Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ষাটের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়ক খলিলউল্লাহ খান খলিলের মহাপ্রায়নে শ্রদ্ধাঞ্জলি


ষাটের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম অভিনেতা খলিলউল্লাহ খান খলিল আর নেই। আজ রোববার সকাল ১০টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন (ইন্না; রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর। মৃত্যুর সময় তিনি তিন ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গিয়েছেন। এছাড়া তার মৃত্যুর আগে তার আরও দুই ছেলে মারা গিয়েছে। খলিলউল্লাহ খান খলিল দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস, লিভার ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর ছেলে খালেদ খান জানিয়েছেন তিন দিন আগে তাঁর হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে তাঁকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি চিকিৎসক খালেদ মোহসিনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর আগে ২০১১ সালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা হয়। বড় পর্দার এই অভিনেতা বেশ কয়েকটি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন। শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ধারাবাহিক সংশপ্তক এ মিয়ার বেটা চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক নন্দিত হন। দর্শক নন্দিত জনপ্রিয় এই অভিনেতার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।

খলিলউল্লাহ খান ১৯৩৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের মেদিনিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি সিলেটের কুমারপাড়ায়। তার পিতা মরহুম শফিউল হক খান ও মা মেহেরুন্নেছা। তার বাবা পুলিশ অফিসার ছিলেন বলে তাকে মেদিনিপুর, কৃষ্ণনগর, বগুড়া, বর্ধমান, নোয়াখালী যেতে হয়। খলিলের শৈশব জীবন কেটেছিল এসব জেলাতেই। ১৯৪৮ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন খলিল। এরপর ১৯৫১ সালে মদনমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেন। ১৯৫১ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য পরীক্ষা দিলেও শেষ পর্যন্ত চাকরি করার সৌভাগ্য হয়নি খলিলের। তবে ১৯৫৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন আনসার বাহিনীতে অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে যোগ দেন। দীর্ঘদিন আনসার ডিপার্টমেন্টে চাকরী করার পর বয়সের কারণে ১৯৯২ সালে তিনি চাকরী থেকে রিটায়ার করেন।

খলিল তার ৫৪ বছরের ক্যারিয়ারে প্রায় আট শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৫৯ সালে জহির রায়হান পরিচালিত সোনার কাজল ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে সোনার কাজল, আলোর মিছিল, অশান্ত ঢেউ, কাজল, জংলী ফুল, ভাওয়াল সন্ন্যাসী, বেগানা, সমাপ্তি, তানসেন, নদের চাঁদ, মাটির ঘর, পাগলা রাজা, অলংকার, মিন্টু আমার নাম, ফকির মজনু শাহ, কন্যাবদল, সঙ্গম, সোনার চেয়ে দামি, বদলা, মেঘের পর মেঘ, আয়না, মধুমতি, ওয়াদা, বিনি সুতোর মালা, মাটির পুতুল, গুণ্ডা, বউ কথা কও, দিদার, আওয়াজ, নবাব, যৌতুক উল্লেখযোগ্য। বাংলার পাশাপাশি তিনি উর্দু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ক্যায়সে কহু, পুনম কি রাত, উলঝন প্রভৃতি। খলিল চলচ্চিত্র মাধ্যম ছাড়াও টেলিভিশনেও অভিনয়েও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। আশির দশকে টেলিভিশন পর্দা আসেন খলিল। তার অভিনীত বিশেষ নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আব্দুল্লাহ আল মামুনের ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তক।

(পরিবারের সদস্যদের সাথে খলিলউল্লাহ খান)
অভিনয়ের পাশাপাশি ১৯৬৫ সালে ভাওয়াল সন্ন্যাসী ছবির মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন খলিল। এছাড়া সিপাহী ও এই ঘর এই সংসার নামে দুটি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন। খলিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক আলমগীর কুমকুমের গুন্ডা ছবিতে অভিনয় করে খলিল সর্বপ্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্যে ২০১২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন খলিল। তবে দুঃখ জনক ঘটনা এই যে, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অভিনেতা খলিল যখন আজীবন সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করছেন, তখন মোহাম্মদপুরের নিজ অফিসে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তার বড় ছেলে আল আমিন তারেক খান। উল্লেখ্য তার ছোট ছেলে বাবু ইন্তেকাল করেন ১৯৯৩ সালে।

চলচ্চিত্র নায়ক খলিলউল্যাহ খান। নায়কোচিত অভিনয়জীবন তার। অভিনয়শিল্পী হতে চাননি কখনও তাই নায়কের খেতাব অর্জন করেছিলেন তিনি। দর্শক নন্দিত জনপ্রিয় এই দাপুটে নায়ক, চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত খলিলউল্লাহ খান খলিলের মহাপ্রায়নে আমরা শোকাহত।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৬৬৯ Views