Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সবজী কথা (প্রথম পর্ব)

আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মিটাতে শাকসবজির ভূমিকা অপরিসীম। শাকসবজিতে আমারা প্রচুর আমিষ ও ভিটামিন পেয়ে থাকি। এটি আমাদের অনেকের খাদ্য তালিকায় উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। আর আমাদের দেশের উৎপাদিত শাক-সবজির একটা তালিকা ও এদের গুনাগুণ তৈরি করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা এই লিখা।

১। আদাঃ আদা একটি অর্থকরী ও উপকারি মশলা জাতীয় সবজি। এটি বেশ ঝাঁজালো।

► গুনাগুণঃ এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা শরীরের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে। জ্বর জ্বর ভাব, গলাব্যথা ও মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।এটি পাকস্থলী ও যকৃতের জন্য শক্তি বর্ধক, হজমকারক, বায়ুনাশক, স্বর পরিষ্কারক ও সর্দি কাশিতে বেশ উপকারক।

►হজমের জন্য ২-৩ গ্রাম বেটে বিট লবণের সঙ্গে খেলে উপকার পাবেন। সর্দি-কাশিতে ও স্বর পরিষ্কার করতে ২ চা চামচ তুলসি ও ২ চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। কানের ব্যাথার জন্য দিনে ৩-৪ ফোঁটা আদার রস গরম করে কানে দিলে উপকার পাবেন ।

►বমি বমি ভাব দূর করতে এর ভূমিকা অপরিহার্য। তাই বমি বমি ভাব হলে কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে মুখের স্বাদ বৃদ্ধি পায়।

►অসটিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস—এই অসুখগুলোয় সারা শরীরের প্রায় প্রতিটি হাড়ের জয়েন্টে প্রচুর ব্যথা হয়। এই ব্যথা দূর করে আদা। তবে রান্না করার চেয়ে কাঁচা আদার পুষ্টিগুণ বেশি।মাইগ্রেনের ব্যথা ও ডায়াবেটিসজনিত কিডনির জটিলতা দূর করে আদা।

► গর্ভবতী মায়েদের সকালবেলা, বিশেষ করে গর্ভধারণের প্রথম দিকে সকালবেলা শরীর খারাপ লাগে। কাঁচা আদা দূর করবে এ সমস্যা।দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

►গবেষণায় দেখা গেছে, আদার রস দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে, দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা জীবাণুকে ধ্বংস করে।

► দেহের কোথাও ক্ষতস্থান থাকলে তা দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে আদা।

► এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্ট, যা যেকোনো কাটাছেঁড়া, ক্ষতস্থান দ্রুত ভালো করে।

► ওভারির ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আদা। -------------------------------------------------------

 

২।শালগমঃ শালগম (Turnip) একপ্রকারের মূল জাতীয় সবজি যা সাধারণত সারাবিশ্বের উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ু অঞ্চলগুলিতে ভাল জন্মে। বৈজ্ঞানিক নাম ‎Brassica rapa। এর ছোট ও ভাল জাতটি মানুষ গ্রহণ করে; বড় আকারের শালগমগুলো পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সবচেয়ে পরিচিত জাতের শালগম সাদা রংয়ের হয় যা মাটি থেকে ১-৬ সেমি ওপরে জন্মে। মাটির ওপরে উঠে আসতে আসতে এর রঙ গোলাপী, লাল বা সবুজাভ ধারণ করে সূর্যের আলোতে। শালগমের ভেতরের অংশ সাদা রংয়ের হয়ে থাকে। এর শিকড় সাধারণত কৌণিক আকারের হয়, তবে মাঝে মাঝে তা টমেটোর মতো হয়ে যায় আকারে যার ব্যাস দাঁড়ায় ৫-২০ সেমি ও পার্শ্ব শিকড় থাকে না। দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকাতে শালগমের পাতা খাওয়া হয় সহকারী খাবার হিসেবে। সচরাচর ছোট পাতাগুলোই খাওয়ার জন্য পছন্দ করা হয় কারণ বড় পাতাগুলোয় কোন কটু স্বাদ থাকতে পারে। তবে বড় পাতা পানিতে সিদ্ধ করে পানি ফেলে দিয়ে পুণরায় নতুন পানিতে ভিজিয়ে কটূ স্বাদ দূর করা যায়। বি. রাপা জাতের শালগম চাষ করা হয় শুধু পাতা খাওয়ার জন্য যা চীনা বাঁধাকপি নামে পরিচিত। কাঁচা বাঁধাকপি বা মূলার মতো এতে ঝাঁঝালো স্বাদ থাকে যা সেদ্ধ করার পর কমে আসে। ওজনে শালগমের মূল প্রায় ১ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে, তবে সাধারণত অত বড় হওয়ার আগেই তা জমি থেকে তুলে ফেলা হয়। ছোট শালগমকে পুরোপুরি খাওয়া যায় পাতাসহ। এদের স্বাদ অতটা কটু থাকে না, তাই মূলার মতো সালাদ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শালগম অতি প্রাচীন সবজি। প্রাচীন রোমান যুগেও এটা খাওয়া হত। এর প্রাচীন রূপ দেখতে পাওয়া যায় পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপে।

