে। ভুল ভাঙ্গে যখন বর্ণমালা শেখার বই হাতে পেলাম। সে বইতে প্রথম একজন চোরের ছবি দেখার সুযোগ হয়। চ-তে চোর। অবাক হয়ে দেখলাম একজন মানুষের ছবি! মানুষের মতোই হাত পা নাক মুখ। সেই চোরের চেহারা দেখে বেশ মায়া হয়। মনে হচ্ছিলো দুই তিন দিন হলো সে কিছু খায় নি। লুঙ্গীর উপরে সেন্ডো গেঞ্জীটা বুকের এক পাশে ছেড়া। মুখে একটু কালি মাখা। হাত দুটো পিছনে বেঁধে রাখা। বয়স বাইশ তেইশ হবে। সে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। তার সিল্কি চুল গুলো সামনের দিকে ঝুলে আছে।ঠিক নায়ক শাহরুখ খানের চুল যেমন। বাংলাদেশ সরকার বর্ণমালার বই থেকে চোরের ছবি তুলে দেয়। শিশুদের বইতে এমন ছবি সভ্যতার পরিপন্থী। সেই শিশু কালে সত্যিকারের একজন চোর দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো। সুযোগ মিলে যায়। তখন উনিশশ ছিয়াত্তুর সাতাত্তুর হবে। ছয় চাচার অনেক বড় বাড়ি। ছয়টি বাড়ি। আমাদের বড় জ্যাঠার বাসায় রাতে চুরি করতে এসে ধরা পড়ে এক চোর। তখন মাঘ মাসের শীত। তাকে বাধা হয় বাড়ির সামনে লিচু গাছের সাথে। সকাল থেকে পালা করে বাড়ির জওয়ান ছেলেরা মনের সাধ মিটিয়ে পিটিয়ে যায়। নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসতে দেখি। ভয় উত্তেজনা নিয়ে আমরা ছোটরা দূরে দাড়িয়ে দেখি। কাছে যেতে সাহস হয় না। তা ছাড়া ছোট কাল থেকেই আমি মানুষের রক্ত দেখে নার্ভাস হয়ে যাই। এক পর্যায়ে হাতের বাধন খুলে চোরকে পুকুর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। হাত ও পায়ের দুই দিকে দুই জন ধরে দোলাতে দোলাতে পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেয়। পুকুরের চার পাশে শত শত মানুষ ভিড় করে মজা দেখে। আমার মনে হচ্ছিলো চোরটি কিছুক্ষনের মধ্যেই মারা যাবে। বেলা দশটার দিকে হালিমা আপা খবর পেয়ে ক্লাস বাদ দিয়ে কলেজ থেকে ছুটে আসেন। চোরকে পুকুর থেকে তুলে গা মুছে দিয়ে গরম কাপড় পড়তে দেন। গরম ভাত রান্না করে পাশে বসে খাওয়ান। মাস কালাই ডাল আর আলু ভর্তায় মাখা গরম ভাতে চোরের চোখের পানি টপ টপ করে পড়ছিলো। হাত খরচের কয়টা টাকা দিয়ে আপা চোরকে বিদায় করেন।সেই থেকে আমার মনে দাগ কেটে আছে -এক বেলা রুটি কিংবা ভাতের জন্য একজন চোরের ছবি।

আরেকটু বড় হয়ে জানলাম। চোরের চাইতে বড় ও ভয়ানক আরেকটা কিছু আছে। এরা ডাকাত, লুটেরা, দস্যু। ডাকু মনসুর, লুটেরা কিংবা ভারতীয় সোলে ছবিতে দেখেছি এদের ঘোড়া থাকে। নাকের নীচে প্যাচানো লম্বা গোঁফ থাকে। হাতে দো-নালা বন্দুক থাকে। এরা মানুষ খুন করে। এদেরকে দেখে সহজেই চেনা যায়। এদেরকে দেখে মানুষ সাবধানে থাকার সুযোগ পায়। লেবাস আর বেশ বুসায় অসুবিধা হয় বলে এই প্রজাতি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে।    

আরও বড় হয়ে জানলাম মানুষ শুধু পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য চুরি ডাকাতি করে না। চুরি এক প্রকার রোগ। এই রোগীরা কোট টাই পড়ে। দামী গাড়িতে চড়ে। গায়ে দামী পারফিউম মাখে। ভোটে জিতে ক্ষমতায় যায়। দেশের নীতি নির্ধারক হয়। এদের দ্বারা ধর্ষিত হয় গণতন্ত্র। প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে দর্জি দোকানের কর্মচারী বিশ্বজিতকে। পেট্রোল জ্বেলে পুড়িয়ে মারে মায়ের একমাত্র স্বপ্ন পিতৃহারা ঢাকা কলেজের ছাত্র অহিদুরকে। লুট করে মানুষের আহার মানুষের অধিকার, স্বপ্ন। লুট করে দেশের সম্মান।