► গুনাগুণঃ শালগম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি। সাধারণত শীতকালের এ সবজিতে প্রচুর ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং প্রচুর পরিমাণে আঁশ আছে। এর পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়, যা অত্যন্ত পুষ্টিকর।

►শালগম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

►এর লিউটিন নামক উপাদান হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।

►এতে থাকা ভিটামিন-সি দেহের কোষ ক্ষয় রোধ করে।

►শালগমের পাতায় গ্লুকোসিনোলেট নামক উপকারী উপাদান রয়েছে, যা ক্যানসার প্রতিরোধ করে। রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

►শালগমে প্রচুর আঁশ থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে।

►ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।

►শালগম কফ, ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমা নিরাময়ে সাহায্য করে।

►রক্ত পরিশোধিত করে এবং রক্তকণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

►এটি দেহে রোগসংক্রমণে বাধা দেয়। শালগম ক্ষুধামন্দা দূর করে।

►শালগমের রস রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

►এটি ব্রণসহ ত্বকের অন্যান্য সমস্যা নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

►সতর্কতাঃ তবে বয়স্ক ব্যক্তি, যাদের অন্ত্রের সমস্যা আছে এবং খাবার হজমে অসুবিধা হয়, তাদের শালগম না খাওয়া উচিত।

---------------------------------------------

 

৩। ওলকপিঃ ওলকপি (‎Brassica oleracea) কপিগোত্রের এক অন্যতম সবজি। ফুলকপি ও বাঁধাকপির মত অত জনপ্রিয় না হলেও, শীত মৌসুমে এ দেশে কোন কোন এলাকায় বেশ চাষ হয়। দু’রকমের ওলকপি দেখা যায়। এক ধরনের ওলকপির রঙ হালকা বা সাদাটে সবুজ, অন্যটার রঙ বেগুনি সবুজ। তবে হালকা সবুজ রঙের ওলকপিই আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়। বাঁধাকপি (পাতাকপি), ফুলকপি, ব্রকোলি ও ওলকপি সম্পর্ক এতই নিবিড় যে, এদের সকলেরই নাম Brassica oleracea। তবে সহজে চেনার জন্য এই নামের শেষে আর একটা নাম যোগ করে দেওয়া হয়ে থাকে যেমন ওলকপিকে বলা হয় Brassica oleracea gongyloides। হালকা সবুজ রঙের জাত আর্লি হোয়াইট ভিয়েনা এবং বেগুনী রঙের জাত আর্লি পার্পল ভিয়েনা প্রসিদ্ধ। এছাড়া আরও ৭/৮ জাতের উদ্ভাবিত ওলকপি পাওয়া যায়। তবে কোন জাতের ওলকপিই শালগমের মত মূল জাতীয় খাদ্য নয়। ওলকপির যে অংশ খাওয়ার উপযুক্ত, তা হচ্ছে রূপান্তরিত স্ফীত কাণ্ড। বাজারে গেলে অনেককেই ওলকপিকে শালগম বলে অভিহিত করতে শোনা যায়। যার যে নাম, তাকে সে নামে ডাকা না-হলে তা শ্রুতিকটু শোনায়।

► গুনাগুণঃ ওলকপির প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষনীয় অংশে যে পরিমাণে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আছে তা হল- জলীয় অংশ ৯২.৭ গ্রাম, আমিষ ১.১ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, বিভিন্ন খনিজ লবণ ০.৭ গ্রাম, শর্করা/শ্বেতসার ৩.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২০ মিগ্রা, ম্যাগনেসিয়াম ১৮ মিগ্রা, ভিটামিন এ ৩৬ আ.এ, থায়ামিন ০.০৫ মিগ্রা, ভিটামিন সি ৮৫ মিগ্রা, সালফার ১৪৩ মিগ্রা, সোডিয়াম ১১২ মিগ্রা ইত্যাদি।

-----------------------------------------------------------

 

৪।কচুঃ কচু অতি পরিচিত একটি উদ্ভিদ। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি কচু দেখতে পাওয়া যায়। রাস্তার পাশে, বাড়ির আনাচে কানাচে, বিভিন্ন পতিত জমিতে অনাদরে-অবহেলায় অনেক সময় কচু হয়ে থাকতে দেখা যায়। বহু জাতের কচু রয়েছে। কিছু কিছু জাতের কচু রীতিমত যত্নের সাথে চাষ করতে হয়। বনে জঙ্গলে যেসব কচু আপনাআপনি জন্মায় সেগুলকে সাধারণত বুনো কচু বলা হয়। এরা সবগুলো মানুষের খাবারের উপযোগী নয়। খাবার উপযোগী জাতগুলোর অন্যতম হচ্ছে মুখীকচু, পানিকচু, পঞ্চমুখী কচু, পাইদনাইল, ওলকচু, দুধকচু, মানকচু, শোলাকচু ইত্যাদি। সবজি হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও সৌন্দর্যের কারণে কিছু কিছু প্রজাতির কচু টবে ও বাগানে চাষ করা হয়। এদের মধ্যে কতগুলোর রয়েছে বেশ বাহারী পাতা, আবার কতগুলোর রয়েছে অত্যন্ত সুন্দর ফুল। অনুমান করা হয়, কচুর উৎপত্তি ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। প্রায় দু'হাজার বছর আগেও কচুর চাষ হত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। স্থলভূমি ও জলভুমি উভয় স্থানে কচু জন্মাতে পারে। তবে স্থলভাগে জন্মানো কচুর সংখ্যাই বেশি। কচুর বহু আয়ূর্বেদীয় গুনাগুন আছে বলে দাবি করা হয়। প্রজাতিভেদে কচুর মুল, শিকড় বা লতি, পাতা ও ডাটা সবই মানুষের খাদ্য। কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকায় রাতকানা রোগ প্রতিরোধে এটি অত্যন্ত উপকারী।

► মান কচুঃ বড় বড় ডাটা এবং পাতা ওয়ালা কচুকে আমরা মান কচু বলে। এটির পাতা খুব বড় বড় হয়। গ্রামের পিচ্চিরা ছাতার পরিবর্তে এর পাতা মাথায় দিয়ে বর্ষার দিন গ্রাম ময় ঘুরে বেড়ায়। একে TANNIA । এর বৈঙ্গানিক নাম ALOCASIA MACRORRHIZ। এর পাতা, কন্দ ও ডাঁটা সবই সবজী হিসেবে জনপ্রিয়।

► গুনাগুণঃ এটি সহজে হজমে সাহায্য করে।

►পিত্ত ও রক্তের জন্য ভাল। ঘায়ের ক্ষতে এর শেকড় বেটে লাগালে ঘা ২-৩ দিনে ভাল হয়ে যায়।

►কন্দ রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে পানিতে মিশিয়ে খেলে উদরী ও শোধ ( শরীর ফোলা) রোগ ভাল হয়।

►ডাঁটা আগুনে সেঁকে শিশুর কানে দিলে কান পাকা ভাল হয়। অশ্ব ও কষ্টোবদ্ধতায় মান কচু খুব উপকারি। ►এর পাতা খেলে মায়ের দুধ বাড়ে।

►সেদ্ধ পাতা ভাতের সঙ্গে খেলে প্রসাবের জ্বালা পোড়া কমে।

►পাতা পুড়িয়ে তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ফোঁড়ায় মাখলে ফোঁড়ার ব্যাথা কমে এবং ফোঁড়া ফেটে যায়।

► পঞমুখী কচুঃ এর গুড়ি কন্দের চেয়ে সরু এবং উপরের অংশ ছড়ানো। আর কাণ্ড হতে ডাটার সংখ্যা ৫ টি হয় বলে একে পঞমুখী কচু বলে। এর বৈঙ্গানিক নাম-XANTHOSOMA VIOLACEUM। বানিজ্যিক ভাবে এর চাষ হয় না। অনেকে একে বন কচু বলে থাকে।

-----------------------------------------------------------

মৌলভি কচুঃ এটি বর্ষার ফসল। একে ভাল ভাবে চাষ করলে এটি আলুর জায়গা দখল করতে পারে। এর বৈঙ্গানিক নাম- COLOCASIA CSCULEATA ।

ওল কচুঃ আমাদের অতি পরিচিত একটি গুড়ি কন্দ জাতীয় সবজী। এর বৈঙ্গানিক নাম- AMORPOHALLUS CAMPANULATUS.