পেটের দায়ে কিছু একটা করতে হয়। বেকার ভবঘুরে জীবন কার না পছন্দ। কিন্তু উপায় নেই। বাবা জমিদারী রেখে যান নি। রেখে গেলে গ্রীন টি খেতাম, বই পড়তাম আর লিখতাম। এক সময় কৃষি কাজ করতাম। এখন পেশা বদল করে বস্ত্র বিপণন করি। অন্ন থেকে বস্ত্রে। মৌলিক চাহিদার কারবারেই আছি। এই পেশায় এসে দেশ নিয়ে বিরাট এক সম্ভাবনার কথা জেনে অবাক হলাম। বর্তমানে বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। অচিরেই চীনকে পিছনে ফেলে প্রথম স্থানটি দখল করার পর্যায়ে আছে। পশুসুলভ বিকারগ্রস্ত রাজনৈতিক চর্চা পরিত্যাগ করে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চায় ফিরে এলে সেই পর্যায়ে যেতে শুধু সময়ের ব্যপার মাত্র।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ইরানের দুই যুবক আলী আর আখবার আসে আমার অফিসে। আলীর বয়স ছাব্বিশ বছর আর আখবারের সাইত্রিশ। ইরানের এই দুই তরুণ পোশাক ব্যবসায়ী। বাংলাদেশে এসেছে পোশাক কিনতে। এর আগে একজন ব্যবসায়ীর কাছে টিটি করে টাকা পাঠিয়ে অর্ধেক টাকা গচ্চা দিয়েছে। সেই টাকা উদ্ধার করতে একজন স্থানীয় গাইড ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে নতুন কিছু পণ্য কিনবে। আলী আর আখবারকে বেশ অপরিপক্ক মনে হয়েছে আমার কাছে। বাংলাদেশী যুবক গাইড বেশ চটপটে আর ধূর্ত। এই যুবক আলী আর আখবারের হারানো টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চার পাঁচ দিন আগে জানা গেলো বাংলাদেশী গাইড রুবেল আলী আখবারের বারো লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। আলী আর আখবার এখন ঢাকার ফুতপাতে রুবেলকে খুঁজছে। তার নাম আসলেই রুবেল কি না এই ব্যপারেও ওরা নিশ্চিত না। থানার এস আই এই রুবেলের ঠিকানা জানতে চাইলে ওরা কোন তথ্য দিতে পারে নি। দিলেও আমাদের পুলিশ ওদের কোন সহযোগিতা করতে পারতো কি না যথেষ্ট সন্ধেহ আছে। আমাদের পুলিশের ইউনিফর্মের নীচে লোমশ বুকে পিঠে কোন না কোন দলের সিল দেয়া। নিয়োগদাতার স্বার্থ রক্ষার বাইরে এক ইঞ্চি নড়ার সময় ও সুযোগ কোথায়। বাধ্য হয়েই আমাদের প্রশাসন লুটেরার চৌকিদার। লুটে নেয়া বনের জমি, ব্যাংক ও পুঁজি বাজারের অর্থ, বঞ্চিত মানুষের লুটে নেয়া স্বপ্ন তাহলে কি ফিরে পাবেনা মানুষ? ফিরে কি পাবেনা নির্বিঘ্নে নিরাপদে ঘরে ফেরার অধিকার?

পুনশ্চঃ হালিমা আপা অভিমান করে গত পয়ত্রিশ বছর গ্রামে যান না। রুটি কিংবা ভাতের জন্য একজন চোরের প্রতি আমাদের নির্মম আচরনে ব্যথিত তিনি। ঢাকায় নিবৃত জীবন কাটাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কানাডা প্রবাসী একজন বোনের কথা বলি। মা মাটি আর বাংলার সবুজ চোখে ভাসলে প্রতিদিন প্রাণ কাঁদে। রাষ্ট্রীয় অনিয়ম আর দুর্নীতির কথা মনে হলে মর্ম যাতনা বাড়ে। দুজনের কষ্ট এক -আমরা সভ্য হতে আর কতো যুগ প্রয়োজন?

০ Likes ৮ Comments ০ Share ৬৫৪ Views

Comments (8)

  • - লুৎফুর রহমান পাশা

    ভাই যব্বর একখান জিনিস বানাইছেন।

    পুড়িং আমার মেয়ের খুব পছন্দের খাবার।

    কিন্তু পাথ্থর দেইখ্খা টাশকি খাইছি

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      কেন কেন পাত্থররে কি করল আবার । ধন্যবাদ। আমি কিন্ত ভাই না আপু

    • Load more relies...
    - নীল সাধু

    আরে বাহ!!

     

    বেশ ভালো লাগলো ছবি। ঈশ সব দেখলেই খাইতে ইচ্ছে করে। মন মানে না

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      আগামী শুক্রবারে বানাব । দাওয়াত রইল কিন্তু :)

    • Load more relies...
    - ঘাস ফুল

    খালি ফাঁকিবাজি। রেসিপি দিয়া দাওয়াত দেয়া বন্ধ করার ধান্ধা। এটা অবশ্যই গ্রহণীয় না। বরং বানিয়ে দাওয়াত দেন, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে আপনার বাসায় হাজির হয়ে যাই। তখন বাচ্চাদের সাথে আমিও একটু চেখে দেখবো নে। 

    মজাদার রেসেপিটা জেনে রাখলাম। বাচ্চার মারে শিখাইয়া দিমুনে। আমি আবার কিঞ্চিত ফাঁকিবাজ আফনার লাহান। হে হে হে। ভালো থাকুন সতত। ধন্যবাদ রোদ্দুর। 

    • - লুৎফুর রহমান পাশা

      ফাকিবাজি চলবেনা । আমরা খাইতাম চাই। ছবি দেইখা খাওনের লোভ বাইড়া গেছেগা

    • Load more relies...
    Load more comments...