► সার্বিক গুনাগুণঃ কচু একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর সবজি। এ দেশে কচু তেমন সমাদৃত নয় এবং অনেকটা অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হয়। অথচ কচু শাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’, ক্যালসিয়াম, লৌহ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এ শাক দুই প্রকার যথা : (১) সবুজ কচু শাক (২) কালো কচু শাক

►খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ ও কালো কচু শাকে যথাক্রমে ১০২৭৮ ও ১২০০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন রয়েছে। এ ক্যারোটিন থেকেই আমরা ভিটামিন ‘এ’ পেয়ে থাকি। এ ছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ কচু শাক থেকে ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন, ৬.৮ গ্রাম শর্করা, ১.৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ০.২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফেবিন), ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ ও ৫৬ কিলো ক্যালোরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়।

►সবুজ কচু শাকের চেয়ে কালো কচু শাক অনেক বেশি পুষ্টিকর। প্রতি ১০০ গ্রাম কালো কচু শাকে ৬.৮ গ্রাম প্রোটিন, ৮.১ গ্রাম শর্করা, ২.০ গ্রাম চর্বি, ৪৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩৮.৭ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.০৬ মিলিগ্রাম ভিটামিনি বি-১ (থায়ামিন), ০.৪৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফেবিন), ৬৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ ও ৭৭ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি রয়েছে। দেহের পুষ্টি সাধনে এসব পুষ্টি উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

►কচু শাকে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এ শাকের লৌহ দেহ কর্তৃক সহজে আত্তীকরণ হয়। প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেয়া ছাড়াও প্রাচীনকাল থেকে কচুকে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।

►মুখী ও পানিকচুর ডগা দেহের ক্ষত রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

►তাছাড়া জ্বরের রোগীকে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য দুধকচু খাওয়ানো হয়।

► ওলকচুর রস, উচ্চরক্তচাপের রোগীকে প্রতিষেধক হিসেবে খাওয়ানো হয়।

►আবার মান কচুর ডগা ও পাতা বাতের রোগীকে খাওয়ানোর প্রথা এ দেশের ঘরে ঘরে প্রচলিত রয়েছে।

►কচু শাকে পর্যাপ্ত আঁশ থাকায় এটি দেহের হজমের কাজে সহায়তা করে। --------------------------------------------------

 

৫। কাঁকরোলঃ কাঁকরোল একটি জনপ্রিয় সবজী। সম্পূর্ণ পরীপক্ক হবার এগেই একে ভাঁজি বা সেদ্ধ করে ভর্তা করে খাওয়া হয়। কাঁকরোল কুমড়া পরিবারে অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রীষ্মকালীন সবজি। বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, কুমিলৱা, যশোর, কিশোরগঞ্জ, চট্টগাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর পরিমাণে বাণিজ্যিকভাবে কাঁকরোলের চাষ হচ্ছে। এতে অন্যান্য সবজির তুলনায় বেশি পরিমাণে আমিষ থাকে যাহা মানুষের দৈহিক গঠনের জন্য খুবই দরকারী।

► গুনাগুণঃ কাঁকরোলের প্রতি ১০০ গ্রাম ভণযোগ্য অংশে থাকে প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, চর্বি ১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ১.১ গ্রাম, শর্করা ৭.৭ গ্রাম, শক্তি ৫২ কিলো ক্যালরি, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিগ্রা, ফসফরাস ৪২ মিগ্রা, আয়রন ৪.৬ মিগ্রা এবং ক্যারোটিন ১৬২০ মাইক্রো গ্রাম। বাংলাদেশে কাঁকরোল চাষের কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও এটি সারা দেশে চাষযোগ্য গ্রীষ্মকালীন একটি অতি প্রচলিত সবজি। কাঁকরোলে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। এতে রয়েছে ফাইবার, মিনারেল, ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। * গর্ভকালীন সময়ে অনেকের স্নায়ুবিক ত্রুটি দেখা দেয়। কাঁকরোল ভিটামিন বি ও সি-এর ভালো উৎস। যা কোষের গঠন ও নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলে স্নায়ুবিক ত্রুটি হয় না। * কাঁকরোলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট, পলিপেপটিড-পি ও উদ্ভিজ্জ ইনসুলিন আছে। যা ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করে যকৃৎ, পেশি ও শরীরের মেদবহুল অংশে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষণ করে। * ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় হজমে সাহায্য করে। * কাঁকরোল ভিটামিন সি পরিপূর্ণ হওয়ায় প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টরূপে কাজ করে। যা শরীরের টক্সিন দূর করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। * এতে আছে বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন, লিউটেইন, যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, ত্বককে করে তারুণ্যদীপ্ত। * কাঁকরোলের ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। * জ্বর হলে কাঁকরোল পাতার রস কিছু সময় সেদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে পান করুন। জ্বর কমে যাবে। * পাইলসের সমস্যা থাকলে পাঁচ গ্রাম কাঁকরোল বাটার সঙ্গে পাঁচ গ্রাম চিনি মিশিয়ে দিনে দুইবার পান করুন। পাইলস নিরাময় হবে। * ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতেও কাঁকরোলের জুড়ি নেই। গোসলের সময় কাকরোল বাটা স্ক্রাব হিসেবে গায়ে মাখুন। ১০ মিনিট শরীরে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এতে দুর্গন্ধও কমে যাবে এবং ত্বকও কোমল থাকে। * কাশি হলে তিন গ্রাম কাঁকরোল বাটা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে তিনবার পান করুন। কাশি কমে যাবে। * শ্বাসকষ্ট হলে ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম কাঁকরোলের শেকড় বাটার সঙ্গে এক চা চামচ আদার রস ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খান। আরাম পাবেন। * কিডনিতে পাথর হলে ১০ গ্রাম কাঁকরোল বাটা এক গ্লাস দুধে মিশিয়ে খান। এভাবে প্রতিদিন পান করুন, দ্রুত সেরে যাবে।

---------------------------------------

৬। কালিজিরাঃ মশলা জাতীয় এই সবজীটি খুবই উপকারী। সাধানত এটি ভেজে এমনি বা তরকারিতে খুব অল্প পরিমাণ দিয়ে খাওয়া হয়। এর তেল দিয়ে ভর্তাও খাওয়া হয়।

► গুনাগুণঃ দারুণ উপকারী মশলা কালিজিরা। তাই একে খাদ্য না বলে পথ্য বলাটাই ঠিক। জ্বর, কফ, গায়ের ব্যথা দূর করতে কালিজিরা একটা দারুণ ঘরোয়া ওষুধ।

►এতে রয়েছে খিদে বাড়ানোর উপাদান।

►অন্ত্রের জীবাণুকে নাশ করে শরীরের জমে থাকা গ্যাসকেও দূর করে দিতে কালিজিরার বিকল্প নেই।

►যারা মোটা হতে চান, তাদের জন্য কালিজিরা একটা ভালো পথ্য।

►বয়স হলে হাত-পা ফুলে যাওয়াটা একটা বড় সমস্যা। একদিকে প্রস্টেট জনিত সমস্যা সেই সঙ্গে কিডনি জনিত রোগের কম-বেশি বয়স্কদের পা ফোলা সমস্যায় ভোগেন। কালিজিরা এই সমস্যা রুখতে পারে।

►কাঁচা কালিজিরা পিষে খেলে মায়ের দুধ বাড়ে।

►কালিজিরা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। এটি সহজেই শরীরের রোগ-জীবাণু ধ্বংস করে দিতে পারে। এই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদানের জন্য দেহের ঘা, ফোঁড়া কম সময়েই সারে। শাকের সঙ্গে কালিজিরা খাওয়াই রীতি। এতে শিশুদের ক্ষেত্রে মেধার বিকাশ ঘটে। কালজিরা আদপে অ্যান্টিসেপটিক বলেও অনেক ভেষজবিদ মনে করেন। দাঁতে ব্যথা হলে হালকা গরম জলে কালিজিরা দিয়ে কুলকুচু করলে ব্যথা কমে। জিহ্বা, টাকরা বা মাড়িতে থাকা খাদ্যের জীবাণু সহজেই মরে যায়। ফলে মুখে আর দুর্গন্ধ হয় না।

►তবে হ্যাঁ, সবটাই করতে পরিমিত পর্যায়ে। কেননা খুব বেশি কালিজিরা খেলে হিতের চেয়ে বিপরীত হতে পারে। প্রথমে দেখে নেবেন আপনি বা আপনার পরিজনের কালিজিরা সহজে হজম হচ্ছে কিনা। অনেকেই পারেন না। যা সহজে কালিজিরা হজম করতে পারেন না তারা খাবেন না।

►কালিজিরা ক্রিমি দূর করতেও পারে। তারুণ্য ধরে রাখতে মধ্যপ্রাচ্যে কালিজিরা খাওয়াটা দীর্ঘদিনের রীতি। কাজ করার শক্তিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে এই কালিজিরা। সরাসরি খাওয়ার থেকে প্রথম প্রথম ভাত বা রুটির সঙ্গে কালিজিরা খাওয়াটা অভ্যাস করুন। যদি আপনার সহ্য হয়, তাহলে অবশ্য আপনাকে স্বাস্থ্যের সহায়ক হবে একই কমদামি মশলা।

►কালিজিরা আয়ুর্বেদীয় , ইউনানী, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। মশলা হিসাবে ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে, এটি পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান।

►রসুল (সাঃ) বলেছেন, “একমাত্র মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ঔষুধ এই কালিজিরা।’’

►প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ খাবারের সঙ্গে ‘কালিজিরা’ গ্রহণ করে আসছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানতে পেরেছেন যে কালিজিরার সব গুণ লুকিয়ে আছে এর তেলে।

►কালিজিরার তেলও আমাদের শরীরের জন্য নানাভাবে উপকারি। কালিজিরার তেলে ১০০টিরও বেশি উপযোগী উপাদান আছে। এতে আছে প্রায় ২১ শতাংশ আমিষ, ৩৮ শতাংশ শর্করা এবং ৩৫ শতাংশ ভেষজ তেল ও চর্বি। কালিজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। এতে আরও আছে আমিষ, শর্করা ও প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডসহ নানা উপাদান। পাশাপাশি কালিজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি। শরীরের রোগ প্রতিরোধে কালিজিরার মতো এত সহজে এত কার্যকর আর কোনো প্রাকৃতীক উপাদান আছে বলে জানা যায়নি।

►কালিজিরার তেলের উপকার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ইনসুলিন রোধ হ্রাস (এভাবে ডায়াবেটিস কমিয়ে রাখা), কাশি ও হাঁপানির উপশম, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, হৃজ্জনিত সমস্যার আশঙ্কা হ্রাস, চুল পড়া হ্রাস, ত্বকের সুস্বাস্থ্য, মায়ের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি, আর্থাইটিস ও মাংসপেশির ব্যথা কমাতে কালিজিরার তেল উপযোগী।

►কালিজিরার তেল গর্ভাবস্থায় গ্রহণ করতে হয় না।আবার যাদের শরীরে পানি জমে হাত-পা ফুলে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে, তাদের পানি জমতে বাঁধা দেয়। কালিজিরা শরীরের জন্য খুব জরুরি।

--------------------------------------

৭। করলাঃ বৈজ্ঞানিক নাম MOMORDCAHA RANTIA । করলা মূলত বাংলাদেশী উদ্ভিদ, যা ১৪শ শতাব্দিতে চীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। করলা ফল একপ্রকার সব্জি। তেতো স্বাদের এবং কাঁটাযুক্ত শরীর। পরিণত ফল কমলা বা লাল, দৈর্ঘ্য ১২-২৫ সেন্টিমিটার। এটি যত পাকে আরো তেতো হয়। খোসা কুটে নুনজলে চুবিয়ে রাখলে তেতো কম হয়। দক্ষিণপূর্ব এশীয় এই সবজি এখন সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে উষ্ণমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে।

গুনাগুণঃ করলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে।

►কলার দ্বিগুণ পটাশিয়াম ও পালংশাকের দ্বিগুণ পরিমাণে ক্যালশিয়াম করলাতে রয়েছে। দাঁত ও হাঁড় ভালো রাখার জন্য ক্যালসিয়াম খুবই জরুরি। ব্লাড প্রেসার মেইনটেইন করার জন্য ও হার্ট ভালো রাখার জন্য পটাশিয়াম প্রয়োজন। ►করলাতে যথেষ্ট পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে ও চোখের সমস্যা সমাধানে বিটা ক্যারোটিন খুবই উপকারী।

►করলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি ত্বক ও চুল ভালো রাখার জন্য একান্ত জরুরি। ভিটামিন সি প্রোটিন ও আয়রন অ্যাবজর্বশনে সাহায্য করে। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।

► করলাতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেশিয়াম, ফলিস এসিড, জিঙ্ক, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম।

► ডায়েটারি ফাইবার-সমৃদ্ধ করলা কনস্টিপেশনের সমস্যা কমায়।

►ডায়াবেটিসের পেশেন্টের ডায়েটে করলা রাখুন। করলাতে রয়েছে পলিপেপটাইড পি ব্লাড ও ইউরিন সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করলা বা করলার রস অথবা করলা সিদ্ধ খেতে পারেন।

►নানা রকমের ব্লাড ডিজঅর্ডার যেমন স্ক্যাবিজ, রিং ওয়র্ম-এর সমস্যায় করলা খুবই উপকারী। করলা ব্লাড ফিউরিফিকেশনে সাহায্য করে।

► করলা স্কিনের সমস্যা ও ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

► করলা পাতার রস খুবই উপকারী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। নানা ধরনের ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। এনার্জি ও স্ট্যামিনা বাড়িয়ে তুলতেও করলা পাতার রস সাহায্য করে।

►করলা পাতার রস শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন ফ্ল্যাশ আউট করতে সাহায্য করে।

►ডায়রিয়া বা কলেরার প্রথম পর্যায়ে করলা পাতার রস খেতে শুরু করলে ভালো।

►অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস ও ফ্যারেনজাইটিসের মতো সমস্যা কমাতে করলা পাতার রসে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। ►করলা পাতার রস সোরিয়াসিসের সমস্যা, ফাংগাল ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

----------------------------------------------------------------

০৮ । আলুঃ আলু সোলানেসি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত একটি কার্বোহাইড্রেট ও কন্দযুক্ত শস্য। এর বৈজ্ঞানিক নাম সোলানাম টিউবেরোজাম। বিশ্বে উচ্চহারে অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত শস্যের তালিকায় আলুর স্থান চতুর্থ। যার প্রথম তিনটি হচ্ছে যথাক্রমে- ধান, গম ও ভুট্টা। আলুর জন্মস্থান পেরু হলেও বর্তমানে আলুর শতকরা ৯৯ ভাগই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আলু উৎপাদিত হয়ে থাকে। বর্তমানে আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রে চীন প্রথম স্থান ও ভারত দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে। আলুতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে আছে ক্যারোটিনয়েড ও পলিফেনলের মতো প্রয়োজনীয় ফাইটোকেমিক্যাল। পুষ্টিমান বিবেচনায় আলুর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর কার্বোহাইড্রেট উপাদান। একটি মাঝারি আকারের আলুতে রয়েছে প্রায় ২৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। আলুর কার্বোহাইড্রেট অংশের উল্লেখযোগ্য অবস্থা হচ্ছে স্টার্চ। আর খুব সামান্য হলেও স্টার্চের একটি বিশেষ অংশ আমাদের শরীরে বিভিন্ন কাজে লাগে। রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ রান্নার পর শতকরা ৭ ভাগ এবং ঠান্ডা করার পর শতকরা ১৩ ভাগে উন্নীত হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ছালের ঠিক ভেতরের পাতলা স্তরে আলুর বেশিরভাগ পুষ্টি থাকে। এজন্য আলু ছোলা অর্থাৎ কাটা ও রান্নার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকা প্রয়োজন, নয়তো পুষ্টিমান কমে যেতে পারে।

গুনাগুণঃ কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরিসমৃদ্ধ আলু আমাদের শারীরিক শক্তির উৎস। ভিটামিন-'সি', ভিটামিন-'বি'৬, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইবারে সমৃদ্ধ থাকার কারণে আলু আমাদের শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি খুব সহজেই মেটাতে পারে।

►মিষ্টি আলুতে ক্যালরি খুব কম এবং প্রায় ফ্যাট নেই বললেই চলে। তাই যাদের ক্ষেত্রে ক্যালরি-ফ্যাটে সমস্যা তারাও আলু খেতে পারবে। আলুতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, পটাশিয়াম ও ভিটামিন-'এ', যা খুবই প্রয়োজনীয়।

►এনার্জি বা শক্তি উৎপাদক হিসেবে আলু খুবই নির্ভরযোগ্য একটি খাদ্য।

►আলু থেকে প্রাপ্ত শক্তি লাইকোজেন হিসেবে মাংসপেশি ও লিভারে সঞ্চিত থাকে। তাই শারীরিক ব্যয়ামের ক্ষেত্রে বিশেষ করে খেলোয়াড়দের জন্য আলু একটি উত্তম খাদ্য।

►আলু কম মাত্রায় সোডিয়ামযুক্ত, প্রায় ফ্যাটমুক্ত ও সহজে হজমযোগ্য হওয়ার কারণে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখা যায়।

►স্টমাক আলসার বা পাকস্থলীর ক্ষত নিরাময়ে ও কোলন বা অন্ত্রের ফুলে যাওয়ায় আলু খুবই উপকারী।

►উচ্চমানের ফাইভার থাকায় হেমোরয়েড বা অর্শ্ব রোগেও আলু খুব সাহায্য করে থাকে।

►উচ্চমানের ভিটামিন-'এ'-এর সমৃদ্ধতার কারণে গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি ও এপিথেলিয়াল টিস্যুযুক্ত

►অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধে আলু সাহায্য করতে পারে। আলু রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এটি একটি উপকারী খাদ্য।

►হার্ট-অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রতিরোধেও আলু সাহায্য করে থাকে। পটাশিয়াম থাকার কারণে আলু আমাদের দেহ কোষে ইলেক্ট্রোলাইট ও ফ্লুইডের সমতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। হার্টের স্বাভাবিক কাজকর্মে সাহায্য করার পাশাপাশি ব্লাডপ্রেসারও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

----------------------------------------

৯। শিমঃ শিম সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আমিষের একটি ভালো উৎস। এটি সবজি হিসেবে এবং এর শুকনো বীজ ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ (প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ) ও স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। শিমগাছ শিকড়ের সাহায্যে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে মাটিকে উর্বর করে। শিমের পুষ্টি উপাদান

গুনাগুণঃআহার উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে কচি শুঁটিতে পানি ৮৫ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৮ কিলোক্যালরি, আমিষ ৩ গ্রাম, শর্করা ৬.৭ গ্রাম, চর্বি ০.৭ গ্রাম , খনিজ লবণ ০.৪ গ্রাম, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ২১০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.৭ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৮৭ মাইক্রো মিলিগ্রাম এবং আঁশজাতীয় উপাদান বিদ্যমান।

►পরিপক্ব শুঁটিতে পানি কম থাকে এবং কিছু উপাদান বেশি থাকে। যেমন_শ্বেতসার ৬০ গ্রাম, আমিষ ২৫ গ্রাম, স্নেহ ০.৮০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬০ মিলিগ্রাম, তাপশক্তি ৩৪০ কিলোক্যালরি।

►আঁশ-জাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়।

►রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা প্রকারান্তরে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। -

► পাকস্থলী ও প্লিহার শক্তি বাড়ায়, শরীরের ভেতরের গরম ভাব দূর করে। -

►লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে। -

► মাছসহ বিভিন্ন খাবারের ফুড পয়জনিং প্রতিরোধী অ্যান্টিডোট হিসেবে ব্যবহার করা যায়। -

► শিমের ফুল রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।

►সতর্কতাঃ শিমে সামান্য পরিমাণে ক্ষতিকর সায়ানোজেনিক গ্লুকোসাইড আছে। কাজেই শিম পরিমাণে খুব বেশি খাওয়া উচিত নয়। শুকনো শিমে এই উপাদানের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই শিমের শুকনো বিচি রান্না করার সময় অবশ্যই একবার পানি পরিবর্তন করা উচিত। শিম খেলে অনেক সময় বমি বমি ভাব হতে পারে।

------------------------------

১০। পুদিনা পাতাঃ পুদিনা এক প্রকারের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতা সুগন্ধি হিসাবে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য স্থানীয় নামঃ Mint, nana। এর বৈজ্ঞানিক নামঃ Mentha spicata । এটি Lamiaceae পরিবারের অন্তর্গত। 

গুনাগুণঃ পুদিনা পাতা প্রাচীনকাল থেকেই বেশ জনপ্রিয় ওষুধ হিসেবে পরিচিত। বহু রোগের আরোগ্যে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

►পুদিনা পাতা এক ধরনের সুগন্ধি গাছ। এই গাছের পাতা তরি-তরকারির সঙ্গে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের অনেক দেশেই পুদিনার গাছ জন্মে। এর পাতা সুগন্ধি হিসেবে রান্নায় ব্যবহার করা হয়।

►পেটের পীড়ায় : এটি ইরেটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস) এবং দীর্ঘস্থায়ী বদহজমের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর। ►এছাড়াও পুদিনা কোলনের পেশি সঙ্কোচন নিয়ন্ত্রণ করে।

►অ্যাজমা : পুদিনায় রোজমেরিক এসিড নামের এক ধরনের উপাদান থাকে।

►এটি প্রাকপ্রদাহী পদার্থ তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে অ্যাজমা হয় না।

►এছাড়াও এ ঔষধি প্রোস্টসাইক্লিন তৈরিতে বাধা দেয়। তাতে শাসনালী পরিষ্কার থাকে।

►এন্টিক্যান্সার : পুদিনায় আছে মনোটারপিন নামক উপাদান। যা স্তন, লিভার এবং প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। নিয়মিত খেলে ফুসফুস, কোলন এবং ত্বকের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

►পুদিনার ভেষজগুণঃ পুদিনা খুবই উপকারী একটি উদ্ভিদ। আমাদের শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। মুখের স্বাদ বাড়াতেও এটি খুব কার্যকর। আরও যেসব ক্ষেত্রে পুদিনার পাতা ব্যবহার করা যায়, তা হলো : ১. পুদিনার তাজা পাতা পিষে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর যদি তা ধুয়ে ফেলা যায়, তাহলে মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যায়। ব্রণ ওঠাও বন্ধ হয়। ২. পুদিনার পাতা পিষে রস করে তার ভেতর দু’তিন ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে তা পান করলে ক্লান্তিভাবও দূর হয়। ৩. কোনো কারণে কোনো ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার নাকের কাছে কিছু তাজা পুদিনা পাতা ধরুন। দেখবেন, লোকটি জ্ঞান ফিরে পেয়েছে। ৪. পুদিনার পাতা ভালো করে পিষে তার রস ভালো করে মাথায় ব্যবহার করুন। যাদের চুলে উকুন আছে তারা খুব উপকার পাবেন। ৫. শরীরের ব্যথা দূর করতে পুদিনা পাতার চা খুব কাজে দেয়। ৬. মাথা ও পেট ব্যথা নিরাময়েও পুদিনার পাতা খুব উপকারী। ৭. যাদের মাঝে মধ্যে হেঁচকি ওঠে, তারা পুদিনা পাতার সঙ্গে গোল মরিচ পিষে তা ছেঁকে নিয়ে রসটুকু পান করুন। দেখবেন হেঁচকি বন্ধ হয়ে গেছে। --------------------------- ক্রমশ------------------------

০ Likes ১ Comments ০ Share ৭৬৫ Views

Comments (1)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    গল্পটার মাঝে ব্যস্তবতার ছুঁয়া আছে

    শুভ কামনা---